দেশ প্রতিক্ষণ, বরিশাল: পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মাকে মোটরসাইকেলে করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জিয়াউল হাসান নামে সেই যুবকের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আজ শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে তার করোনা শনাক্তের রিপোর্টে পজিটিভ এসেছে। তিনি ঝালকাঠির নলছিটি পৌর শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সূর্যপাশা এলাকার নিজ বাড়িতে হোম আইসোলেশনে আছেন।

তবে তার শারীরিক অবস্থা ভালো। জিয়াউল হাসান কৃষি ব্যাংকের ঝালকাঠি শাখার কর্মকর্তা। তার মা রেহানা পারভিন নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। গতবছর জিয়াউল হাসানের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাকিম মোল্লা মারা যান।

হোম আইসোলেশনে থাকা জিয়াউল হাসান শনিবার রাতে মোবাইাল ফোনে  জানান, মা রেহানা পারভিন সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। গত ১৭ এপ্রিল মায়ের তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে মাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসার পর তার মা সুস্থ হলে শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) তাকে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন।

তিনি আরও জানান, ১৭ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ছয় দিন মায়ের সেবার জন্য করোনা ওয়ার্ডে তিনি ও তার ছোট রাকিবুল হাসান ইভান অবস্থান করেন। এতদিন করোনা ওয়ার্ডে অবস্থান করায় তার মনে সন্দেহ হয়। এ কারণে তিনি ও ছোটভাই ইভান দুজনই আজ দুপুরে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করান।

করোনা শনাক্তের রিপোর্টে ছোট ভাই ইভানের নেগেটিভ আসে। তবে তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। জিয়াউল হাসান  জানান, এই মুহূর্তে শরীরিক দুর্বলতা ছাড়া অন্য কোনো উপসর্গ (কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট) নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন। শারীরিক অবস্থা ভালো। তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তার মাও আগে থেকে অনেকটা সুস্থ আছেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি রেহানা পারভিনের সর্দি-জ্বর-কাশি হয়। করোনা সন্দেহ হলে তার নমুনা পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়। ১৫ এপ্রিল তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর রেহানা পারভিন বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। হঠাৎ করে ১৭ এপ্রিল সকাল থেকে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

দুপুরে শ্বাসকষ্ট আরও তীব্র হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে তাকে হাসপাতালে নেয়ার মতো যানবাহন পাচ্ছিলেন না স্বজনরা। আবার কেউ কেউ করোনা রোগী শুনে তাদের গাড়িতে নিতে রাজি হচ্ছিল না। এ কারণে কোনো উপায় না দেখে পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে রেহানা পারভিনকে মোটরসাইকেলযোগে বরিশাল মেডিকেলে নিয়ে আসেন জিয়াউল হাসান।

দৃশ্যটি দেখে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট তৌহিদ মোর্শেদ টুটুল তার মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করেন। ফেসবুকে পোস্ট করলে ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর ছয়দিন করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসার পর গত শুক্রবার জিয়াউল হাসান তার মা রেহানা পারভিনকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে ঝালকাঠির নলছিটি পৌর শহরের বাড়িতে ফেরেন।’