দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ব্যাংক-আর্থিক খাত ও বীমার পতনে পুঁজিবাজারে সূচকের বড় দরপতন হয়েছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। মুলত সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে এ তিন খাত শেয়ারের বড় পতনে সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। কারন ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ভালো লভ্যাংশের প্রভাব পড়ছে না পুঁজিবাজারে।

ফলে আস্থা সংকটে পড়ছে পুঁজিবাজাররে। ভালো লভ্যাংশ আসতে থাকার পর টানা দুই দিন ব্যাংক খাতে সুবাতাসে পুঁজিবাজারে বেড়েছে সূচক। আর পতনমুখী বিমা খাতে একদিনে প্রায় সব শেয়ারের দর বৃদ্ধির অভাবনীয় দৃশ্যও দেখেছে বিনিয়োগকারীরা।

কিন্তু তৃতীয় দিনে এসেই উল্টো চিত্র। গত দুই দিনে সূচক যত বেড়েছে, বুধবার এক দিনেই কমেছে তার চেয়ে বেশি। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস আর চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসে বড় পতনের পর রোববার মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ব্রোকারদের সঙ্গে বৈঠক করে। সেদিন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর উপায় খুঁজতে আলাচনার পর সোম ও মঙ্গলবার বাড়ে সূচক।

তবে তৃতীয় দিনে আর সেই ধারা ধরে রাখা যায়নি। ব্যাংক খাতের ৩১টির মধ্যে ২১টি, বিমা খাতের ৪৯টির মধ্যে ৪২টি, নতুন তালিকাভুক্ত নয়টির মধ্যে আটটির দরপতনে সূচক কমল ৮৩ পয়েন্ট। দর বেড়েছে মাত্র ২৩টির কোম্পানির। পতনের এই ধাক্কায় টিকেনি বহুজাতিক ও দামি শেয়ারের দরও।

এছাড়া ভালো লভ্যাংশেও আগ্রহ নেই ব্যাংক খাতে। এখন পর্যন্ত যে কয়টি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে সবগুলো লোভনীয়। বিশেষ করে ব্যাংকগুলো স্থায়ী সঞ্চয়ের বিপরীতে যে সুদ প্রদান করে তার চেয়ে বেশি হারে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। কিন্ত তারপরও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি।

বিশেষ করে এখন পর্যন্ত যে কয়টি ব্যাংক তাদের শেয়ার হোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে প্রায় সবগুলোর দরই এখন কমেছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য সাড়ে ২২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা সিটি ব্যাংকের শেয়ার দর বুধবার কমেছে ৪০ পয়সা। ডাচ বাংলা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৯০ কোটি কাটা বা ৮ শতাংশ কমলেও চূড়ান্ত মুনাফা বাড়ে ২৭ শতাংশ। এই প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

ডাচ বাংলার শেয়ারধারীরা এবার নগদ দেড় টাকা আর ১৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ১০০টি শেয়ারে ১৫টি বোনাস হিসেবে পাবেন। এমন লভ্যাংশ ঘোষণার পরও বুধবার ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি দর কমেছে ২০ পয়সা।

লভ্যাংশ ঘোষণা করা ব্যাংক এশিয়ার শেয়ার দর কমেছে ২০ পয়সা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ২০ পয়সা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৫০ পয়সা। শুধু মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১০ পয়সা। আগের দিন সর্বাধিক দর বাড়া ৩২টি কোম্পানির সবগুলো ছিল বিমা খাতের।

মাস ছয়েক আগে বিমার শেয়ারের দর বেড়ে আকাশচুম্বি হয়ে যাওয়ার পর ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ দাম কমে যাওয়ার পর মঙ্গলবারের এই দর বৃদ্ধিতে আশান্তিত হয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। তবে এক দিন পরের পতনে আবার ফিরে এসেছে হতাশা। এদিন সবচেয়ে বেশি দর কমেছে প্যারামাউন্ড ইন্স্যুরেন্সের; ৫ টাকা ৩০ পয়সা।

সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৩ টাকা ১০ পয়সা। প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৩ টাকা ৪০ পয়সা। দর বৃদ্ধি পাওয়া দুটি কোম্পানির মধ্যে আছে পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স যার শেয়ার দর বেড়েছে ২০ পয়সা এবং নিটল ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ১০ পয়সা।

গত এক মাস ধরে ঊধ্বগামী থাকা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর গত এক সপ্তাহ ধরে কমছে। বুধবারের পতন আরও হতাশ করেছে বেশি দামে কেনা শেয়ারধারীদের। রেকিডবেনকিউজার এর শেয়ার দর কমেছে ২৩ টাকা ৩০ পয়সা। ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারের দাম কমেছে ৩৮ টাকা ২০ পয়সা। বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ২০ পয়সা। দামি শেয়ার ওয়ালটনের দর কমেছে ৩১ টাকা ৫০ পয়সা।