দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কারসাজি মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে সংস্থাটি। সিকিউরিটিজ আইন সংঘের অভিযোগে এসব ব্রোকারেজ হাউজেক জরিমানা করা হয় বলেও বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ১৮টি ব্রোকারেজ হাউজের (ট্রেকহোল্ডার) বিরুদ্ধে আইন বহির্ভুতভাবে কনসোলিডেটেড কাস্টমারস অ্যাকাউন্টের অর্থ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব বিবরণী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এমন তথ্য পেয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসিকে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বার্ষিক আর্থিক হিসাব বিবরণী পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেছে ডিএসই।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে ডিএসইর সদস্যভুক্ত ১৮৬টি ব্রোকারেজ হাউজের দাখিল করা নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে বিএসইসি। এর মধ্যে ১৮টি ব্রোকারেজ হাউজ তাদের কনসোলিডেটেড কাস্টমারস অ্যাকাউন্টের অর্থ আইন বহির্ভূতভাবে ব্যবহার করেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানি, সিনহা সিকিউরিটিজ এবং ওয়াইফাং সিকিউরিটিজের কনসোলিডেটেড কাস্টমারস অ্যাকাউন্টে ঘাটতি পাওয়া গেছে। এর ফলে ব্রোকারেজ হাউজ ৩টি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭ এর বিধি ৮(এ)(১) এবং সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০ এর বিধি ১১ লঙ্ঘন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ২০(এ) এর অধীনে কনসোলিডেটেড কাস্টমারস অ্যাকাউন্টের ঘাটতি সমন্বয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আর এইচএসি সিকিউরিটিজ, প্রুডেনশিয়াল সিকিউরিটিজ এবং রাস্তি সিকিউরিটিজ কনসোলিডেটেড কাস্টমার অ্যাকাউন্ট থেকে তাদের পরিচালকদের ঋণ দিয়েছে। এর ফলে ব্রোকারেজ হাউজ ৩টি ২০১০ সালের ২২ জুলাই জারি করা বিএসইসির নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে। প্রতিষ্ঠান ৩টির বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ২০(এ) এর অধীনে পরিচালকদের দেওয়া ঋণ সমন্বয়ের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

এছাড়া হাজী আহমেদ ব্রাদার্স সিকিউরিটিজ, এম সিকিউরিটিজ, হ্যাক সিকিউরিটিজ, এরশাদ সিকিউরিটিজ, মাল্টি সিকিউরিটিজ, এএনএফ ম্যানেজমেন্ট, আল-হাজ্ব জাহানারা সিকিউরিটিজ, কে এইচ সিকিউরিটিজ, সাবভ্যালি সিকিউরিটিজ, ওষুধি সিকিউরিটিজ, সার্প সিকিউরিটিজ এবং মডার্ন সিকিউরিটিজ আইন বহির্ভুতভাবে কনসোলিডেটেড কাস্টমার অ্যাকাউন্টের অর্থ ব্যবহার করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে বিএসইসি।

তবে ১২টি ব্রোকারেজ হাউজ পরবর্তীতে ওই অর্থ সম্পূর্ণরূপে সমন্বয় করেছে বলে বিএসইসিকে অবহিত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানগুলোর কনসোলিডেটেড কাস্টমারস অ্যাকাউন্ট প্রতি মাসে পর্যবেক্ষণ করার জন্য ডিএসইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএসইসি কর্মকর্তা বলেন, “আইন অমান্য করার কারণে বিএসইসি এরই মধ্যে বেশ কিছু ব্রোকারেজ হাউজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, যা আমাদের নিয়মিত কাজ। ভবিষ্যতেও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। ”

তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন অমান্য করার শাস্তি একলাখ কিংবা দুইলাখ টাকা হওয়া উচিত নয়। অনিয়মের মাধ্যমে যে পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেছে, সে পরিমাণ বা তার বেশি অর্থ জরিমানা না করলে এসব কার্যক্রম থামানো যাবে না। কারণ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া না হলে অনিয়ম চলতেই থাকবে।