মোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নতুন বছরের শুরুতেই পুঁজিবাজারের বড় উত্থান দিয়ে লেনদেন শুরু হয়েছে। মুলত ২০১০ সালের ভয়াবহ ধসের এক দশক পরে গতি এসেছে পুঁজিবাজারে। একদিনে করোনা অতিমারীর কারণে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সঙ্কুচিত হওয়া, ব্যাংক আমানতে সুদের হার কমে যাওয়া, সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি এবং পুঁজিবাজারে নিঃশর্তে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ায় পুঁজিবাজার নিয়ে সব ধরনের মানুষের আগ্রহও দেখা যাচ্ছে। নতুন আশায় দীর্ঘদিনের নিষ্কিয় বিনিয়োগকারীরাও আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন বাজারে। গত দুই মাসে দেড় লাখের বেশি বিনিয়োগকারী নতুন পুঁজিবাজারে এসেছেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি বলেছেন, গত ছয় মাসে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি কালো টাকা সাদা হয়েছে। অফিসিয়ালি এ টাকাগুলো মূল ধারায় যুক্ত হওয়ায় অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। মুলত টাকা পলিসিগত কারণে কালো হয়। অনেকেই ট্যাক্স দেয়, আবার অনেকেই দেয় না। ট্যাক্স রেট বেশি ছিল। আস্তে আস্তে এগুলো কমিয়ে আনতে হবে। সুদের হার অনেক বেশি ছিল। এত বেশি সুদ হারে কোনও দেশে শিল্পায়ন হয় না।

শিল্পায়ন না হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না। এখন ৬ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছে, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিদেশে টাকা রাখলে উল্টো টাকা দিতে হবে। সেখানে লাভ পায় না, যদিও পায় সেটা এক থেকে দেড় শতাংশ। সেখানে আমাদের দেশে ৬ শতাংশ পাচ্ছে। এটা হলো আমাদের ইতিবাচক দিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রেমিট্যান্স খাতে গত এক বছরে বা ছয় মাসে অর্জন হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। পুরো বছরে আমাদের ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি আসবে। এই টাকাগুলো পুঁজিবাজারে যাবে। অফিসিয়ালি এ টাকাগুলো আসায় আমাদের অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। পুরোপুরি না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সফল হয়েছি। আমরা চাই কালো টাকা সাদা হোক। টাকা কালো হওয়ার কারণ নিয়ে অনেকবার ব্যাখ্যা দিয়েছি।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘একজনের বাড়ি বিক্রি হচ্ছে, অথচ দেখানো হচ্ছে না। বিক্রি যেখানে ১০টা সেটা দেখাচ্ছে এক টাকা। ১০ টাকার ওপরে গেলে স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হয়, সেজন্য স্ট্যাম্প ডিউটি কমিয়ে দিয়েছি। এরকম যেসব জায়গায় হাত দেওয়া দরকার সেখানে করেছি। সেগুলো করার কারণেই এখন কালো টাকা সাদা হচ্ছে। যেমন আমাদের পুঁজিবাজার। এটা সব দেশেই করে।’

এদিকে করোনা মহামারীর বছরে অর্থনীতির মূল ধারায় ফিরেছে বিপুল পরিমাণে ‘কালো টাকা’। সহজ করে বললে, অবৈধভাবে অর্জিত অথবা কর ফাঁকি দিয়ে গোপনে সঞ্চিত অর্থই অর্থনীতির ভাষায় ‘কালো টাকা’। এনবিআরের দেয়া তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে কালো টাকা সাদা হয়েছে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা। এই সময়ে ৬ হাজার ৯৩৭ জন ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতা তাদের অপ্রদর্শিত সম্পদ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছেন। এতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১ হাজার ১১০ কোটি টাকা। এই সময়ে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ এসেছে আবাসন খাতে।

নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, ফ্ল্যাট ও জমি কিনে কালো টাকা সাদা করেছেন ৬ হাজার ৭৪৯ জন। সরকার এই খাত থেকে কর পেয়েছে ৮৫৮ কোটি টাকা। আর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করেছেন ১৮৮ জন। তাদের কাছ থেকে সরকার কর পেয়েছে ২৫২ কোটি টাকা। এই কালো টাকা সাদা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত আছে অনেকের।

কেউ বলছেন, দেশে কালো টাকা সাদা না হলে এসব অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। অন্তত অর্থ পাচার বন্ধে বিনা শর্তে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া উচিত। আবার অনেকেই বলছেন, এ ধরনের সুযোগ সৎ করদাতাদের কর দিতে নিরুৎসাহিত করবে।

জানা গেছে, করোনা মহামারীর কারণে দেশের অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে আয়কর আদায়ে যে প্রভাব পড়বে, তা কাটিয়ে উঠতে চলতি অর্থবছরে আয়কর দেয়ার মাধ্যমে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ দিয়েছে সরকার। গত অর্থবছর পর্যন্ত করদাতারা আয়কর বিধি অনুসারে তাদের অপ্রদর্শিত আয় ঘোষণা করতে পারতেন। তবে, সরকারের অন্যান্য সংস্থা চাইলে এই আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারত। ফলে খুব কম মানুষই এই সুযোগ নিতে আগ্রহী হয়েছিলেন।

যার কারণে এবার এনবিআর আইনে পরিবর্তন এনে নতুন বিধান করেছে যে, এই আয়ের উৎস সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। নতুন বিধানের আওতায় করদাতারা জমি, ভবন ও ফ্ল্যাটসহ যে কোন অঘোষিত সম্পত্তি এলাকার ওপর নির্ভর করে প্রতি বর্গমিটারে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর প্রদানের মাধ্যমে বৈধ করতে পারবেন। করদাতারা তাদের আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত আয়ের নগদ অর্থ, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোন যে কোন সম্পদের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে বৈধ করতে পারবে।

ব্যক্তি পর্যায়ে প্রদর্শিত আয়ের ওপর সর্বোচ্চ প্রদেয় কর ২৫ শতাংশ। সেখানে অপ্রদর্শিত আয়ের ওপর এই হার মাত্র ১০ শতাংশ। তবে এনবিআর কালো টাকা সাদা করার এই সুযোগ দিচ্ছে এক বছরের জন্য। ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কালো টাকার উৎস না জানিয়েই সাদা করা যাবে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘অন্য আইনে যাই থাকুক না কেন দশ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও এপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারে ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড, বা অন্য কোন সিকিউরিটিজের ওপর দশ শতাংশ কর প্রদান করে আয়কর রিটার্নে দেখালে অন্য কোন কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবেনা। তবে এসব সুযোগ শুধু চলতি অর্থবছরের জন্যই দেয়া হয়েছে।’

এনবিআর বলছে, বাংলাদেশে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া নতুন কিছু নয়। এবার করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কিছু বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে বাজেটে। জানতে চাইলে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমতুল মুনিম বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৬ হাজার ৯৩৭ জন ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতা তাদের অপ্রদর্শিত সম্পদ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছেন।

আয়কর রিটার্নে ঘোষণা দিয়ে সরকারকে মোট ১ হাজার ১১০ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছেন তারা। সর্বোচ্চ বিনিয়োগ এসেছে আবাসন খাতে। তবে ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের রিটার্ন দেয়ার হার গত বছরের তুলনায় কমেছে এ অর্থবছরে। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দিয়েছেন ২০ লাখ ৪১ হাজার করদাতা। আগের বছর এটি ছিল ২২ লাখের কিছু বেশি। কালো টাকা বিনিয়োগের বিদেশে পাচারের পরিবর্তে দেশে বিনিয়োগের এ হারকে ইতিবাচক উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, টাকা বিদেশে চলে যাওয়ার চেয়ে যে কোন উপায়ে দেশে বিনিয়োগ হওয়া ভাল।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলন, শুধু প্রশ্ন না করার সুযোগ কিংবা কর কমিয়ে দেয়া নয় বরং আরও কিছু সুযোগ দেয়া হয়েছে যার সুযোগ নিচ্ছেন কালো টাকার মালিকদের অনেকে। উৎস জিজ্ঞেস করা যাবেনা এটা মূল কারণ।

কিন্তু এছাড়াও এ বছর বলা হয়েছে যে কোন ভূমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি, জমি লোকেশন ও প্রতি বর্গমিটার অনুযায়ী নির্দিষ্ট কর দিয়ে সাদা করা যাবে। পাশাপাশি এফডিআর বা কোন সঞ্চয় থাকলে তাও সাদা করা যাবে। কোন ক্ষেত্রেই উৎস জিজ্ঞেস করা যাবেনা। তিনি বলেন, এমন বিধান করা হয়েছে করোনা পরিস্থিতি দেখিয়ে যে একই পেশার করদাতা নিয়মিত কর দিলে বেশি কর দিতে হচ্ছে আবার যারা কর দেননি আগে তারা এখন কম কর দিয়ে টাকা সাদা করে নিচ্ছেন।

এনবিআরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রায় সব সরকারই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে ১৬ অর্থবছরে এ সুযোগ দিয়ে সব মিলিয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা ‘সাদা’ হয়েছে। আর তা থেকে সরকার কর পেয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার মতো। সবচেয়ে বেশি অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগে এসেছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়, যখন দেশের পরিস্থিতি ছিল একেবারেই ভিন্ন। ওই দুই বছরে ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ নিয়েছিল; বৈধ হয়েছিল ৯ হাজার কোটি টাকা।

তা থেকে সরকার কর পেয়েছিল এক হাজার ২০০ কোটি টাকার কিছু বেশি। এর মধ্যে ২০০৭ সালে ৮০৩ কোটি টাকা এবং পরের বছর ৪০০ কোটি টাকা কর পেয়েছিল এনবিআর। আওয়ামী লীগের আগের দুই মেয়াদে যথাক্রমে এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকা এবং চার হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা সাদা করা হয়েছিল।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত আয় প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা কর দিয়ে বৈধ করেছেন ৭ হাজার ৪৪৫ জন করদাতা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। কারণ পুরো অর্থবছরেও কখনও এত বিপুল পরিমাণ টাকা সাদা করার উদাহরণ নেই।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ফ্ল্যাট বা প্লটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ থেকে রাজস্ব বোর্ডের আয় হয়েছে ৩০২ কোটি টাকা। এতে কালো টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে মহামারীর আঘাত পুষিয়ে নিয়ে গতি ফিরেছে আবাসন খাতে। আগের তুলনায় বেড়েছে প্লট ও ফ্ল্যাটের বিক্রি। অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন বিনিয়োগের কথাও ভাবছে।

জানতে চাইলে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ চেয়ে আসছিলাম। প্রায় একযুগ পর চলতি অর্থবছরের বাজেটে সুযোগটি দেয়া হয়েছে। গতি ফিরেছে আবাসন খাতে। এবার আবাসন খাতে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় দেশের বাইরে অর্থ পাচার কমেছে।

এছাড়া আবাসন খাতে বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতেও এক ধরনের চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে।’ বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ আগামী কয়েক বছর অব্যাহত রাখার জন্য সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর বিভাগের কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দায়িত্বে থাকা সদস্য হাফিজ আহমেদ মুর্শেদ বলেন, অপ্রদর্শিত আয় সম্পর্কিত আইনে পরিবর্তন এসেছে চলতি অর্থবছরের বাজেটে, যা করদাতাদের অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে উৎসাহিত করছে। তিনি বলেন, প্রধান ফ্যাক্টরটাই হলো আইন। আইনটা এবার করা হয়েছে।

এর আগে কোন আইনের আওতায় তারা দেখাতে পারছিলেননা। বেশ কয়েক বছর পর এ ধরনের আইন হওয়াতে তারা সাহস পাচ্ছে। কারণ আইন অনুযায়ী কোন সংস্থা তাদের এখন আর কোন প্রশ্ন করতে পারবেনা। কিন্তু অপ্রদর্শিত আয় কর পরিশোধ করে সাদা বা বৈধ করলে অন্য কোন সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না এমন বিধান তো আগেও ছিল তাহলে এবার কেন বেশি টাকা সাদা হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আহমেদ মুর্শেদ বলেন, এবার এটাকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। আবাসন খাতের সুযোগ আগেও ছিল। কিন্তু এবার যোগ হয়েছে নগদ টাকার বিষয়।

রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা, আয়কর আইনজীবী ও কর বিশেষজ্ঞদের ধারণা বাংলাদেশে অপ্রদর্শিত আয়ের একটি বড় অংশই পেশাজীবীদের অপ্রদর্শিত আয়। যেমন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, এনজিও খাত কিংবা এমন অনেক পেশায় চাকরির বাইরেও পেশাগত চর্চার মাধ্যমে অর্থ আয়ের সুযোগ আছে। এছাড়া ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যবসা, আন্ডার কিংবা ওভার ইনভয়েসিং এবং জমি ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কালো টাকা তৈরি হয়।

তবে বাংলাদেশে কত টাকা ‘অপ্রদর্শিত’, অর্থাৎ আয়কর বিবরণীর ঘোষিত আয়ের বাইরে রয়ে গেছে- তা নিয়ে সাম্প্রতিক কোন গবেষণা নেই। তবে বিশ্বব্যাংক ২০০৫ সালের এক গবেষণায় বলেছিল, ২০০২-২০০৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ ছিল মোট জিডিপির ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১১ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় কালো টাকা নিয়ে একটি জরিপ করেছিল।

তাতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে ২০১০ সালে কালো টাকার পরিমাণ ছিল জিডিপির ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ ছিল জিডিপির ৭ শতাংশ। আর ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত গড়ে কালো টাকার পরিমাণ ছিল জিডিপির ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বাংলাদেশে অবৈধ আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে মাদক চোরাকারবার, অবৈধ বাণিজ্য, ঘুষ ও দুর্নীতিকে চিহ্নিত করেছিল বিশ্বব্যাংক।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবির করা ‘অদৃশ্য অর্থনীতি’ শীর্ষক এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছিল যে জিডিপির ১০ থেকে ৩৮ শতাংশের মধ্যে এটি ওঠানামা করে। সংস্থাটি তখন গবেষণার সময় যে তথ্য সংগ্রহ করেছিল তাতে দেখা যাচ্ছিল যে ২০০৯-১০ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা হয়েছে। তখন ১ হাজার ৯২৩ জন প্রায় এক হাজার ২১৩ কোটি টাকা সেবার সাদা করেছিলেন।