করোনার বছরে আইপিডিসি ও আইডিএলসি ফাইন্যান্সের চমক
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মহামারির বছরে ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইনান্স ও আইডিএলসি ফাইনান্স আকর্ষণীয় মুনাফা করেছে। করোনা ভাইরাস আসার আগের বছরের চেয়েও বেশি মুনাফা করেছে কোম্পানি দুটো। ফলে আর্থিক খাতের এ কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের একটু বাড়তি আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।
আইপিডিসি ফাইনান্সের বিনিয়োগকারীরা ১২ শতাংশ নগদ অর্থাৎ শেয়ার প্রতি এক টাকা ২০ পয়সা করে লভ্যাংশ পাবেন। আগের বছর প্রতিষ্ঠানটি ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। প্রতিষ্ঠান ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছে আইপিডিসির পরিচালনা পর্ষদ। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৯০ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৭২ পয়সা।
অন্যদিকে গত বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণের পর থেকে অর্থনীতি কয়েক মাস স্থবির হয়ে গেছেন আইডিএলসির আয়ে ভাটা পড়েনি। উল্টো আগের বছরের চেয়ে বেশি আয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে এর রিজার্ভ। ফলে করোনা মহামারি মধ্যেও আগের বছরের লভ্যাংশ ধরে রাখল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইনান্স।
ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ শেয়ারধারীরা শেয়ার প্রতি সাড়ে তিন টাকা করে পাবেন। আগের দুই বছরও অর্থাৎ ২০১৮ ও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত বছরের জন্যও একই হারে মুনাফা ঘোষণা করা হয়।
আইপিডিসি ফাইনান্সের ৩৭১ কোটি ৯০ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটিতে শেয়ার সংখ্যা ৩৭ কোটি ১০ লাখ ৯১ হাজার ৫৪৭টি। শেয়ার প্রতি প্রায় দুই টাকা হিসেবে মুনাফা হয়েছে ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকার কিছু বেশি। আগের বছর পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩৫৩ কোটি ৪২ লাখ টাকার কিছু বেশি। তখন মুনাফা হয় ৬০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ মহামারির বছরেও প্রতিষ্ঠানটি ১৫ শতাংশ বেশি মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে।
মুনাফার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সম্পদমূল্যও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য আছে ১৬ টাকা ৩৪ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ১৫ টাকা ৩ পয়সা। লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১১ মার্চ। এবং বার্ষিক সাধারণ সভা হবে ৪ এপ্রিল। সেদিনই চূড়ান্ত হবে লভ্যাংশ।
গত মার্চে করোনা সংক্রমণের পর দুই মাসেরও বেশি সময় সাধারণ ছুটি, ঋণ আদায় না হওয়ার মধ্যেও মুনাফা কীভাবে বাড়ল- জানতে চাইলে আইপিডিসির আইন বিভাগের প্রধান সামিউল হাশিম বলেন, ‘দুটি কারণে আইপিডিসি ভালো ব্যবসা করেছে। তার মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, গুড করপোরেট গভর্ন্যান্স। মালিকপক্ষ যারা এটি নীতি নির্ধারণীতে থাকেন তাদের স্বচ্ছতা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে ম্যানেজমেন্ট।
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারিতেও আমাদের ঋণ প্রদান ও ঋণ সংগ্রহের সঠিত নীতিমালার কারণে এখন সুফল পাওয়া যাচ্ছে। আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।’ বুধবার পুঁজিবাজারে লেনদেন শেষে আইপিডিসির শেয়ার প্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা ৮০ পয়সা। গত এক বছরে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩৫ টাকা ৫০ পয়সা। আর সর্বনিম্ন দাম ছিল ১৮ টাকা ৭০ পয়সা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী গত জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আইডিএলসির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৬ টাকা ৭৪ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৪ টাকা ৫১ পয়সা। ৩৭৭ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ৩৭ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার ৭৮০টি। এই হিসাবে কোম্পানিটি কর পরবর্তী আয় করেছে ২৫৪ কোটি ১৩ লাখ ২২ হাজার টাকারও বেশি আয় করেছে।
এর অর্ধেকেরও বেশি লভ্যাংশ আকারে বিনিয়োগ করা হবে। বাকিগুলো যোগ হবে কোম্পানির রিজার্ভে।কোম্পানির বর্তমান রিজার্ভ আছে ৮৬০ কোটি টাকা। চলতি বছরের আয় থেকে যোগ হলে সেটি প্রায় এক হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে। আগের বছর তাদের কর পরবর্তী মুনাফা ছিল ১৭০ কোটি পাঁচ লাখ টাকার মতো।
আয়ের পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্যও বেড়েছে ৮ শতাংশের মতো। ২০১৯ সালে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য ছিল ৩৭ টাকা ১৮ পয়সা। তিন টাকা ২৩ পয়সা বেড়ে সেটি দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকা ৪১ পয়সা। প্রতিষ্ঠানিটির বার্ষিক সাধারণ সভার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ মার্চ। রেকর্ড ডেট ১১ মার্চ শেয়ার ধরে রাখলেই বিনিয়োগকারীরা এই লভ্যাংশ পাবেন।