দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে প্রায় চার মাস ব্যাংক লেনদেন সীমিত পরিসরে নামিয়ে আনা হয়। এর ওপর সারা বছরই ঋণ পরিশোধের ওপর ছাড় দেয়া হয় ঋণ গ্রহীতাদের। পাশাপাশি বিনিয়োগের মুনাফার হার হঠাৎ করে ১ এপ্রিল থেকে ৯ শতাংশ নামিয়ে আনা হয়। সবমিলেই ব্যাংকিং খাতের জন্য বিদায়ী বছর ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং।

এতে বেশির ভাগ ব্যাংকের মুনাফার প্রবৃদ্ধির ওপর ছেদ পড়ে যায়। আগের বছরের চেয়ে বিদায়ী বছরে বেশির ভাগ ব্যাংকের মুনাফাই কমে যায়। এর পরেও বরাবরের মতো বিদায়ী বছরে পরিচালন মুনাফার শীর্ষ স্থানটি ধরে রেখেছে ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে পরিচালন মুনাফা করেছে দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সোনালী ব্যাংক তাদের পরিচালন মুনাফা দুই হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বছরের শেষ দিনে ব্যাংকগুলো তাদের সারা বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব করে থাকে। বের করে তাদের পরিচালন মুনাফা। তবে এ মুনাফা একেবারেই প্রাথমিক হিসাব। প্রকৃত মুনাফা আরো কমে আসবে। যথাযথভাবে খেলাপি ঋণের হিসাব করা হলে এবং এর বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করা হলে প্রকৃত পরিচালন মুনাফা আরো কমে যাবে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকের একটি উল্লেখযোগ্য আয় আসে এলসি কমিশন থেকে। পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপন করে ব্যাংকগুলো উল্লেখযোগ্য মুনাফা করে। কিন্তু বিদায়ী বছরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বব্যাপীই ভোগব্যয় কমে গেছে। এতে পণ্য রফতানি যেমন কমে যায়, তেমনিভাবে পণ্য আমদানিও নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। আমদানি রফতানি কমে যাওয়ায় এলসি থেকে কমিশন থেকে আয় কমে যায়। এর বাইরে গেলে বিদায়ী পুরো বছরজুড়েই ঋণখেলাপিদের ছাড় দেয়া হয়।

জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কেউ ঋণ পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। এর ফলে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তারাও ঋণ পরিশোধ বন্ধ করে দেন। এর ফলে বিনিয়োগ থেকে আয় প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। অপর দিকে, গত ১ এপ্রিল থেকে হঠাৎ করে বিনিয়োগের মুনাফা ৯ শতাংশ নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এতে ব্যাংকের আয়ের উপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সবমিলেই বিদায়ী বছরটি ব্যাংকিং খাতের জন্য অনেকটা বিষাদের বছর গেছে। যদিও ঋণ পরিশোধ না করার নির্দেশনায় ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা। ব্যাংকারেরা জানিয়েছেন সবমিলেই বিদায়ী বছরটি ছিল তাদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জিংয়ের বছর। এর পরেও সাধ্যমতো তারা চেষ্টা করেছেন মুনাফার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য।

গত কয়েক দিন বিভিন্ন ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে পরিচালন মুনাফার অনিরীক্ষিত পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাওয়া গেছে। ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বরাবরের মতো এবারো পরিচালন মুনাফার শীর্ষে অবস্থান করেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে পরিচালন মুনাফা করেছে দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকা। আগের বছরে যেখানে ছিল দ্ইু হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

পরিচালন মুনাফার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সরকারি খাতের সোনালী ব্যাংক। ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে পরিচালন মুনাফা করেছে দুই হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরে ছিল এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত মুনাফার তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক। ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে পরিচালন মুনাফা করেছেএক হাজার ১০০ কোটি টাকা।

আগের বছরে যেখানে ছিল এক হাজার ১৯০ কোটি টাকা। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে পরিচালন মুনাফা করেছে ৯৮০ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরে ছিল সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফার শীর্ষ ৫ ব্যাংকের মধ্যে শেষ অবস্থানে রয়েছে পূবালী ব্যাংক। ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে পরিচালন মুনাফা করেছে ৯৩৫ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরে ছিল এক হাজার ২৫ কোটি টাকা।

আইএফআইসি ব্যাংক ২০২০ সালে মুনাফা করেছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। যদিও এর আগে ২০১৯ সালে ব্যাংকটি ৫১২ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করেছিল। মার্কেন্টাইল ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৪৫০ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছর ছিল ৭৫৩ কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফা ৩৭ শতাংশ কমেছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের। ব্যাংকটি ২০২০ সালে ৩৪০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে। যদিও আগের বছর মিউচুয়াল ট্রাস্টের পরিচালন মুনাফা ছিল ৫৪০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ২০২০ সালে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ১৫০ কোটি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৪১৫ কোটি, ওয়ান ব্যাংক ৩১৫ কোটি, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ৫০০ কোটি, ব্যাংক এশিয়া ৭১০ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংক ৭৭০ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ৫৬০ কোটি, ইউসিবি প্রায় ৭০০ কোটি, পূবালী ৯৩৫ কোটি, এনসিসি ৫৭১ কোটি, যমুনা ৬৪০ কোটি,

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ৭১০ কোটি, ঢাকা ব্যাংক ৫৫০ কোটি, এক্সিম ৭৪১ কোটি, ইস্টার্ন ৮১০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি পাওয়া এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ১৯০ কোটি, মধুমতি ২৭৮ কোটি, এনআরবিসি ৩২৩ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ৩০৫ কোটি ও মেঘনা ব্যাংক ৮৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে।