এফ জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:  দেশের ১০ কোটি আমানতকারীর ব্যাংকে জমানো প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকাই ঋণ আকারে নিয়ে নিজেদের পকেটে পুরে রেখেছেন মাত্র কয়েক শ ব্যাংক পরিচালক। তাঁরা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবেন বলে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ওই ব্যাংকে রাখা গ্রাহকের আমানতের বিরাট অংশ নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছেন। এসব ঋণের বড় অংশ খেলাপি হলেও বছরের পর বছর তা নিয়মিত হিসেবে প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই নৈরাজ্যের প্রভাব পড়ছে বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে। সৎ উদ্যোক্তা ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সংকটের মধ্যে চলছে ব্যাংকিং খাত। তৈরি হচ্ছে দেশের ইমেজ সংকট।

এমন পরিস্থিতিকে ভয়ংকর খারাপ নজির বলে অভিহিত করেছেন অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও বিশ্লেষকরা। তাঁরা অবিলম্বে ব্যাংকিং খাতের এমন দুষ্টচক্র ভেঙে দিতে বলেছেন। তাঁরা মনে করেন, পরিচালকদের দখলে বিপুল অঙ্কের ঋণ কেন্দ্রীভূত হওয়া খাতটির জন্য হুমকি ও উদ্বেগের বিষয়। এটা সুশাসনেরও পরিপন্থী।

একটি ব্যাংকে যত টাকা থাকে, তার মাত্র ১০ শতাংশের মতো ব্যাংকের উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের। বাকি ৯০ শতাংশ সাধারণ জনগণের। অথচ সাধারণ জনগণ বা আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে তেমন সুবিধা পান না। সব সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছেন ব্যাংকের পরিচালকেরা। অথচ শেয়ারহোল্ডরা পাচ্ছেন না কোন সুবিধা। বছরশেষে নাম মাত্রা ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছেন।

অথচ ব্যাংকের টাকা ঋণের নাম করে ব্যাংকের পরিচালকরাই নিচ্ছেন, কখনও পরিচালক পরিচয় দিয়ে, আবার কখনও অন্য কারও নামে। কখনও নিজের ব্যাংক থেকে, কখনও অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ঋণ দিয়েছে সাত লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকের পরিচালকরা ঋণ নিয়েছেন এক লাখ ৪৩ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী ব্যাংকের পরিচালকেরা নিজ ব্যাংক থেকে তাদের মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ নিতে পারেন না। তবে নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার কোটা শেষ হয়ে গেলে তখন ভিন্ন পথের আশ্রয় নেন ব্যাংক পরিচালকেরা। কখনো বেনামে আবার কখনো অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেন তারা। অন্যদিকে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য কোনো সীমা না থাকায় সেটাকে কাজে লাগান তারা। এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের পরিচালকের সঙ্গে যোগসাজশ করে ঋণ নেন। এতে ঋণ পাওয়ার উপযোগী সাধারণ গ্রাহকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস দেখায় না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদন ও তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা গেছে, পরিচালকেরা এখন শুধু ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন না, এর পাশাপাশি তারা সিএসআরের (করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা) টাকায়ও ভাগ বসাচ্ছেন। নিজেদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে সিএসআরের টাকা নিয়ে নিচ্ছেন। আর ব্যাংক সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজ পেতে ভেন্ডর ও থার্ড পার্টি হিসেবে একাধিক কোম্পানি খুলেছেন অনেকে।

ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছেন। টাকার বিনিময়ে অনেককে চাকরি দিচ্ছেন পরিচালক। এছাড়া ঋণ মঞ্জুর, সুদ মওকুফ ও ঋণ পুনঃতপশিলের ক্ষেত্রেও নানা সুবিধা নিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এ ঋণ যাতে আর ফেরত দিতে না হয়, তার সব ধরনের বন্দোবস্ত করেছেন তারা। তাদের ঋণ খলাপি হওয়ার আগেই পুনর্গঠন করা হয়, যে কারণে ঋণখেলাপির তালিকায় তাদের নামও আসে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ঋণ নেওয়ার জন্য আবেদন করতে চাপ দেয়। আর সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঞ্জুর হওয়া ঋণের টাকা নিয়ে নেন ব্যাংকের প্রভাবশালী অনেক পরিচালক। এভাবে ব্যবসায়ীদের কৌশলে ঠকান ব্যাংকের পরিচালকেরা।

গত বছর জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের ঋণের তথ্য তুলে ধরেন। সেখানে দেখা যায় যে, এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬১৬ কোটি ১২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন, যা ব্যাংক খাতে মোট বিতরণ হওয়া ঋণের ১১ দশমিক ২১ শতাংশ। এটা অবশ্য ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত তথ্য।

সেই সময়ের তথ্যে দেখা যায়, অন্য ব্যাংকগুলোর পরিচালকেরা সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছেন ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক থেকে। অন্য ব্যাংকের পরিচালকেরা ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ১৯ হাজার ১৭৫ কোটি ৭৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং এক্সিম ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ১০ হাজার ৫১৩ কোটি ৬৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। সরকারি খাতের জনতা ব্যাংক অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের কাছে পাবে ১০ হাজার ১২৬ কোটি ৭২ লাখ ৫ হাজার টাকা। পূবালী ব্যাংক অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের কাছে পাবে ৯ হাজার ৭৩৫ কোটি ৫২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

তথ্যমতে, পরিচালকদের নিজ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬১৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ। এছাড়া ব্যাংক পরিচালকের বিরুদ্ধে বেনামে প্রচুর ঋণ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংকের পরিচালকদের অনেক বেশি ক্ষমতা দেওয়ার কারণে এ ধরনের কার্যক্রমে লিপ্ত হয়েছেন তারা। তাদের মতে, একই পরিবার থেকে দুই জনের পরিবর্তে চার জন পর্যন্ত পরিচালক রাখার বিধান, পরিচালকের মেয়াদ পরপর দুই বারে সর্বোচ্চ ছয় বছরের পরিবর্তে পরপর তিন বারে সর্বোচ্চ ৯ বছর করার বিধান এবং একই পরিবারের চার সদস্যের বাইরে অন্যান্য আত্মীয়স্বজনকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগের সুযোগ রাখায় ব্যাংক পরিচালকদের ক্ষমতা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। এতে হয়তো আইন রক্ষা হচ্ছে, কিন্তু এটা দেশের জন্য কোনোভাবেই ভালো নয়। আগেও মাঝে মাঝে এমন ঘটত। এটা দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। তবে এখন বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে না। আমি যখন ডেপুটি গভর্নর ছিলাম, তখন ৩৪ জন বোর্ড সদস্যকে এমন কাজের জন্য বোর্ড থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।

সাবেক এই ব্যাংকার বলেন, যে হিসাব পাওয়া যায়, সে অনুযায়ী এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের পরিচালকেরা নিয়েছেন ১ লাখ কোটি টাকার ওপরে। এ টাকা যদি জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করা যেত, তাহলে অনেক উপকার পাওয়া যেত। অনেক উদ্যোক্তা ব্যবসা করতে পারতেন। অনেকে তাদের ব্যবসা বাড়াতে পারতেন।

এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘সমঝোতা করে এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়াটা অনৈতিক হবে। আবার দেখা যাবে, এ ধরনের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় জামানতও থাকে না। ফলে পরবর্তীতে ব্যাংকের পর্ষদ ওই প্রতিষ্ঠানকে বেনামি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে খেলাপী ঘোষণা করে।’

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এটা অনেকটা ভাগাভাগির মতো। এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিলেন এবং এটা তিনি পরিশোধ করলেন না। বিনিময়ে অন্য ব্যাংকের পরিচালক আবার তাঁর ব্যাংক থেকে ঋণ নিলেন কিন্তু পরিশোধ করলেন না। এভাবে পরিচালকরা ভাগাভাগি করে ঋণ নিচ্ছেন। এটা ব্যাংকিং খাতের জন্য খারাপ দৃষ্টান্ত এবং সুশাসনের পরিপন্থী।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকরা ঋণ নিয়েছেন ১১ হাজার ৯১০ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৯ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। এছাড়া, পরিচালকরা জনতা ব্যাংক থেকে ৮ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ৬ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন।

বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকরা ব্যাংক এশিয়া থেকে ঋণ নিয়েছেন ৫ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা। ঢাকা ব্যাংক থেকে তারা নিজেদের পরিচয় দিয়ে ঋণ নিয়েছেন ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এর বাইরে আরও ৫০টি ব্যাংক থেকে পরিচালকরা প্রায় এক লাখ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকরা মেঘনা ব্যাংক থেকে ৪২৮ কোটি টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংক থেকে ৩৫৩ কোটি টাকা,

মধুমতি ব্যাংক থেকে ৪০২ কোটি টাকা, এনআরবি ব্যাংক থেকে ১৭৪ কোটি টাকা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ৯৪৯ কোটি টাকা, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক থেকে ৬২১ কোটি টাকা, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক থেকে ৫৮৮ কোটি টাকা, দি ফারমার্স ব্যাংক থেকে ২০৮ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ২৯টি ব্যাংকের পরিচালকেরা নিজের ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছেন ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে মেঘনা ব্যাংকের কয়েকজন পরিচালক ওই ব্যাংক নিয়েছেন ১০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। মিডল্যান্ড ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ১৮ কোটি টাকা, মধুমতি ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা, এনআরবি ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ২ কোটি ১০ লাখ টাকা, সীমান্ত ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৩৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারার ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৬৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

নিজেদের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া ব্যাংকগুলো হলো ন্যাশনাল ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনও পরিচালক তার মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ নিজ ব্যাংক থেকে নিতে পারবেন না। এ কারণে পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে বেশি পরিমাণ ঋণ নেন।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি একটি ব্যাংকের পরিচালক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘পরিচালকদের ঋণ নেওয়ার যে নীতিমালা রয়েছে, সেই নীতিমালা মেনেই সবাই ঋণ নেন। এছাড়া, পরিচালকদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী। ফলে যে কেউ নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে যেকোনও ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই। তবে সমঝোতা করে একজন আরেকজনের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ঘটনাও এই সমাজে ঘটছে।’

এ প্রসঙ্গে ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে নিয়ম মেনে যে কোনও ব্যাংক থেকে পরিচালকরা ঋণ নিতে পারেন। তবে ভেতরে-ভেতরে সমঝোতা করে যদি ঋণ দেওয়া-নেওয়া হয়, নিয়ম না মেনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া ঋণ নেওয়া হয়, সেটা অনৈতিক।’

কয়েক মাস আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ব্যাংকিং খাতবিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্যাংকগুলো যে জনগণের আমানতে পরিচালিত হয়, এই বাস্তবতা দিনে দিনে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। জনগণের আমানত কিছু মানুষের ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হচ্ছে এবং খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, তথাকথিত ব্যাংক মালিক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার এই তিন পক্ষই জনগণের আমানতের কথা ভুলে গিয়ে লুটপাটকারী ও ঋণখেলাপিদের সুযোগ করে দিচ্ছে। সরকার অনেক সময় ঋণখেলাপি, অর্থ আত্মসাৎকারী ও জালিয়াতদের সহায়ক শক্তির ভূমিকা পালন করছে। অনেক সময় মনে হচ্ছে সরকার তাদের কাছে জিম্মি। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন ও নীতিমালা এমনিতেই দুর্বল। সরকার আরো দুর্বল করে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকাই খেলাপি, যা একাধিকবার পুনর্গঠিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে আবার খেলাপি হলেও তিনি কখনোই খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হন না।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অন্য আরেকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মচারীর নামে, ভাই-ভাতিজা, ভাতিজির মালিকানা দেখিয়ে, এমনকি জামানত ছাড়াও ঋণ নিয়েছেন, যা আইনগত বা নৈতিকভাবে নিতে পারেন না ঐ চেয়ারম্যান।