দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলসের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে শেয়ারহোল্ডারদের ঠকাতে কৃত্রিম লোকসান দেখানোর সন্দেহ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তেমনি কোম্পানির পরিচালকদের খামখেয়ালীপনায় লোকসানের মধ্যে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে আলহাজ্ব টেক্সটাইল। লোকসানে নিমজ্জিত হওয়ায় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়নি।

কোম্পানিটি এফডিআর থেকে অর্জিত সুদজনিত আয়কে গায়েব করে দেওয়ার জন্য এমনটি করছে বলে মনে করা হচ্ছে। যে কারনে সত্য ঘটনা অনুসন্ধানে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। ২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের আলহাজ্বের এফডিআর করা আছে ৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। যা থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুদজনিত আয় হয়েছে ৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। যে কোম্পানিটির ১০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দিতে প্রয়োজন ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

এ হিসাবে ব্যবসা না করলেও কোম্পানিটির পক্ষে শুধু এফডিআর দিয়েই ১৫ শতাংশের বেশি নগদ লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব। কিন্তু সেই কোম্পানিটিই এখন পরিচালকদের খামখেয়ালিপনায় লভ্যাংশ না দিয়ে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পতিত হয়েছে।

বর্তমানে কোম্পানির সুদজনিত যে আয় হয়েছে, তা দিয়ে ব্যবসা না করেও ১৫ শতাংশের বেশি নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করে কমিশন। কিন্তু কোম্পানিটিই শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দিয়ে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে ইচ্ছেকৃতভাবে পড়ে রয়েছে।

এছাড়া ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে তুলা থেকে সুতা উৎপাদনকারী আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পণ্য বিক্রি হয়েছে ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকার। যে পণ্য উৎপাদনে ১২ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। আগের হিসাব বছরেও বিক্রির থেকে উৎপাদন ব্যয় বেশি দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিকে লোকসান দেখানো হচ্ছে বলে মনে কমিশন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত ২ হিসাব বছরে আলহাজ্ব টেক্সটাইল যে পরিমাণ উৎপাদন ব্যয় দেখিয়েছি, সেটা অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। তাই শেয়ারবাজার ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ বিবেচনা করে সঠিক কারণ অনুসন্ধানে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কোম্পানির যে পরিমাণ এফডিআর রয়েছে, শুধু তা দিয়েই নিয়মিত ১০ শতাংশের বেশি নগদ লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব। এ কারণে কোম্পানির সার্বিক তদারকির জন্য বিএসইসি, ডিএসই ও একজন স্বতন্ত্র পরিচালকের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে, গত ২৯ ডিসেম্বর আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলসের চলমান দূরাবস্থা কাটিয়ে তোলার জন্য কমিশনের একজন নির্বাহী পরিচালক, ডিএসইর একজন সিনিয়র অফিসার ও কমিশনের নিয়োগকৃত একজন স্বতন্ত্র পরিচালকের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। যারা আলহাজ্ব টেক্সটাইলের সার্বিক বিষয় তদারকি করবেন। একইদিনে কোম্পানির সর্বশেষ বিগত ২ হিসাব বছরের আর্থিক হিসাবসহ (২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০) কোম্পানির সার্বিক বিষয় নিরীক্ষার জন্য কমিশন বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

বিএসইসির ওই কর্মকর্তা বলেন, আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পর্ষদের খামখেয়ালিপনার কারনে কোম্পানিটি ডুবতে বসেছে। তারা যোগ্য না হয়েও শুধুমাত্র কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণ আকড়ে ধরে রাখতে গিয়ে এই পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ কোম্পানিটির যে পরিমাণ এফডিআর রয়েছে, শুধু তা দিয়েই নিয়মিত ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব। এ কারনে কোম্পানির সার্বিক তদারকির জন্য বিএসইসি, ডিএসই ও একজন স্বতন্ত্র পরিচালকের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে

গত ২৯ ডিসেম্বর আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলসের চলমান দূরাবস্থা কাটিয়ে তোলার জন্য কমিশনের একজন নির্বাহি পরিচালক, ডিএসইর একজন সিনিয়র অফিসার ও কমিশনের নিয়োগকৃত একজন স্বতন্ত্র পরিচালকের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। যারা আলহাজ্ব টেক্সটাইলের সার্বিক বিষয় তদারকি করবেন।