দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারের বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ভবিষ্যত নিয়ে দু:চিন্তায় পড়েছেন। তারা আদৌ মুল পুঁজি ফিরে পাবেন না কিনা এ নিয়ে দু:চিন্তায় রয়েছেন। কারন কোম্পানিটির অবশেষে গন্তব্য হলো ওভার দ্যা কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি)। তবে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারনা করছেন বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন। মুলত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে ধ্বংসের নায়ক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী।

শেয়ার বাজার থেকে তোলা ৪শ’কোটি টাকারও হিসাব নেই। পাশাপাশি সিভিল এভিয়েশনের ১২৫ কোটি টাকা পাওনা আদৌ পরিশোধ করছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এছাড়া পুরনো এয়ারক্র্যাফটগুলো অবৈধভাবে পড়ে আছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পার্কিংয়ে জায়গা দখল করে। এয়ারলাইন্স চালাতে গিয়ে ব্যাপক দুর্নাম কুড়ানো উড়োজাহাজ কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ছিল তার প্রতিষ্ঠান, যা এখন বন্ধ যা পুঁজিবাজারে যায়গা হয়েছে ওটিসি মার্কেটে।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ওভার দ্যা কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি) যাওয়ার ফলে লেনদেন জটিলতায় পড়ল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৭১ কোটি ৫৭ লাখ শেয়ার। ২০১০ সালে তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানি ১০ বছরে বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে দিয়েছে এটির ৮২ কোটি ৮০ লাখ শেয়ারের মধ্যে ৮৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ মালিকানা।

দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান না করা, নির্দিষ্ট কার্যালয় না থাকা, সিকিউরিটিজ আইন পরিপালনে ব্যর্থ হওয়া কোম্পানিগুলোকে মূল মার্কেটের জেড ক্যাটাগরি থেকে নিয়ে আসা হয় ওটিসি মার্কেটে। ওটিসি মার্কেটের সবচেয়ে বড় জটিলতা হচ্ছে লেনদেন প্রক্রিয়া।

এ বিষয়ে ডিএসইর উপ-পরিচালক শফিকুর রহমান বলেন, ওটিসি মার্কেটের শেয়ার দর ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করা হয়। প্রথমে ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার পর ব্রোকার হাউজ সেই শেয়ার সেটেলমেন্ট করে ডিএসইকে জমা দেবে। তা অনুমোদন হওয়ার পরই তা বিনিয়োগকারীর হিসেবে জমা হবে। এ নিয়ে ভোগান্তিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিনিয়োগকারী আবু সালেহ বলেন, ‘আমার প্রায় ২ লাখ ৯১ হাজার শেয়ার রয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের। গড় দাম প্রায় ৬ টাকা। বিভিন্ন সময়ে আলোচনা ছিল কোম্পানিটি আবার চালু হবে। সেই আশায় শেয়ার ধরে রেখেছিলাম। এখন ওটিসিতে যাওয়ায় পুরো বিনিয়োগ ঝুঁকিতে চলে গেল।’

বাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে সব ধরনের কোম্পানি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যে কোম্পানি বছরের পর বছর কোনো লভ্যাংশ প্রদান করে না, সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন করে না, এমন কোম্পানি যদি ভালো কোম্পানির সাথে থাকে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা সেটির প্রতিও আকৃষ্ট হতে পারে।’  তিনি বলেন, ‘আমরা বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে বললাম, আর সাথে খারাপ শেয়ার রেখে দিলাম, তাহলে সেটা ভুল হবে।’ তিনি বলেন, ‘ওটিসি মার্কেটে লেনদেন প্রক্রিয়া সহজ করা উচিত। তাহলে হয়তো এই মার্কেটও সচল করা সম্ভব হবে।’

কোথায় আছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ: উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডে ৭ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ঢাকা অফিস। প্রায় এক হাজার স্কয়ার ফুটের এই ফ্লাটটিতে কয়েকটি রুম থাকলে ছোট একটা রুমে অফিস করেন তিন জন।
তাদের এক জন বেলায়েত হোসেন দায়িত্ব পালন করছেন হিসাব কর্মকর্তা হিসেবে। কোম্পানি নিয়ে তার কোনো উচ্ছ্বাস নেই। নেই কোনো কর্মচাঞ্চল্য। তিনি বলেন, কোম্পানির কোনো ব্রাঞ্চ অফিস নেই। সবই বন্ধ।

কী বলেছেন কোম্পানির কর্মকর্তারা: এ বিষয়ে কথা বললে ইউনাইটেড এয়ারের সহকারী পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি করোনা আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে ছুটিতে আছি। অফিসের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। ফলে কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।’ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্যারের সঙ্গে দেখা হবে না। তিনি বেশিরভাগ সময় বিদেশ থাকেন।’

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ আবার চালু হবে কিনা এ প্রশ্নে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের এমডি স্যার বিএসইসিতে বলেছিলেন, যদি কোনো কোম্পানি অধিগ্রহণ করতে চায়, তাহলে তাদের দিয়ে হলেও চালু করতে। কিন্তু বাস্তবে এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।’ অফিসে সহকারীর কাজ করেন সামাদ। তিনি বলেন, ‘স্যার (এমডি) খুব কম আসেন। যখন আসেন, তখনই মিটিং করেন।’ তিনি জানান, করোনার কারণে তিনি বর্তমানে বেতন অর্ধেক পাচ্ছেন।

সর্বশেষ আর্থিক হিসাব: কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক বিবরণী তৈরি করা হয়েছে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের। সেখানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত কোম্পানি কোনো আয় নেই। তবে ২০১৬ সালের রেভিনিউ দেখানো হয়েছে ১১৯ কোটি টাকা।

প্রতিষ্ঠানের কোনো সেল নেই ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। এমনি কোম্পানির বিজ্ঞাপন, ফ্লাইট বাতিলের ফলে খরচ/রিফান্ড, ভর্তুকি (এজেন্ট) এবং ট্রাভেল এজেন্ট কমিশন বাবদ কোনো খরচ হয়নি। যেখানে ২০১৬ সালে এই খাত ব্যয় দেখানো হয়েছে মোট ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। ব্যাংকের

এফডিআর থেকে ২০১৭ সালে আয় হয়েছে ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যা ২০১৬ সালে ছিল ৮৬ লাখ ৫৫ হাজার ৬০৩ টাকা।
কার কাছে কত শেয়ার: কোম্পানির মোট শেয়ার ৮২ কোটি ৮০ লাখ ৯৮ হাজার ৪৮০টি। এর মধ্যে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে আছে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ বা ২ কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৪৬২টি শেয়ার, যা সর্বশেষ দামে মূল্য দাঁড়ায় ৩ কোটি ৯৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬৭৭ টাকা।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ১১ দশমিক ০৭ শতাংশ বা ৯ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার ৫০১টি শেয়ার। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৭১ কোটি ৫৭ লাখ ২৫ হাজার ৫১৬টি শেয়ার, যার মূল্য ১৩৫ কোটি ৯৮ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮১ টাকা।