দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে চলমান অগ্রগতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না ঢাকা স্টক একচেঞ্জের ট্রেডিং প্লাটফর্ম। লেনদেনের গতি বাড়ায় ডিএসইর ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম সেই চাপ নিতে পারছে না। এমনকি মোবাইলে যেসব বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করে ওইসব বিনিয়োগকারীও ঠিকমতো লেনদেন করতে পারছেন না। যার কারণে এত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসইর সদস্য ও বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে তারা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা সমাধানে ডিএসই কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এদিকে ডিএসইর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সমস্যা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে।

এদিকে ব্রোকারেজ হাউসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ক্রয়-বিক্রয়ের আদেশ দিলে দীর্ঘসময় লাগছে। এতে অনেক সময় সঠিক দামে শেয়ার বিক্রি বা কিনতে পারছেন না গ্রাহকরা। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

একাধিক ব্রোকারেজ শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, লেনদেনের গতি বাড়ার পর থেকেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আজও সমস্যা হচ্ছে। ক্রয়-বিক্রয়ের অর্ডার নিতে অনেক সময় নিচ্ছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

রফিকুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, নতুন কোম্পানি রবির তালিকাভুক্তির দিন থেকেই ট্রেডিং সফটওয়ারে বড় ধরনের সমস্যা রু হয়েছে। কোন কোম্পানির শেয়ারই প্রত্যাশিত দরে কিনতে বা বিক্রি করতে পারছি না। এটি কোনভাবেই মেনে নেয়া যাচ্ছে না।

কারণ তথ্য প্রযুক্তির এই যুগের যদিও টেকনিক্যাল কারণে শেয়ার কেনা-বেচা করতে সমস্যা হয় তবে আমরা ঠিক কতোটুকু প্রযুক্তিতে এগিয়েছি তাতে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ভাল ও স্থিতিশীল মার্কেট চাইলে সবার আগের ট্রেডিং প্লাটফরমটির সমস্যা দূর করা উঠিত।

ডিএসইর শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০১৭ সালেও লেনদেন বাড়লে আমরা এমন সমস্যার মুখে পড়েছিলাম। সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সফটওয়্যার কর্তৃপক্ষ প্রি-ওপেনিং সিস্টেম চালু করার পরামর্শ দিয়েছেন। ডিএসইর পর্ষদ ইতোমধ্যে প্রি-ওপেনিং সিস্টেম অনুমোদন করেছে।

এর আগে ডিএসইর ওয়েবসাইটের উন্নত সংস্করণ চালু করা হয় ২০২০ সালের ২০ আগস্ট। সে সময় বলা হয়েছিল, আপডেটেড ওয়েবসাইটটি বিনিয়োগকারী বান্ধব ও অত্যন্ত রেসপন্সিভ হবে। কিন্তু আপডেটেড ওয়েবসাইট চালুর পর থেকেই দেখা দেয় বিপত্তি। ওয়েবসাইটে প্রবেশে সমস্যা, ঠিকমত তথ্য হালনাগাদ না হওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ আসতে থাকে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে।

তাছাড়া বাড়তি লেনদেনের চাপ নিতে পারছিল না ডিএসইর ওএমএস সিস্টেম। সেসময় লেনদেন সময় বাড়ানোর পাশাপাশি সমস্যার জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছিল ডিএসই। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির পক্ষ থেকে ২৪ আগষ্ট ডিএসইর ওয়েবসাইট ও ট্রেডিং সিস্টেমের ত্রুটি অনুসন্ধানের জন্য ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে আহ্ববায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ও আইসিটি সেলের পরিচালক ড. মো. আসিফ হোসাইন খান, তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের (আইআইটি) পরিচালক ও অধ্যাপক ড. মো. শরীফুল ইসলাম,

বিএসইসির এমআইএস বিভাগের পরিচালক রাজীব আহমেদ, এসআরএমআইসি বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এবং সার্ভিল্যান্স বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ট্রেডিং সিস্টেম ত্রুটিপূর্ণ এবং বাড়তি লেনদেনের চাপ নিতে সক্ষম নয়। একইসঙ্গে এক্সচেঞ্জটির ওয়েবসাইটও বেশি দুর্বল। এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুততার সঙ্গে নতুন অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) আনার পাশপাশি ওয়েবসাইটে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের লেনদেন সঠিকভাবে করার জন্য ২০১৪ সালের মার্চ মাসে বিশ্বের সর্বাধুনিক ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম স্থাপনে যুক্তরাষ্ট্রের নাসডাক ওএমএক্স এবং ফ্লেক্স ট্রেড সিস্টেমসের সঙ্গে চুক্তি করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। একই বছরের ১১ ডিসেম্বর ‘ফ্লেক্স ট্রেড সিস্টেমস’ নামে নতুন সফটওয়্যার চালু করে ডিএসই। এর আগে টেসা নামের একটি সফটওয়ারের মাধ্যমে ডিএসইতে লেনদেন হতো। নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তির দিনই সফটওয়ারটিতে ব্যাপক সমস্যা হতো