দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বীমা খাতে আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। নিয়ম অনুসারে প্রিমিয়ামের টাকা জমা করার জন্য নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো তিনটির বেশি ব্যাংক হিসাব সংরক্ষণ করতে পারবে না। অর্থাৎ বীমা কোম্পানিগুলো যে কোনো তিনটি আলাদা তফসিলি ব্যাংকে একটি করে হিসাব সংরক্ষণ করতে পারবে।

কিন্তু কোনো কোনো বীমা কোম্পানি এ ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে চলেছে। কোনো ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) খোলার ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলোকে আইডিআরএর অনুমোদন নিতে হবে না, তবে অন্য যে কোনো বিষয়ে ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে অনুমোদন নিতে হবে। দেশে কর্মরত ব্যাংকগুলোর কাছে ৪৬টি নন-লাইফ বা সাধারণ বিমা কোম্পানির ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। গত ৩০ ডিসেম্বর এ চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মো. ইসমাইল হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, কোনো ব্যাংকে ৪৬টি নন-লাইফ বিমা কোম্পানির কোনো হিসাব থাকলে সেই হিসাবের ধরন, হিসাবের নম্বর, মোট হিসাবের সংখ্যা এবং ব্যাংকের কোন শাখায় এসব হিসাব রয়েছে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোর জন্য সর্বোচ্চ তিনটি ব্যাংক হিসাব পরিচালনার নির্দেশনা রয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ)। তাদের ধারণা অনেক বিমা কোম্পানি এর থেকেও বেশি ব্যাংক হিসাব সংরক্ষণ করছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আইডিআরএ-এর অনুরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে তথ্য চেয়েছে।’

আইডিআরএর কর্মকর্তারা জানান, নন-লাইফ বিমা কোম্পানির এজেন্টদের ১৫ শতাংশের বেশি কমিশন দেয়ার নির্দেশনা নেই। তবুও অনেক বিমা কোম্পানি অনৈতিক প্রতিযোগিতার জন্য এর থেকে বেশি কমিশন দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের লেনদেনের জন্য বিমা কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

২০১৯ সালের ২ জুলাই জারি করা এক সার্কুলারে আইডিআরএ জানিয়েছিল, নন-লাইফ বিমা কোম্পানি গ্রাহকের মূলধন সংরক্ষণের জন্য একটি এবং অন্যান্য আয় জমা করার জন্য একটি করে ব্যাংক হিসাব রাখতে পারবে। এ ছাড়া বিমা দাবি পরিশোধ ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা ব্যয় পরিশোধের জন্য অন্য একটি ব্যাংক হিসাব রাখতে পারবে বিমা কোম্পানিগুলো। বিমা দাবি, কমিশন ও বেতন-ভাতার টাকা কোনো অবস্থাতেই নগদে পরিশোধ করার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা দেয় আইডিআরএ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে হিসাবের তথ্য চাওয়া নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে অগ্রণী ইন্সুরেন্স, এশিয়া ইন্সুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্সুরেন্স, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্সুরেন্স, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্সুরেন্স, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্সুরেন্স, সিটি জেনারেল ইন্সুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্সুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্সুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্সুরেন্স, ঢাকা ইন্সুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্সুরেন্স, ইস্টল্যান্স ইন্সুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্স, ফেডারেল ইন্সুরেন্স, গ্লোবাল ইন্সুরেন্স, গ্রিনডেল্টা ইন্সুরেন্স।

এ ছাড়া ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্সুরেন্স, ইসলামী ইন্সুরেন্স, জনতা ইন্সুরেন্স, কর্নফুলী ইন্সুরেন্স, মেঘনা ইন্সুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্স, নিটোল ইন্সুরেন্স, নর্দান ইন্সুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্সুরেন্স, পিপুলস ইন্সুরেন্স, ফিনিক্স ইন্সুরেন্স, পাইওনিয়র ইন্সুরেন্স, প্রগতি ইন্সুরেন্স, প্রাইম ইন্সুরেন্স, প্রভাতী ইন্সুরেন্স, পূরবী ইন্সুরেন্স, রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স, রিপাবলিক ইন্সুরেন্স, রূপালী ইন্সুরেন্স, সাধারণ বিমা করপোরেশন, সেনা কল্যাণ ইন্সুরেন্স, সিকদার ইন্সুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্সুরেন্স, সাউথ এশিয়া ইন্সুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্স, তাকাফুল ইসলামী ইন্সুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্সুরেন্স ও ইউনাইটেড ইন্সুরেন্সের তথ্য চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।