দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ  বলেন, গত কয়েকদিন ধরে দেখেছি করোনা ইস্যুতে পুঁজিবাজারে কিছু গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সেগুলোর কোনোটি ঠিক নয়। আমরা বলতে চাই, পুঁজিবাজার চলবে (খোলা থাকবে)। পুঁজিবাজার যে‌হেতু চলবে, সব কার্যক্রম চলবে। তার কোনো ব্যত্যয় হবে না।

ক‌রোনা প‌রি‌স্থিতির ম‌ধ্যে ব্যাংকের লেনদেন চললে পুঁজিবাজারের লেনদেনও চলবে। এছাড়া প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) নতুন নিয়মকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আসতে যাচ্ছে। যা আগামি আইপিওর আবেদনের আগে ঢুকবে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ি আইপিওতে আবেদনের ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। যা আগামি ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। কিন্তু এতোদিন কোন বিনিয়োগ ছাড়াই আবেদনের সুযোগ ছিল। যেখানে প্রতিটি আইপিওতে গড়ে প্রায় ১০ লাখ আবেদন জমা পড়ত। যার অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর বাজারে কোন বিনিয়োগ ছিল না। তবে আগামিতে বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক করায়, এখান থেকে হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করছে সংশ্লিষ্টরা।

বৈঠকের বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আগামি এপ্রিল মাস থেকে আইপিওতে নতুন নিয়ম চালু হতে যাচ্ছে। যে নিয়মে আইপিওতে আবেদনের ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। এরফলে আগামি আইপিওর আগেই বাজারে হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ঢুকার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, গড়ে প্রতিটি আইপিওতে প্রায় ১০ লাখ আবেদন জমা পড়ে। যার অধিকাংশ বিও হিসাবেই কোন বিনিয়োগ থাকে না। কিন্তু আগামিতে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এরফলে অর্ধেক বিও হিসাবে ২০ হাজার করে বিনিয়োগ করলেও হাজার কোটি টাকা ঢুকবে বাজারে। তাই বিনিয়োগকারীদেরকে এ বিষয়টি জানানোর জন্য আজকের বৈঠকে ব্রোকারদেরকে বলা হয়েছে।

ব্যাংক বন্ধ ছাড়া শেয়ারবাজার বন্ধ হওয়ার সুযোগ নেই বলে ব্রোকারদেরকে আজ কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বলে জানান এই নির্বাহি পরিচালক। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি যাই হোক না কেনো, ভবিষ্যতে ব্যাংক খোলা থাকলে শেয়ারবাজার বন্ধ থাকবে না। তাই শেয়ারবাজার বন্ধ হওয়ার গুজবে কান দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

রবিবার (২১ মার্চ) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) ও শীর্ষ ব্রোকারের এক বৈঠক এমনটি ধারনা করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ।

বৈঠকে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে পর্যায়ক্রমে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের (Retailer) উপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নির্ভর করার তাগিদ দেয়া হয়। এ লক্ষ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ডিলার অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান বিএসইসি কমিশনার।

বৈঠকে স্টেকহোল্ডাররা বাজারের সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে করোনা পরিস্থিতির অবনতি এবং বিনিয়োগকারীদের মনে পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকাকে প্রধান কারণ হিসেবে তুলে ধরেন।

গত কয়েকদিনে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের পতনের পেছনে কোনো কারসাজি আছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ‘আমরা বিষয়টি ইভ্যালুয়েট করার চেষ্টা করছি। এই মুহূর্তে বিষয়গুলো নিয়ে পর্যালোচনা করছি। পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন থাকাটাই স্বাভাবিক। কখনো পুঁজিবাজার টানা বাড়বে না, আবার টানা কমবেও না। পুঁজিবাজারের প্রতিটি কার্যক্রমই এই রকম পরিবর্তনশীল। সেটা যেন সঠিকভাবে পরিবর্তন হয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখবো। সে রকম কিছু হলে ব্যবস্থা নেবো।’

কারসাজি চক্র এখনো সক্রিয় আছে কি-না, জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, ‘এ রকম কোনো তথ্য-উপাত্ত এখনো আমাদের কাছে নেই। যদি চিহ্নিত করতে পারি, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মো. শরিফ আনোয়ার হোসেন ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশসের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান। বৈঠকে বাংলা‌দেশ মা‌র্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যা‌সো‌সি‌য়েশ‌সের (বিএম‌বিএ) সভাপ‌তি মো. ছা‌য়েদুর রহমান, ডিবিএ সভাপতি মো. শ‌রিফ আনোয়ার হো‌সেন ও শীর্ষ ১০ ব্রোকার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/সিইওরা উপস্থিত ছিলেন।