দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের টাকা বেসরকারি ব্যাংক মধুমতিতে রাখার অভিযোগ এনেছেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। আওয়ামী লীগের গত মেয়াদে অনুমোদন পাওয়া এই ব্যাংকে তাপসের মালিকানা আছে। খোকনের দাবি, এর ফলে স্বার্থের সংঘাত তৈরি হয়েছে। আর এতে তাপস মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন দুটি মার্কেটে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবিতে শনিবার রাজধানীতে সমাবেশ করেন দোকানিরা। এতে বক্তব্য দেন সাবেক মেয়র খোকন। নকশাবহির্ভূত বলে ফুলবাড়ীয়া ও সুন্দরবন মার্কেটে দেড় হাজারের বেশি দোকান ভেঙে দেয়ার কাজ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন।

যাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, সেই দোকানিরা বলছেন, খোকন মেয়র থাকাকালে তারা টাকা দিয়ে সেগুলোর বরাদ্দ নিয়েছিলেন। আর টাকা নেয়ার রসিদও আছে। তবে নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, রসিদ থাকলেও এই টাকা করপোরেশনের তহবিলে জমা পড়েনি। এই ঘটনায় সাবেক মেয়র খোকনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিষয়টি এখন তদন্ত করছে পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআই।

খোকন এই অভিযানের সমালোচনা করেছেন। তবে তাকে ইঙ্গিত করে তাপস বলেছেন, কারও আবদারে অভিযান বন্ধ হবে না। হাইকোর্টের সামনে কদম ফোয়ারা চত্বরে দোকানিদের মানববন্ধনে যোগ দিয়ে খোকন বলেন, মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন তাপস।

তিনি বলেন, ‘তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন এবং এই শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং করছেন।’

নিজের মালিকানাধীন ব্যাংকে টাকা রেখে তাপস সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯, দ্বিতীয় ভাগের ২ অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯ (২) (জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলেও দাবি করেন খোকন।

সিটি করপোরেশন আইনের এই ধারা অনুযায়ী, মেয়র বা তার কোনো পরিবারের সদস্য সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার হতে পারবেন না বা কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হতে পারবেন না। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের কোনো বিষয়ে তার কোনো আর্থিক স্বার্থ থাকতে পারবে না।২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া মধুমতি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের এক জন তাপস।

খোকনের অভিযোগ, তাপস দায়িত্ব নেয়ার পর অর্থাভাবে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পও টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। তাপস দায়িত্ব নিয়েই সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন।

নানা অভিযোগে একাধিক কর্মকর্তাকে তিনি বিদায় করে দিয়েছেন। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাপসের এই অবস্থান আর বক্তব্যকে ‘গলাবাজি’ হিসেবে দেখছেন খোকন। তিনি মনে করেন, বর্তমান মেয়রই দুর্নীতিতে জড়িত।

ফুলবাড়ীয়া ও সুন্দরবন মার্কেটে দেড় হাজারের বেশি নকশাবহির্ভূত দোকান আছে, যেগুলোর বরাদ্দ দেয়া হয় সাঈদ খোকন মেয়র থাকাকালে
তিনি বলেন, ‘তাপস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন। আমি তাকে বলব রাঘব বোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হলে সর্ব প্রথম নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত করুন, তারপর চুনোপুঁটিদের দিকে দৃষ্টি দিন।’

দোকান উচ্ছেদের সমালোচনা করে খোকন বলেন, ‘আমরা আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ করলাম, বিনা নোটিশে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে অবৈধ উচ্ছেদের মাধ্যমে বুলডোজার দিয়ে… হাজার হাজার বৈধ দোকান গুড়িয়ে দিল এবং ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার দোকান মালিক ও কর্মচারী স্বপরিবারে পথে বসে গেল। আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র হিসেবে এই অবৈধ উচ্ছেদের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

প্রতিবাদ জানালেও মেয়র তাপস তার তোয়াক্কা করবেন না বলে মনে করেন খোকন। তাই তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সাবেক মেয়র বলেন, ‘আমি জানি বর্তমান একগুঁয়ে নগর প্রশাসন কোনো যৌক্তিক নাগরিক দাবিদাওয়ার তোয়াক্কা করে না। তাই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই নিঃস্ব ও অসহায় বৈধ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের বিনীত আবেদন জানাচ্ছি।’