পুঁজিবাজার খোলার সিদ্ধান্তে আস্থা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে নেতিবাচক ধারায় শেষ হয় পুঁজিবাজারের লেনদেন। সূচকগুলোর টালমাটাল অবস্থা আরও খারাপের দিকেই যেতে পারে বলে ধরে নিয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু লকডাউনেও পুঁজিবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্তে পরবর্তী কার্যদিবস থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে পুঁজিবাজারের সব সূচক। সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে সপ্তাহের শেষ দিন পর্যন্ত।
এর ফলে সপ্তাহ শেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব সূচক ও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায়। লেনদেনে অংশ নেয় বেশিরভাগ কোম্পানি ও ইউনিট। এতে সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন বৃদ্ধি পায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
অবশ্য লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে আগের সপ্তাহের চেয়ে। সূচকের পতন ঠেকানো ও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধিতে অবদান রাখে সাধারণ বিমা খাত। অতীতের মতো গত সপ্তাহেও শেয়ার লেনদেনে সর্বোচ্চ অবদান ছিল খাতটির। ডিএসইর গত সপ্তাহের বাজারচিত্র বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।
ডিএসইর সাপ্তাহিক তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে মোট ৩৭৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বৃদ্ধি পায় ২১৭টির, কমে ৯০টির, অপরিবর্তিত ছিল ৬০টির ও লেনদেন হয়নি আটটির। সপ্তাহ শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বৃদ্ধি পায় ৫৫ দশমিক ৪১ পয়েন্ট। ডিএস৩০ সূচক ৩৬ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট ও ডিএসইএস ১১ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। লেনদেন কমে যায় আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। পহেলা বৈশাখের ছুটি থাকায় গত সপ্তাহে এক দিন বন্ধ ছিল পুঁজিবাজারের লেনদেন। সাপ্তাহিক লেনদেন কমে যাওয়ার এটিও একটি কারণ বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকডাউনে যাচ্ছে দেশ এমন ধারণা বিনিয়োগকারীদের মনে আগে থেকেই জšে§ছিল। ১২ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন দিয়ে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এ তালিকায় যুক্ত হয় ব্যাংকও। পুঁজিবাজারও বন্ধ হয়ে যাবে, এমন বার্তা চলে যায় সবার কাছে। কিন্তু লকাডাউনে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার বন্ধ থাকার বিষয়টি সবার মনেই শঙ্কার জš§ দেয়। এ নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন বিনিয়োগকারীরা।
অবশেষে এক দিন পরই ব্যাংক ও পুঁজিবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত আসে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয়ে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। ফলে শেষ মুহূর্তে অধিকাংশ শেয়ারের দর বৃদ্ধি পায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বার্তা যায়, করোনার প্রকোপ বাড়লেও পুঁজিবাজারে লেনদেন সম্ভব। এজন্য সশরীরে সিকিউরিটিজ হাউসগুলোয় উপস্থিতির পরিবর্তে বিভিন্ন বিকল্প উপায়ে (অনলাইন, মোবাইল) লেনদেনে ঝুঁকে পড়ছেন তারা।
সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে খাতভিত্তিক লেনদেনে আগের চেয়ে ইতিবাচক ছিল মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন। মোট লেনদেনে এ খাতের অবদান ছিল আট দশমিক পাঁচ শতাংশ। এছাড়া সিমেন্ট খাতের অবদান ছিল ছয় দশমিক ছয় শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের দুই দশমিক সাত শতাংশ, আইটি দুই শতাংশ, সাধারণ বিমা এক দশমিক ছয় শতাংশ ও ব্যাংক এক শতাংশ।
অন্যদিকে ট্যানারি, বস্ত্র ও সিরামিক খাতের শেয়ার নেতিবাচক ধারায় লেনদেন শেষ করে আগের সপ্তাহের চেয়ে। এ খাতে গত সপ্তাহে কিছুটা লোকসান দেখতে পান বিনিয়োগকারীরা আগের সপ্তাহের চেয়ে।
অবশ্য ডিএসইর মোট লেনদেনে সাধারণ বিমা খাত ৩৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ অবদান রাখে, যা একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ। এর পরই বিবিধ খাত ১২ দশমিক সাত শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাত দশমিক সাত শতাংশ, ব্যাংক সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ছয় দশমিক ৯ শতাংশ এবং ওষুধ খাত ছয় দশমিক আট শতাংশ অবদান রাখে।
একক হিসেবে ডিএসইতে সপ্তাহ শেষে শেয়ারদর বৃদ্ধিতে শীর্ষে উঠে এসেছে সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড। সপ্তাহ শেষে ফান্ডটির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছিল ৩০ দশমিক ৫২ শতাংশ। এছাড়া দর বৃদ্ধি পায় ক্রিস্টার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-০১, এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ্ ফান্ড ও প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।
অন্যদিকে শেয়ারদর হারানোর শীর্ষে উঠে এসেছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। কোম্পানিটি গত সপ্তাহে ১৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ শেয়ারদর হারায় আগের সপ্তাহের চেয়ে। এছাড়া শেয়ারদর হারিয়ে শীর্ষের তালিকায় নাম লেখায় ইনডেক্স এগ্রো ও ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং।