দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেড। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, কোম্পানিটির ৮৩ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা সাইফ পাওয়ারের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪২ কোটি ১৯ লাখ ৩ হাজার টাকার।

৩১ কোটি ৭৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে রবি আজিয়াটা। লেনদেনের তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সামিট পাওয়ার, ন্যাশনাল ফিড মিল, ম্যাকসন্স স্পিনিং, জেনেক্স ইনফোসিস, লংকাবাংলা ফাইনান্স, এসএস স্টিল এবং আইএফআইসি ব্যাংক।

৭ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৭ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করছে। বিভিন্ন কোম্পানির পৃথক পৃথক বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করছে। কোম্পানিগুলো হলো:

মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কোম্পানিটির পর্ষদ সভা আগামী ২৪ মে বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সভায় ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে। পর্ষদ আলোচিত প্রতিবেদন অনুমোদন করলে তা প্রকাশ করবে কোম্পানিটি। একই সভায় কোম্পানির প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পরযালোচনা ও প্রকাশ করা হবে। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ৭ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।

আইটিসি:পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আইটি কনসালটেন্টস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কোম্পানিটির পর্ষদ সভা আগামী ১৯ মে বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সভায় ৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে। পর্ষদ আলোচিত প্রতিবেদন অনুমোদন করলে তা প্রকাশ করবে কোম্পানিটি। আগের প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় করেছিল ৫৩ পয়সা।

ড্যাফোডিল কম্পিউটার: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ড্যাফোডিল কম্পিউটার লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কোম্পানিটির পর্ষদ সভা আগামী ২০ মে বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সভায় ৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে। পর্ষদ আলোচিত প্রতিবেদন অনুমোদন করলে তা প্রকাশ করবে কোম্পানিটি। আগের প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় করেছিল ১৯ পয়সা।

এসিআই ফরমুলেশনস: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এসিআই ফরমুলেশনস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কোম্পানিটির পর্ষদ সভা আগামী ২৪ মে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সভায় ৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে। পর্ষদ আলোচিত প্রতিবেদন অনুমোদন করলে তা প্রকাশ করবে কোম্পানিটি। আগের প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় করেছিল ২ টাকা ০৬ পয়সা।

এসিআই: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এসিআই লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কোম্পানিটির পর্ষদ সভা আগামী ২৪ মে বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সভায় ৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হবে। পর্ষদ আলোচিত প্রতিবেদন অনুমোদন করলে তা প্রকাশ করবে কোম্পানিটি। আগের প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় করেছিল ১ টাকা ৬৫ পয়সা।

ঢাকা ইলেট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ঢাকা ইলেট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) লিমিটেড বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানিটির বোর্ড সভা আগামী ১৮ মে বিকাল ৫টায় অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় ৩১ মার্চ, ২০২১ সমাপ্ত হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। আগের প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৪ পয়সা।

কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানিটির বোর্ড সভা আগামী ১৯ মে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় ৩১ মার্চ, ২০২১ সমাপ্ত হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। আগের প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় করেছে ১৮ পয়সা।

ডিএসইর ওয়েবসাইটে রিলায়েন্স ওয়ান মিউচ্যুয়াল ফান্ডের তথ্য গোপন: ডিএসইর ওয়েবসাইটে রিলায়েন্স ওয়ান মিউচ্যুয়াল ফান্ডের তথ্য গোপন অভিযোগ উঠছে। চলতি হিসাববছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রিলায়েন্স ওয়ান মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি আয় (ইপিইউ) হয়েছে ২ টাকা ৬৯ পয়সা। কিন্তু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে দেখানো হয়েছে মাত্র ৭৯ পয়সা। ফান্ডটির আয় সঠিকভাবে প্রকাশ না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফান্ডটির বিনিয়োগকারীরা। তারা ফান্ডটির অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এবং ডিএইস’র দ্বারস্থ হয়েও কোন সমাধান পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন।

ডিএসই’র ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, রিলায়েন্স ওয়ান মিউচ্যুয়াল ফান্ড চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২০) ইউনিট প্রতি আয় করেছে ১ টাক ৭৫ পয়সা। যা আগের হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’১৯) ছিল ১ টাকা ১৭ পয়সা।

দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’২০) ফান্ডটির ইউনিট প্রতি আয় হয়েছে ৫৯ পয়সা। আগের হিসাববছরের একই সময়ে ছিল ১২ পয়সা। ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর’২০) ফান্ডটির ইউনিট প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৩৪ পয়সা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৮ পয়সা। তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) ফান্ডটির ইউনিট প্রতি আয় হয়েছে ৩৫ পয়সা। যা আগের হিসাববছরের একই সময়ে ছিল ৪ পয়সা।

এতে দেখা যায়, চলতি হিসাববছরের ৯ মাসে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) ফান্ডটির ইউনিট প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৬৯ পয়সা। কিন্তু ডিএসই’র ওয়েবসাইটে ৯ মাসে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) আয় দেখানো হয়েছে ৭৯ পয়সা। ডিএসই’র ওয়েবসাইটে ৯ মাসে ফান্ডটির আয় কম সঠিকভাবে না দেখানোর কারণে বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। ফলে আয় অনুযায়ী ফান্ডটির যে দর থাকা উচিত, সেই দরে নেই। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন।

এক বিনিয়োগকারী নাম প্রকাশ না করে জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি ফান্ডটির অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এইমস বাংলাদেশ এবং ডিএসই’র সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। এইমস ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রথম উদ্যোক্তা কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির গ্রহণযোগ্যও অন্যান্য অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির তুলনায় অনেক বেশি। এইমসের কাছ থেকে অন্তুত এ ধরণের উদাসীনতা কাম্য নয়।

তিনি আরও বলেন, ডিএসই’র উচিত ছিল তথ্যটি যাচাই করে সংশোধন করে প্রকাশ করা। কিন্তু ডিএসই সেটি করেনি। ডিএসই’র মতো এতো বড় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও এ ধরণের দায়িত্বহীন কাজ কাম্য হয়। ডিএসই’র ওয়েবসাইটে শিগগির ফান্ডটির সঠিক তথ্য সংশোধিত আকারে প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের অবাধ তথ্যের সুবিধা দিতে হবে। এটি সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনেরও একটি নির্দেশনা। আমরাও তাই চাই। সেক্ষেত্রে অবশ্যই কোম্পানির সকল তথ্য দেয়া উচিত। কি কারণে ডিএসই এটি করছে না আমার জানা নেই। আমি ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলবো।

২৩ ব্যাংকের ২ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে নগদে লভ্যাংশ বিতরণের প্রবণতা আরও বেড়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২৩টি ব্যাংক ২ হাজার ৩৫৩ কোটি ৯০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৪৮ টাকা ২০ পয়সা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৬টি ব্যাংক নগদের পাশাপাশি বোনাস শেয়ারও দিতে যাচ্ছে। আর সাতটি ব্যাংক কেবল নগদে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আর তিনটি ব্যাংক কেবল বোনাস এবং একটি ব্যাংক লভ্যাংশ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

আরও দুটি ব্যাংক গত বছর ২০০ কোটি টাকা নগদে বিতরণ করেছিল, যেগুলো এখনও লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা করেনি। তারা গত বছরের মতোই লভ্যাংশ দিলে শেষ পর্যন্ত নগদ লভ্যাংশ আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এখন পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে মোট ২৭টি ব্যাংক। আরও চারটির লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সভা বাকি আছে।

লভ্যাংশ বিতরণে বিধিনিষেধ: এবার করোনা পরিস্থিতিতে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সার বেশি নগদে লভ্যাংশ বিতরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এই সর্বোচ্চ পরিমাণ নগদে লভ্যাংশ দিয়েছে তিনটি ব্যাংক। এগুলো হলো সিটি, ইবিএল ও যমুনা ব্যাংক।

টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করতে যাচ্ছে সিটি ব্যাংক। তারা ১৭৭ কোটি টাকারও বেশি বিতরণ করতে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রাইম ব্যাংক ১৬৯ কোটি, ইসলামী ব্যাংক, ইবিএল ১৪২ কোটি, ব্র্যাক ১৩২ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ১৩০ কোটি টাকা লভ্যাংশ বিতরণ করতে যাচ্ছে। পুঁজিবাজারে এর আগে কখনও কোনো খাতের এমনকি ব্যাংকিং খাতেরও এত বিপুল পরিমাণে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের ইতিহাস নেই।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকগুলো যখন বেশি বেশি স্টক দিচ্ছিল, তখন ক্যাশ লভ্যাংশের বিষয়টি এসেছিল। এতে পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা অন্তত লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় ব্যাংকে বিনিয়োগ করবেন।’

চলতি বছর বেশ কিছু ব্যাংক যে পরিমাণ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে সেটি সঞ্চয়ের সুদহারের চেয়ে বেশি। বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ারদর এখন অভিহিত মূল্যের কাছাকাছি বা দ্বিগুণের কম হওয়ায় এখন ব্যাংকে টাকার রাখার চেয়ে শেয়ার কিনে রাখাই বেশি লাভজনক হচ্ছে।

এখন ব্যাংকে টাকা রাখলে বছরে সাড়ে ৪ থেকে ৬ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। অথচ শেয়ারমূল্যের তুলনায় নগদ লভ্যাংশ পাওয়া যাচ্ছে এর চেয়ে বেশি হারে। গত এক বছরে প্রাইম ব্যাংকের শেয়ারদর ছিল ১৪ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১৮ টাকা ৬০ পয়সা। এই ব্যাংকের শেয়ারধারীরা এবার দেড় টাকা করে লভ্যাংশ পেতে যাচ্ছেন। অর্থাৎ শেয়ারদরের তুলনায় লভ্যাংশ (ইল্ড) ছিল ৮ থেকে সাড়ে ১০ শতাংশ।

প্রিমিয়ার ব্যাংক এবার শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। গত এক বছরে এই ব্যাংকের শেয়ারদর ছিল ৯ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ১৪ টাকা ২০ পয়সা। এই হিসাবে এই ব্যাংকের শেয়ারধারীরা ৯ থেকে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ মুনাফা পাবেন।

গত এক বছরে মার্কেন্টাইলে ব্যাংকের শেয়ারদর ছিল ১০ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১৪ টাকা ২০ পয়সা। এই ব্যাংকের শেয়ারধারীরা এক টাকা করে নগদ পেতে যাচ্ছেন। এই ব্যাংকের শেয়ারধারীদের ইল্ড ৭ থেকে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ।

যমুনা ব্যাংকের দাম গত এক বছরে সর্বনিম্ন ছিল ১৬ টাকা, আর সর্বোচ্চ ২০ টাকা ৪০ পয়সা। এই ব্যাংকের শেয়ারধারীরা নগদ লভ্যাংশ পেতে যাচ্ছেন ১ টাকা ৭৫ পয়সা। যাদের শেয়ার কেনা ১৬ টাকায়, তারা শেয়ারমূল্যের প্রায় ১১ শতাংশ পাচ্ছেন লভ্যাংশ হিসেবে, আর যাদের কেনা ২০ টাকা ৪০ পয়সায়, তারা পাচ্ছেন ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এ রকম আরও অন্তত ১০টি ব্যাংক আছে যেগুলোর লভ্যাংশের ইল্ড বাজারে বর্তমানে সুদহারের চেয়ে বেশি। পাশাপাশি পাওয়া গেছে বোনাস শেয়ার।

এত বেশি হারে লভ্যাংশ বিতরণ করলেও ব্যাংকের শেয়ারের দর একেবারে তলানিতে। নিয়মিত লভ্যাংশ দিয়ে আসা তিনটি ব্যাংকের শেয়ারদর এখন ১০ টাকার নিচে। আরও একটি লোকসানি ব্যাংকের শেয়ারদর ৫ টাকার নিচে। নিয়মিত লভ্যাংশ দেয়া অন্য একটি ব্যাংকের শেয়ারদর ১০ টাকা।

১০ থেকে ১৫ টাকার মধ্যে দাম আছে নয়টির। এর মধ্যে একটি কেবল এবার ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। বাকি সবগুলোই ১০ বা তার চেয়ে বেশি হারে লভ্যাংশ দিয়েছে। এর মধ্যে একটি ২০ ও একটি ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। সাতটি ব্যাংকের শেয়ারদর এখন ১৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে। এর মধ্যে দুটি সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে একটি।

অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে যে লেনদেন হয় তার ৯০ শতাংশ গেমলিং করে হয়। ব্যাংকে গেমলিং কম, কারণ তাদের ইক্যুইটি বেশি। বিনিয়োগকারীরা এখন স্বল্প সময়ের লেনদেন করে মুনাফা তুলে নেয়ার পক্ষে, যা ব্যাংকে হচ্ছে না।’ পুঁজিবাজারে নগদ লভ্যাংশের প্রবণতা বাড়ে ২০১৯ সালের বাজেটে কর প্রস্তাবের পর। তখন বলা হয়, কোনো কোম্পানি নগদ লভ্যাংশের সমপরিমাণ বোনাস দিলে বোনাসের উপর কর দিতে হবে না। আর শুধু বোনাস দিলে অথবা নগদ লভ্যাংশের চেয়ে বেশি বোনাস দিলে ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

এই বিধানের পর ২০২০ সাল থেকেই ব্যাংকগুলো বোনাসের সমপরিমাণ নগদ লভ্যাংশ দিতে থাকে। যদিও করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংকের হাতে নগদ টাকা রাখার সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকগুলোকে কেবল বোনাস শেয়ার দিকে বাড়তি করারোপের শর্ত থেকে মুক্তি দেয়া হয়। তার পরেও কোম্পানিগুলো বোনাসের পাশাপাশি নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করে।

মহামারি পরিস্থিতিতে টানা দ্বিতীয় বছর এই প্রবণতা চালু রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তালিকাভুক্ত ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যার আহসান এইচ মনসুর  বলেন, ‘শেয়ারহোল্ডারদের মনোবল ধরে রাখতে প্রায় প্রতিটি ব্যাংক ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। ব্যাংকের আর্থিক হিসাব অনেকটাই স্বচ্ছ। যে কারণে এ খাত থেকে প্রতি বছর ভালো লভ্যাংশ দেয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে শেয়ারবাজারে অন্যান্য খাতের তুলনায় ব্যাংক খাত এখনও বিনিয়োগযোগ্য। লভ্যাংশের তুলনায় ব্যাংকের চেয়ে কম দামে অন্য কোনো শেয়ার নেই বললেই চলে। কিন্তু এরপরেও বিনিয়োগকারীরা সেদিকে যেতে চান না। অনেকে গুজবনির্ভর বিনিয়োগে যান।’

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের কোম্পানি সচিব আবুল বাশার বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ থেকে ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা যেন আরও সুদৃঢ় হয় সেজন্য করোনাতে ব্যাংকগুলো শেয়ারধারীদের ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে।’

আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক এবার শেয়ার প্রতি দেড় টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ব্যাংকটির শেয়ার সংখ্যা ১০৬ কোটি ৪৯ লাখ ২ হাজার ১৮৫টি। এই হিসাবে ব্যাংকটি লভ্যাংশ দেবে ১৫৯ কোটি ৭৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৭৭ টাকা ৫০ পয়সা। ব্যাংক এশিয়া শেয়ার প্রতি লভ্যাংশ দিচ্ছে ১ টাকা করে। এই হিসাবে ব্যাংকটি বিতরণ করবে ১১৬ কোটি ৫৯ লাখ ৬ হাজার ৮৬০ টাকা।

শেয়ার প্রতি ১ টাকা হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংক লভ্যাংশ বিতরণ করবে ১৩২ কোটি ৫৮ লাখ ৭৮ হাজার ৪৭৬ টাকা। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।

টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ দিচ্ছে সিটি ব্যাংক। শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা হিসেবে তারা বিতরণ করবে ১৭৭ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার ৬৫৬ টাকা ৭৫ পয়সা। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।

ঢাকা ব্যাংক শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা করে বিতরণ করবে মোট ৫৩ কোটি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৬ টাকা। পাশাপাশি ৬ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে ছয়টি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি। শেয়ার প্রতি দেড় টাকা করে ডাচ বাংলা ব্যাংক দিচ্ছে ৯৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পাশাপাশি ১৫ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে ১৫টি বোনাস শেয়ারও দিয়েছে ব্যাংকটি।

ইবিএল শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা করে বিতরণ করবে মোট ১৪২ কোটি ৬ লাখ ৪৯ হাজার ২০৬ টাকা। পাশাপাশি ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রতি ২০০ শেয়ারে ৩৫টি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।

এক্সিম ব্যাংক শেয়ার প্রতি ৭৫ পয়সা করে লভ্যাংশ দেবে মোট ১০৫ কোটি ৯১ লাখ ৮৮ হাজার ৩০১ টাকা। পাশাপাশি ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রতি ২০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি। ইসলামী ব্যাংক শেয়ার প্রতি ১ টাকা করে বিতরণ করবে মোট ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৬৬৮ টাকা।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা করে নগদ ও প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ার দিতে যাচ্ছে। এই হিসেবে এই ব্যাংকটি বিতরণ করবে মোট ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ১০১ টাকা ৫০ পয়সা। শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা করে মোট ১৩১ কোটি ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮৭ টাকা ৫০ পয়সা বিতরণ করবে যমুনা ব্যাংক।

মার্কেন্টাইল ব্যাংক শেয়ার প্রতি ১ টাকা করে বিতরণ করবে মোট ১০৩ কোটি ৩২ লাখ ১৭ হাজার ২৮ টাকা। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি। শেয়ার প্রতি ৭৫ পয়সা করে মোট ৭০ কোটি ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬০ টাকা ৭৫ পয়সা লভ্যাংশ দেবে এনসিসি ব্যাংক। পাশাপাশি ৭.৫ শতাংশ হারে প্রতি ২০০ শেয়ারে ১৫টি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।

নতুন তালিকাভুক্ত এনআরবিসি ব্যাংক বিতরণ করবে ৫২ কোটি ৬৮ লাখ ৮৭ হাজার ৭৪৮ টাকা ৫০ পয়সা। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।

শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা হিসেবে ওয়ান ব্যাংক দিচ্ছে মোট ৫৩ কোটি ১২ লাখ সাত হাজার ৮৪৩ টাকা। সঙ্গে সাড়ে ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ারও দেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। এই হিসাবে প্রতি ২০০ শেয়ারে ১১টি বোনাস শেয়ার পাওয়া যাবে।

শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা হারে ১৩০ কোটি টাকা ৩৮ লাখ ৩৮ হাজার ৪০৮ টাকা ৭৫ পয়সা লভ্যাংশ দেবে প্রিমিয়ার ব্যাংক। পাশাপাশি ৭.৫ শতাংশ হারে প্রতি ২০০ শেয়ারে ১৫টি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।

প্রাইম ব্যাংক শেয়ার প্রতি দেড় টাকা হারে বিতরণ করতে যাচ্ছে মোট ১৬৯ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার ২১৫ টাকা ৫০ পয়সা। পূবালী ব্যাংক শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা হারে মোট ১২৮ কোটি ৫৩ লাখ ৬৭ হাজার ৭৭৩ কোটি ৭৫ পয়সা লভ্যাংশ বিতরণ করতে যাচ্ছে।

শেয়ার প্রতি ৭০ পয়সা করে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক বিতরণ করেছে মোট ৬৮ কোটি ৪৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৭৩ টাকা। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দিয়েছে ব্যাংকটি।

শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা করে এসআইবিএল লভ্যাংশ দেবে মোট ৪৬ কোটি ৯০ লাখ চার হাজার ২১২ টাকা। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি। শেয়ার প্রতি টাকা হারে সাউথ ইস্ট ব্যাংক দিতে যাচ্ছে মোট ১১৮ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার ৫২২ টাকা।

টাকার অঙ্কে সবচেয়ে কম লভ্যাংশ দিতে যাচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এই ব্যাংকটি শেয়ার প্রতি ২৫ পয়সা করে বিতরণ করতে যাচ্ছে মোট ২৫ কোটি ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৯৭ টাকা। পাশাপাশি ২.৫ শতাংশ হারে প্রতি ২০০ শেয়ারে পাঁচটি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।

উত্তরা ব্যাংক শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা করে বিতরণ করতে যাচ্ছে মোট ৬২ কোটি ৭৪ লাখ ২৫ হাজার ৯৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। পাশাপাশি ১২.৫ শতাংশ হারে প্রতি ২০০ শেয়ারে ২৫টি বোনাস শেয়ারও দেবে ব্যাংকটি।

কেবল বোনাস শেয়ার দিল যারা: আরও তিনটি ব্যাংক এখন পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে যারা কেবল বোনাস শেয়ার দেবে। এর মধ্যে এবি ও আইএফআইসি ব্যাংক কেবল ৫ শতাংশ হারে (প্রতি ১০০ শেয়ারে পাঁচটি) এবং মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১০ শতাংশ হারে (প্রতি ১০ শেয়ারে একটি) বোনাস শেয়ার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কেবল বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে এমটিবি, এবি ও আইএফআইসি ব্যাংক। টানা লোকসানে থাকা আইসিবি ইসলামী ব্যাংক এবারও শেয়ারধারীদের মধ্যে কোনো লভ্যাংশ বিতরণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যেসব ব্যাংক এখনও লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি: ন্যাশনাল, রূপালী, ট্রাস্ট ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা ইউসিবি এখনও লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সভার কথাই জানায়নি।

৫০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করবে ব্যাংক এশিয়া: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের অরূপান্তরযোগ্য সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যু করবে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পরিচালনা পর্ষদের সভায় বন্ড ইস্যুর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি।

ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী মূলধন শর্ত (টায়ার-১) পূরণে বন্ড ইস্যুর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনসাপেক্ষে বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।