দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে ৫ মার্কেট লিডার কোম্পানির লেনদেনে উল্লম্ফন হয়েছে। অন্যদিকে দুই মার্কেট লিডার কোম্পানির লেনদেনে অবনতি হয়েছে। ইবিএল সিকিউরিটিজের সাপ্তাহিক লেনদেন পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর ১০ মার্কেটে লিডার কোম্পানির মধ্যে ৭টি কোম্পানি আগের সপ্তাহের মার্কেট লিডারের তালিকায়ও ছিল। কোম্পানিগুলো হলো- বেক্সিমকো লিমিটেড, বিডি ফাইন্যান্স, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো ফার্মা, রবি আজিয়াটা লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট ও এশিয়া প্যাসেফিক ইন্সুরেন্স।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৫টি কোম্পানির লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় বিদায়ী সপ্তাহে কমেছে। কোম্পানিগুলো হলো- বেক্সিমকো, বিডি ফাইন্যান্স, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো ফার্মা ও লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট। অন্যদিকে রবি আজিয়াটা ও এশিয়া প্যাসেফিক ইন্সুরেন্সের লেনদেন কমেছে। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনে বেক্সিমকোর অবদান ছিল ১৭.১৯ শতাংশ, লঙ্কাবাংলার ৪.৮০ শতাংশ, বিডি ফাইন্যান্সের ৪.৮০ শতাংশ, বেক্সিমকো ফার্মার ৪.৪৮ শতাংশ এবং লাফার্জহোলসিমের ৩.২০ শতাংশ।

আগের সপ্তাহে ডিএসই মোট লেনদেনে বেক্সিকোর অবদান ছিল ১০.৭৬ শতাংশ, বিডি ফাইন্যান্সের ৩.১০ শতাংশ, ললঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের ২.৪৫ শতাংশ, বেক্সিমকো ফার্মার ২.৪৫ শতাংশ ও লাফার্জহোলসিমের ২.২৫ শতাংশ।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসই লেনদেনে বেক্সিমকোর অবদান বেড়েছে ৬.৪৩ শতাংশ, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের ২.৩৫ শতাংশ, বিডি ফাইন্যান্সের ২.০৭ শতাংশ, বেক্সিমকো ফার্মার ২.০৩ শতাংশ এবং লাফার্জহোলসিমের ০.৯৫ শতাংশ। অন্যদিকে, আগের সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনে রবির অবদান ছিল ৫.৩৫ শতাংশ এবং এশিয়া প্যাসেফিক ইন্সুরেন্সের ৩.৩৫ শতাংশ। বিদায়ী সপ্তাহে রবির লেনদেন কমে দাঁড়িয়েছে ১.৮০ শতাংশে এবং এশিয়া প্যাসেফিক ইন্সুরেন্সের ২.৬৭ শতাংশে।

বীমা খাতের ১২ কোম্পানির শেয়ারে পালে হাওয়া: বিমা খাতের শেয়ারের আবারও অস্বাভাবিক উত্থান শুরু হয়েছে পুঁজিবাজারে।কয়েক দিন ধরে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এটিকে কারসাজির সন্দেহ বলে মনে করছেন। তবে তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তৎপর হতে হবে। কারন বিমা খাতের শেয়ারের ইস্যুতে বিএসইসির নিরব ভুমিকা পালন করছে। অভিযোগ রয়েছে হিরু ও মিজান পুঁজিবাজার থেকে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করলে শত শত কোটি টাকার আয়ের উৎস বেড়িয়ে আসবে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিমার শেয়ার নিয়ে প্রথম র‌্যালিটি হয়েছিল গত বছরের আগস্ট-নভেম্বরে। তখন এ খাতের কোনো কোনো শেয়ারের দাম ৪-৫ গুণ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। পরে ওই দাম কমতে শুরু করে। তাতেই বেশি দামে শেয়ার কিনে সবচেয়ে বেশি লোকসানে পড়েন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

গত বছর একটি সংঘবদ্ধ চক্র কারসাজির মাধ্যমে বিমার শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটায়। নানা তদন্তে সেসব কারসাজিকারকদের নামও বেরিয়ে আসে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন এসে আবারও পুরোনো কারসাজিকারকেরা বিমা শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে মেতেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বীমা খাতের ১২ কোম্পানির শেয়ার দর এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে ৪৫ শতাংশ থেকে ১৭৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর আগেও এসব কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে দ্বিগুণ থেকে পাঁচ গুণ। কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে কারসাজিকারীরা ফের বেপরোয় হয়ে উঠেছে। এসব শেয়ার থেকে সমূহ দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

তবে পুঁজিবাজারে কয়েক মাস ধরে শেয়ার কারসাজি নিয়ে আলোচনার শীর্ষে বীমা খাত। যৌক্তিক কারন ছাড়াই একটি চক্র এই খাতের শেয়ার দর বাড়াচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে নিরব নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশনের এই নিরব ভূমিকার কারনেই ব্যাংকের থেকে লভ্যাংশে পিছিয়ে থেকেও শেয়ার দরে কয়েকগুণ বেশিতে এখন বীমা খাত। এই বৃদ্ধিতে কারসাজির বিষয়টি প্রমাণসহ গণমাধ্যমে আসলেও কমিশন তাতে কর্ণপাত করেনি। এখনো বীমা কোম্পানিগুলোর প্রতি মানুষের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ অনাস্থা।

এই কোম্পানিগুলোকে অনেকেই প্রতারক হিসেবে মূল্যায়ন করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন নাটকেও বীমা কোম্পানিতে চাকরী করা মার্কেটিং অফিসারদের দূর্দশা ও তাদেরকে যে কি পরিমাণ হাসির পাত্র হতে হয়, তা তুলে ধরা হয়। কিন্তু সেইসব কোম্পানির শেয়ারই অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে।

তবে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে বীমা কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি মিজানুর রহমান ও আবুল খায়ের হিরুসহ একটি গ্রুপের কারসাজির খতিয়ান তুলে ধরা হলেও দর্শক ভূমিকা পালন করে বিএসইসি। স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও বীমায় গেম্বলারদেরকে সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে। তারা অন্যসব খাতের শেয়ার অস্বাভাবিক বাড়ার ক্ষেত্রে কারন জানতে চাইলেও বীমায় অনেকটা নিরব। এ নিয়ে রয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্ষোভ।

সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাব ফেরাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর ফলে পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাবও ফিরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কারসাজি চক্র বাজারকে ম্যানুপুলেট করার চক্রান্তে মেতে উঠেছে। তারা কোনো কারণ ছাড়াই স্বল্প মূলধনী ও দুর্বল মৌলের কিছু শেয়ার দর আকাশচুম্বী করে তুলেছে।

এখন কোম্পানিগুলো সম্পর্কে নানা রকম গুজব ছড়াচ্ছে, যাতে কোম্পানিগুলোর শেয়ারে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আর আকাশচুম্বী দরের এসব শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাঁধে ফেলে অনায়াশে তারা সটকে পড়তে পারে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে অদৃশী শক্তি ১৯৯৬ সালে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রাস্তার নিয়ে খেলেছিলেন, তারাই আবার নতুন রুপে নুতন কিছু পুঁজিপতি নিয়ে অশুভ খেলায় মেতেছেন। এ শক্তিটিই খেলেছে ২০১০ সালেও। মূলত ২০১০ সালের ধস পরবর্তী সময়ে বিপর্যস্ত বাজারে যতবার আশার আলো দেখা গেছে, এ চক্রটির কারণেই সেই আলো বার বার নিবে গেছে।

এক ব্রোকারেজ হাউজের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বীমা কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করলেই ডিএসই থেকে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়। এক্ষেত্রে বিক্রি করে দেওয়া ওই নির্দিষ্ট বীমা কোম্পানির বিনিয়োগের তথ্য চাওয়া হয়। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বীমার শেয়ার বিক্রিতে আতঙ্ক তৈরী করা হয়। এটা কখনোই স্বাভাবিক লক্ষণ না। দেখা গেছে, ২০২০ সালের ব্যবসায় ১৫টি ব্যাংক ও ১০টি বীমা কোম্পানির পর্ষদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে ব্যাংকের গড় লভ্যাংশ ঘোষণার পরিমাণ ১৬.৪০ শতাংশ। আর বীমা কোম্পানির গড় ১৪.৫০ শতাংশ।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক মাসের কম সময়ে তালিকাভুক্ত ১২টি কোম্পানির শেয়ার দর ৪৫ শতাংশ হতে ১৭৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এসব শেয়ার কিছুদিন আগেও দ্বিগুণ, তিনগুণ হারে বেড়েছে। তারপর কিছুদিন বিরতি দিয়ে এসব শেয়ার নিয়ে ফের কারসাজিতে মেতেছে তারা। এখন বাজারে গুজব ছড়াচ্ছে, বীমা খাতের কোন শেয়ারই ১০০ টাকার নিচে থাকবে না। কোন কোন শেয়ার দর ২০০ টাকার বেশি হয়ে যাবে।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে সদ্য তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি দেশ জেনারেল ইন্সুরেন্স, প্রভাতী ইন্সুরেন্স, বিএনআইসিএল ইন্সুরেন্স, ফেডারেল ইন্সুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্সুরেন্স, অগ্রণী ইন্সুরেন্স, পূরবী ইন্সুরেন্স, ঢাকা ইন্সুরেন্স, সোনারবাংলা ইন্সুরেন্স, নর্দার্ন ইন্সুরেন্স ও প্রাইম ইন্সুরেন্সের।

দেশ জেনারেল ইন্সুরেন্স: কোম্পানিটি গত ২৯ মার্চ অভিহিত মূল্যে পুঁজিবাজারে আসে। প্রথমদিন কোম্পানিটির শেয়ার ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে লেনদেন হয় ১৫ টাকায়। পরের দিনও ৫০ শতাংশ দর বৃদ্ধি নিয়ে উঠে ২২ টাকা ৫০ পয়সায়। এরপর টানা ১০ শতাংশ দর বৃদ্ধি নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার ৪১ টাকায় লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে দর বেড়েছে ১৭৩ শতাংশ।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্য আয় অনুপাত (পিই) অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৬ টাকার পরই ঝুঁকিতে পড়েছে। এখন মহাঝুঁকিতে রয়েছে। কোম্পানিটির বর্তমানে পিই ৬১.৫০।

প্রভাতী ইন্সুরেন্স: গত ২৪ মার্চ ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৭৫ টাকা ১০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২৫ টাকা ৬০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৬৭.২৪ শতাংশ। ঘোষিত ১৭ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড বিবেচনায় নিলে এর বৃদ্ধির হার আরও বাড়বে। কোম্পানিটির বর্তমান পিই ৪০.৫২।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স কোম্পানি (বিএনআইসিএল): গত ২৪ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৬৫ টাকা ৯০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০৯ টাকায়। দর বেড়েছে ৬৫.৪০ শতাংশ। কোম্পানিটির পিই ৫২.৭৪।

ঢাকা ইন্সুরেন্স: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩৫ টাকা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৩.৫০ টাকায়। দর বেড়েছে ৫২.৮৫ শতাংশ। কোম্পানিটির ঘোষিত ডিভিডেন্ড বিবেচেনায় নিলে দর বেড়েছে ৬০ শতাংশ।

প্রাইম ইন্সুরেন্স: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৯ টাকা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪২ টাকা ৮০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৪৭.৫৮ শতাংশ। ঘোষিত ডিভিডেন্ডে বিবেচনায় নিলে দর বেড়েছে ৬২.৩৪ শতাংশ।

ক্রিস্টাল ইন্সুরেন্স: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩২ টাকা ৪০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫২ টাকা ৩০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৬১.৪২ শতাংশ।

ফেডারেল ইন্সুরেন্স: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১৭ টাকা ৫০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৭ টাকা ৬০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৫৭.৭১ শতাংশ।

পূরবী ইন্সুরেন্স: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৪ টাকা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৫ টাকা ৯০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৪৯.৫৮ শতাংশ।

সোনারবাংলা ইন্সুরেন্স: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৪২ টাকা ৮০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৩ টাকা ১০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৪৭.৪২ শতাংশ।

নর্দার্ন ইন্সুরেন্স: গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৯ টাকা ৬০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪২ টাকা ৯০ পয়সায়। দর বেড়েছে ৪৫ শতাংশ।

প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্সুরেন্সে ঘোষণা ছাড়াই মালিকানা পরিবর্তন: চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছিল মাত্র দুই হাজার ১২২টি। আর ব্লক মার্কেটে একটিও শেয়ার লেনদেন হয়নি। পাশাপাশি কোনো শেয়ার উপহার কিংবা শেয়ার স্থান্তান্তর হয়নি। অথচ লেনদেনবিহীন ১৯ লাখ ৫৫ হাজার ৫৭২টি শেয়ারের মালিকানা বদল হয়ে গেছে রাতারাতি।

ফলে প্রতিষ্ঠানটির আগের মাসের তুলনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হোল্ডিং বেড়েছে ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এমন তথ্য চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হচ্ছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হতভম্ব হয়ে পড়ে।

সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রতি মাসের লেনদেনকৃত শেয়ারের হালনাগাদ তথ্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে অবহিত করতে হয়, যা পরে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো তাদের ওয়েবসাইটে আপটেড করে। আর এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে একজন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অথচ জীবন বিমা খাতের নিবন্ধিত কোম্পানি প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড ভুল তথ্য দিয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জকে!

প্রতিষ্ঠানটিতে মার্চ মাস শেষে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হোল্ডিং বেড়েছে ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মোট শেয়ার হোল্ডিং দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আগের মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ ছিল ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অর্থাৎ এ সময়ে ১৯ লাখ ৫৫ হাজার ৫৭২টি শেয়ারের লেনদেনবিহীন মালিকানা বদল হয়েছে। অথচ পুরো মাসে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছিল মাত্র দুই হাজার ১২২টি।

কোম্পানিটির লেনদেন চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ মার্চে লেনদেন হয়েছিল মাত্র ১০০টি শেয়ার, ৭ মার্চ হয়েছিল এক হাজার ৪৬৪টি, ২১ মার্চ ৯৯টি, ২৫ মার্চ ৪৪০টি এবং মাসের অন্যান্য দিনগুলোয় ১৯টি। একই সঙ্গে ব্লক লেনদেন ছিল শূন্য। পাশাপাশি কোনো ধরনের শেয়ার উপহার কিংবা শেয়ার স্থানান্তরের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা ছিল না।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হচ্ছে এমন তথ্য। অপরদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এখনও মার্চ মাসের শেয়ার হোল্ডিংয়ের তথ্য আপটেড করেনি। গত ফেব্রুয়ারি মাসের তথ্য দেখানো হচ্ছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীর হতভম্ব হয়ে পড়ে, যা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে প্রতারণা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক বিনিয়োগকারী এ প্রতিবেদককে বলেন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে মার্চ মাসে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির আগের মাসের তুলনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হোল্ডিং বেড়েছে ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অথচ মার্চ মাসে মূল মার্কেটে প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছিল মাত্র দুই হাজার ১২২টি। ব্লক মার্কেটে একটিও শেয়ার লেনদেন হয়নি। পাশাপাশি কোনো শেয়ার উপহার কিংবা শেয়ার স্থানান্তর হয়নি।

অথচ লেনদেনবিহীন ১৯ লাখ ৫৫ হাজার ৫৭২টি শেয়ারের মালিকানা বদল হয়ে গেছে রাতারাতি। এটা কীভাবে সম্ভব? তাহলে কি এভাবে স্টক এক্সচেঞ্জ ও কোম্পানি মিলে ভুল তথ্য দেয়? আবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ তো মার্চ মাসের হালনাগাদ তথ্য সংযোজন করেনি। তাহলে আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোথায় যাব? এসব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে দায় কে নেবে? এটি একটিমাত্র অপরাধ নয়, কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা বাধ্যতামূলক। আর পরিশোধিত মূলধনের ৬০ শতাংশ জোগান দেবে উদ্যোক্তা পরিচালকরা।

এমনটাই বলা আছে দেশের বিমা আইনে। অথচ প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে পরিশোধিত মূলধন আছে মাত্র ১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারণ আছে ৩৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর আইন পরিচালনে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের। অপরদিকে বিমা আইন লঙ্ঘন করলেও রীরব ভূমিকা পালন করছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের চিফ রেগুলেটরি অফিসার (সিআরও) মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম বলেন, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ বৃদ্ধির তথ্যটির ক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষই ভুল তথ্য দিয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জকে, আমাদের সিস্টেম অপারেটর সেভাবে তথ্য উপস্থাপন করেছে।

এ বিষয়ে আমরা প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে নোটিস দিয়েছি। তারা এখন পর্যন্ত নোটিসের জবাব দেয়নি। তবে এটা জানিয়েছে, তাদের তথ্য ভুল দিয়েছে। আর ভুল তথ্যের জন্য কমিশন শাস্তি দিতে পারে। কারণ শাস্তি দেয়ার এখতিয়ার আমাদের হাতে নেই। অপরদিকে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ জহির উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার হোল্ডিং ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির তথ্যটি ভুল। আমরা সংশোধনে কাজ করছি।

উল্লেখ্য, জীবন বিমা খাতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০০ সালে কার্যক্রম শুরু করেছিল প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। আর পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয় ২০০৬ সালে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারণ ৩৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। গত এক বছরের প্রতিষ্ঠানটির সর্বনিম্ন শেয়ারদর ছিল ১০৩ টাকা ২০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১৫৮ টাকা ৫০ পয়সা।

আর ২০১৯ সাল শেষে নিট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩৩৩ কোটি টাকা। আর সেই বছরের ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয়া হয়। সেই সময়ে পাঁচ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয় কম হয়েছিল, অপরদিকে বিনিয়োগ আয় এক কোটি ৬৭ লাখ টাকা বেশি আয় হয়েছিল।

এমডি নেই, বোর্ড সভা বন্ধ, তবু ঋণ দিচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক: বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকে দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বারবার নির্দেশনা দেওয়ার পরও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ব্যাংকটি। এবার এমডি নিয়োগে চূড়ান্ত নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ২৮ এপ্রিলের মধ্যে স্থায়ী এমডি নিয়োগ দিতে না পারলে প্রশাসক বসানো হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদারকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৮ এপ্রিলের মধ্যে এমডি নিয়োগ না দিলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৫-ক ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, আইন অনুযায়ী তাদের স্থায়ী এমডি নিয়োগ দিতে হবে। দীর্ঘদিন এ পদ খালি রাখা যাবে না। এ ধরনের একটি নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনেও এটা বলা আছে। আইন অনুযায়ী তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৫-ক ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের এমডি পদ একাধারে তিন মাসের বেশি শূন্য রাখা যাবে না। ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে এমডি পদ পূরণ না হলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারে, যিনি ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পালন করবেন। আইন অনুযায়ী আগামী ২৮ এপ্রিলের মধ্যে এমডি নিয়োগ না দিলে ব্যাংকটিতে প্রশাসক দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে ঋণ বিতরণে অনিয়ম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) না থাকা, ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরিচালনা পর্ষদে শুরু হয়েছে বিবাদ। সব মিলিয়ে অস্থির অবস্থায় ন্যাশনাল ব্যাংক। এর আগে ব্যাংকটির অতিরিক্ত এমডি এ এস এম বুলবুল এমডির চলতি দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাকে সরিয়ে দিতে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদার তার মেয়াদ বাড়ান, যা কার্যকর হয় ১ এপ্রিল থেকে।

কিন্তু বিষয়টি বিধি পরিপন্থি হওয়ায় তাকে চলতি দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে আরেকবার (৬ এপ্রিল) নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঐ নির্দেশের পর এ এস এম বুলবুলকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ সৈয়দ আবদুল বারীকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেয় ব্যাংকটির পর্ষদ। ২৮ এপ্রিল ব্যাংকটির স্থায়ী এমডি পদ শূন্য থাকার তিন মাস পূর্ণ হবে।

ন্যাশনাল ব্যাংক চলছে অনেকটা সিকদার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। দীর্ঘদিন এর চেয়ারম্যান ছিলেন জয়নুল হক সিকদার। গত ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। ২৪ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার। এরপর কোনো পর্ষদ সভা হয়নি। কিন্তু ঋণ বিতরণ অব্যাহত রাখা হয়েছে, যেখানে বেশকিছু অনিয়মের ইঙ্গিত পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাধারণত বড় ঋণ বোর্ড সভায় অনুমোদিত হতে হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জয়নুল হক সিকদারের মৃত্যুর পর ব্যাংকটি নিজেদের একক নিয়ন্ত্রণে নিতে চাচ্ছেন পরিচালক রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার। তারা দুই জনই জয়নুল হক সিকদারের ছেলে। তবে মেয়ে সংসদ সদস্য (এমপি) পারভীন হক সিকদারসহ অন্য পরিচালকরা চাচ্ছেন নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে। অনিয়ম করে ঋণ বিতরণসহ নানা কারণে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ব্যাংকটির পরিচালকদের মধ্যে দুটি পক্ষ হওয়ায় পর্ষদে বিবাদ শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত এমডি এ এস এম বুলবুলের নিয়োগ নিয়েও দ্বিমত রয়েছে অনেক পরিচালকের।

ন্যাশনাল ব্যাংকের এসব ঘটনা নজরে এলে গত ৫ এপ্রিল বেশকিছু তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া ঋণ বিতরণ না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া রংধনু বিল্ডার্স, দেশ টিভি, রূপায়ণ ও শান্তা এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে দেওয়া সব ঋণের দলিলাদি (ঋণ আবেদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত) এবং ঋণের পূর্ণাঙ্গ হিসাব বিবরণীর কপি পাঠাতে বলা হয়। জানা গেছে, বিতরণ করা অনেক ঋণের নথি দেখাতে পারছে না ন্যাশনাল ব্যাংক।

ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংকটি নতুন করে ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। পাশাপাশি সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ১১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ঋণের ওপর প্রথম প্রান্তিকে সুদ যুক্ত হয়েছে ৬৫০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ২১৩ কোটি টাকা।

তবে তিন মাসে আমানত বেড়েছে মাত্র ৫২১ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংকটির ৪০টি শাখা লোকসানে রয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির ঋণ ছিল ৪০ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা, চলতি বছরের মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ৪২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে আমানত ছিল ৪৩ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। মার্চে বেড়ে হয়েছে ৪৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা।

লাফার্জ হোলসিমের প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা বাড়ার নেপথ্যে: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানি লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি’২১-মার্চ’২১) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আলোচিত প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফায় বড় ধরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

জানা গেছে, কোম্পানিটির চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৮৯ টাকা। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ০.৪৫ টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটির ইপিএস ০.৪৪ টাকা বা ৯৮ শতাংশ বেড়েছে। লাফার্জ হোলসিম সিমেন্টের বছরের প্রথম তিন মাসে নিট বিক্রি গত বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে মুনাফা বেড়েছে ৯৮ শতাংশ। বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আর্থিক প্রতিবেদন সম্পর্কে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজেশ সুরানা বলেন, উদ্ভাবন ও টেকসই ব্যবসায় সুনির্দিষ্ট আলোকপাতের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে দারুন ফলাফল অর্জন করতে আমরা সমর্থ হয়েছি। আমাদের নতুন পানি প্রতিরোধী সিমেন্ট এবং নতুন বিপণন চ্যানেল ‘ডিরেক্ট টু রিটেইল’ ভালো সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। নতুন নতুন নির্মাণ পণ্য উদ্ভাবনের আমাদের সক্ষমতা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই প্রান্তিকে আমরা ক্লিয়ার সাইজ অ্যাগ্রিগেটস ব্যবসা শুরু করেছি। এর আগে ক্লিয়ার সাইজ অ্যাগ্রিগেটসের শতভাগ চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হত। ফলে এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। গ্রাহকদের কাছ থেকে এই পণ্যের ইতিবাচক চাহিদা আমরা পাচ্ছি।

প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, ২০২১ সালে প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির নিট বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় শতকরা ২৩ ভাগ বেড়ে ৬ হাজার ৩১৮ মিলিয়ন টাকা হয়েছে। কর পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৩৬০ মিলিয়ন টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় শতকরা ১০৫ ভাগ বেশি। নিট মুনাফা বেড়েছে শতকরা ৯৮ ভাগ।

সপ্তাহজুড়ে চাঙ্গা পুঁজিবাজার, মূলধন বাড়ল সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা: কঠোর লকডাউনের মধ্যেও দেশের পুঁজিবাজারে চাঙ্গা ভাবের মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়েছে। ফলে গত ৮ কার্যদিবস ধরে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক গতিতে চলতে শুরু করছে। ফলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ছে। আর আস্থা বাড়ার ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে মূলধন বাড়ল সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

গত বৃহস্পতিবার মতিঝিলের বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস ঘুরে দেখা গেছে, বিনিয়োগকারীদের সশরীরে উপস্থিতি কম থাকলেও অনেকেই অনলাইন এবং টেলিফোনে শেয়ার লেনদেন করেছেন। খাজা ইক্যুইটির ট্রেডিং কর্মকর্তাকে বিনিয়োগকারীদের বাইসেলের কলের অর্ডার মোবাইল কলে নিতে দেখা গেছে। শুধু খাজা ইক্যুইটিই নয় বেশিরভাগ হাউসের ট্রেডিং কর্মকর্তারা মোবাইলে বাইসেল অর্ডার নিয়েছেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে ব্যাংকের সুদের হার নিম্নমুখী। এছাড়া অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্নের হার কম। একমাত্র পুঁজিবাজার থেকেই দুই অংকের রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ অনেক দেশের পুঁজিবাজারে আশাতীত রিটার্ন এসেছে। গত বছরের শেষার্ধে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বৈশ্বিক রিটার্নের তালিকায় শীর্ষে ছিল। যদিও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের পুঁজিবাজারে নিম্নমুখিতা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকলে সামনের দিনগুলোতে দেশের পুঁজিবাজার ইতিবাচক থাকবে বলেই মনে করছেন তারা।

এছাড়া গত সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। এতে লকডাউনের দুই সপ্তাহে বাজার মূলধন নয় হাজার কোটি টাকার বেশি বাড়ল। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের প্রতি কার্যদিবসই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে। এতে সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। সেই সঙ্গে বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা।

আগের সপ্তাহেও বড় অঙ্কের মুলধন বাড়ে বাজারটিতে। আগের সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে ৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। এ হিসেবে লকডাউনের দুই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ল ৯ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। বাজার মূলধন বাড়া বা কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে।

এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১২৪ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৫৫ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। অর্থাৎ টানা দুই সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ল ১৮০ পয়েন্ট। অবশ্য তার আগের চার সপ্তাহ টানা এই সূচকটি কমে। আগের চার সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ৩১৪ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি লকডাউনের দুই সপ্তাহেই বেড়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ৬০ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বা ৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৩৬ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ হিসেবে লকডাউনের দুই সপ্তাহে এই সূচকটি বাড়ল ৯৭ পয়েন্ট।

অপরদিকে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও লকডাউনের দুই সপ্তাহেই বেড়েছে। গত সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছে ২৮ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১১ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ হিসেবে দুই সপ্তাহের টানা উত্থানে সূচকটি বাড়ল ৩৯ পয়েন্ট।

সবকটি মূল্যসূচকের উত্থানের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২০৬টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ১০০টির। আর ৬৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৫১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৫০৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৪৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা বা ৬৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ২৫৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ২ হাজার ১৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন বেড়েছে ২ হাজার ২৪০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বা ১১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। মোট লেনদেন বেশি হারে বাড়ার কারণ গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়।

গত সপ্তাহে ডিএসইর মূল বাজারে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- বেক্সিমকো, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, রবি, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, সামিট পাওয়ার এবং অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স।

২০০ কোটি টাকা ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগের তথ্য চেয়েছে বিএসইসি: পুঁজিবাজারে ২০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগের জন্য গঠিত বিশেষ তহবিলের হালনাগাদ তথ্য তফসিলি ব্যাংকগুলোর কাছে জানতে চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একইসঙ্গে বিশেষ মিউচ্যুয়াল ফান্ডে (এসপিএফ) আরও ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য তফসিলি ব্যাংকগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।

সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)/ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে (সিইও) এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এছাড়াও এ বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই, সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের অবহিত করেছে বিএসইসি। দেশে মোট ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ৩১টি শেয়ারবাজারে তালিকাবুক্ত। আর অ-তালিকাভুক্ত রয়েছে ৩০টি ব্যাংক। সব ব্যাংকের কাছে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, পুঁজিবাজারে তারল্য সমাধানের লক্ষ্যে প্রত্যেক তফসিলি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের জন্য ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সার্কুলার অনুযায়ী, তফসিলি ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ তহবিল গঠন করেছে।

ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলো ওই বিশেষ তহবিল থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু করেছে। তবে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের তথ্য প্রতিনিয়ত সংরক্ষণ করা হয়নি। ফলে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর কী পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে, সেই তথ্য বিএসইসির কাছে নেই।

তাই আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে ব্যাংকগুলোকে গঠিত বিশেষ তহবিল ও তার বিনিয়োগের তথ্য জানাতে অনুরোধ জানানো হলো। একই সঙ্গে বিশেষ মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের তথ্যও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জানানোর জন্য চিঠিতে উল্লেখ করে বিএসইসি।