পিপলস লিজিং বাঁচাতে উপায় খুঁজছে হাইকোর্ট
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড হাজার হাজার কোটি টাকা অনিয়মের কারণে ডুবতে বসা প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য শুনবে হাইকোর্ট।
তাদের সুবিধামতো দিনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আদালতকে তাদের মতামত দেয়ার জন্য বলেছে হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের মতামত শুনবে। পিপলস লিজিং থেকে ৫ লাখ টাকা অথবা তার থেকে বেশি যারা ঋণ নিয়েছেন এমন ২৮০ জনকে তলব করে গত ২১ জানুয়ারি আদেশ দেয় হাইকোর্ট।
এরপর আদালত দুই ভাগে ভাগ করে প্রথম দফায় ১৪৩ জনকে হাজির হতে বলা হয়। তার মধ্য থেকে আজকে ৫১ জন হাইকোর্টে হাজির হন। পরে তাদের সবাইকে হলফনামা দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয় আদালত। আজ যারা হাজির হতে পারেননি, তাদের ব্যাপারে আদালত বলেছে আরেকবার সুযোগ দিয়ে হাজির হতে বলা হবে। এরপরও তারা হাজির না হলে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসা হবে।
এ মামলায় আজকে ৩৫ জনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী মুস্তাক আহমেদ ও মো. গোলাম কিবরিয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ, অবাসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল ওয়াহাব।
মেজবাহুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘পিপলস লিজিং প্রতিষ্ঠানটিকে কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় সে বিষয়ে মতামত নেওয়ার জন্য আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য শুনবেন।’
আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৫ লাখ বা তার বেশি টাকা নেয়া ঋণখেলাপি ২৮০ জনকে তলব করে হাইকোর্ট। ২৩ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের পর্যায়ক্রমে আদালতে হাজির হয়ে খেলাপি ঋণের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। এ মামলার শুনানির একপর্যায়ে এক ঋণখেলাপির পক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘আমার ঋণের পরিমাণ ২৭ কোটি, সেটি হঠাৎ করে বেড়ে হয়ে যায় ৪৮ কোটি, এখন সেটি ১১৬ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।’
এ সময় তিনি আদালতের কাছে তিন বছর সময় চান। সময় দিলে তিনি ২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করতে পারবেন বলে আদালতকে জানান। তখন আদালত বলে, ‘আমানতকারীরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। না খেয়ে তাদের দিন কাটছে আর আপনি ঋণ পরিশোধের জন্য তিন বছর সময় চাচ্ছেন? এত সময় কেন দিতে হবে?
একপর্যায়ে আদালত বলে ‘পিকে হালদার, এস কে সুর কী আকাম-কুকাম করেছেন সেটা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কোম্পানি বাঁচাতে একটা পথ বের করতে হবে। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠান চালু রাখা দরকার। তা না হলে তো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।’ ‘যারাই কোম্পানির পরিচালনায় এসেছে তারাই আকাম-কুকাম করেছেন, মধু খেয়েছেন’ এমন মন্তব্য করে আদালত ২৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক করে।
ধারাবাহিক লোকসানে থাকা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং ২০১৪ সালের পর থেকে আমানতকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। এরপর ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে দেশের পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ হয়। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা বোর্ড ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতেও প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত বছরের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। একপর্যায়ে পিপলস লিজিংয়ের ভুক্তভোগী কয়েক আমানতকারী টাকা ফেরত পেতে হাইকোর্টে আবেদন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় মামলাটির শুনানি হয়।