দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রবাসী বা এনআরবি বিনিয়োগকারীদের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করতে গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে। আজ সোমবার বিকাল ৩টায় ডিজিটাল প্ল্যার্টফর্মে যৌথ উদ্যোগে এ গণশুনানির আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এদিকে শেয়ারবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আবেদন করতে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। দীর্ঘদিন তারা এ জটিলতা নিয়েই বিভিন্ন কোম্পানির আইপিওতে আবেদন করছেন। এবার প্রবাসীদের আইপিও আবেদন সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করা হলে শেয়ারবাজারে প্রবাসীদের বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

তথ্য মতে, বর্তমানে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে ফরেন ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। এর কারণে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বেশ কিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যেমন, ফরেন ডিমান্ড ড্রাফট করার জন্য একটি ফি নির্ধারণ করা রয়েছে। ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত সার্টিফিকেট নিতে হলে সেখানেও একটা ফি নির্ধারণ করা আছে।

আইপিও না পেলে ফরেন ডিমান্ড ড্রাফট ‘এন ক্যাশ’ করাতে একটি ফি রয়েছে। এছাড়া, ফরেন এক্সচেঞ্জ রুলস অনুযায়ী ফরেন ডিমান্ড ড্রাফট একদিনে সর্বোচ্চ আড়াই হাজারের বেশি সংগ্রহ করতে পারে না ইস্যুয়ার। তাই আইপিওতে অনেক বেশি আবেদন করলে ওই টাকা সংগ্রহ করতে অনেক সময় লাগে। এতে আইপিও আবেদনের সময়ে প্রবাসীদের টাকা পেতে ইস্যুয়ারদের অনেক সময় লাগে।

বর্তমানে আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে শুধু ফরেন ডিমান্ড ড্রাফট ব্যবহার করেন প্রবাসীরা। তাই প্রবাসীদের নিটা অ্যাকাউন্ট থাকলে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা কনভার্ট হয়ে ওই একাউন্টে চলে আসবে। সংশ্লিষ্ট প্রবাসীর পরামর্শের ভিত্তিতে সেই টাকা ব্রোকারদের একাউন্টে আনার ব্যবস্থা করা হবে। তারপর ব্রোকার সেই টাকা দিয়ে তার নির্দেশনা অনুযায়ী আবেদন করবে। এতে প্রবাসীদের আইপিওতে আবেদন করতে বাড়তি খরচ কমে আসবে। আর আবেদন প্রক্রিয়াটাও সহজ হবে বলে মনে করে বিএসইসি।

এদিকে, প্রবাসীদের আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সোমবার (১৫ মার্চ) বেলা ৩টায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে একটি গণশুনানি আয়োজন করেছে বিএসইসি। আর অনুষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। গণশুনানিতে প্রবাসী বাংলাদেশি, কাস্টডিয়ান প্রতিনিধি, ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট, ট্রেকহোল্ডার, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স ও স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আর এ গণশুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য রোববার (১৪ মার্চ) পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করার সময় রয়েছে। এ বিষয়ে ডিএসইর ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

গণশুনানিতে কাস্টডিয়ান ব্যাংক এবং যেসব ব্রোকারদের নিটা অ্যাকাউন্ট আছে, তারা যাতে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের টাকা নিয়ে আইপিওতে আবেদন করতে পারে সে বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। আর গণশুনানিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে যেসব বিষয়গুলো বেরিয়ে আসবে, পরবর্তীতে সেগুলো নিয়ে বিএসইসি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

জানা গেছে, গণশুনানিতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। আর সমাপনী বক্তব্য রাখবেন বিএসইসির কমিশনার মো. আব্দুল হালিম। অনুষ্ঠানে বিএসইসির প্রতিনিধি হিসেবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

এছাড়া, গণশুনানিতে ডিএসইর প্রতিনিধি হিসেবে প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা (সিওও) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসেন এবং ডিএসইর লিস্টিং অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মো. রবিউল ইসলাম আলোচনায় অংশ গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের আইপিও আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করা এবং সেকেন্ডারি মার্কেটে তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রবাসী বিনিয়োগকারীসহ নিটা অ্যাকাউন্ট খুলতে যেসব সংশ্লিষ্ট পক্ষ রয়েছে তারও গণশুনানিতে অংশগ্রহণ করবে।

সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে প্রবাসীদের প্রাথমিক মার্কেটে বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি সেকেন্ডারি মার্কেটে সহজে বিনিয়োগ করার পাশপাশি বিনিয়োগকৃত অর্থ কীভাবে সহজে ফেরত পেতে পারেন সে বিষয়টিও গণশুনানিতে আলোচনা হবে। আলোচনায় উত্থপিত প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি।’