দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আর্থিক সমস্যা বা শারীরিক অসংগতির কারণে কোনো শিক্ষার্থী যাতে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য মুজিববর্ষে চালু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শিক্ষাবিমা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানালেন, এই বিমার শর্ত খুব সহজ। বছরে মাত্র ৮৫ টাকা দিয়েই এই বিমা পলিসি গ্রহণ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। জাতীয় বিমা দিবসের অনুষ্ঠানে সোমবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বিমা, বঙ্গবন্ধু শিক্ষাবিমা, বঙ্গবন্ধু স্পোর্টস প্ল্যান কম্প্রিহেনসিভ ইনস্যুরেন্স নামে তিনটি বিমা প্রচলন করেছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অভিভাবকের আর্থিক অসংগতি বা শারীরিক অক্ষমতার জন্য কোনো শিক্ষার্থী যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়, সে নিশ্চয়তা দেবে এই বঙ্গবন্ধু শিক্ষাবিমা, এটা খুব প্রয়োজন এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও এটা প্রয়োজন।

‘এর আওতায় বার্ষিক ৮৫ টাকা দিয়ে ৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা পলিসি গ্রহণ করতে পারবে। আমি মনে করি, আমাদের জন্য এটা খুবই যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে পড়াশোনার জন্য অর্থের অভাব কারও আর হবে না।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এটাকে এমনভাবে আপনাদের করতে হবে, যেন একটি নতুন বিবাহিত দম্পত্তি তারা তখন থেকেই তাদের সন্তানের জন্য বিমা করবে, যার মাধ্যমে তাদের সন্তান পড়াশোনা করবে।

‘সন্তান বড় হতে থাকবে সঙ্গে সঙ্গে প্রিমিয়ামের টাকাও বাড়তে থাকবে। পড়াশোনা শেষ হওয়া পর্যন্ত যেন সে এ সুযোগটা পেতে পারে, সেভাবে পলিসি তৈরি করতে হবে।’ গ্রাহকের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে সতর্ক থাকারও পরামর্শ তার।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের কিছু মানুষের অভ্যাস আছে, ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক সময় ক্ষতি না হলেও আর্টিফিসিয়ালি কিছু ক্ষতি করে। হয়তো আগুন লাগাল, এসব করে একটা মোটা অঙ্কের বিমার প্রিমিয়াম থেকে টাকা চায়।

‘আসলে দেখা যায়, যে পরিমাণ ক্ষতি সে দাবি করে সে পরিমাণ খরচ হয়নি। যারা পরীক্ষা করতে যাবে, তাদেরকেও ভালোমতো শিক্ষা দিতে হবে। তারা যেন আবার এই অল্প ক্ষতিকে বড় ক্ষতি হিসেবে না দেখায়। একটা জিনিস হাতেনাতে ধরতে পেরেছি বলেই আজ আপনাদের বললাম। এখানে যে দুর্নীতিটা এটা অবশ্য কমে গেছে তবু সতর্ক থাকতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা মানুষকে একটা সেবা দেয়া। মানুষ একটি আমানত রেখেছে সেটাকে আবার অন্যভাবে কেউ যেন ব্যবহার করতে না পারে। সে বিষয়েও সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

দেশে স্বাস্থ্যবিমার ব্যাপক প্রসারের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যবিমা আরও ব্যাপকভাবে চালু করা একান্তভাবে প্রয়োজন বলে মনে করি। দেশের মানুষ এখনও সচেতন নয়। তবে করোনাভাইরাসের কারণে মনে করি মানুষের মধ্যে এ সচেতনতা হয়তো সৃষ্টি হবে।’

বিমা খাতে দক্ষ জনবলে গুরুত্ব: বিমাব্যবস্থা গড়ে তুলতে অ্যাকচ্যুয়ারি গঠনের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। অ্যাকচ্যুয়ারি হলো ব্যবসাসংক্রান্ত গোষ্ঠী, যারা ঝুঁকির আর্থিক প্রভাব বিশ্লেষণ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই বিমা সম্পর্কে মানুষ আরও আস্থাশীল হোক। আমাদের সবচেয়ে যেটার অভাব, আমাদের কোনো অ্যাকচ্যুয়ারি নেই।‘এই বিমাকে আরও শক্তিশালী করতে অ্যাকচ্যুয়ারি আমরা লন্ডন থেকে নিয়ে এসে এখানে দিয়েছিলাম। আসলে আমাদের যারা এ বিষয়ে পড়াশোনা করে, তারা পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে চাকরি পেয়ে যায় আর দেশের কথা ভুলে যায়। বিমাকে আরও দক্ষ করতে হলে অ্যাকচ্যুয়ারি একান্তভাবে দরকার।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, অ্যাকচ্যুয়ারি নিয়ে যারা শিক্ষা গ্রহণ করবে বা প্রশিক্ষণ নেবে, উচ্চশিক্ষার জন্য তাদের যুক্তরাজ্যে পাঠাবে সরকার। তবে তাদের অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে যে, দেশে ফিরে তারা দেশের জন্য কাজ করবে।

‘তাদের শিক্ষার টাকাটাও আমরাই দেব। এ সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। এটার জন্য পাঁচজন শিক্ষার্থী আমরা সুনির্দিষ্ট করেছি, যাদের প্রাথমিকভাবে পাঠাব। অ্যাকচ্যুয়ারির ওপর শিক্ষা গ্রহণ এবং ফিরে এসে বিমা নিয়ে তারা কাজ করবেন। দেশের জন্য আরও বেশি দক্ষ মানুষ তারা তৈরি করবেন।’