দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:  পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধিতে নড়েচড়ে বসেছে নিয়ন্ত্র সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মূল্য বৃদ্ধির পেছনে কোনো কারসাজি বা অস্বাভাবিকতা আছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পুঁজিবাজারে এক মাসে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে বা কমেছে, সেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে তদন্তের এ নির্দেশ দিয়েছে।

বিএসইসির উপপরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আদেশ আজ মঙ্গলবার স্টক এক্সচেঞ্জ দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার (সিআরও) কাছে পাঠানো হয়েছে। এক মাসে রবির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫৩২ শতাংশ। এ ছাড়া বেক্সিমকো লিমিটেডের ৩১ টাকার শেয়ারের দাম এক মাসে আড়াই গুণ বা ১৫৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা। আর আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান লঙ্কাবাংলার ২৩ টাকার শেয়ারের দাম এক মাসের ব্যবধানে ৯২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৪ টাকা।

সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারের টানা উত্থানে অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ-তিন গুণ হয়ে গেছে। নতুন তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড করেছে রবি আজিয়াটা। তাতে ১৫ দিনেই কোম্পানিটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও শেয়ারের দাম সোয়া ছয় গুণ বেড়ে হয়েছে ৬৩ টাকা। এক মাসে রবির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫৩২ শতাংশ।

এ ছাড়া বেক্সিমকো লিমিটেডের ৩১ টাকার শেয়ারের দাম এক মাসে আড়াই গুণ বা ১৫৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা। আর আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান লঙ্কাবাংলার ২৩ টাকার শেয়ারের দাম এক মাসের ব্যবধানে ৯২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৪ টাকা। এ রকম আরও অনেক কোম্পানি রয়েছে, যেগুলোর শেয়ারের দাম এক মাসে ৫০ শতাংশ থেকে শুরু করে প্রায় সাড়ে ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

এসব কোম্পানির এ রকম অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কোনো কারসাজি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বিএসইসির নির্দেশনায় সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্তের কথা বলা হয়নি। গত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে বা কমেছে, এর পেছনে কোনো কারসাজি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলেছে বিএসইসি।

গত এক মাসে যেসব কোম্পানির গড় লেনদেনের পরিমাণ আগের ছয় মাসের গড় লেনদেনের চেয়ে পাঁচ গুণের বেশি বেড়েছে, তারও কারণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির বার্ষিক বা প্রান্তিক শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশের বেশি তারতম্য ঘটেছে, তার পেছনের কারণও খতিয়ে দেখার কথা বলেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এর বাইরে গত এক মাসে যেসব কোম্পানির গড় লেনদেনের পরিমাণ আগের ছয় মাসের গড় লেনদেনের চেয়ে পাঁচ গুণের বেশি বেড়েছে, তারও কারণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বা পিএসআই প্রকাশের আগের ১০ কার্যদিবসে যেসব কোম্পানির দাম ও লেনদেন ৩০ শতাংশের কম-বেশি হয়েছে, সেসব কোম্পানির বিষয়েও তদন্ত করবে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।

সূত্র মতে, চারটি নির্দেশনার হলো- প্রথমত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে যে সকল কোম্পানির শেয়ারের দর ৫০ শতাংশের বেশি উঠা-নামা করেছে। এই সময়ের মধ্যে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে বা কমেছে, এর পেছনে কোনো কারসাজি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলেছে বিএসইসি।

দ্বিতীয় হলো গত বছরের তুলনায় এই বছর যে সব কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ৫০ শতাংশের বেশি পরিবর্তন হয়েছে। তা খতিয়ে দেখার জন্য বলা হয়েছে। তৃতীয়ত, গত এক মাসে যেসব কোম্পানির গড় লেনদেনের পরিমাণ আগের ছয় মাসের গড় লেনদেনের চেয়ে পাঁচ গুণের বেশি বেড়েছে, তারও কারণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

চতুর্থত, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বা পিএসআই প্রকাশের আগের ১০ কার্যদিবসে যেসব কোম্পানির দাম ও লেনদেন ৩০ শতাংশের কম-বেশি হয়েছে, সেসব কোম্পানির বিষয়েও তদন্ত করবে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে বিএসইসির মূখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এই নির্দেশনা সব সময়ের জন্য। এটি কোন একক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়। একটি নির্দেশনা স্টক এক্সচেঞ্জকে দেওয়া হয়েছে, তারা সব সময় এই কাজ চালিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন-উর-রশিদ বলেন, বিএসইসির একটি নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। এই নির্দেশনা সব সময়ের জন্য। এটি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সহযোগিতা করবে।

তিনি বলেন, বিএসইসির এই নির্দেশনা নিয়ে ভয়ের কোন কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ পুঁজিবাজারকে স্থিতিশিল রাখতে প্রতিনিয়ত কাজগুলো করা দরকার। যাতে করে কেউ কোর গোজামিল দিতে না পারে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আরও সুরক্ষিত হবে।