দেশ প্রতিক্ষণ, বরিশাল: অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলে রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়েছে। শরীরের সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলে করে এক বয়স্ক নারী রোগীকে অক্সিজেন দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন এক ব্যক্তি। শনিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের সামনের এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ওই ছবিতে দেখা গেছে, একজন মোটরসাইকেল চালক একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে বয়স্ক এক নারী আরোহীর মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটছেন হাসপাতালের দিকে। সঙ্গে আরেকটি মোটরসাইকেলে ছিলেন আরও দুইজন আরোহী। বিকেল ৩টার দিকে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া হিরন পয়েন্টে এই দৃশ্য দেখা যায়।

এ দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর অনুসন্ধানে নামে দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের বরিশাল প্রতিনিধি। বেড়িয়ে আসে আসল রহস্য। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সূর্যেখালী গ্রামের হাকিম মোল্লার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৫৮) জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এটা করোনা সংক্রমণের উপসর্গ। ফলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া দরকার। কিন্তু লকডাউনে যানবাহন বন্ধ। আবার জরুরিভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সও পাওয়া যাচ্ছিলো না।

তাই একটা উপায় বের করলেন তার ছেলে জিয়াউল হাসান টিটু। মোটরসাইকেল ও নিজের পিঠের সঙ্গে বাঁধলেন অক্সিজেন সিলিন্ডার। এরপর মাকে বসালেন। সিলিন্ডার থেকে মায়ের মুখে অক্সিজেন নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। এরপর মোটরসাইকেল চালিয়ে শনিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এলেন। রেহেনা বেগমকে হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

মোটরসাইকেলে হাসপাতালে নিয়ে আসার একটি ছবি কেউ ধারণ করে এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দিলে তা ভাইরাল হয়। এমন ছবিটিকে অনেকে হৃদয়বিদারক বলে অভিহিত করেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. এস এম মনিরুজ্জামান জানান, বর্তমানে রেহেনা বেগমের অবস্থা ভালো। বৃদ্ধার ছেলে জিয়াউল হাসান টিটু বলেন, রেহেনা জ্বর ও শ্বাসকষ্টে কষ্ট পাচ্ছিল। লকডাউনে যানবাহনও চলছে না। আর জরুরিভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সও না পাওয়া এই উপায় বের করেন। তবে রেহেনা বেগমকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে হাইফ্লোর মেশিনের সাহায্য নেওয়া হবে।’

সেখানে দায়িত্বরত বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট তৌহিদ টুটুল দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার বহনকারী মোটরসাইকেল আরোহীকে ধরে রোগী নিজেই বসে ছিলেন। যিনি মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন তিনি হেলমেট পরা ছিলেন। তার চেহারা আমরা দেখতে পারিনি বা দেখার চেষ্টাও করিনি। তাদের থামিয়ে হয়তো পরিচয় শনাক্ত করতে পারতাম, কিন্তু সেটি হতো অমানবিকতা। অক্সিজেন পরিহিত যে নারী ছিলেন তার বয়স দেখে মনে হয়েছে মোটরসাইকেল আরোহীর মা হতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছিলাম। তখন পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দিক থেকে মোটরসাইকেলটি আসছিল। প্রথমে মোটরসাইকেলটিকে থামানোর সিগন্যাল দেই, কিন্তু যখনই দেখি মোটরসাইকেলে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অক্সিজেন মাস্ক পরে রোগী যাচ্ছেন তখন এক সেকেন্ডের জন্যও মোটরসাইকেলটি থামাইনি। বরং দ্রুত যেন চলে যায় সেই ব্যবস্থা করে দেই।

তৌহিদ টুটুল বলেন, রোগী বহনকারী মোটরসাইকেলটির পাশে আরেকটি মোটরসাইকেল ছিল। সেটিতে তাদের দুই স্বজন ছিল। মূলত রোগী যেন পড়ে না যান সেজন্য তারা পাশাপাশি চালিয়ে আসছিলেন। আমরা চেকপোস্ট অতিক্রম করিয়ে দিলে গাড়ি দুটো দ্রুত বরিশাল শহরের দিকে চলে যায়।

ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই চেকপোস্টে দায়িত্বরত সার্জেন্ট টুটুলের প্রশংসা করছেন। এদিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে এখন পর্যন্ত ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবির ওই রোগী ও স্বজনদের শনাক্ত করা যায়নি।