দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ‘ভাষা মানুষের পরিচয়। এ পরিচয় মানুষকে সম্মানিত করে। আমরা রক্ত দিয়ে সেই সম্মান অর্জন করেছি। এটা আমাদের গৌরবময় অর্জন।’ আজ রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান ও ‘মাতৃভাষা পদক ২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চার দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। এ দিন প্রথমবারের মতো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’ প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্ররা। তখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারই উদ্যোগে তমদ্দুন মজলিশসহ কয়েকটি সংগঠন ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলে। তিনি এ আন্দোলন করতে গিয়েই কারাবরণ করেন। অথচ ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপ মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল, এটা অনেকে বিশ্বাসই করতে চান না। অথচ এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ বপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা ভাষা মানুষের পরিচয়। এই পরিচয়টা আমাদের সম্মান এনে দেয়। এজন্য আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। রক্ত দিয়ে লিখেছি ভাষার অক্ষর। জাতির পিতা বলেছিলেন, “মাতৃভাষা আন্দোলনে বাঙালিরাই প্রথম রক্ত দিল।” দুনিয়ার কোথাও ভাষা আন্দোলনে গুলি করে মানুষ হত্যার নজির নেই। সত্যিকারার্থেই ভাষার অধিকারের জন্য কেউ এত রক্ত দেয়নি। এই ভাষার জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে। সেই সংগ্রামের হাত ধরেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।’

সকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা আমাদের এই গৌরব সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছি। ভাষার অধিকার, পৃথিবীর সব হারিয়ে যাওয়া ভাষা সংরক্ষণ ও ভাষা গবেষণার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। এখানে ভাষা জাদুঘর করা হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা সম্মানজনক প্রতিষ্ঠান।’

‘ভাষার সংরক্ষণ, বিকাশ ও গবেষণায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদানের জন্য পদক দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। আজ থেকে এ পদক চালু হয়েছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ভাষার মাসে গুণীজন ও ভাষার প্রতি সম্মান জানাতে পারলাম, এটা আমাদের সৌভাগ্য’, বলেন সরকার প্রধান।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তিন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক দেয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এ পদক তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে প্রতি দুবছর অন্তর মাতৃভাষার সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও বিকাশে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবদানের জন্য এ পদক দেওয়া হবে।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের (মাউশি) সচিব মাহবুব হোসেন। মূল প্রবন্ধ ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু’ উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী। অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি বিয়াট্রিস কালদুন।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী, জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জিনাত ইমতিয়াজ আলী প্রমুখ।