দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে অস্থির বিনিয়োগকারীরা। তবে পুঁজিবাজারে দরপতন হলে ও কারসাজি থেমে নেই। গত বুধবার পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়েছে। সেদিনও সিএপিএমআইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে বিক্রেতা সংকটে ছিল। পরের দিন বৃহস্পতিবারও পুঁজিবাজার পতনে ছিল। সেদিনও ফান্ডটি সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে বিক্রেতা সংকটে ছিল। পরপর দুদিন ফান্ডটি বিক্রেতা সংকটি ছিল। দু’দিনে ফান্ডটির দর বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। ফান্ডটির অ্যাসেট মেনেজম্যান্ট প্রতিষ্ঠান বলছে, দর বাড়ার পেছনে কোন কারণ নেই।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফান্ডটি নিয়ে ফের কারসাজি শুরু হয়েছে। তারা বলছেন, এর আগেও ফান্ডটি নিয়ে কারসাজি হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিশ্চুপ ছিল। সেই সময়ে ফান্ডটির বিনিয়োগকারীরা সর্বশান্ত হয়েছে। এখন আবারও কারসাজি শুরু হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে অবিলম্বে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্ত দাবি করেছেন তারা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের মার্চ মাসে সিএপিএমআইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট ৬ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর ফান্ডটি ৬ টাকা ৯০ পয়সায় বহুদিন ক্রেতা সংকটে ছিল। গত বছরের নভেম্বর থেকে ফান্ডটির দর বাড়তে থাকে। একটানা দর বেড়ে ১০ জানুয়ারি ফান্ডটির দর ৩১ টাকা অতিক্রম করে। এই সময়ে ফান্ডটির দর চারগুণের বেশি বাড়ে।

১২ জানুয়ারি থেকে আবার টানা পতন। ২৪ মার্চ ফান্ডটির দর ১৩ টাকার নিচে নেমে যায়। ২৫ মার্চ থেকে আবার টানা ঊর্ধ্বগতি। ৫ কার্যদিবসে ফান্ডটির দর বেড়েছে ৩২ শতাংশের বেশি। আবদুল খালেক নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, “এর আগে যে লোক ফান্ডটির দর ৬ টাকা থেকে ৩১ টাকায় তুলেছিল, সে লোকই আবার ফান্ডটিতে এন্ট্রি দিয়েছে।” তিনি বলেন, “মুন্নু সিরামিকের শেয়ার ৩৮ টাকা থেকে ৪৫০ টাকায় তোলার ক্ষেত্রে যে লোক নৈপথ্যে ভূমিকায় ছিলেন, সে লোকই সিএপিএমআইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে খেলছেন।”

হেলাল হোসেন নামে প্রবীণ এক বিনিয়োগকারীর বলেন, “মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত হল সিএপিএমআইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এই ফান্ড যেভাবে উত্থান-পতন হয়েছে, সেভাবে অন্য কোন ফান্ড হয়নি। এই ফান্ডে বিনিয়োগকারীররা যতটা লাভবান হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

আবুল কালাম নামে এক বিনিয়োগকারী উদাহরণ দিয়ে বলেন, এনসিসিবিএল মিউচ্যুয়াল-ওয়ান ফান্ড সমাপ্ত হিসাব বছরে ইউনিট হোল্ডারদের ৭.২৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। মার্কেট প্রাইসের ভিত্তিতে ফান্ডটির সম্পদ মূল্য ১১ টাকা ৪৬ পয়সা এবং কস্ট প্রাইজের ভিত্তিতে ১০ টাকা ৪৯ পয়সা। অর্থাৎ ফান্ডটি মুনাফায় রয়েছে।

কিন্তু ফান্ডটির ইউনিট বিক্রি হচ্ছে ফেসভ্যালুর নিচে, সাড়ে ৬ টাকায়। অথচ সিএপিএমআইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড সমাপ্ত হিসাব বছরে ইউনিট হোল্ডারদের কোন ডিভিডেন্ড দেয়নি। মার্কেট প্রাইসের ভিত্তিতে ফান্ডটির সম্পদ মূল্য ১১ টাকা ২ পয়সা এবং কস্ট প্রাইজের ভিত্তিতে ১১ টাকা ৪৬ পয়সা। অর্থাৎ ফান্ডটি এখনো মুনাফায় ফিরেনি। কিন্তু ফান্ডটির ইউনিট বিক্রি হচ্ছে ১৭ টাকার উপরে।

তিনি বলেন, “ফান্ডটির দর ও লেনদেনই বলে দেয় এটি কারসাজি হচ্ছে। তা নাহলে এভাবে উত্থান-পতন হতে পারে না। তিনি বলেন, “কারসাজি রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এখনই তৎপর হওয়া উচিত। অন্যথায় নিরীহ বিনিয়োগকারীদের আবারও সর্বনাশ ডেকে আনবে।”