দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ‘বাংলাদেশের ফাউন্ড্রি শিল্প এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ঢালাই বা কাস্টিংয়ের জন্য দক্ষ শ্রমিকের স্বল্পতা। শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। বেশি পারিশ্রমিকে শ্রমিক নিয়োগ দিলে পণ্য উৎপাদন ও দামের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। বিদেশ থেকে যে ফাউন্ড্রি পণ্য আসছে তার দাম তুলনামূলক কম। তাই প্রতিযোগিতায় দেশীয় শিল্প টিকতে পারছে না।

এক্ষেত্রে ওয়ালটন এগিয়ে আছে। তারা বিদেশের অর্ডার পাচ্ছে, ফাউন্ড্রি পণ্য রপ্তানিও করছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করছে। ওয়ালটন এখানে পথ প্রদর্শক। বাজারে আমদানিকৃত পণ্যগুলোর সঙ্গে টিকে থাকার সাহস নিয়ে ওয়ালটন যে কাজ করছে এটা খুবই প্রশংসনীয়। সুতরাং ওয়ালটনই হতে পারে ফাউন্ড্রি’র মাদার ইন্ডাস্ট্রি।’

বুধবার (২৮ এপ্রিল, ২০২১) ‘Walton Metal Casting Plant: Marching Towards 4th Industrial Revolution’ শিরোনামে টেকনিকাল ওয়েবিনারে এ কথা বলেন বক্তারা। ওয়েবিনারে বাংলাদেশে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অগ্রযাত্রায় ওয়ালটন তথা মেটাল কাস্টিং প্ল্যান্টের ভূমিকা, দেশীয় শিল্পোন্নয়নে অটোমেটেড ফাউন্ড্রিশপের সম্ভাবনা ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা।

ওয়ালটনের মেটাল কাস্টিং প্ল্যান্টের প্রসেস ইঞ্জিনিয়ার আবু ফয়সালের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) পরিচালক (পরিকল্পনা) ড. জালাল উদ্দিন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড মেটালার্জিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদা গুলশান এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)-এর পাইলট প্ল্যান্ট অ্যান্ড প্রসেস ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. আব্দুল গফুর।

আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন কম্প্রেসর প্রডাক্টের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) নাসির উদ্দিন মন্ডল, মেটাল কাস্টিং প্ল্যান্টের প্রডাকশন ইন-চার্জ কাজী এস. এম. ফয়সাল, মেটাল কাস্টিং (আর অ্যান্ড ডি)- এর ইনচার্জ আসিফ রহমান সিকদার, মেটাল কাস্টিং (কিউসি)- এর ইনচার্জ মোবাশ্বির আহমেদ এবং মেটাল কাস্টিং প্ল্যান্টের প্রসেস ইঞ্জিনিয়ার ইমরান হোসেন।

ওয়েবিনারে বক্তারা ওয়ালটনের অটোমেটেড ফাউন্ড্রিশপের বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এটি ওয়ালটনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/Waltonbd) থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

অধ্যাপক ড. ফাহমিদা গুলশান বলেন, দেখা যাচ্ছে ফাউন্ড্রিগুলোতে অনেক পুরনো যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হচ্ছে। অটোমেশন বা মডার্নাইজেশনের কথা বলছি আমরা। কিন্তু আমাদের ফাউন্ড্রিগুলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধারায় এখনো পিছিয়ে আছে। প্রোডাক্ট তৈরি হলো অথচ এর মান যাচাইয়ে টেস্টিং সুবিধাও নেই অনেকের। কারখানাগুলোতে অনেক নলেজ গ্যাপ রয়েছে। এক্ষেত্রে ওয়ালটন কয়েক ধাপ এগিয়ে। তারা বিদেশের অর্ডার পাচ্ছে, পণ্য রপ্তানি করছে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।’

তিনি বলেন, ওয়ালটন একটি মাদার অর্গানাইজেশন হিসেবে কাজ করতে পারে। এতে অন্য ইন্ডাস্ট্রিগুলো সাপোর্ট পাবে। ১০-২০টি ইন্ডাস্ট্রি মিলে কোলাবরেশনের ভিত্তিতে কাজ করলে সবাই উপকৃত হবে। ওয়ালটন এই শিল্পে পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে। ইন্ডাস্ট্রি-ইউনিভার্সিটির মধ্যেও একটা কোলাবরেশন হতে পারে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী-গবেষক সবাই উপকৃত হবেন। এভাবে ফাউন্ড্রিগুলোও দক্ষ জনবল সংকট থেকে মুক্তি পাবে।

ড. আব্দুল গফুর বলেন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের পণ্যগুলোর মার্কেট চাহিদা ব্যাপক। দেশে ১০০টি বিশেষ ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। এসব ইকনোমিক জোনকে ফাউন্ড্রি শিল্পের উন্নয়নে কাজে লাগানো যেতে পারে। ফাউন্ড্রি শিল্পের উন্নয়নে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করাও জরুরি।

নাসির উদ্দিন মন্ডল বলেন, রেফ্রিজারেটর ও কম্প্রেসর তৈরিতে অনেক কাঁচামাল বা যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয়। এজন্য একটি অটোমেটেড ফাউন্ড্রি গড়ে তোলা অপরিহার্য ছিল। ২০১৫ সালে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং টিম বাংলাদেশে প্রথম অটোমেটেড ফাউন্ড্রি প্রতিষ্ঠার নকশা প্রণয়ন করেন। ওয়ালটনের ওই প্রকৌশল টিম ইউরোপ এবং আমেরিকার বিখ্যাত টেকনলোজি ম্যানুফ্যাকচারিং প্রোভাইডার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করে।

তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় আইএসও সার্টিফাইড ফাউন্ড্রি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় ওয়ালটন। পণ্যের উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থাপন করা হয় বিশেষ ডিজিটাল যন্ত্রপাতি। ওসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করায় করোনা মহামারির সময়েও কারখানায় উৎপাদন চলেছে পুরোদমে। প্রতি বছর পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোতে।

উল্লেখ্য, ওয়ালটন মেটাল কাস্টিং প্ল্যান্ট দেশের একমাত্র এবং স্বয়ংক্রিয় ফাউন্ড্রি। বিশ্বব্যাপী চলমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অগ্রযাত্রায় ওয়ালটন মেটাল কাস্টিং প্ল্যান্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব পণ্য রপ্তানিও করছে প্রতিষ্ঠানটি। ওয়ালটনের ওই প্ল্যান্ট থেকে প্রতি বছর প্রায় ৭০০ টন পণ্য রপ্তানি করছে। প্রায় ১০০ কোটি টাকার পণ্যের রপ্তানি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। বাংলাদেশের জন্য এটি গর্বের বিষয়। প্ল্যান্টে নতুন নতুন উন্নত প্রযুক্তি সংযোজন করা হচ্ছে। বিশ্বের সেরা প্ল্যান্টের কাতারে উঠে আসাই ওয়ালটনের উদ্দেশ্য।