দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ১ দিনের মাথায় বদলে গেছে পুঁজিবাজারের চিত্র। আজ সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে বড় উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে বুধবার বড় ধরনের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়। অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে এমন সব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।

বড় দরপতনের পর দিনই বড় উত্থান দেখল বিনিয়োগকারীরা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় লেনদেনের শুরু থেকেই বেশিরভাগ শেয়ারের দাম বাড়ায় সূচক বেড়ে যায়। সময় যত গড়াতে থাকে, সূচক বাড়ে আরও বেশি।লেনদেন আর এক ঘণ্টা বাকি থাকতে বেলা দেড়টায় প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বাড়ে ১৫০ পয়েন্টেরও বেশি। লেনদেনের গতিও বেশ ভালো।

দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয় এই সময়ে। শেষ দিকে সূচক কিছুটা কমলেও তা আগের দিনের তুলনায় ১৩৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৯০৯ পয়েন্টে। লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমলেও টানা দ্বিতীয় দিন দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেন দেখে ডিএসই।

মঙ্গলবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সিদ্ধান্ত নেয়, গত ৩০ কার্যদিবসে ৫০ শতাংশ দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিসহ অস্বাভাবিক লেনদেন হওয়া কোম্পানির তদন্ত হবে। বুধবার ৯১ পয়েন্ট দরপতন হওয়ার পর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিএসইসি। তখনই ধারণা করা হচ্ছিল, পুঁজিবাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে। হয়েছেও তাই।

লেনদেনের শুরু থেকেই ব্যাংক, বহুজাতিক কোম্পানি, টেলি কমিউনিকেশন খাতসহ বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। শুরুতে কমলেও ঘুরে দাঁড়ায় বিমা খাতও। গত দুই সপ্তাহ ধরে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা বেক্সিমকো লিমিডেট আর রবির শেয়ার দর আবারও একদিনে সর্বোচ্চ বেড়েছে।

সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া তিনটি কোম্পানি গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় বেক্সিমকো লিমিটেড, রবি ও বেক্সিমকো ফার্মা। একদিন উঠানামার পর রবির শেয়ারের আবার বিক্রেতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। দেড় ঘণ্টায় কোম্পানির ৪৬ লাখ শেয়ার ক্রয়ের অর্ডার থাকলেও কোনো বিক্রেতা ছিল না। পরে অবশ্য সর্বোচ্চ দামে অনেকগুলো শেয়ার বিক্রি হয়।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারের স্বার্থেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় তা থেকে সরে এসেছেন। এতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা যে পুঁজিবাজার বান্ধব তা প্রমাণিত হয়েছে। আর এতেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে।

সর্বোচ্চ দাম বৃদ্ধির তালিকায় বেশিরভাগ শেয়ারই মৌলভিত্তি সম্পন্ন, যার মধ্যে বেশ কিছুদিন পর সিটি ব্যাংকও উঠে এসেছে। সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দাম বাড়ে বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি জিবিবি পাওয়ারের। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সরকারি বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিডের দাম বাড়ে ৯.৯৮ শতাংশ।

উত্থানের দিন সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়েছে যেসব কোম্পানির, সেগুলোর বেশিরভাগেরই মৌলভিত্তি দুর্বল। এর মধ্যে আছে জিলবাংলা, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ও আর এন স্পিনিং। প্রথম কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে বিপুল পরিমাণে লোকসান দিচ্ছে, দ্বিতীয়টি উৎপাদন বন্ধ অবস্থায় আছে। আর তৃতীয় কোম্পানিটির কারখানা আগুনে পুড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেটি এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

গত মে মাসে বিএসইসি পুনর্গঠনের পর বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়। আর ২০২০ সালের শেষ দিক থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। বাজারের সূচক এখন গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে। আর গত সপ্তাহে লেনদেন ছাড়িয়েছে এক দশকের সর্বোচ্চ পরিমাণ। ২০১০ সালের মহাধসের পর প্রথমবারের মতো পুঁজিবাজার নিয়য়ে আশাবাদ তৈরি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ফিরতে শুরু করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও বাজারে সক্রিয় হচ্ছেন।

বাজার বিশ্লেষণ: সপ্তাহ শেষে ডিএসইর প্রধান সূচকের যে অবস্থান দাঁড়িয়েছে, সেটা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পাঁচ হাজার ৯০৯ পয়েন্ট সূচক ২০১৯ সালের শুরুর দিকের পর আর হয়নি। বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শরিয়াহ ভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক ২১ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩২৩ পয়েন্টে। ডিএস-৩০ সূচক ৭৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৩৬ পয়েন্টে।

ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৬২ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৯টির, দর কমেছে ১৩৩টির এবং পাল্টায়নি ৭০ টির। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৭০ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ১০৮ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৪২২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২১৯ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া ২৮৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৭টির, কমেছে ১০৭টির এবং পাল্টায়নি ৪২টির দর। বৃহস্পতিবার সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৪ টাকা।