দেশ প্রতিক্ষণ, বরিশাল: বরিশাল বিভাগের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কমিটি মহানগর ছাত্রলীগ। সেই সংগঠনের নেতারাই যদি নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকেন তাহলে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি কতটুকু আর ভালো থাকবে।তাছাড়া কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় ৯ বছর হয়ে গেছে। কমিটি না হওয়ায় এই নেতারা চান্স পেয়ে নানা অপকর্ম করছেন।’

বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের তিন সদস্যের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় ৯ বছর আগে। এর মধ্যে মধ্যে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। চাকরির সুবাদে সাংগঠনিক সম্পাদক রাজনীতি ছেড়েছেন। আর সভাপতির নাম জড়িয়েছে ধর্ষণ মামলায়।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, অস্ত্র ও তরুণী অপহরণ মামলায় জড়িয়ে সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের সুনাম আগেই ক্ষুণ্ণ করেছেন। এতে শেষে পেরেক ঠুকুছেন সভাপতি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন তিনি। তার সঙ্গে একমত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করেছেন। তবে এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ২০১১ সালে গঠন করা হয় বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। এতে জসীম উদ্দিনকে সভাপতি, অসীম দেওয়ানকে সাধারণ সম্পাদক ও তৌছিক আহম্মেদ রাহাতকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। ছাত্রলীগের এই ইউনিটের কমিটি ঘোষণার কিছুদিন পরেই চাকরির সুবাদে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন সাংগঠনিক সম্পাদক রাহাত। পরে দুই নেতার ওপর ভর করেই চলতে থাকে কমিটির কার্যক্রম।

শীর্ষ নেতাদের মধ্যে জসীম ও অসীম সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের অনুসারী ছিলেন।  তাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১২ সালে। কিন্তু রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসহ নানা কারণে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে ব্যর্থ হন। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর তারা একজোট হয়ে কমিটি গঠনের চেষ্টা করেন। তবে সেই চেষ্টাও আলোর মুখ দেখেনি।

শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পর রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে অসীম রাজধানীতে বসবাস শুরু করেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে তাকে অস্ত্র ও অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ওই মাসের ১৯ তারিখ অসীমকে বহিষ্কার করেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। সম্প্রতি জসীমের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করেন এক তরুণী। বুধবার ওই অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। এ ঘটনায় বিব্রত দলের নেতা-কর্মীরা।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘জসীমের কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত। তার বিরুদ্ধে যাতে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয় সেজন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।’ স্থানীয় কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বরিশাল বিভাগের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কমিটি মহানগর ছাত্রলীগ। সেই সংগঠনের নেতারাই যদি নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকেন তাহলে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি কতটুকু আর ভালো থাকবে।

‘তাছাড়া কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় ৯ বছর হয়ে গেছে। কমিটি না হওয়ায় এই নেতারা চান্স পেয়ে নানা অপকর্ম করছেন। ছাত্রলীগের এই জসীম অনেক অবৈধভাবে সম্পত্তি অর্জন করেছেন। ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পাওয়ার আগে তিনি এবং তার পরিবার কী অবস্থায় ছিল আর এখন কী অবস্থায় রয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি ভবন, একটি মার্কেটসহ অনেক জমি-জমার মালিক জসীম। তাছাড়া বরিশাল সদরেও ব্যাপক সম্পত্তি রয়েছে তার।

বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্টকারীদের অবলিম্বে বহিষ্কার এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্ষণের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে তিনি ছাত্রলীগের মত ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নেতা হতে পারে না। আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে দাবি জানাচ্ছি, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসীমকে বরখাস্ত করে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি রক্ষা করা হোক।’

জসীমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন দেয়া হয়। কিন্তু তারা সাড়া দেননি। পরে দুই জনের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানো হলেও তার জবাব দেননি।

বরিশালে করোনা আক্রান্ত উপসর্গ নিয়ে ৬ জনের মৃত্যু: করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে বরিশাল গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে এই অঞ্চলে ২৪৪ জন মারণঘাতী এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। এই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৭৬ জন। এনিয়ে বরিশালে সর্ব মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৮৬। আর নতুন করে যে ৬ জন মারা গেছে তাদের মধ্যে একজন আক্রান্ত ছিলেন। আজ শুক্রবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নতুন আক্রান্ত ৭৬ জনের মধ্যে বরিশালে সবচেয়ে বেশি ৩০ জন শনাক্ত হয়েছে। এ জেলায় এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত ৬ হাজার ৩৯৮ জন। এছাড়া পটুয়াখালী জেলায় নতুন করে ৮ জন শনাক্ত হয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫০ জন।

ভোলায় নতুন ১০ জন নিয়ে মোট ১ হাজার ৬১৪ জন। পিরোজপুরে মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৫৩৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে নতুন শনাক্ত হয়েছে ৫ জন। বরগুনায় নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ জন। এ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২০২ জন এবং ঝালকাঠি জেলায় নতুন ১০ জন নিয়ে মোট শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ১৮৭ জন।

এদিকে বরিশালে মোট আক্রান্তের মধ্যে এখন পর্যন্ত (শুক্রবার) সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ৩০৭ জন। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়- গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জন উপসর্গ নিয়ে ও একজন করোনা আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করে।

হাসপাতালটির পরিচালক বলছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় এই ওয়ার্ডের আইসোলেশনে মোট ৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ জনকে করোনা ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে করোনা ইউনিটে ১২৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যাদের মধ্যে ৪৮ জন করোনা আক্রান্ত এবং ৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বরিশাল বিভাগে ২০২০ সালের ৯ মার্চ সর্বপ্রথম পটুয়াখালীতে নারায়ণগঞ্জ ফেরত এক শ্রমিক করোনা আক্রন্ত হিসেবে ধরা পড়েছিল।’

দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব, ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত: দক্ষিণাঞ্চলে থামছে না ডায়রিয়ার প্রকোপ। প্রতিদিন নগরীসহ জেলা-উপজেলায় গড়ে দেড় হাজারের অধিক নারী পুরুষ হাসপাতালে ছুটে আসছেন চিকিৎসার জন্য। আক্রান্ত থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশুও। ভর্তির তুলনায় রোগী রিলিজের হার কম। যে কারণে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল চত্বরে তাবু টানিয়ে রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। এমন পরিস্থিতিতেও থামছে না রোগীর চাপ।

মারণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) অপেক্ষা পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। বরিশালসহ দক্ষিণের ৬ জেলায় এই রোগে এ পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিনিয়ত পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলো পর্যাপ্ত বেড় বা স্থান না থাকায় হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য প্রশাসন।

বাধ্য হয়ে হাসপাতালের সম্মুখে অস্থায়ীভাবে সামিয়ানা টাঙিয়ে সেখানে আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে দেখা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ অঞ্চলের গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণু পেয়েছে রোগতত্ত রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। পরিস্থিতি মহামারির দিকে ছড়িয়ে পড়ায় আইইডিসিআর’র একাধিক টিম বরিশালে অবস্থান করছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানবিদ এএসএম আহসান কবির শুক্রবার জানান, বুধবার পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৬৩৮ জন। এর পরে আরও যে তালিকা এসেছে তাতে আরও ২ হাজার আক্রান্তের তথ্য আছে। সব মিলিয়ে ৩৫ হাজারের বেশি আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। রোগতত্ত¡ রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) গত সপ্তাহে বরগুনায় এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে সেখানকার ৭১ শতাংশ মানুষ গৃহস্থালির কাজে খাল কিংবা নদীর পানি ব্যবহার করছেন। যেমন ভাত রান্না, তরকারি ধোয়া। মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ নলক‚পের আওতায় রয়েছে।

এ অঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় আইইডিসিআর’র একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে। তাদের গবেষণা মতে, ডায়রিয়ার জীবাণু খালের পানিতে বিদ্যমান। বর্তমানে আইইডিসিআর’র টিম বাকেরগঞ্জে অবস্থান করছে। তিনি বলেন, বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি ব্যবহার করে যে সরবতসহ নানা কাজে লাগানো হয় তাও জীবাণুযুক্ত।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আক্রান্তের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দ্বীপ জেলা ভোলায় ৮ হাজার ৪৬০ মানুষ। পর্যায়ক্রমে বরিশাল জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৯১ জন, উপক‚লীয় এলাকা পটুয়াখালী ৭ হাজার ৬৪৬ জন, পিরোজপুরে ৪ হাজার ১৩৫ জন, বরগুনায় ৫ হাজার ১৭০ জন এবং ঝালকাঠী ৩ হাজার ৬৩৬ জন।

তবে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্থানীয় তথ্যে বেশ গড়মিল রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্তে ৮ জনের তালিকা প্রকাশ করলেও শুধু মাত্র পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জে মারা গেছে ১৩ জন। এবং বরিশালের বাকেরগঞ্জে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালী, ভোলাসহ বাকি জেলাগুলো থেকে মৃত্যুর খবর এসেছে এবং পত্র-পত্রিকার শিরোনাম হতে দেখা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. বাসুদেব মীর্জাগঞ্জ ও বাকেরগঞ্জে ডায়রিয়ায় মৃত্যুর বিষয়ে বলেন, যারা মারা এখন পর্যন্ত গেছেন তারা বাসায় থেকে মারা গেছেন। বিশেষ করে মির্জাগঞ্জের বিষয়টিও তাদের নজরে আছে। সবকিছু মিলিয়ে ডায়রিয়া পরিস্থিতি মহামারির দিকে ছড়িয়ে পড়ার আগেই জোর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে, জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।’

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় রোজায় করণীয় বর্জনীয়: পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনা করা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ। শর্তসাপেক্ষে প্রাপ্তবয়স্ক সকল নারী পুরুষের ওপর রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। বছরে এক মাস রোজা রাখার অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ইতিমধ্যে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। জোর করে কারো ওপর কোনো বিধান ইসলাম চাপিয়ে দেয় নাই। ইসলাম যেভাবে রোজা রাখার আদেশ দিয়েছে সাথে সাথে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য কিংবা মুসাফিরের জন্য রোজা ভাঙ্গার অনুমতি প্রদান করেছে।

রোজার সময় খুব সাধারণ একটা প্রশ্ন বেশি বেশি শোনা যায় যে রোজা রাখলে এসিডিটির কোন সমস্যা হবে কি না কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার রোগীর জন্য রোজা রাখলে কোন অসুবিধা হবে কি না?

পেটের উপরি অংশে ব্যাথা হবে। বুক জ্বালাপোড়া করবে। খাবারের আগে পরে পেট ব্যাথা হতে পারে। খাবার এর সময় বুকে বাঁধ পড়ার মত অনুভব হবে। ঢেকুর আসবে। বমি বমি ভাব থাকবে, এবং খাবারের চাহিদা কমে যাবে। অল্প খাবারেই পেট ভরে গেছে মনে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে একজন সুস্থ মানুষ রোজা রাখলে তার এসিডিটি হবার কোন সমস্যা আছে কি না যদি এক কথায় আমরা উত্তর দেই তাহলে বলতে হয় যে একজন সুস্থ মানুষ রোজা রাখলে তার এসিডিটি হবার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই যদি সে ইফতারি ও সাহরিতে নিম্নোক্ত নিয়ম গুলো মেনে চলে।

ইফতারির সময় যা করতে হবে : ইফতারিতে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার কিংবা তেলে ডুবিয়ে যেইসব খাবার তৈরি করা হয় যথা পেয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি ইত্যাদি যতটুকু সম্ভব পরিহার করতে হবে। একসাথে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলা যাবে না। অনেকে ইফতারিতে বসেই খেতে খেতে ইসোফেগাস তথা গলবিল পর্যন্ত খেয়ে ফেলে তা কখনোই করা যাবে না।

ইফতারিতে ইসুপগুলের শরবত, ডাবের পানি, ইত্যাদি খাওয়া যাতে পারে আর শর্করা জাতীয় খাবার যথা খেজুর, পেয়ারা, ছোলা, সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। ইফতারি হতে হবে লাইট মিল কিংবা অল্প পরিমাণ খাবার তারপর মাগরিবের নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নেয়া ভাল। সম্ভব হলে তারাবীর নামাজের আগেই খেয়ে নিতে হবে।তাহলে খাবারের পরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে নামাজ পড়তে গেলে নামাজের সময় এক প্রকার ব্যায়াম হয়ে যাবে এবং সেটা খাবার পরিপাকের ক্ষেত্রে সহায়ক সেই সাথে এসিডিটি হবার ঝুঁকি কমে যাবে।

অবশ্যই রোজার মাসে এসিডিটি থেকে বাঁচার জন্য রাতের খাবার কিংবা সেহরি উভয়ক্ষেত্রে শোয়ার ১ ঘন্টা আগে খাবার শেষ করতে হবে এবং খেয়ে অবশ্যই কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে তারপর ঘুমাতে হবে।অন্যথায় এসিডের ব্যাক ফ্লো হয়ে GERD এর মত রোগ হতে পারে।

টক জাতীয় ফলে যদিও প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি থাকে তথাপি টক জাতীয় ফলে সাইট্রিক এসিডও থাকে। তাই রোজার সময় টক ফল সাবধানতার সাথে খেতে হবে। ভাল হয় রাতের খাবার শেষ করে খেলে। টমেটো ইফতারির সময় অনেকের প্রিয় খাবার তবে টমেটোতে প্রচুর পরিমান সাইট্রিক এসিড ও ম্যালিক এসিড থাকে এবং এটা পাকস্থলীতে ইরিটেশন করে তাই টমেটো বেশী পরিমাণ না খাওয়াই উত্তম।

ঝাল খাবার পাকস্থলীতে এসিডিটির পরিমান বাড়িয়ে দেয় তাই কাচা মরিচ কিংবা অতিরিক্ত ঝাল খাবার পরিহার করে চলতে হবে। গরম খাবার যথা চা, কফি ইত্যাদি পাকস্থলিতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় তাই রোজার সময় চা, কফি ইত্যাদি পরিহার করে চলা উচিত।

সেহরির সময় যা করণীয় : ফজর নামাজের সময় হবার আগ পর্যন্ত সেহরি করা যায়। রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেরিতে সেহরি করার কথা বলেছেন। এটা সুন্নাত, এই সুন্নাত পালনের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে।

দেরিতে সেহরি করার জন্য এই কারণে বলা হয়েছে যেনো সেহরি করে ফজর নামাজ এর প্রস্তুতি নেওয়া যায় আর ফজর নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে নামাজ শেষ করে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে যে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগবে তা খাবার পরিপাকে সহায়তা করে। যদি কেউ ফজরের সময় হবার ১-২ ঘন্টা আগে সেহরি করে তাহলে সে তো আর সেহরি শেষ করে ২ ঘন্টা বসে থাকবেনা বরং শুয়ে পরবে আর খাবার খেয়ে সাথে সাথে শুয়ে যাওয়া এসিডিটির অন্যতম কারণ। তাই দেরিতে সেহরি করা সুন্নাত আর সেহরি করে নামাজ পড়ে তারপর ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্যও উত্তম।

সেহরির খাবারেও এসব জিনিস পরিহার করা উচিত যা পাকস্থলীতে এসিডিটি করে। যেমন চর্বি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, চা কফি ইত্যাদি। মূলত যাদের এসিডিটির সমস্যা কিংবা গ্যাস্ট্রিক রোগ রয়েছে তারা গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ খেতে পারেন চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে এবং রোযা রাখতে পারবেন আর সাথে সাথে ওপরের নিয়মগুলি মেনে চলতে হবে।

গ্যাস্ট্রিক এর কয়েক ধরনের ঔষধ রয়েছে তার মধ্যে এন্টাসিড কিংবা ল্যান্সোপ্রাজল ক্যাপসুল খাওয়া যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। এন্টাসিড প্লাস সিরাপ সন্ধ্যায় খাবারের পরে খাওয়া যায় আর ল্যান্সোপ্রাজল ক্যাপসুল ভোর রাত্রে খেলে উপকার পাওয়া যায়। ল্যান্সোপ্রাজল এর কার্যকারীতা দীর্ঘসময় থাকে।