দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বড় উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছেন; কিন্তু তাদের বেশিরভাগই তা আর পরিশোধ করছেন না। ফলে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পাহাড় জমে যাচ্ছে। এতে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ব্যাংকিং খাত। অন্যদিকে খেলাপি ঋণের প্রভিশন রাখতে গিয়ে ব্যাংকের আয় কমে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি বাড়ছে মূলধন ঘাটতিও। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ থেকে উত্তরণের পথ হচ্ছে, সরকারের খবরদারি কমিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো শক্তিশালী করা।

মুলত মহামারিতে বিশেষ সুবিধা এবং নানা ছাড়ের কারণে কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে। তারপরও মূলধন সংরক্ষণ পরিস্থিতির তেমন উন্নতি করতে পারেনি বেশকিছু ব্যাংক। ডিসেম্বর শেষে ১০টি ব্যাংক ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি। এর মধ্যে পুঁজিবাজারের ৩ ব্যাংক রয়েছে। ফলে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে এসব ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত নিয়ে ঋণ দেয়। সেই ঋণ খারাপ হয়ে পড়লে সেই অনুপাতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। আবার খারাপ ঋণের ওপর অতিরিক্ত মূলধন রাখার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।

আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতি ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী, ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান নিয়মে ব্যাংকগুলোকে ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ অর্থ ন্যূনতম মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। এ শর্ত পূরণে ডিসেম্বর শেষে ব্যর্থ হয়েছে ১০টি ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দুই বিশেষায়িত ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সাত ব্যাংকের ঘাটতি ২৫ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে মূলধন সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক; বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। এছাড়া রয়েছে বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। সবমিলিয়ে এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দুই বিশেষায়িত ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সাত ব্যাংকের ঘাটতি ২৫ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা।

ঋণ দেওয়া ও আদায়ে তাদের জবাবদিহিতা কম। তারা বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ দিয়ে দিচ্ছে। ফলে তা আদায় করতে পারছে না। অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে পড়ছে। বেসরকারি খাতের তিনটি ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৯৬৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের, এক হাজার ৬২২ কোটি টাকা।রূপালী ব্যাংকের ৬৭১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।