দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। এভাবে এগোতে থাকলে এখনই বাংলাদেশে বিনিয়োগের সময় ও উপযুক্ত জায়গা। এখন না করলে ভুল হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না। তখন বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগ করা হবে।

মঙ্গলবার আরব আমিরাতের দু্বাইয়ে ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজের আয়োজিত ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : পটেনশিয়াল অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেটস’ শীর্ষক রোড শোতে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এদিন দুবাইয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান প্রথম অনলাইনে বেনিফিশিয়ারি অনার্স (বিও) হিসাব উদ্বোধন করা হয়।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরকে যদি আমাদের বাঁচাতে হয় তাহলে পুঁজিবাজারকে তার নিজস্ব নিয়ম করতে হবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য অর্থসংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা সেটাই করা শুরু করেছি। পুঁজিবাজারকেই পুঁজির সংস্থান করতে হবে। তাই বেশি করে আইপিও দেওয়া চেষ্ট করা হচ্ছে। বাজারে যদি ভালো কোম্পানি আসে তাদেরকে অবশ্যই আইপিও দেওয়া হবে। তাছাড়া বর্তামানে আমরা প্রাইমারি মার্কেটকে গুরুত্ব দিচ্ছি।

প্রাইমারি মার্কেটে ফাইন্যান্স করতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছি ইকুইটি ফাইন্যান্সে আমরা ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা ফাইন্যান্স করছি।কিন্তু বাংলাদেশ সেই আগের অবস্থানে এখন আর নেই। কারন বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক ব্যবসায়ী আছে। আমরা বন্ড নিয়ে আসছি। আর বন্ডের সিকিউর করার জন্য বিভিন্ন ইন্সুরেন্স আসছে। বন্ডের মাধ্যমে আমরা দীর্ঘ সময়ের সমাধান দিবো। বিভিন্ন ব্যাংক আমাদের কাছে যেসব সাবঅর্ডিনেন্ট বন্ড, পারপেচুয়াল বন্ড নিয়ে আসছিলো সব আমরা অনুমোদন দিয়ে দিয়েছি। সরকারি সুকুক বন্ডের মাধ্যমে ৮ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মুজিববর্ষে আজকের এই আয়োজন। বাংলাদেশের ৫০ বছর। এদিকে দুবাইয়েরও ৫০ বছর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশকে করোনার মধ্যে বন্ধ করে দিতে হয়নি। ম্যানেজমেন্টের সাপ্লাইচেন বন্ধ হয়ে গেলে সেই ইকোনমিক ব্যাবস্থাকে সোজা করে দাড় করানো অনেক কঠিন হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী সাপ্লাইচেইন ঠিক রেখেছেন। তিনি এমনভাবে বাংলাদেশকে ম্যানেজ করেছেন দেশ আজ বিশ্বের অন্য দেশগুলোর চেয়ে অনেক নিরাপদে আছে। আমাদের দেশে একটি টিম কাজ করছে।

আর সেই টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমরা সবাই একসাথে কাজ করছি। মানি মার্কেট খুবই ভালো করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের লিকুইডিটি ভালো। আমাদের রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স গ্রোথও ভালো। প্রণোদনা প্যাকেজ বিতরণ ভালো চলছে। এছাড়াও তিনি বলেন, আমি গত দুইদিনে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ও যারা ইনভেস্টর তাদের সাথে মিটিং করেছি।

সবার মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য অনেক আগ্রহ দেখা গেছে। আমাদের দেশের রেটিং বর্তমানে ‘বিবি-‘। এটি যখন ‘এ’ হবে তখন আর বিদেশী বিনিয়োগের দরকার পড়বেনা। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এ গতি আরও বাড়িয়ে দেব। সবাই এক সাথে টিম হিসেবে কাজ করবো।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, গত ২দিন আমরা দুবাইয়ের বিভিন্ন ব্যাংক ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখেছি। আমরা অনেকে ভুলেই গিয়েছিলাম দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের কাজ শেয়ারবাজারের এবং ব্যাংকের কাজ স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেওয়া। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যাংকগুলো ১ বছর মেয়াদি আমানত নিয়ে ৪-৫ বছর মেয়াদি ঋণ দেয়। যাতে করে ঋণ খেলাপি তৈরী হয় এবং ব্যাংকগুলোকে বিপদে পড়তে হয়।

এতো আইপিও কেনো দেওয়া হয় কেউ কেউ এমন প্রশ্ন করে জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে ক্যাপিটাল দেওয়া না হলে, কে দেবে? সেকেন্ডারি মার্কেট হলো বাহির হওয়ার রাস্তা। তাই আমরা এখন প্রাইমারি মার্কেটকে গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, আগামিতে দেশে বড় বড় অর্থায়নের প্রয়োজন হবে। যা শেয়ারবাজার থেকে দিতে হবে। এটা বন্ডের মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

গত কয়েকমাসে অনেক বন্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, সব বন্ড বিক্রি হয়েছে। কোন বন্ড আন্ডারসাবসক্রাইব হয়নি। এই বন্ড ব্যবসায়িদেরকে এগিয়ে নেবে। যারা ঝুঁকি নিতে না চায়, তারা বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে।

অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, প্রতিটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ১০-১৮ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেবে। এখন কেউ যদি লোকসান করতে না চায়, তাহলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারে। এছাড়া বন্ডে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এই ২ ক্ষেত্রে বিনিয়োগে ঝুকিঁ নেই বললেই চলে। তবে সক্ষমতা থাকলে নিজেই পোর্টফোলিও ম্যানেজ করতে পারে। এক্ষেত্রে ঝুঁকিও তার। ফলে লোকসান করে কাউকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএসইসির কমিশনার কামালুজ্জামান, নির্বাহি পরিচালক মাহবুবুর রহমান, বিএমবিএ সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান, ইউসিবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরী, এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মাহতাবুর রহমান, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিইও রাশেদুল হাসান।