আবদুর রাজ্জাক ও তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২০১০ সালের ধসের ১০ বছরের মাথায় আবারও গতি এসেছে পুঁজিবাজারে। পুঁজিবাজার নিয়ে মানুষের আগ্রহও দেখা যাচ্ছে। নতুন বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি নিষ্কিয় বিনিয়োগকারীরাও আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বাজারে। এতে বাজারে লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে সূচকও।

নতুন করে লক্ষাধিক বিনিয়োগকারী যুক্ত হয়েছেন বাজারে। তবে ২০১০ সালের ধসের পর ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিষ্প্রভ ছিল দেশের পুঁজিবাজার পরিস্থিতি। একের পর এক বাজে আইপিও, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অদূরদর্শিতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতায় তলানিতে নেমে আসে বাজার। এরই মধ্যে চলতি মার্চে দেশে মহামারী করোনা সংক্রমণে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি স্মরণকালের সবচেয়ে মন্দাবস্থায় চলে যায় এবং বাধ্য হয়ে দীর্ঘদিন লেনদেন বন্ধ রাখতে হয়। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় নতুন কমিশনের উদ্যোগে গত জুন থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে পুঁজিবাজার।

মহামারীর মধ্যে লেনদেন পুনরায় শুরুর মাত্র তিন মাসেই চাঙ্গাভাব ফিরে আসে, যা বছরের অবশিষ্ট সময়েও অব্যাহত থাকতে দেখা গেছে। সরকারি উদ্যোগ ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) নতুন কমিশনের কিছু কার্যকরী পদক্ষেপে দশ বছর পর প্রাণ ফিরে পায় বাজার। তলানিতে নেমে যাওয়া পুঁজিবাজারে সহায়তা করতে ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারি নির্দেশে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংক আমানতের সুদহার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণসহ জেড ক্যাটাগরির কোম্পানির লেনদেন ও সুশাসনে পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সহায়তা করেছে। ফলে করোনার মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) দিনের লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। লকডাউন-পরবর্তী সূচকে বড় উত্থানের কারণে গত আগস্টে বিশ্বসেরা পুঁজিবাজারে অভিহিত হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ।

সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির সম্মিলিত উদ্যোগে টানা দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পরও মহামারীর বছরে লেনদেনে উল্লম্ফন দেখা দেয়। চলতি বছর ৩৮ কার্যদিবস বন্ধ থাকার পরও ২০১৯ সালের তুলনায় ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি লেনদেন হয়েছে। ডিএসই জানিয়েছে, চলতি ২০২০ সালে ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা, যা ডিএসইর ইতিহাসে পঞ্চম সর্বোচ্চ লেনদেন এবং আগের বছরের চেয়ে ২১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা বেশি। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ডিএসইর গড় লেনদেনও ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। এ বছর গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬৪৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, যা আগের বছর ছিল ৪৮০ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

চলতি মার্চে করোনা সংক্রমণের কারণে ভীত হয়ে অনেক বিনিয়োগকারী লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দেন। ফলে বড় ধরনের বিক্রিচাপের কারণে একদিনেই পুঁজিবাজারে বিগত আট বছরের বেশি সময়ের ব্যবধানে বাজারে সূচকের সর্বোচ্চ পতন ঘটে। বাজার পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কায় গত ১৯ মার্চ থেকে লেনদেন এক ঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়। পুঁজিবাজার সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অর্থমন্ত্রী, বিএসইসির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দেয় এসইসি। এটিই পরবর্তীতে বড় পতন থেকে বাঁচিয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিএসইসির কার্যকরী উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় ইলেকট্রনিকস জায়ান্ট ওয়ালটন ও মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটার তালিকাভুক্তি বিনিয়োগকারীদের নতুন করে পুঁজিবাজারে সক্রিয় হতে উৎসাহিত করেছে। এই দুই কোম্পানির তালিকাভুক্তি ও পুঁজিবাজারের চাঙ্গাভাব ডিএসইর বাজার মূলধনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। বুধবার দিন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ৪ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা ডিএসইর ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৩২ শতাংশ। করোনা সংক্রমণের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ২ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকায় নেমেছিল। চলতি বছওে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজসমূহের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন টু জিডিপির অনুপাত দাঁড়ায় ১৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম।

বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেতৃত্বে পরিবর্তন, ব্যাংকের আমানতের সুদের হার কমে যাওয়া ও করোনার কারণে ব্যবসা–বাণিজ্যেও মন্দাভাব এ তিন কারণে শেয়ারবাজারে কিছুটা গতি ফিরেছে। ২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের পর এম খায়রুল হোসেনের নেতৃত্ব পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠিত হয়েছিল।

তিন মেয়াদে ৯ বছর বিএসইসির নেতৃত্ব দেন তিনি। তাঁর হাত ধরে শতাধিক মানহীন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসে। বাজারে আস্থা ফেরাতেও তিনি ব্যর্থ হন। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর থেকেই আস্থা হারিয়ে ফেলেন বিনিয়োগকারীরা। বিশেষ করে তৃতীয় মেয়াদে তাঁকে ওই পদে বহাল রাখায় পুঁজিবাজার পৌঁছে যায় একেবারে তলানিতে।

এদিকে মহামারীর বছরে মোট ৮টি কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে ৯৮৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। ২০১৯ সালে ১টি করপোরেট বন্ডসহ মোট ৯টি সিকিউরিটিজ আইপিওর মাধ্যমে মোট ৬৫২ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছিল। মহামারীর বছরে শেষার্ধে চাঙ্গাভাব ফিরে আসায় বেশিরভাগ শেয়ারের দর বাড়তে দেখা গেছে।

যার প্রভাব পড়েছে ডিএসইর বিভিন্ন সূচকে। চলতি বছরের মার্চে ডিএসইর প্রধান সূচকটি ৩৬০৩ পয়েন্টে নেমে এলেও বছর শেষে তা ৫৪০২ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ। একই সময়ে ডিএসই ৩০ সূচক ২৯.৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৬৩.৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সালে ডিএসইতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন বিগত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল। যদিও এ লেনদেনের বড় অংশ এসেছে শেয়ার বিক্রি থেকে।

এ সময় বিদেশিদের মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৭ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। ২০২০ সাল শেষে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজসমূহের মূল্য আয় অনুপাত বা মার্কেট পিই দাঁড়ায় ১৫ দশমিক শূন্য ০৯। খাতওয়ারী হিসেবে সর্বনিম্ন মূল্য আয় অনুপাত বা মার্কেট পিই ছিল ব্যাংকিং খাতের, যার মার্কেট পিই ৮.১০।

কারসাজিকারীরাও সক্রিয়: সূচক ও লেনদেনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে চলছে কারসাজিও। এ কারণে বাজারে কিছু কিছু শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। বন্ধ কোম্পানির শেয়ারের দামেরও বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটছে। প্রাথমিকভাবে কারসাজির প্রমাণ মেলায় সরকারি মালিকানার কোম্পানি জিলবাংলার লেনদেন এরই মধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। একটি ব্রোকারেজ হাউসের বিরুদ্ধে এটির শেয়ার নিয়ে বড় ধরনের কারসাজির প্রমাণও পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বর্তমানে কারসাজিকারীদেও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

পুঁজিবাজারে ঐতিহাসিক ঘটনা: বিমা খাতের কোম্পানি এশিয়া ইনস্যুরেন্সের দাম গত ৩১ মে ছিল ১৭ টাকা। টানা শেয়ারের দও বাড়তে বাড়তে গত বুধবার দাঁড়িয়েছে ১০৭ টাকা, সে হিসেবে ৫২৯ শতাংশ শেয়ারের দর বাড়ছে।

অপর কোম্পানি প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের ৩২ টাকার শেয়ার এক বছরের ব্যবধানে হয়ে গেছে ১৩০ টাকা। দাম বেড়েছে ৩০৬ শতাংশ বা ৯৮ টাকার বেশি। তবে কোম্পানির সর্বমোট শেয়ারের দর উঠেছিল ১৬১.৩০ টাকা।

২০০৭ সালে তালিকাভুক্ত প্যারামাউন্ট সর্বশেষ ২০১৯ সালে শেয়ারধারীদের মাত্র ৪ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স ১৪ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭৩.৫০ টাকা। সেই হিসেবে ৫ গুনের বেশি দও বাড়ছে কোম্পানিটির। এছাড়া প্রভাতী ইন্সুরেন্সের শেয়ারের দর গত ১ বছরে ১৬ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ৮৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী, কোম্পানিটি দুই বছরের বেশি সময় ধরে ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত। এশিয়া ও প্যারামাউন্টের শেয়ারের দামের এমন উত্থান দেখে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা এটিকে ‘আলাদিনের চেরাগ’ মনে করতেই পারেন। সেই মনে করাটা আপাতদৃষ্টে মোটেই অন্যায্য হবে না। অন্যায্য বা অযৌক্তিক এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পরও বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর চুপ করে থাকা।

এর বাইরে গ্লোবাল ইনস্যুরেন্স, পাইওনিয়র, পূরবী জেনারেল, এক্সপ্রেস, ইস্টার্ন, ফেডারেল, পিপলস, নিটোল, প্রাইম, রিপাবলিক, জনতা, কন্টিনেন্টাল, সিটি জেনারেল, রূপালী, নর্দান, অগ্রণী, বাংলাদেশ ন্যাশনাল, সেন্ট্রাল ও ঢাকা ইনস্যুরেন্সের শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন ১০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। অর্থাৎ এসব শেয়ারের দাম দ্বিগুণ থেকে সাড়ে তিন গুণের বেশি বেড়েছে যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই।

সম্প্রতি বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এক অনুষ্ঠানে বিমা কোম্পানির লভ্যাংশ সংক্রান্ত একটি মন্তব্য করেন। সেখানে তিনি কোম্পানিগুলোর কত লভ্যাংশ দেওয়া উচিত, সেই বিষয়ে মন্তব্যও করেন, যা শেয়ারের দামকে প্রভাবিত করে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, শেয়ারের দামকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন কোনো মন্তব্য করা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের উচিত নয়।

বাজারে লেনদেনকারী শীর্ষস্থানীয় একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুঁজিবাজারে প্রতিদিনই টাকা ঢুকছে। আর এ অর্থের বড় একটি অংশ আসছে বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপের পক্ষ থেকে। করোনার কারণে ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে। পণ্য বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় নতুন করে উৎপাদন বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই।

তাই বাড়তি মুনাফা বা লাভের আশায় ব্যবসায়ীদের একটি অংশ শেয়ারবাজারে টাকা খাটাচ্ছেন। আবার ব্যাংকে আমানতের সুদহার ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এতে সাধারণ মানুষের একটি অংশ ব্যাংকের বদলে শেয়ারবাজারকেই বেশি লাভজনক মনে করছেন। অর্থাৎ সবাই বেশি আয়ের আশায় ছুটছেন শেয়ারবাজারে। আর এটিকেই সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন কারসাজিকারীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় এক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী এই প্রতিবেদককে বলেন, জুলাইয়ের শুরুতে থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকা বাজারে ঢুকেছে তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এসব টাকার বড় অংশই এসেছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এছাড়া বর্তমানে ৫০ কোটির টাকার উপরে নতুন নতুন টাকা ঢুকছে। দীর্ঘ মেয়াদের জন্য এসব অর্থ বিনিয়োগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

ভালো শেয়ারের খরা: বাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ মনে করেন, বাজারের গতি ধওে রাখতে হলে ভালো শেয়ারের পাশাপাশি নতুন পণ্য যুক্ত করতে হবে। এ জন্য দ্রুত বন্ড মার্কেটকে জনপ্রিয় করার কথাও বলেন কেউ কেউ। তাঁদের মতে, শুধু মূলধনি নির্ভও (ইক্যুইটি) বাজার দিয়ে পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে না। আবার ব্যাংকনির্ভর বা ব্যবসায়ীদের সাময়িক বিনিয়োগনির্ভর বাজারের ধারা থেকে বেরিয়ে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ।

পুঁজিবাজারের সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘পুঁজিবাজারে আইন লঙ্ঘন করে কোনো ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে হচ্ছে কি না, সে বিষয় আমরা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। পাশাপাশি বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি নিরসনে বন্ড মার্কেট কার্যকর করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ে নতুন ও ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে কমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।’

ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘বাজারে যখন সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায়, তখন বাজার গতিশীল হয়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়ে।’ তিনি মনে করেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এখন আস্থা ফিরে এসেছে। এরই মধ্যে বড় বিনিয়োগকারী ও ছোট বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসতে শুরু করেছে, যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক বাজারের ওপর। এছাড়া সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেওয়ায় ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা ‘স্বস্তি’ ফিরে আসে। কারণ এর মাধ্যমে একটা বিষয় নিশ্চিত হয় যে, লোকসান নির্দিষ্ট অংকের বেশি হবে না।

পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে শাকিল রিজভী বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের বছরটা ছিল স্বস্তির। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পুঁজিবাজার ইস্যুতে একের পর এক চমক পদক্ষেপে বিনিয়োগেকারীদের মাঝে দ্রুত আস্থা ফিরে। এর ফলে দীর্ঘ এক বছর পাঁচ মাস পর মধ্যে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেনের নয়া রেকর্ড সৃষ্টি করছে। মুলত করেনা মহামারীর মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আন্তরিকতার ফলে এ রেকর্ড সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, “২০২১ সালে দেশের পুঁজিবাজার ২০২০ সালের চেয়ে ভালো করবে। বন্ড মার্কেট ভালো হবে, এসএমই বোর্ড চালু হবে। ভালো ভালো কোম্পানি আরো তালিকাভুক্ত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ঢাকা স্টক একচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়পোযোগী সিদ্ধান্তে করোনাকালে পুঁজিবাজারে বড় পতন থেমেছিল। একইসঙ্গে বর্তমান পুনর্গঠিত সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের বহুমাত্রিক কার্যক্রমে পুঁজিবাজার নতুন করে সবার মাঝে আশার আলো জাগাচ্ছে। ২০২১ সালে পুঁজিবাজারের আলো আরোও ছড়াবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ বিষয় জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থায় পরিবর্তনের পর থেকে বাজারে চাঙ্গাভাব দেখতে পাচ্ছি আমরা। কিন্তু আমরা এও দেখছি ভালো কোম্পানির চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে খারাপ কোম্পানির দামও। এমনকি অস্তিত্বহীন কোম্পানির দামও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। খালি চোখেই বোঝা যাচ্ছে কারসাজির নানা ঘটনা। কারসাজি রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরো কঠোর হতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ গুরু হিসেবে খ্যাত ওয়ারেন বাফেটের মতে, শেয়ারের লাভ করতে হবে কেনার সময়ই। তাই তিনি তেজি বাজারে শেয়ার কেনার পক্ষপাতী ছিলেন না। কিন্তু আমাদের বাজারে দেখা যায় ঠিক উল্টোটি। দাম কমতে শুরু করলে বাজার ছাড়েন বিনিয়োগকারীরা। আর দাম বাড়তে থাকলে বাজারমুখী হন।