দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও বিমা খাত নিয়ে নিয়ে উৎসাহমুলক বেশ কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। বিনিয়োগকারীরা বলাবলি করছেন, বিএসইসি চেয়ারম্যান তাদেরকে এসব শেয়ার কেনার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু দর পড়ে যাওয়ায় এখন সমালোচনা হচ্ছে তার। ব্যাংকে স্থায়ী সঞ্চয় বা এফডিআর চেয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে মুনাফা বেশি- এই বক্তব্য ফান্ড কেনার পরামর্শ ছিল না বলে স্পষ্ট করলেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

বিমা খাত নিয়ে উচ্চাশা পোষণ করে দেয়া বক্তব্যও শেয়ার কেনার পরামর্শ ছিল না- এই কথাটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেকেন্ডারি মার্কেটে কেনা বেচা বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব বিষয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। সোমবার আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন শিবলী।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিএসইসির দায়িত্ব নেয়ার পর বিনিয়োগবান্ধব বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশংসা পান চেয়ারম্যান। গত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বাজার চাঙ্গা থাকা অবস্থায় তার প্রশংসা হচ্ছিল। তবে এক মাস ধরে বাজারে মন্দাভাব, শেয়ারের দাম কমে যাওয়া, সূচকের পতনের পর বিনিয়োগকারীরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের বেশ কিছু বক্তব্য সামনে এনে সমালোচনা করছেন।

একজন সাংবাদিক শিবলীকে বলেন, ‘আপনি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও বিমা খাতের শেয়ার নিয়ে কথা বলে প্রভাবিত করেছেন। কিন্তু এগুলোর বাজার ভালো হয়নি।’ জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এফডিআরের চেয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মুনাফা বেশি, এটা আগেও বলেছি, এখনও বলছি। তবে এর মানে এই না যে, আমি সেকেন্ডারি মার্কেটে থেকে শেয়ার কেনেন। কথার মানে বুঝতে হবে।

‘আমি দীর্ঘদিন বিমার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমি দেখেছি, এখানে অনেক কাজ করার জায়গা আছে। আমি থাকাকালীন অবস্থায় ব্যাংক ইন্সুরেন্স, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ইন্সুরেন্স নিয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। বিমাতে এখনও অনেক কাজ করার জায়গা আছে। এ জন্য বিমার কথা বলেছি।’

তাহলে অন্য সেক্টরের কথা কেন বলেননি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অন্য সেক্টরও ভালো করছে।’ ব্যাংক খাত এবার ভালো মুনাফা দেবে বলেও আশাবাদী বিএসইসি চেয়ারম্যান। বলেন, ব্যাংকের মুনাফা দেয়ার সময় হয়েছে। তাদের হাতে ভালো তারল্য আছে। তারাও ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে।

রবির আয় বাড়বে: বহুজাতিক কোম্পানি রবি কোনো লভ্যাংশ না দেয়ার পর কোম্পানিটির প্রতিনিধিদেরকে ডেকে কথা বলেছে বিএসইসি। এই বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, রবি যখন তালিকাভুক্ত হয়েছিল তখন তাদের ইপিএস ছিল চার পয়সা, এখন হয়েছে ৩৩ পয়সা। তারা আমাদের কাগজে যে হিসেব দেখিয়েছে তাতে আগামীতে আয় হবে এক টাকা।’

বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি দুবাইতে করে আসা রোড শো নিয়েও কথা বলেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। বলেন, ‘আমরা সেখানে দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করেছি।’

তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের ইক্যুইটি মার্কেটে বিনিয়োগে গুরুত্ব কম দিয়েছি। সেখানে বন্ড ও সুকুকের মতো জনপ্রিয় প্রোডাক্টগুরো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুবাইযের বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও এ বিষয়ে আগ্রহ আছে।’ তিনি চাইছেন এসব খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে সরকার যেন কর সুবিধা দেয়।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুবাই রোড শোতে প্রবাসীদের সঙ্গে আমরা আলাদা আলাদা মিটিং করেছি। এখনও মেইলে তাদের বিভিন্ন বিষয়ে উত্তর দেয়া হচ্ছে। তারা বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী।’

সরকারের কাছে আট প্রস্তাব: আগামী অর্থবছরের বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব করতে বিএসইসি কী প্রস্তাব করতে যাচ্ছে তা নিয়েও কথা বলেন চেয়ারম্যান। বলেন, ‘পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য কমিশন সব সময় আন্তরিক। আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছি তখন বাজেট ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। তারপরও আমরা চেষ্টা করে বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আসন্ন বাজেটে যাতে পুঁজিবাজার গুরুত্ব পায় সেজন্য আটটি বিষয়কে প্রস্তাব হিসেবে পাঠানো হবে। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত ও ননতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করের পার্থক্য যেন ১৫ শতাংশ হয়, বন্ড ও সুকুকে কর রেয়াত সুবিধা, মার্চেন্ট ব্যাংকের কর কমানো, আইসিবিকে শক্তিশালী করা ইত্যাদি।’ আটটি প্রস্তাবের মধ্যে পাঁচটি পাওয়া গেলেও কম হবে না বলেও মন্তব্য করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।