দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি ফ্যামিলিটেক্স বিডির পরিচালনা পর্ষদ পূণঃগঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ‘জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিতে ৬ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।মুলত উৎপাদন বন্ধ থাকায় স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওই ৬ জন স্বতন্ত্র পরিচালক কোম্পানিটিকে সচল করার পাশাপাশি আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করবে বলে বিএসইসি জানা গেছে।

ফ্যামিলিটেক্সে জন্য বিএসইসির মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন, কাজী আমিনুল ইসলাম, ড. সামির কুমার শীল, ড. গাজী মোহাম্মদ হাসান জামিল, ড. মো. জামিল শরিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফ এহসান ও ড. মো. ফরজ আলী। এ ৬ জন স্বতন্ত্র পরিচালকের মধ্যে কোম্পানিটির চেয়ারম‌্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কাজী আমিনুল ইসলাম।

‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির জন্য গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসির জারি করা নির্দেশনার ২ নম্বরে উল্লেখ রয়েছে, ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে যাওয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে। পুনর্গঠিত পর্ষদে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা পুনরায় পরিচালক হওয়ার সুযোগ পাবেন। এছাড়া, কমিশন এক বা একাধিক স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেবে। ওই নির্দেশনার আলোকেই কোম্পানিটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সব পরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ফ্যামিলিটেক্স বিডি ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর মূল মার্কেট থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এরপর কোম্পানিটির কোনো উন্নতি হয়নি। এছাড়া, সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালকরা মাত্র ৪.০২ শতাংশ শেয়ার ধারনের মাধ্যমে বিএসইসির সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণের নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে।

অথচ কোম্পানিটির ৭৫.৫৭ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং ১৮.৪১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী শেয়ারধারণ করেও বিগত দুই বছর ধরে কোনো লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। এ বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকারক ও কমিশনের কাছে অপ্রত্যাশিত।

কমিশন লক্ষ্য করেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি আগে অর্থাৎ ২০১১ থেকে ২০১২ সালে ফ্যামিলিটেক্সের মুনাফা ৪৩৮ গুণ বেড়েছিল। আর তালিকাভুক্তির সময়ে অর্থাৎ ২০১২ থেকে ২০১৩ সালে মুনাফা বেড়েছিল ৭৬ শতাংশ। কোম্পানিটির এ মুনাফা বৃদ্ধির এর ধারাবাহিকতা কেবল ২০১৪ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল। আর ২০১৬ সাল থেকে কোম্পানির মুনাফা অস্বাভাবিকভাবে কমতে থাকে। ওই সময়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিল মোহাম্মদ মোর্শেদ এবং চেয়ারম্যান রোকসানা আরা। তারা কোম্পানিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কোম্পানিটির নিট মুনাফা আকস্মিকভাবে কমতে থাকে।

কমিশন মনে করে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে ফ্যামিলিটেক্সের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে কমিশন। একইসঙ্গে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলস, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিডি, এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালসেরও পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের জন্য কাজ করছে বিএসইসি। শিগগিরই কোম্পানি ৪টির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে।

এর আগে আলহাজ্ব টেক্সটাইল ও রিং সাইন টেক্সটাইলসের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। এর ফলে কোম্পানি দু’টির কার্যক্রমে ভালো ফল পেতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। বিশেষ করে রিং সাইন পুনর্গঠন করার পর ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অন্যদিকে আলহাজ্ব টেক্সটাইলের পর্ষদ পুনর্গঠন করার পর বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দুর্বল কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করছে বিএসইসি।

অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। এর মধ্যে বিএসইসির ৭৩৫তম সভায় ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।