দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। সংক্রমণের সংখ্যা ওঠানামা করলেও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা দেশে একদিনে করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, করোনায় গত ৭ এপ্রিল ৬৩ জন এবং ১০ এপ্রিল মারা যাওয়া ৭৭ জনের সবার মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে।

বৃহস্পতিবার মারা যাওয়া ৯৪ জনের মধ্যে ৯০ জন এবং বুধবার ৯৬ জনের মধ্যে ৯৪ জন হাসপাতালে মারা গেছেন। আর শুক্রবার ১০১ জনের মধ্যে ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। চিকিৎসকরা বলছেন, অধিকাংশ রোগীই সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন। তাদের ফুসফুস দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে। শুরুতে তেমন কোনো উপসর্গ না থাকা এবং রোগটির প্রতি মানুষের অবহেলাতেই এত মৃত্যু হচ্ছে বলে ধারণা করছেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এনেসথেশিয়া বিভাগের কনসালটেন্ট সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের ফুসফুস খুব দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে। ফলে অল্প সময়ে ড্যামেজ (অকার্যকর) হচ্ছে। তাদের ফুসফুস ফুটবলের মতো হয়ে যায়। আমাদের এখানে যত রোগী আসছেন, প্রায় সবার একই অবস্থা। আমরা চেষ্টা করছি সবদিক দিয়ে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। অনেকে আবার প্রথমে লাইফ সাপোর্ট সুবিধা নিতে রাজি হন না।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা সাহানা বানু বলেন,‘নতুন ভ্যারিয়েন্ট ৭০ থেকে ৯০ ভাগ বেশি আক্রমণ করার ক্ষমতা রাখে এবং দ্রুত ছড়ায়। আগে যেমন নাকের ভেতরে গিয়ে সংখ্যা বৃদ্ধি করত, তারপর ফুসফুসে যেত। এখন তার আর দরকার পড়ে না। এটি এখন সরাসরি ফুসফুসে চলে যায় এবং ফুসফুসকে সংক্রমিত করে।

অর্থাৎ আগে ভাইরাসটি নাকে থাকলে সর্দি, কাশি ও জ্বর হতো; এখন সেগুলো হচ্ছে না। সরাসরি ফুসফুস আক্রান্ত হওয়ার পর সামান্য মাথাব্যথা, গা ব্যথা হয়। পরে সিটি স্ক্যানে দেখা যায় ফুসফুস ৩০ থেকে ৫০ ভাগ অকার্যকর হয়ে গেছে। ওদিকে করোনা পরীক্ষাতেও পজিটিভ না এসে বারবার নেগেটিভ আসছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে অবশ্যই অনেকগুলো ভ্যারিয়েন্ট এসেছে, যা আমরা প্রয়োজনীয় গবেষণার অভাবে শনাক্ত করতে পারিনি। যেহেতু নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর বিপরীতে আমাদের কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই, সেহেতু ভাইরাসটি দ্রুত ছড়াবে। আর সামনে নতুন ভ্যারিয়েন্ট যেটি আসবে, সেটি আগের তুলনায় অনেক বেশি মারাত্মক হবে।’