দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আইপিও শেয়ারে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। ফলে আইপিও শেয়ার এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে আতঙ্ক। সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর লেনদেনের শুরুতে ডোমিনোস স্টিল বিল্ডিং সিস্টেমস, রবি আজিয়াটা ও এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের শেয়ারের লেনদেনের শুরুতে বিনিয়োগকারীদের কাছে আগ্রহের শীর্ষে ছিল। তবে টানা দর বাড়তে বাড়তে অতিমুল্যায়িত হয়ে পড়ে। এরপর কমতে থাকে টানা শেয়ারের দর। ফলে আইপিও শেয়ারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন বিনিয়োগকারীরা।

কারন মীর আকতার হোসাইন লিমিটেডের শেয়ারে আগ্রহ ছিল না বিনিয়োগকারীদের। ফলে বাজারে আসার তৃতীয় কার্যদিবসের মাথায় কমতে থাকে শেয়ারের দর। আগের তিনটি কোম্পানির শেয়ার সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন শুরুর পর টানা দাম বৃদ্ধির যে প্রবণতা দেখা গেছে, মীর আকতারের ক্ষেত্রে সেভাবে দেখা যায়নি।

পরপর দুই কার্যদিবসে মীর আকতারের দাম বেড়েছে। কিন্তু প্রথম দিন যতটুকু বাড়া সম্ভব, ততটুকু বাড়লেও দ্বিতীয় দিনে যতটুকু বাড়া সম্ভব, ততটুকু বাড়েনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকাভুক্তির পর প্রথম দুই কার্যদিবসে ৫০ শতাংশ করে আর এরপর ১০ শতাংশ করে দাম বাড়া সম্ভব।

নানা সময় দেখা যায়, নতুন শেয়ার এলেই কোম্পানির মৌলভিত্তি, শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ও আয়, লভ্যাংশ দেওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা না করেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন অনেক বিনিয়োগকারী। আর এই হুলুস্থুল শেষে দাম কমে এলে তাদের অর্থ আটকে যায় দীর্ঘদিনের জন্য। কেউ কেউ বড় লোকসান দিয়ে বের হন।

চলতি বছর রবি তালিকাভুক্তির পর পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকে। গত ২৩ ডিসেম্বর লেনদেন শুরুর পর টানা ১৩ কার্যদিবসে সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়ে শেয়ারের দর এক পর্যায়ে ১০ টাকার শেয়ার পৌঁছে ৭৭ টাকায়। কিন্তু এর পরেই আবার উল্টো চিত্র। কমতে কমতে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৪৬ টাকায়। এনার্জিপ্যাকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

গত ১৮ জানুয়ারি লেনদেন শুরু করা ৩১ টাকা আইপিওর শেয়ার টানা পাঁচ কার্যদিবস বেড়ে হয় ৯২ টাকা। পরদিন সকালেই তা উঠে ১০১ টাকা ৮০ পয়সায়। সেদিনই বিকালে দাম কমে দাঁড়ায় ৮৩ টাকা ৪০ পয়সা। এরপর ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে এই শেয়ারের দর এখন ৫৯ টাকা ২০ পয়সা।

ডোমিনোস স্টিলের লেনদেন শুরু হয় গত ১ ডিসেম্বর। টানা আট কার্যদিবসে ১০ টাকার শেয়ার বেড়ে হয় ৪৩ টাকা ৩০ পয়সায়। এরপর থেকেই কমতে থাকে। এখন এই কোম্পানির শেয়ার দর ২৩ টাকা ৫০ পয়সা। এই পরিস্থিতিতে মীর আকতারের শেয়ার লেনদেন শুরুর আগেই পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে নানা কথা লেখা হতে থাকে। নতুন শেয়ার নিয়ে সাবধান করেন অনেকে।

বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে এই কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হয়েছে ৬০ টাকায়। ১০ শতাংশ ছাড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার পেয়েছেন ৫৪ টাকায়। এই হিসাবে প্রথম দিন ৮১ টাকা এবং দ্বিতীয় দিন ১২১ টাকা ৫০ পয়সা হতে পারত। প্রথম দিনে ৮১ টাকায় লেনদেন হয়েছে কেবল ৩২০টি শেয়ারের। সেই হিসাবে আসল লেনদেন হয়েছে মূলত দ্বিতীয় দিনে। এদিন বিক্রি হয় ৪৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯১টি শেয়ার।

কোম্পানিটি দুই কোটি সাত লাখ ৭১ হাজার ৫৪৭টি শেয়ার ছেড়ে ১২৫ কোটি টাকা তুলেছে। এই হিসাবে চার ভাগের একভাগের কিছু কম শেয়ার দুই দিনেই হাতবদল হলো। আগের তিনটি কোম্পানির সঙ্গে মীর আক্তারের শেয়ারের লেনদেনের পার্থক্য হলো, দ্বিতীয় কার্যদিবসে এই কোম্পানিটি শেয়ারমূল্য প্রান্তসীমা তো স্পষ্ট করেইনি, উল্টো উঠানামা কমেছে। সর্বোচ্চ ১১৭ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ৯৫ টাকায় লেনদেন হয়েছে। দিন শেষে ১০০ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন শেষ হয়।

রবি পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর সময় দুই প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল চার পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ১২ টাকা ৬৪ পয়সা। অন্যদিকে এনার্জিপ্যাক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রথম প্রান্তিকের পর ডায়ালুটেড ইপিএস (শেয়ারপ্রতি আয়) ৩৫ পয়সা। ডায়ালুটেড শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ৪৮ টাকা ৭৪ পয়সা।

২০১৯ সালে তালিকাভুক্ত রানার অটোমোবাইলের শেয়ার কিনে বিপুল পরিমাণ লোকসানে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ৭৫ টাকায় ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৬৭ টাকায় যে শেয়ার পেয়েছেন, সেটির দাম কয়েক দিনেই উঠে যায় ১১১ টাকা ৬০ পয়সায়। বেশি দামে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনেন ভালো মুনাফার আশায়।

কিন্তু প্রথম বছরে শেয়ারপ্রতি এক টাকা নগদ ও পাঁচ শতাংশ বোনাস শেয়ার ও দ্বিতীয় বছর আবার এক টাকা নগদ মুনাফা দিয়েছে রানার। এখন শেয়ারের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকা ৬০ পয়সা। ২০ ডিসেম্বর লেনদেন শুরু করে বিমা খাতের কোম্পানি ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স। এই খাত নিয়ে এখন বাজারে চলছে নানা আলোচনা। প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। বিমা খাতের চাঙাভাবের মধ্যে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের দাম লেনদেন শুরুর ১৩ দিনে উঠে যায় ৫৪ টাকায়। সেটিও কমে এখন লেনদেন হচ্ছে ২৬ টাকা ৯০ পয়সায়।