তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের প্রত্যাশা লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের। কারন দীর্ঘ ১০ বছরে বিনিয়োগকারীরা একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার পায়নি। বাজার যতবার স্থিতিশীল দিকে যাচ্ছিল তখন কোন না কোন নেতিবাচক খবরে ফের বাজার দরপতন ঘটে। ফলে স্থিতিশীল পুঁজিবাজার হয়ে উঠেনি বিনিয়োগকারীদের ভাগ্যে।

এদিকে ছয় কার্যদিবসের মধ্যে একদিন সূচক কমেছিল ২০ পয়েন্ট। বাকি প্রতিদিনই বেড়েছে সূচক। একই সঙ্গে লেনদেনেও সাত থেকে আটশ কোটি টাকায় স্থির হয়েছে। উত্থান পতনের মধ্যে সূচক ও লেনদেনের এমন অবস্থায় নতুন বিনিয়োগসহ পুঁজিবাজার আস্থায় ফিরছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের বক্তব্য, পুঁজিবাজারে উত্থান পতন থাকবেই। তবে এই উত্থান পতন কতটা দীর্ঘ হচ্ছে সেটিই দেখার বিষয়।

এদিকে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচকের উত্থান হয়েছে। এ নিয়ে টানা তিন কার্যদিবস সূচক বাড়ল। মূল্য সূচক বাড়লেও কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এদিন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মধ্য দিয়ে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়। ফলে প্রথম ৫ মিনিটের লেনদেনেই ডিএসইর প্রধান সূচক ২৮ পয়েন্টে বেড়ে যায়। লেনদেনের প্রথম ৪০ মিনিট সূচকের এই বড় উত্থান প্রবণতা অব্যাহত থাকে।

তবে সকাল ১১টার পর লেনদেনে অংশ নেয়া একের পর এক প্রতিষ্ঠানের দরপতন হতে থাকে। এতে নিম্নমুখী হয়ে পড়ে সূচক। বড় উত্থান থেকে এক পর্যায়ে ঋণাত্মকও হয়ে পড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক। অবশ্য দুপুর সাড়ে ১২টার পর আবার পতন কাটিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। এতে সূচকও ঋণাত্মক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে।

শেষ আধাঘণ্টায় সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কিছুটা বাড়ায় এক প্রকার বড় উত্থানই হয় শেয়ারবাজারে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬০৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৬৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সূচকের বড় উত্থান হলেও ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় যে কয়টি প্রতিষ্ঠান নাম লিখিয়েছে, প্রায় তার সমান সংখ্যক দরপতনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১২৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে পতনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ১০৭টি।

আর ১১১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মূল্য সূচকের উত্থান হলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের তুলনায় কমে গেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭২১ কোটি ৫১ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৮৭৬ কোটি ৭৫ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৫৫ কোটি ২৪ টাকা।

টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সামিট পাওয়ার ৫২ কোটি ৬১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৪২ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- লাফার্জহোলসিম, বিডি ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ওরিয়ন ফার্মা, গ্রামীণফোন, জিবিবি পাওয়ার এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৬৩ পয়েন্ট।  বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৪টির এবং ৫৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার। আশা করি বর্তমান কমিশন সে দিকে লক্ষ রেখে কাজ করবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের উত্তম সময়। অধিকাংশ শেয়ারের দর ফেসভ্যালুর কাছাকাছি।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদের মতে, পুঁজিবাজারে বর্তমানে একটি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সূচক সাড়ে পাঁচ হাজার পয়েন্টে আছে। লেনদেন হাজার কোটি টাকা না হলেও একটি স্থিতাবস্থা আছে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য আস্বস্তের।

তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার যখনই স্থিতিশীল হতে থাকে তখনই কিছু না কিছু সমস্যা চলে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য লভ্যাংশ সীমা বেধে না দিত, তাহলে এ সময়টিতে আরও ভালো অবস্থায় থাকত এ খাত। যদিও এখন অল্প অল্প করে বাড়ছে। তবে তা স্থায়ী হওয়া জরুরি।’