দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বছরজুড়েই সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আর্থিক খাত। অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় আর্থিক খাত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এখাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ারও উপক্রম হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। এতো সবের পরও পুঁজিবাজারে আশা জাগাচ্ছে আর্থিক খাত। এখাতের কিছু কোম্পানি ডিভিডেন্ড ও মুনাফার ঝলক দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আশার আলো দেখাতে শুরু করেছে।

পুঁজিবাজারে আর্থিক খাতে কোম্পানির সংখ্যা ২৩টি। এরমধ্যে ৯টি কোম্পানি এ পর্যন্ত সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আশার কথা হলো, সবগুলো কোম্পানিই এবছর ডিভিডেন্ড দিয়েছে। গত কয়েক বছর ডিভিডেন্ড দেয়নি, এমন কোম্পানিও এবছর বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ডের মুখ দেখিয়েছে। খাতটিতে প্রথম আশা জাগিয়েছে বিডি ফাইন্যান্স।

এবছর কোম্পানিটি ৬ শতাংশ ক্যাশ ও ৬ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে। আগের বছর দিয়েছিল ১০ শতাংশ ক্যাশ। ২০২০ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। আগের বছর ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ১ টাকা ১২ পয়সা। ডিভিডেন্ড এবং মুনাফায় প্রবৃদ্ধি এসেছে যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ৬০ শতাংশ।

সম্প্রতি বিডি ফাইন্যান্স যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এসআইজি নামক একটি গ্লোবাল অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে একটি বড় চুক্তি করেছে। চুক্তির আওতায় এসআইজি বিডি ফাইন্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এসআইজি বিডি ফাইন্যান্সের ৪ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত হবে। এ খবরে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। লেনদেনে দেখা যাচ্ছে ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি। এরফলে বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর ভলিউড লিডারে কোম্পানিটির শেয়ার তৃতীয় স্থান করে নিয়েছে।

এরপর চমক দেখিয়েছে ফার্স্ট ফাইন্যান্স। কোম্পানিটি ২০১৫ সাল থেকে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ডের মুখ দেখায়নি। এবছর বিনিয়োগকারীদের ২ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ২০২০ সালে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ১৬ পয়সা। আগের বছর ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৩ টাকা ৪৯ পয়সা। এরপর ঝলক দেখিয়েছে ন্যাশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্স।

এবছর কোম্পানিটি ১৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। আগের বছর দিয়েছিল ১০ শতাংশ ক্যাশ। ২০২০ সালে কোম্পানিটি ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৭৫ পয়সা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ২ টাকা ২ পয়সা। ডিভিডেন্ড ও মুনাফায় ন্যাশনাল হাউজিং প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে যথাক্রমে ৫০ শতাংশ ও ৩৬ শতাংশ।

এবছর ৩টি কোম্পানি আগের বছরে সমপরিমাণ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো-লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, ইসলামিক ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স। লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স আগের বছরের মতো এবছরও ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। তবে কোম্পানিটির মুনাফায় বড় ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। ২০২০ সালে কোম্পানিটি ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৮১ পয়সা।

আগের বছর ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ৯৮ পয়সা। ২০২০ সালে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স মুনাফায় প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে ৮৪ শতাংশের বেশি। তেমনি ভাবে ইসলামিক ফাইন্যান্সও আগের বছরের ন্যায় এবছর ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। তবে কোম্পানিটির মুনাফা কিছুটা বেড়েছে। ২০২০ সালে কোম্পানিটি ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৫৪ পয়সা। আগের বছর ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ১ টাকা ৩৯ পয়সা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশের কিছুটা বেশি।

তবে ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ডিভিডেন্ড আগের বছরের সমপরিমাণ হলেও মুনাফায় অধোগতি হয়েছে। আগের বছর ২০১৯ সালে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১ টাকা ৩১ পয়সা। ২০২০ সালে ইপিএস নেমেছে ১ টাকা ১৩ পয়সায়। মুনাফা কমেছে ১৩ শতাংশ। এবছর ৩ কোম্পানির ডিভিডেন্ড কমেছে। কোম্পানিগুলো হলো-ডিবিএইচ, আইপিডিসি ও আইডিএলসি।

গত বছর আইডিএলসি ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ৩৫ শতাংশ ক্যাশ। এবছর দিয়েছে ১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস। তবে কোম্পানিটির মুনাফায় ঝলক রয়েছে। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৫১ পয়সা। ২০২০ সালে ইপিএস হয়েছে ৬ টাকা ৭৪ পয়সা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।

আইপিডিসি গত বছর ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ১০ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস। এবছর দিয়েছে ১২ শতাংশ ক্যাশ। তবে ডিভিডেন্ড কমলেও কোম্পানিটির মুনাফা কিছুটা বেড়েছে। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ইপিএস ছিল ১ টাকা ৮২ পয়সা। ২০২০ সালে ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৯০ পয়সা। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশের বেশি।

এবছর ডিবিএইচের ডিভিডেন্ড ও মুনাফা উভয় কমেছে। কোম্পানিটি এবছর ডিভিডেন্ড দিয়েছে ১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ১৫ শতাংশ বোনাস। আগের বছর ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ২০ শতাংশ ক্যাশ ও ১৫ শতাংশ বোনাস। ২০১৯ সালে শেয়ার কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৮ টাকা ৪ পয়সা। ২০২০ সালে মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ৭৬ পয়সায়। মুনাফা কমেছে ২৮ শতাংশ।

১৫ ব্যাংকের মধ্যে ৬ ব্যাংকের লভ্যাংশে চমক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৫টি ব্যাংক ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ হিসাব বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ৮টি ব্যাংকের লভ্যাংশ বেড়েছে, ৩টির কমেছে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩টির। তবে লভ্যাংশের ঘোষণায় চমক দেখিয়েছে ৬ ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

লভ্যাংশ ঘোষণা করা ১৫ ব্যাংক হলো: ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক।

এরমধ্যে লভ্যাংশ বেড়েছে ৮ ব্যাংকের। ব্যাংকগুলো হলো: ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি, ডাচ বাংলা, পূবালী, প্রাইম ব্যাংক, যমুনা, ওয়ান, প্রিমিয়ার ও শাহজালাল ব্যাংক। লভ্যাংশ কমেছে ৩ ব্যাংকের। ৩ কোম্পানি হলো: আইএফআইসি, মার্কেন্টাইল ও উত্তরা ব্যাংক। আর লভ্যাংশ অপরিবর্তিত রয়েছে ৩ ব্যাংকের। কোম্পানি গুলো হলো: এশিয়া, ব্র্যাক ও আইসিবি ইসলামি ব্যাংক। এরমধ্যে আইসিবি ইসলামি ব্যাংক বরাবরের মতো এবারও ডিভিডেন্ড দেয়নি। অর্থাৎ লভ্যাংশ ঘোষণায় কোন পরিবর্তন হয়নি।

লভ্যাংশ বেড়েছে যে ৯ ব্যাংকে: ইস্টার্ন ব্যাংক : ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ হিসাব বছরের জন্য ৩৫ লভ্যাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৭.৫০ শতাংশ ও ১৭.৫০ শতাংশ বোনাস। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫ টাকা ৫ পয়সা। গত বছরের একই সময় ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৯৪ পয়সা।

আলোচ্য হিসাব বছরে ব্যাংকের শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) হয়েছে ৩৫ টাকা ৬৯ পয়সা। গত বছরের একই সময় এনএভি ছিল ৩১ টাকা ৪৯ পয়সা। আগামী ৩০ মে, বেলা ১১টায় ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ মে।

সিটি ব্যাংক : ২০২০ সালের জন্য সিটি ব্যাংক ১৭.৫০ শতাংশ ক্যাশ ৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ২০১৯ সালে ছিল ১৫ শতাংশ ক্যাশ। ২০২০ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ৪ টাকা ২৯ পয়সা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ২ টাকা ৫৯ পয়সা।

ডাচ বাংলা ব্যাংক: ২০২০ সালের জন্য ডাচ বাংলা ১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ১৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ২০১৯ সালে ছিল ১৫ শতাংশ ক্যাশ ও ১০ শতাংশ বোনাস। ২০২০ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ১০ টাকা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ৮ টাকা ৬৮ পয়সা।

পূবালী ব্যাংক: ২০২০ সালের জন্য পূবালী বাংলা ১২.৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ২০১৯ সালে ছিল ১০ শতাংশ ক্যাশ। ২০২০ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৬০ পয়সা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ২ টাকা ১০ পয়সা।

যমুনা ব্যাংক : ২০২০ সালের জন্য যমুনা ব্যাংক ১৭.৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ২০১৯ সালে ছিল ১৫ শতাংশ ক্যাশ। ২০২০ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৫৪ পয়সা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৩৮ পয়সা।

ওয়ান ব্যাংক : ২০২০ সালের জন্য ওয়ান ব্যাংক ৬ শতাংশ ক্যাশ ৫.৫০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ২০১৯ সালে ছিল ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস। ২০২০ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৫৭ পয়সা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ১ টাকা ৯১ পয়সা।

প্রাইম ব্যাংক : ২০২০ সালের জন্য প্রাইম ব্যাংক ১৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ২০১৯ সালে ছিল সাড়ে ১৩ শতাংশ ক্যাশ। ২০২০ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৫৯ পয়সা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ১ টাকা ৪৭ পয়সা।

প্রিমিয়ার ব্যাংক : ২০২০ সালের জন্য প্রাইম ব্যাংক ১২.৫০ শতাংশ ক্যাশ ও ৭.৫০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ২০১৯ সালে ছিল ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস। ২০২০ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ১৩ পয়সা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৬১ পয়সা। কোম্পানিটির ইপিএস কমেছে।

শাহজালাল ব্যাংক : ২০২০ সালের জন্য শাহজালাল ব্যাংক ৭ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ২০১৯ সালে ছিল ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস। ২০২০ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৯৫ পয়সা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ১ টাকা ৭৮ পয়সা।

যে ৩ ব্যাংকের লভ্যাংশ কমেছে: মার্কেন্টাইল ব্যাংক : ২০২০ সালের জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক ১০ শতাংশ ক্যাশ ৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ২০১৯ সালে ছিল ১১ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস। ২০২০ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ২৬ পয়সা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ২ টাকা ৩৭ পয়সা।

আইএফআইসি ব্যাংক : ২০২০ সালের জন্য আইএফআইসি ব্যাংক ৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ২০১৯ সালে ছিল ১০ শতাংশ বোনাস। ২০২০ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ৭০ পয়সা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ১ টাকা ৯২ পয়সা।

উত্তরা ব্যাংক : ২০২০ সালের জন্য উত্তরা ব্যাংক ১২.৫ শতাংশ ক্যাশ ও ১২.৫০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ২০১৯ সালে ছিল ৭ শতাংশ ক্যাশ ও ২৩ শতাংশ বোনাস। ২০২০ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ৪ টাকা ২৮ পয়সা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৫৯ পয়সা।
যে ৩ ব্যাংকের লভ্যাংশ অপরিবর্তিত রয়েছে: ব্যাংক এশিয়া : ২০২০ সালের জন্য ব্যাংক এশিয়া ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ২০১৯ সালেও ছিল ১০ শতাংশ ক্যাশ। ২০২০ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৭৪ পয়সা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ১ টাকা ৬৪ পয়সা।

ব্র্যাক ব্যাংক : ২০২০ সালের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক ১০ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ২০১৯ সালেও ছিল ৭.৫০ শতাংশ ক্যাশ ও ৭.৫০ শতাংশ বোনাস। ২০২০ হিসাব বছরে ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৩০ পয়সা। ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল ৪ টাকা ১ পয়সা।
আইসিবি ইসলামী : আগের বছরগুলোর মতো আইসিবি ইসলামি ব্যাংক ২০২০ সালের জন্যও কোন ডিভিডেন্ড দেয়নি। তবে সমাপ্ত হিসাব বছরে ব্যাংকটির লোকসান কমেছে।

পুঁজিবাজার খোলার সিদ্ধান্তে আস্থা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে নেতিবাচক ধারায় শেষ হয় পুঁজিবাজারের লেনদেন। সূচকগুলোর টালমাটাল অবস্থা আরও খারাপের দিকেই যেতে পারে বলে ধরে নিয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু লকডাউনেও পুঁজিবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্তে পরবর্তী কার্যদিবস থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে পুঁজিবাজারের সব সূচক। সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে সপ্তাহের শেষ দিন পর্যন্ত।

এর ফলে সপ্তাহ শেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব সূচক ও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায়। লেনদেনে অংশ নেয় বেশিরভাগ কোম্পানি ও ইউনিট। এতে সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন বৃদ্ধি পায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।

অবশ্য লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে আগের সপ্তাহের চেয়ে। সূচকের পতন ঠেকানো ও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধিতে অবদান রাখে সাধারণ বিমা খাত। অতীতের মতো গত সপ্তাহেও শেয়ার লেনদেনে সর্বোচ্চ অবদান ছিল খাতটির। ডিএসইর গত সপ্তাহের বাজারচিত্র বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।

ডিএসইর সাপ্তাহিক তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে মোট ৩৭৫টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বৃদ্ধি পায় ২১৭টির, কমে ৯০টির, অপরিবর্তিত ছিল ৬০টির ও লেনদেন হয়নি আটটির। সপ্তাহ শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বৃদ্ধি পায় ৫৫ দশমিক ৪১ পয়েন্ট। ডিএস৩০ সূচক ৩৬ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট ও ডিএসইএস ১১ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। লেনদেন কমে যায় আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। পহেলা বৈশাখের ছুটি থাকায় গত সপ্তাহে এক দিন বন্ধ ছিল পুঁজিবাজারের লেনদেন। সাপ্তাহিক লেনদেন কমে যাওয়ার এটিও একটি কারণ বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকডাউনে যাচ্ছে দেশ এমন ধারণা বিনিয়োগকারীদের মনে আগে থেকেই জšে§ছিল। ১২ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন দিয়ে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এ তালিকায় যুক্ত হয় ব্যাংকও। পুঁজিবাজারও বন্ধ হয়ে যাবে, এমন বার্তা চলে যায় সবার কাছে। কিন্তু লকাডাউনে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার বন্ধ থাকার বিষয়টি সবার মনেই শঙ্কার জš§ দেয়। এ নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন বিনিয়োগকারীরা।

অবশেষে এক দিন পরই ব্যাংক ও পুঁজিবাজার খোলা রাখার সিদ্ধান্ত আসে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয়ে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। ফলে শেষ মুহূর্তে অধিকাংশ শেয়ারের দর বৃদ্ধি পায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বার্তা যায়, করোনার প্রকোপ বাড়লেও পুঁজিবাজারে লেনদেন সম্ভব। এজন্য সশরীরে সিকিউরিটিজ হাউসগুলোয় উপস্থিতির পরিবর্তে বিভিন্ন বিকল্প উপায়ে (অনলাইন, মোবাইল) লেনদেনে ঝুঁকে পড়ছেন তারা।

সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে খাতভিত্তিক লেনদেনে আগের চেয়ে ইতিবাচক ছিল মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন। মোট লেনদেনে এ খাতের অবদান ছিল আট দশমিক পাঁচ শতাংশ। এছাড়া সিমেন্ট খাতের অবদান ছিল ছয় দশমিক ছয় শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের দুই দশমিক সাত শতাংশ, আইটি দুই শতাংশ, সাধারণ বিমা এক দশমিক ছয় শতাংশ ও ব্যাংক এক শতাংশ।

অন্যদিকে ট্যানারি, বস্ত্র ও সিরামিক খাতের শেয়ার নেতিবাচক ধারায় লেনদেন শেষ করে আগের সপ্তাহের চেয়ে। এ খাতে গত সপ্তাহে কিছুটা লোকসান দেখতে পান বিনিয়োগকারীরা আগের সপ্তাহের চেয়ে।

অবশ্য ডিএসইর মোট লেনদেনে সাধারণ বিমা খাত ৩৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ অবদান রাখে, যা একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ। এর পরই বিবিধ খাত ১২ দশমিক সাত শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাত দশমিক সাত শতাংশ, ব্যাংক সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ছয় দশমিক ৯ শতাংশ এবং ওষুধ খাত ছয় দশমিক আট শতাংশ অবদান রাখে।

একক হিসেবে ডিএসইতে সপ্তাহ শেষে শেয়ারদর বৃদ্ধিতে শীর্ষে উঠে এসেছে সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড। সপ্তাহ শেষে ফান্ডটির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছিল ৩০ দশমিক ৫২ শতাংশ। এছাড়া দর বৃদ্ধি পায় ক্রিস্টার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-০১, এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ্ ফান্ড ও প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।

অন্যদিকে শেয়ারদর হারানোর শীর্ষে উঠে এসেছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। কোম্পানিটি গত সপ্তাহে ১৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ শেয়ারদর হারায় আগের সপ্তাহের চেয়ে। এছাড়া শেয়ারদর হারিয়ে শীর্ষের তালিকায় নাম লেখায় ইনডেক্স এগ্রো ও ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং।

করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় বড় সঙ্কটে বস্ত্র খাত: করোনার প্রথম ঢেউ কাটিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত ভালভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার দ্বিতীয় ধাপে দেশে রেকর্ড মাত্রায় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় আবারও শঙ্কা বাড়ছে তৈরি পোশাক শিল্পে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে লকডাউনে আবারও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন রফতানিকারকরা। তারা বলছেন, এখনও বড় মাত্রায় পোশাক ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়নি। তবে যে কোন সময় পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার আশঙ্কায় আছেন তারা।

জানা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বৈশ্বিক পোশাক আমদানি ২৩ শতাংশ কমে যায়। করোনায় দেশে দেশে লকডাউনের কারণে মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দেয়। ফলে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে জমে পোশাকের স্তূপ। এতে অনেক ব্র্যান্ড কারখানা আগের কার্যাদেশ বাতিল করে, অনেকে দামও কমিয়ে দেয়। তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ করোনায় পোশাক খাতে একটি ক্ষতির হিসাব করেছে। তারা বলছেন, গত বছর করোনা শুরুর পর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ৩.৮১ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার স্থগিত হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত হওয়া অর্ডারের শতকরা ৯০ ভাগ ফিরে আসে। ৫০ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার শেষ পর্যন্ত আর ফিরে আসেনি। এর পর গত কয়েক মাসে পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি অনেকাংশেই কমে যায়। কেভিড-১৯সহ বিভিন্ন কারণে প্রতি মাসেই কমছে পোশাক রফতানি। মাসে এখন গড়ে ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়।

এ হারে এগোলে অর্থবছরের বাকি চার মাসে আরও এক হাজার ২০০ কোটি ডলার যুক্ত হতে পারে। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরেও পোশাক খাতের মোট রফতানি দাঁড়াতে পারে তিন হাজার ৩০০ কোটি ডলার। মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে এখনও বড় ধরনের অর্ডার স্থগিত হয়নি। তবে অর্ডার ও পোশাকের দাম কমেছে। গত অক্টোবর, নবেম্বর ও ডিসেম্বরে গড়ে দাম কমেছে শতকরা পাঁচ ভাগ।

জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে পোশাকের দাম কমেছে ৪ শতাংশের মতো। যা এখন পর্যন্ত খুব একটা উন্নতি হয়নি দামে। যদিও পোশাক রফতানি করে লাভ হয় গড়ে শতকরা দুই-তিন ভাগ। ফলে লাভ কমে গেছে বা লোকসান বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ।

জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বের বেশ কিছু দেশে আবারও লকডাউন দেয়ায় সেখানকার খুচরা ক্রেতারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। তাই বায়াররাও সতর্ক। তারা আগে যদি একসঙ্গে এক লাখ পিস অর্ডার করতেন এখন পাঁচবারে অর্ডার করছেন। এখানে কারখানাগুলো সাধারণত তিন মাস আগে অর্ডার পেত। কিন্তু এখন সেই লিড টাইম পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কারখানাগুলোকে সক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে ফতুল্লা এ্যাপারেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলে শামীম এহসান বলেন, দ্বিতীয় ধাক্কায় আমরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমাদের অর্ডার কমে গেছে। করোনার প্রথম ধাক্কায় কিছু অর্ডার স্থগিত হয়েছিল, কিন্তু পরে ক্রেতারা সেগুলো পুনরায় দেয়। কিন্তু সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে। গার্মেন্টস এমন একটা ব্যাপার, ফ্লোরে যদি কমপক্ষে ৯০ শতাংশ অর্ডার না থাকে, তাহলে লোকসানে চলতে হয়। আমাদের ফ্যাক্টরিগুলো সেপ্টেম্বরের শেষ থেকেই লসে চলছে।

সম্প্রতি ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল এ্যান্ড এ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর করোনার সংক্রমণ ছিল অন্য যে কোন দেশের চেয়ে বেশি। সে কারণে ২০২০ সালে দেশটিতে তৈরি পোশাক আমদানি এক-চতুর্থাংশ কমে যায়। তবে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে আবারও দেশটিতে পোশাক রফতানি বাড়ছে। সেই সুফল বাংলাদেশও পেয়েছে। তবে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ায় দেশটিতে পোশাক রফতানি নিয়ে আবারও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান গত বছর ৬ হাজার ৪০৭ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করে। ২০১৯ সালের চেয়ে এই আমদানি ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। তবে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে ১ হাজার ৯১ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে দেশটির ব্যবসায়ীরা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ১০০ কোটি ডলার বা সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার পোশাক রফতানি করেছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ কম। এই বাজারে চীন ও ভিয়েতনামের পর বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রফতানিকারক দেশ। গত বছর একপর্যায়ে চীনকে ছাড়িয়ে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ পোশাক রফতানিকারক হলেও পরিস্থিতি আবার বদলেছে।

চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীন ২৪৫ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ২২ শতাংশ কম। অন্যদিকে ভিয়েতনাম গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ২০৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। গত বছরের প্রথম দুই মাসে দেশটি ২৩৪ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছিল। সেই হিসাবে চলতি বছর তাদের রফতানি কমেছে ১২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

শীর্ষ তিন রফতানিকারক দেশের মতোই ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রফতানিও কমেছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ভারত ৫৯ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করলেও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ কম। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চতুর্থ সর্বোচ্চ পোশাক রফতানিকারক দেশ। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া রফতানি করেছে ৫৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। তাদের রফতানি কমে গেছে ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

এ বিষয় জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া এখনও শ্লথ। দেশটির ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সব ধরনের পোশাক নিলেও পরিমাণে কম। বিপুলসংখ্যক মানুষ টিকা নিলেও দেশটিতে নতুন করে আবার সংক্রমণ বাড়ছে। আসলে করোনার নিত্যনতুন ধরনের কারণে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।

ফজলুল হক আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়াতে আরও বেশি সময় লাগবে। কারণ, ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ছয়/সাত মাস পরের অবস্থা কী হবে, সেই পূর্বাভাস দেখে সিদ্ধান্ত নেয়। তাই দ্রুত করোনা পরিস্থিতি উন্নতি না হলে তৈরি পোশাক রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যদিও ক্রেতারা সে ধরনের কোন বার্তা এখনও দেয়নি।

সপ্তাহজুড়ে ১০ কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন খাতের ১০ কোম্পানি সপ্তাহজুড়ে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। নিন্মে কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ তুলে ধরা হলো: রবি আজিয়াটা লিমিটেড : রবি আজিয়াটা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩ শতাংশ অন্তর্র্বতী ক্যাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এ ডিভিডেন্ড সংরক্ষিত আয় (রিটেইন আর্নিংস) থেকে দেওয়া হবে। চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ, ২০২১) রবির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.০৭ টাকা।

আগের বছরের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ০.৩৩ টাকা। রবির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) হয়েছে ১২ টাকা ৬৬ পয়সা। রবির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১২.৬৬ টাকা। আগের বছর একই সময় এনএভিপিএস ছিল ১৩.৯০ টাকা। এই ডিভিডেন্ড প্রদানে শেয়ারহোল্ডার নির্বাচনের জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২ মে।

ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স : ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ৭ শতাংশ ক্যাশ ও ৩ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড। ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ১২ পয়সা। আগের বছরের একই সময় ইপিএস ছিল ১ টাকা ৩৮ পয়সা।

আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) হয়েছে ২১ টাকা ৩২ পয়সা। আগের বছরের একই সময় এনএভি ছিল ১৯ টাকা ৯৮ পয়সা। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ৮৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময় এনওসিএফপিএস ছিল ৭৫ পয়সা। আগামী ১০ জুন, বিকাল ৩টায় ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ এপ্রিল।

লিন্ডে বিডি : লিন্ডে বিডি ২০২০ সালের সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য ৪০০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর আগে ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ৫০০ শতাংশ ক্যাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছিল। আলোচিত বছরে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) করেছে ৭০ টাকা ৫৫ পয়সা। যা আগের বছর একই সময় ছিল ৮০ টাকা ৯৩ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য বা এনএভিপিএস দাঁড়ায় ৫৪১ টাকা ৭০ পয়সা।

উত্তরা ব্যাংক : উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড ২০২০ হিসাব বছরের জন্য ২৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ১২.৫০ শতাংশ ক্যাশ ও ১২.৫০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড। সমাপ্ত ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪ টাকা ২৮ পয়সা। গত বছরের একই সময় কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৫৯ পয়সা। আগামী ২০ মে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২ মে, ২০২১।

ইসলামী ফাইনান্স : ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ২০২০ হিসাব বছরের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৫৪ পয়সা। আগের বছর ইপিএস ছিল ১ টাকা ৩৯ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য হয়েছে ১৪ টাকা ৯৯ পয়সা। আগামী ২৪ জুন, সকাল ১১টায় ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ মে।

লিবরা ইনফিউশন : লিবরা ইনফিউশন লিমিটেড ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের জন্য ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৬০ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) হয়েছে ১,২৬৯ টাকা। আগের বছর একই সময়ে এনএভি ছিল ১,৫২১ টাকা পয়সা। কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৪ মে। এর জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ মে।

ব্র্যাক ব্যাংক : ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ হিসাব বছরের জন্য ১৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ১০ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড। সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির কনসোলিডেটেড শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৩৩ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ৩ টাকা ৭৩ পয়সা।

আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কনসোলিডেটেড শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) হয়েছে ৩৬ টাকা ৬৩ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩০ টাকা ৬১ পয়সা। ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৭ মে। এর জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ মে।

ইস্টার্ন ব্যাংক :ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ হিসাব বছরের জন্য ৩৫ লভ্যাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৭.৫০ শতাংশ ও ১৭.৫০ শতাংশ বোনাস। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫ টাকা ৫ পয়সা। গত বছরের একই সময় ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৯৪ পয়সা। আলোচ্য হিসাব বছরে ব্যাংকের শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) হয়েছে ৩৫ টাকা ৬৯ পয়সা। গত বছরের একই সময় এনএভি ছিল ৩১ টাকা ৪৯ পয়সা। আগামী ৩০ মে, বেলা ১১টায় ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ মে।

পূবালী ব্যাংক : পূবালী ব্যাংক লিমিটেড ২০২০ হিসাব বছরের জন্য ১২.৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির কনসোলিডেটেড শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৬০ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ টাকা ১০ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কনসোলিডেটেড শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) হয়েছে ৩৭ টাকা ৬৩ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩১ টাকা ২৪ পয়সা।ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩ জুন। এর জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ মে।

কন্টিনেন্টাল ইন্সুরেন্স : কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ হিসাব বছরের জন্য ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ৬ শতাংশ ক্যাশ এবং ৪ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড। সমাপ্ত ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ২৯ পয়সা। গত বছরের একই সময় কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১ টাকা ৭৫ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) কমেছে ৪৬ পয়সা।

৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত হিসাব কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) হয়েছে ১৯ টাকা ৮৪ পয়সা। গত বছরের একই সময় এনএভি ছিল ১৮ টাকা ৭০ পয়সা। আগামী ১৫ জুন, বেলা ১১টায় ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে কোম্পানিটির ২১তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ মে।

চার বীমা কোম্পানি সাপ্তাহিক টার্নওভারের তালিকায়: প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (১১-১৫ এপ্রিল) ২ হাজার ১৯ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে টপ টেন টার্নওভার তালিকায় এগিয়ে রয়েছে ইন্সুরেন্স খাত। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিদায়ী সপ্তাহে টার্নওভার তালিকায় উঠে এসেছে চার ইন্সুরেন্স কোম্পানি। যা আগের সপ্তাহগুলোতে সচরাসর দেখা যায়নি। টার্নওভারের তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলো হলো-এশিয়া প্যাসিফিক, সেন্ট্রাল, পূরবী জেনারেল ও সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স।

সপ্তাহটিতে এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৮ লাখ ৯২ হাজার ৪৮২টি। যার বাজার মূল্য ৫৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৫ লাখ ১ হাজার ৫৫৫টি। যার বাজার মূল্য ৪৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার ১১টি। যার বাজার মূল্য ৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৫ লাখ ৭৬ হাজার ৭৬৮টি। যার বাজার মূল্য ৪৫ কোটি ২ লাখ টাকা।