দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আজ শনিবার (২২ মে) বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে ২৩ মের মধ্যে উপকূলে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের দিকে ধেয়ে আসতে যাওয়া এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ইয়াস (Yass)। এর নামকরণ করেছে ওমান বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে যে লঘুচাপ সৃষ্টির আভাস দেওয়া হচ্ছে, সেটি যদি ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এ রূপান্তর হয়, তবে তা এক পর্যায়ে শক্তিশালী ‘সুপার সাইক্লোনে’ পরিণত হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পুরো উপকূলকে সতর্ক থাকতে হবে।

শক্তিশালী ‘সুপার সাইক্লোনে’ রুপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’: উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে যে লঘুচাপ সৃষ্টির আভাস দেওয়া হচ্ছে, সেটি যদি ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এ রূপান্তর হয়, তবে তা এক পর্যায়ে শক্তিশালী ‘সুপার সাইক্লোনে’ পরিণত হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পুরো উপকূলকে সতর্ক করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। আজ শনিবার (২২ মে) সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।

আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ‘ইয়াস’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তা আগামী ২৬ মে নাগাদ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এই অবস্থায় প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গতকালই আমরা পরিপূর্ণ সংবাদ পেয়েছি। এটা এখন লঘুচাপ অবস্থায় আছে। এটা আগামীকালের মধ্যে সুস্পষ্ট লঘুচাপ হবে, এরপর ২৩ থেকে ২৪ মের মধ্যে নিম্নচাপ হবে।

নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় হবে। ২৬ মে ভূমিতে আঘাত করার আশঙ্কা আছে। ভূমিতে আছড়ে পড়ার সময় এর গতিবেগ হবে ১২০ থেকে ১৯০ কিলোমিটার। এটা বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের আন্দামান নিকোবর দীপপুঞ্জের কাছাকাছি আছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এর ডিরেকশন ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে। এটি যে অবস্থায় আছে, সেখান থেকে যদি সোজাসুজি আসে তবে আমাদের খুলনা বিভাগ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।’ ‘এটা জানার পর আমরা আবহাওয়া অধিদফতরের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছি। আজকে বিকেল ৪টায় আমরা প্রস্তুতি সভা দিয়েছি। বিকেলে প্রস্তুতি সভার পর আমরা মাঠ প্রশাসনে আমাদের নির্দেশনা পাঠিয়ে দেব। ইতোমধ্যে সিপিপি ভলান্টিয়ারদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রচার কাজ শুরু হচ্ছে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু এটি এখন পর্যন্ত লঘুচাপ হয়ে আছে, এখনই আতঙ্ক কিংবা শঙ্কার কিছু নেই। অন্যান্যবারের মতো এটা ‘সুপার সাইক্লোন’ হয়ে আঘাত হানতে পারে। আরেকটা বিষয় হলো ঘূর্ণিঝড় এগোনোর সময় প্রতিমুহূর্তে দিক পরিবর্তন করে। দিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়ে। সেজন্য আমরা আমাদের পুরো উপকূলকে সতর্ক করব, প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেব।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি এখনো সৃষ্টিই হয়নি, তাই কোনো কিছু স্পষ্ট করে বলা যাবে না। আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা ওয়েল প্রিপেয়ার্ড।’

করোনা আক্রান্তে ৩৮ জনের মৃত্যু: দেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টা আরও ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১২ হাজার ৩৪৮ জনে। এই সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৮ জন। এ পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৬ জন। আজ শনিবার (২২ মে) বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

বিপর্যস্ত ভারতে আরও ৪১৯৪ জনের মৃত্যু: করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে ভারত। ভাইরাসে বিপর্যস্ত এই দেশটিতে চলছে মৃত্যুর মিছিল। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শনিবার দেশটিতে দৈনিক মৃত্যু ছাড়িয়েছে চার হাজারের গণ্ডি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন ৪ হাজার ১৯৪ জন।

আগের দিনের তুলনায় অবশ্য কিছুটা কমেছে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। তবে তা এখনও রয়েছে আড়াই লাখের ওপরেই। শনিবার (২২ মে) ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৯৯ জন। যা শুক্রবারের তুলনায় প্রায় ২ হাজার কম। সর্বশেষ এই সংখ্যাসহ মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৬২ লাখ ৮৯ হাজার ২৯০ জনে।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪ হাজার ১৯৪ জন। এতে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫২৫ জনে। এর আগে শুক্রবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪ হাজার ২০৯ জন রোগী মারা গিয়েছিলেন। অর্থাৎ শনিবার প্রাণহানি কিছুটা কমেছে।

প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক নতুন রোগী শনাক্ত হলেও শনিবার ভারতে কমে এসেছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় সক্রিয় রোগী কমেছে এক লাখেরও বেশি। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে এখন মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২৯ লাখ ২৩ হাজার ৪০০ জন। গত ২৮ এপ্রিলের পর এই প্রথমবারের মতো দেশটিতে সক্রিয় রোগী ৩০ লাখের নিচে নামল।

দৈনিক আক্রান্তের থেকে বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠাতেই কমছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। এক সময় তা ছিল ৩৭ লাখেরও বেশি। গত দু’সপ্তাহে কমতে কমতে হয়েছে ২৯ লাখে নেমে এসেছে। ফলে ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করায় হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ একটু হলেও কমেছে। সূত্র: এএনআই

দক্ষিণ আ.লীগের সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের ভাগিনা বখতিয়ার মদপানে আটক: ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের ভাগিনা বখতিয়ার উদ্দিনকে মদপানের অভিযোগে আটক করেছে খিলক্ষেত থানা পুলিশ। গত ১৮ মে খিলক্ষেতের হোটেল লা মেরিডিয়ান হতে তাদেরকে আটক করা। এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে মামলা নং ২১। এ মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন: ১) মো: বাপ্পি, ২) সজীব হোসেন, ৩) জাকির হোসেন, ৪) ইমরান‌।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ মামলার প্রধান আসামি হলো ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের রাজনৈতিক ভাগিনা বখতিয়ার উদ্দিন। তিনি হুমায়ুন কবিরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সংযুক্ত। পুলিশের ধারণা, বখতিয়ার উদ্দিন উশৃংখল ভাবে জীবন যাপন করেন। সে মদপান অবস্থায় পুলিশের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। যার জন্য পুলিশ তার উপর বিক্ষুদ্ধ।

এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানার এসআই রিপন কুমারের তথ্যমতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানা যায়, উক্ত আসামিদের পুলিশের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ এক অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানার অফিসার ইনচার্জ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মাদকের সঙ্গে পুলিশের কোন আপোষ নেই। আপনারা জানেন মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার ও পুলিশ যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। থানা অফিসার এ ইনচার্জ বলেন, আসামিদের মদপানের অভিযোগে তাদের টেস্ট করা হয়। সেই টেস্টে প্রমাণিত হয় তারা মদপানকারী। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মেহেন্দিগঞ্জ, নেপথ্যে ক্ষমতাসীনদের দ্বন্দ্বে: রক্ত ঝরছে। লাশ পড়ছে। হাত বাড়ালেই মিলছে ঝকঝকে অবৈধ অস্ত্র। পেশাদার অপরাধী ছাড়াও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এখন সশস্ত্র কিশোর গ্যাং। খুনের পর খুন। গত ছয় মাসের ব্যবধানে ৫ খুন। খুন রক্ত আর অস্ত্র সব মিলিয়ে মেহেন্দীগঞ্জ এখন রক্তাক্ত জনপদ।

সরেজমিন জানা যায়, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায় উত্থান ঘটেছে শীর্ষ সন্ত্রাসীর একাধিক গ্রুপের, যাদের বিরুদ্ধে জনগণ মুখ খোলার সাহস পায় না। মাদক, অস্ত্র, রাজনৈতিক ক্যাডার ও উঠতি অপরাধীদের গ্যাংস্পট হয়ে উঠেছে। আর এর নেপেথ্যে রয়েছে স্থানীয় এমপির মদদ।  মেঘনা নদীর তীরবর্তী মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার জনপদ ক্ষমতাসীনদের দ্বন্দ্বে রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে। মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন ও স্থগিত থাকা ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিগত ছয় মাসে কমপক্ষে ১০টি সশস্ত্র সংঘর্ষে উভয় পক্ষের পাঁচ জন নিহত এবং অন্তত দুই শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন ১০ জন পুলিশ সদস্যও।

উপজেলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এসব সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছেন। পুলিশের উপস্থিতিতে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া এবং সংঘর্ষ চলতে থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাগিদ দিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।

স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, আধিপত্য বিস্তারসহ মাদক, টেন্ডারবাজি, নদীর তীরবর্তী মাছঘাট দখল, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং চর দখলসহ নানা কারণে বিবাদে জড়াচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর না হওয়ায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে এক পক্ষ অন্যপক্ষের ওপর হামলা চালানোর সাহস পাচ্ছে। এসব হামলাকারী পরবর্তী সময়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হওয়ার কারণে পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

মেহেন্দিগঞ্জের এ জনপদকে বসবাসযোগ্য করতে হলে অবিলম্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান আরজু।

তিনি বলেন, দলকে ব্যবহার করে এক শ্রেণির লুটেরা সবকিছু দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এসব দখলবাজ ক্ষমতাধরদের ছত্রছায়ায় সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুনসুর আহমেদও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়ে বলেন, দখলদারদের হত্যাযজ্ঞে আতঙ্কিত হয়ে দলের অনেক নেতাকর্মী এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ কর্মী আফসার হোসেন সিকদারকে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার নবগঠিত উত্তর ও দক্ষিণ উলানিয়ার স্থগিত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেখানকার বিবদমান আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংঘর্ষে সাত পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন।

পুলিশ সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪৬ রাউন্ড গু?লিবর্ষণ করে। সেসময়ে পুলিশ আহতের ঘটনায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়াও কয়েকটি হামলা-পালটা হামলার ঘটনায় আরো ছয়টি মামলা দায়ের হয় তখন। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল ভোররাতে দক্ষিণ উলানিয়ার সুলতানী গ্রামে হামলা চালায় প্রতিপক্ষের চার শতাধিক লোক। দুই পক্ষের মধ্যে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। সংঘর্ষে সেখানকার চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোক হিসেবে পরিচিত সাইফুল সর্দার এবং প্রতিপক্ষ গ্রুপের সাঈদ চৌধুরী নিহত হন।

সংঘর্ষে উভয়পক্ষের শতাধিক লোক আহত হন। ঐ গ্রামের বেশ কয়েকটি বসতবাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মেহেন্দিগঞ্জ উলানিয়া (উত্তর) ইউনিয়নের সলদি এলাকার বাসিন্দা ইউপি সদস্য রবী ঢালির নাতনির বিয়ের অনুষ্ঠানে ধুলখোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বেপারীর ৫০ থেকে ৬০ জন কর্মী-সমর্থক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।

এতে ঘটনাস্থলেই স্থানীয় সামছুল হক কবিরাজের ছেলে দিনমজুর সিদ্দিকুর রহমান ও পরে চিকিত্সাধীন অবস্থায় জামাল উদ্দিন ঢালীর ভাই ছত্তার ঢালী নিহত হন। এছাড়াও হামলায় প্রায় ২৫ জন গুরুতর আহত হয়। এছাড়া গত ৬ মে মেহেন্দিগঞ্জের শ্রীপুর ইউনিয়নে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেলোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি খুন হন। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই দেলোয়ারের সঙ্গে প্রতিপক্ষ খালেক হাওলাদারের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরেই খালেক হাওলাদারের ছেলে ফারুক হাওলাদার ও চাঁন হাওলাদার পিটিয়ে হত্যা করে দেলোয়ার হাওলাদারকে।

মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম জানান, বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে উল্লেখ করে ওসি জানান, ঐ মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হবে।

মেহেন্দিগঞ্জের সার্কেল এসপি সুকুমার রায় বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে দুই পক্ষ। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।