মিজানুর রহমান ও তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে হঠাৎ সূচকের বড় দরপতনের কারন এ প্রশ্ন এখন ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীর মুখে মুখে। কারন বাংলাদেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ ১৬৮ পয়েন্ট সূচক হারিয়েছিল। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশে যখন প্রায় স্বাভাবিক অবস্থা, তখন ১৪২ পয়েন্ট সূচকের দরপতন নিয়ে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ও বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলেছে। তাছাড়া গত দুই বছরে এত বড় পতন দেখেনি দেশের পুঁজিবাজার। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দুই শতাধিক কোম্পানির শেয়ারে মূল্য পতনে এক দিনেই সূচক কমেছে আড়াই শতাংশ।

রোববার সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হতেই ছয় পয়েন্ট বেড়ে গেলেও এরপর থেকে টানা পড়তে থাকে সূচক। টানা পাঁচ কার্যদিবস পতনের পর গত সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার সূচকের উত্থানে বিনিয়োগকারীরা আশান্বিত হন। এক হাজার আটশ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পর তিনশ পয়েন্টের মতো সংশোধন শেষে এই উত্থানে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা জন্মে যে মূল্য সংশোধন বুঝি শেষ হয়েছে। তবে এখন স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মূল্য সংশোধন শেষ হয়নি। বরং প্রায় দেড়শ পয়েন্ট পতনে বাজার নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন শঙ্কা।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী প্রভাষক হোসাইন আলী সবলেন, পুঁজিবাজারের কাজই উঠানামা করা। তবে গত কয়েক কার্যদিবসের পরিস্থিতি দেখে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। কারন গত কয়েক দিনের পুঁজিবাজার সুস্থ বাজার বলে মনে হচ্ছে না। পুঁজিবাজারকে কারা অস্থিতিশীল করতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার এখনই অনুসন্ধান করা দরকার। যেখানে প্রায় ২ হাজার পাঁচ শত কোটি টাকার লেনদেন ৭ শত কোটি টাকার ঘরে চলে আসা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন তিনি। পাশাপাশি লেনদেন কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ছেন বলে তিনি জানান।

একাধিক বিনিয়োগকারীরার সাথে আলাপকালে বলেন, পুঁজিবাজার যেখানে স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে শুরু করছে। সেখানে রোববার বড় দরপতনের কারন কি। এ দরপতন কারা উস্ককে নিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এখনই তদন্ত করা দরকার। কারন যেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে কাজ কওে যাচ্ছে সেখানে দুই বছরের মধ্যে সব্বোর্চ দরপতনের কারন অনুসন্ধান করার দাবিও জানিয়েছেন তারা। তা না হলে পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রক করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে যখন উত্থান শুরু হয়েছিল তখন কয়েকটি কোম্পানির সবচেয়ে বেশি লেনদেন ছিল দৃশ্যমান। এখন সেগুলোর দামও তলানিতে নেমে এসেছে। মাঝে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়লে এখন সেগুলোর দাম কমেছে। তবে পতন যাতে দীর্ঘ না হয় সেদিকেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজর দেয়া উচিত।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘সূচকের পতন অল্প অল্প করে হলে বিনিয়োগকারীরা এতটা আতঙ্কিত হন না, যতটা বড় বা একশ উপর পতন হলে।’ তিনি বলেন, যখন সূচক বাড়ছিল, তখন কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দর অনেক বেড়েছিল। সেগুলোর দর এখন অনেক কমে গেছে। পাশাপাশি যেগুলোর দাম তখন বাড়েনি, সেগুলোর দামও কমছে।’ তিনি বলেন, ‘করে যেন শেয়ারের দর কমছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার তা খতিয়ে দেখা উচিত।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘শেয়ার বাজারে কেন পতন তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমরা পুঁজিবাজারের জন্য অনেক উদ্যোগ নিচ্ছি। কিন্ত যার সবগুলোই পুঁজিবাজারবান্ধব। তারপরও কেন বাজারের লেনদেন বাড়ছে না তা দেখা হবে।’