দেশ প্রতিক্ষণ, কুড়িগ্রাম: সাড়ে তিন বছর বয়সী শিশুকে এক মা সেতু থেকে প্রায় ১০০ ফুট নিচে নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে শিশুটি অক্ষত আছে। কাছে থাকা একজন ঘটনাটি দেখতে পেয়ে তিনি পানিতে নেমে শিশুটিতে উদ্ধার করেন। বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী ইউনিয়ন বাজারের পাশে।

স্থানীয় বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম জানান, বাজার সংলগ্ন ছড়ার পাশে তার বাড়ি। দুপুরের দিকে তিনি সন্তানকে নিয়ে ঘুড়ি উড়াচ্ছিলেন। এ সময় একটি কন্যা সন্তান নিয়ে এক মাকে বেরুবাড়ী ছড়ার উপর সেতুতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন।

হঠাৎ তিনি পানিতে কিছু একটা পড়ার শব্দ পেয়ে বুঝতে পারেন, ওই নারী তার কোলের সন্তানকে পানিতে ফেলে দিয়েছেন। এই ঘটনা ঘটিয়ে ওই নারী দ্রুত এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। সফিকুল সময়ক্ষেপণ না করে দৌড়ে গিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে শিশুটি উদ্ধার করে আনেন। এ সময় তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে ওই নারীকে আটক করেন। স্থানীয়দের প্রশ্নের মুখে ওই নারী কোনো উত্তর দেননি।

তবে শিশুটি বার বার বলেছিল তাদের বাড়ি বালাবাড়ী। তার মাকে যেন কেউ না মারে। সেখান থেকে মা ও শিশুটিকে বেরুবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে চেয়ারম্যান আব্দুল মোত্তালেবের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। চেয়ারম্যান বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হন।

পরে প্রকাশ পায় ওই নারীর নাম লায়লা বেগম। তিনি পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ী উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর বালাবাড়ী গ্রামের ব্যবসায়ী খোরশেদ খোকন মিয়ার স্ত্রী। তাদের তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পানিতে ফেলে দেয়া শিশুটির নাম সুমি খাতুন। পরে তার বাড়িতে খবর দেয়া হলে বিকেলে মা ও সন্তানকে নিতে আসে পরিবারের লোকজন। সুমি তার বাবাকে দেখে তার কোলে উঠে বসে। তার পাশেই নির্বিকার বসে ছিলেন লায়লা বেগম।

এ সময় খোরশেদ খোকনের ভায়রা গোলাম রব্বানী বলেন, ‘দ্বিতীয় কন্যা সন্তান হাসি খাতুনের জন্মের পর থেকে লায়লার মাথার সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসায় কিছুটা উন্নতি হলেও পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। তখন থেকে ইচ্ছে হলে কথা বলে না হলে চুপচাপ থাকেন। এরপর তৃতীয় কন্যার জন্ম হয়। তবে আজকের মতো আগে কখনই এমনটি করেননি।’

তিনি জানান, দুপুরে লায়লার বড় মেয়ে খুশি তাকে ফোন করে জানায়, সকালে তার মা ওই গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রামে কাশেম বাজার এলাকায় নানা আহম্মদ আলীর বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বের হন। কিন্তু তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেকক্ষণ পর্যন্ত আশপাশের গ্রামে চলে খোঁজাখুঁজি। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যান আব্দুল মোত্তালেব মা ও মেয়েকে পরিবারের কাছে তুলে দেন।

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে নিজের সন্তানকে ব্রিজ থেকে পানিতে ফেলে দেয়া সম্ভব নয়। মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হওয়ায় তিনি এমন কাজ করেছেন। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তার মানসিক সমস্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি।’

নাগেশ্বরী থানার এ এস আই বিনয় চন্দ্র বলেন, ‘অভিযোগ না থাকায় মা ও শিশুকে তার স্বামী ও পরিবারের কাছ হস্তান্তর করা হয়েছে।’ নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন কবীর বলেছেন, তিনিও ঘটনাটি শুনেছেন।