দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে গত কয়েক কার্যদিবস ধরে লেনদেন কমে যাওয়ার নেপথ্যে মনে করছেন একের পর এক নতুন আইপিও অনুমোদন। ফলে বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা নতুন করে আইপিও অনুমোদন না দেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন। তেমনি বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত আইপিও অনুমোদন দেওয়ার ফলে লেনদেন ও দরপতনের কারন মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আইপিও পুঁজিবাজারের জন্য খারাপ কিছু নয়। তবে ভালো পুঁজিবাজারে আইপিও আসলে সেটা বাজারকে স্থিতিশীল করে। কিন্তু পুঁজিবাজার যদি খারাপ থাকে তাহলে আইপিও গতি কমানো পুঁজিবাজারের জন্য ভাল লক্ষণ হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ আবু আহম্মেদ।

এছাড়া পর পর কয়েকটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ টাকা আটকে যাওয়ার পর নতুন করে আর আইপিও অনুমোদন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। যদিও সংস্থাটি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শিগগিরই আইপিও অনুমোদন দেয়ার মতো কোম্পানির হাতে নেই কমিশনের।

একটি কোম্পানি থাকলেও তারা তাদের আর্থিক বিবরণী তৈরিতে আরও সময় চেয়েছে। ডিসেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ই জেনারেশন, মীর আকতার হোসাইন লিমিটেড, এনার্জিপ্যাক, রবি। এর বাইরে দেশ জেনারেলের ইন্স্যুরেন্সের ১৬ কোটি ও এনআরবিসি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ১২০ কোটি টাকা সংগ্রহে আইপিও আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত হতে কাট অফ প্রাইস নির্ধারণে নিলাম চলছে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের। একই প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজার থেকে ৫০ কোটি টাকা তুলতে চাইছে ইনডেক্স অ্যাগ্রো লিমিটেড। দুই মসের মধ্যে এতগুলো আইপিও আসায়ে দুই কারণে পুঁজিবাজারের লেনদেনে টান পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিটি আইপিওর ক্ষেত্রে শেয়ারের জন্য ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি আবেদন জমা পড়েছে।

লটারির পর বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া হয় ৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে। ফলে বিপুল পরিমাণ টাকা এখনও ফেরত আসেনি বিনিয়োগকারীদের হিসাবে। এর বাইরে রবি, এনার্জি প্যাক, মীর আকতারে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করে বিপুল পরিমাণে লোকসানে আছেন বিনিয়োগকারীরা। এই অংকটা এখন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘আইপিও এখন একটু ধীর হবে। কারণ আমাদের হাতে দেয়ার মতো এখন কোনো আইপিও নেই। যেগুলো আছে সেগুলো প্রসেস করতে কিছুটা সময় প্রয়োজন হবে।’ তিনি বলেন, ‘কমিশনের কাছে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ফাইল ছিল। তারাও তাদের আর্থিক বিবরণী তৈরিতে সময় চেয়েছে। ফলে আগামীতে আইপিও কিছুটা কমে আসবে।’

গত এক মাস ধরে পুঁজিবাজারে লেনদেনের খরা ও টানা দরপতনের জন্য নানা কারণ রয়েছে। একটি একের পর এক আইপিও অনুমোদনও এর একটি কারণ বলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে।

পুঁজিবাজারের মন্দার কারণে এমন সিদ্ধান্ত কি না প্রশ্নে বিএসইসির মুখপাত্র বলেন, ‘আইপিও পুঁজিবাজারের অংশ। ফলে পুঁজিবাজার মন্দা না ভালো সেটা বিষয় না।’ কত সময় পর আবার আইপিও আসবে সে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক বলা যাচ্ছে না। একটি প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করবে।’

বিএসইসি কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আসলে আইপিও অনুমোদনের জন্য কিছু প্রক্রিয়া থাকে। সে প্রক্রিয়াগুলো পর পুঁজিবাজারে আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়। আমাদের হাতে চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার মতো এখন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। ফলে শিগগিরই কোনো কোম্পানির আইপিও অনুমোদনের সম্ভাবনা নেই।‘

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আইপিও নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে বিনিয়োগকারীদের চাওয়া আর আমাদের পরিস্থিতি এক হয়ে গেছে। আইপিও প্রক্রিয়া শেষ হয়ে আসলে আমরা অবশ্যই সেটির অনুমোদনের জন্য বিবেচনা করব।’