সাফকো স্পিনিংয়ের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের বিএসইসিতে অভিযোগ
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি সাফকো স্পিনিংয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) অভিযোগ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। অভিযোগে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি ভুল তথ্য দেয়ার পাশাপাশি লোকসান দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের ঠকাচ্ছে। ফলে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা জানতে বিএসইসির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।
সম্প্রতি বিএসইসিতে মো. মামুন অর রশিদ, মজিবুর রহমান ও মমিনুল ইসলাম নামে তিন বিনিয়োগকারী লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত এ অভিযোগে বলা হয়েছে, বস্ত্র খাতের কোম্পানিটি ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বোনাস শেয়ার দিয়েছে। মাঝখানে ২০১৫ সালে তারা বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। পরবর্তীকালে ২০১৯ ও ২০২০ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বঞ্চিত করে। কারণ হিসাবে ব্যবসায় লোকসান হওয়ার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
কিন্তু বিনিয়োগকারীরা মনে করে, তথ্যটি সঠিক নয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানির দুটি ইউনিটই এখন পুরোদমে চলছে। সেখানে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ শ্রমিক কর্মচারী কাজ করছেন। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির লোকসানে থাকার প্রশ্নই আসে না। তারা জানান, কোম্পানি যে আর্থিক প্রতিবেদন দিয়েছে তা আমাদের কাছে স্বচ্ছ নয়। এটা নিজেদের ইচ্ছেমতো ও পরিচালকরা লাভবান হওয়ার জন্য করেছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য উৎপাদনের খরচ (কস্ট অফ প্যাকিং ম্যাটেরিয়ালস) বেশি দেখানো হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এ খরচ দুই কোটি ৭১ লাখ টাকা থেকে বেড়ে চার কোটি ৪২ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে, যা অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। একইভাব অভিযোগপত্রে বিদ্যুৎ বিলসহ অন্য খরচের যে হিসাব দেখানো হয়েছে তাও অস্বাভাবিক। এ কারণে দক্ষ নিরীক্ষক দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের বিষয় নিয়ে আমাদের একটি টিম কাজ করে। অনেক সময় কিছু কোম্পানির হিসাবে গরমিলও পাওয়া যায়। এমন পাওয়া গেলে যে কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে বেশিরভাগ সময় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় না। অনেকে না বুঝে অভিযোগ করেন। কিন্তু বিএসইসি সব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখে।
প্রতিষ্ঠানটির সচিব ইফতেখার আহমেদ বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তাদের জানা নেই। কোম্পানির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সর্বশেষ কোয়ার্টারেও আমাদের ব্যবসার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আশা করছি, আমরা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবো।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো ছিল। এ সময় কোম্পানির মুনাফা ছিল এক কোটি ২২ লাখ টাকা। ২০১৯ সাল থেকে হঠাৎ লোকসানে চলে যায় প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালে লোকসান এক কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পরের বছর তা আরও বেড়ে হয় এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। তবে চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে কোম্পানিটি।
তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২১) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে এক টাকা ৮৫ পয়সা (লোকসান) ছিল। আর প্রথম তিন প্রান্তিক বা ৯ মাসে (জুলাই ২০২০-মার্চ ২০২১) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪ টাকা ৩১ পয়সা (লোকসান), আগের বছরের একই সময় ৩ টাকা ৮৫ পয়সা (লোকসান) ছিল।
সম্প্রতি সাফকো স্পিনিং মিলসের লভ্যাংশ না দেয়া ও ক্রমাগত লোকসানের কারণ জানতে পরিচালনা পর্ষদসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের তলব করে বিএসইসি। ২০১৯ ও ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন আলোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি সাফকো স্পিনিং মিলস।
এছাড়া কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর থেকে কখনও শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। ধারাবাহিকভাবে শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস-লভ্যাংশ না দেয়ায় তালিকাভুক্তির পর থেকে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৮৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু কোম্পানির আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। ফলে বিষয়টি জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদকে ডাকে বিএসইসি। তখন লভ্যাংশ না দেয়া-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত পরিচালনা পর্ষদকে সঙ্গে আনতে বলেছে বিএসইসি।
১৮ কোম্পানির মধ্যে ইপিএস বেড়েছে ১৪টি, কমেছে ৪টি: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৮ কোম্পানি ৩১ মার্চ, ২০২১ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ১৪ কোম্পানির ইপিএস সমাপ্ত অর্থবছর বাড়লেও ৪ কোম্পানির ইপিএস কমেছে। কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত আয়, সম্পদ মূল্য ও ক্যাশ ফ্লো নিচে দেওয়া হল।
কেপিসিএল: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৫ পয়সা। গত বছর একই সময়ে ছিল ৬৭ পয়সা। অপরদিকে চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৬৫ পয়সা। গত বছর একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২ টাকা ৬২ পয়সা।
মেট্রো স্পিনিং: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ২০ পয়সা। অন্যদিকে চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৬২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১৭ পয়সা। ৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল ১৫ টাকা ৭২ পয়সা।
বিএটিবিসি: প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছে ৩৮৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছিল ৩০৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২১ টাকা ৫১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছিল ১৬ টাকা ৮৭ পয়সা।
এমআই সিমেন্ট: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৭০ পয়সা, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ২৯ পয়সা। অন্যদিকে, প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪ টাকা ৭৩ পয়সা। যা গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১ টাকা ৬০ পয়সা।
আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ২১ টাকা ২৩ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে তা ছিল মাইনাস ৩৯ পয়সা। ৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৫০ টাকা ২৭ পয়সা।
আরামিট সিমেন্ট: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৭১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল ১ টাকা ১৮ পয়সা। অন্যদিকে চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪৮ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল ৩ টাকা ৮৭ পয়সা।
জেনেক্স ইনফোসিস: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ১৬ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছিল ১ টাকা ১১ পয়সা। অন্যদিকে চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ৬ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৩ টাকা ১ পয়সা।
ইয়াকিন পলিমার: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল ৬ পয়সা। অন্যদিকে চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৫৫ পয়সা। গত বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ৮ পয়সা।
শাশা ডেনিমস: চলতি হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২০ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছিল ১৩ পয়সা। অন্যদিকে চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৬৩ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১ টাকা ১৫ পয়সা।
রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স: প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৬০ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছিল ৫৪ পয়সা। ৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৬ টাকা ৭৮ পয়সা।
ম্যাকসন্স স্পিনিং: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি’২১ -মার্চ’২১) কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬৪ পয়সা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি (ইপিএস) ছিল ০৩ পয়সা। এদিকে গত ৯ মাসে (জুলাই,২০২০ -মার্চ’২০২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ১৫ পয়সা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল (ইপিএস) ০৫ পয়সা। একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভি) হয়েছে ১৯ টাকা ১৬ পয়সা।
সালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি -মার্চ’২১) কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১২ পয়সা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ০৪ পয়সা। এদিকে গত ৯ মাসে (জুলাই,২০২০ -মার্চ’২০২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪২ পয়সা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল (ইপিএস) ২৮ পয়সা। একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভি) হয়েছে ১২ টাকা ৭৮ পয়সা।
আরামিট: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৩ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছিল ৪২ পয়সা। অন্যদিকে চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ২২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১ টাকা ৪৮ পয়সা।
মুন্নু সিরামিক: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩৭ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছিল ৮ পয়সা। অন্যদিকে চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৫ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১ টাকা ৩৮ পয়সা (রিস্টেটেড)। ৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৫৭ টাকা ৫৩ পয়সা।
প্যাসিফিক ডেনিমস: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১০ পয়সা। গত বছরও একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ১০ পয়সা ছিল। অন্যদিকে চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৬৫ পয়সা। ৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল ১৩ টাকা ৭৪ পয়সা।
জিবিবি পাওয়ার: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩৭ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছিল ২৫ পয়সা। অন্যদিকে চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ১৪ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৮০ পয়সা। ৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল ২০ টাকা ৫৮ পয়সা।
প্রাইম টেক্সটাইল: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৩৯ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি ২ পয়সা লোকসান হয়েছিল। অন্যদিকে চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ২ টাকা ১২ লোকসান হয়েছে। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছিল ৬ পয়সা। গত ৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৬৫ টাকা ১৬ পয়সা।
যমুনা অয়েল: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছিল ৩ টাকা ৭৯ পয়সা। অন্যদিকে চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১২ টাকা ৬৫ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১৩ টাকা ১৪ পয়সা। ৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৬৬ টাকা ৭৪ পয়সা।
চাঙা পুঁজিবাজারে তিন খাতের শেয়ার কেনার ধুম: হঠাৎ করে পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রয়ের চেয়ে ক্রয়ের প্রবনতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। সম্প্রতি বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে তিন খাতের শেয়ার বিক্রয়ের চেয়ে ক্রয়ের প্রবনতা বেশি। মুলত নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি আস্থার ফলে নতুন ও পুরাতন বিনিয়োগকারীর সমন্বয়ে শক্তিশালী হচ্ছে পুঁজিবাজার।
বড় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয়ের দিকে ঝুঁকছেন। গত রোববার থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক খাতের শেয়ারের দিকে একচেটিয়া ঝোঁক বিনিয়োগকারীদের। মুলত তিন কার্যদিবসে তিন খাতের নেতৃত্বে ভর করে পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে।
এর মধ্যে দর সংশোধনে দুই দিন লেনদেন কিছুটা কমলেও আবার শেয়ার দর বাড়তে থাকায় লেনদেন বেড়েছে। এ দুদিন থেকেই বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন বিনিয়োগকারীরা। ঈদের পর দ্বিতীয়বারের মতো দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। একই সঙ্গে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাড়ল ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার দর।
বিমা খাতের শেয়ারের দর বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও কোনোভাবেই থামানো যায়নি এ খাতের শেয়ারের দর বৃদ্ধি। তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো অন্য খাতের তুলনায় ঈর্ষণীয় লভ্যাংশ দেয়ার পরও দর বৃদ্ধি না পাওয়ায় হতাশা ছিল বিনিয়োগকারীদের। সেই হতাশা এখন অনেকটাই কেটে গেছে ব্যাংকের শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে। ইউনিটপ্রতি আয়ে এখনও লোভনীয় স্থানে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো। আর শেয়ারপ্রতি আয় প্রকাশে আগ্রহের তালিকায় পিছিয়ে নেই নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।
মঙ্গলবার সব খাতের শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে উৎফুল্ল ছিল বিনিয়োগকারীরা। মাঝে দুদিন মূল্য সংশোধনে সূচকের পতন হলেও ঢালাও শেয়ার বিক্রি করেননি বিনিয়োগকারীরা। আগে টানা সূচক বাড়ার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক থাকত, এখন সূচকের পতন হবে। আর যখনই সূচকের পতন হতো, তখন টানা অব্যাহত থাকত সেই পতন। এমন অবস্থা থেকে বের হয়ে এখন বিনিয়োগকারীরা খাতওয়ারি বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। কোনো একটি খাত থেকে মুনাফার বিপরীতে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়লেও সেদিনই অন্য একটি খাতের উত্থান হয়। ফলে সূচকে বড় ধরনের কোনো প্রভাব দেখা যায় না।
বিমার শেয়ার কেনার ধুম: তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলছে পুঁজিবাজারে বিমার শেয়ার কেনার ধুম। ঈদের ছুটির আগে ও পরে চার কার্যদিবসে ঢালাওভাবে বিমার শেয়ারের দরপতন দেখা গেছে। কিন্তু তারপর আর এমন পতন দেখা যায়নি। দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তালিকায় থাকছে এ খাতের শেয়ার। ফলে বিমার শেয়ার কিনতে পিছুপা হচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।
যদিও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিমার শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। বিমা কোম্পানির শেয়ারের দর যেভাবে বাড়ছে তার সঙ্গে পুরো বিমা খাতের আয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। মঙ্গলবার লেনদেন শেষে দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তালিকায় ছিল ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার প্রতি দর ৩৫ টাকা থেকে ১০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৮ টাকা ৫০ পয়সা।
গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দরও বেড়েছে একই হারে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর ৪৯ টাকা থেকে ১০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৩ টাকা ৯০ পয়সা। নর্দান ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ৫০ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৫ টাকা ১০ পয়সা।
গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর ১১৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১২৩ টাকা ৮০ পয়সা। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৬ দশমিক ১৭ মতাংশ। এ ছাড়া এদিন ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে পাঁচ শতাংশের বেশি।
ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘শেয়ারের দর বাড়ছে এ জন্য সূচক বাড়ছে। শেয়ারের দর কমলে সূচক কমবে। কিন্তু এ দুটির মধ্যে প্রধান হচ্ছে লেনদেন কেমন হচ্ছে। যদি লেনদেন ঠিক থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে পুঁজিবাজার সঠিক পথেই এগোচ্ছে।’ তিনি বলেন, খাতওয়ারী লেনদেনে ব্যাংক, নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রধান্য বাড়ছে। এটিও পুঁজিবাজারের জন্য ভালো দিক।
ব্যাংক খাত: ব্যাংক খাতের কোম্পানি এবি ব্যাংক ২০২০ সালের জন্য তাদের শেয়ারধারীদের ৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি রাইট ইস্যুর মাধ্যমে প্রতি ৬টি শেয়ারের বিপরীতে একটি শেয়ার প্রদান করবে।
ব্যাংকটি এমন ঘোষণা করে গত ২৮ এপ্রিল। তখন কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর ছিল ৯ টাকা ৬০ পয়সা। রাইট ইস্যুতে প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ধরা হয় ১০ টাকা। কিন্তু দ্বিধা ছিল যে, শেয়ারের মার্কেট প্রাইস ৯ টাকার কিছু বেশি সেটি ১০ টাকায় কীভাবে ইস্যু হবে। সে অবস্থা থেকে পুরোপুরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকটি। মঙ্গলবার দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তালিকায় ছিল এবি ব্যাংক।
আর গত ১৪ কার্যদিবসে ব্যাংকটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। এ দিন ব্যাংকটির শেয়ার দর ১৩ টাকা থেকে ১০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৪ টাকা ৩০ পয়সা। ২০২০ সালের জন্য তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো তার শেয়ারধারীদের ভালো ডিভিডেন্ড দেয়ার পরও এ খাতের শেয়ারের কাঙ্খিত দর বৃদ্ধি না পাওয়ায় হতাশা ছিল বিনিয়োগকারীদের। এখন সেই হতাশা বড় ভরসায় টার্ন নিয়েছে।
মঙ্গলবার দর বৃদ্ধি পাওয়া ব্যাংক খাতের কোম্পানির মধ্যে ছিল এনআরবিসি ব্যাংক, যার শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ০১ শতাংশ। ইউসিবি ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর ১৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৮ টাকা ২০ পয়সা। ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। সাউথ ইস্ট ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান: মঙ্গলবার নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের জিএসপি ফিন্যান্সের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১০ শতাংশ বা দিনের সর্বোচ্চ। এ দিন প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর ১৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা ৮০ পয়সা। ইসলামী ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
মাইডাস ফিন্যান্সের শেয়ার প্রতি দর ২০ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২২ টাকা ১০ পয়সা। তবে এখাতে আজ ভিন্ন চেহারায় ছিল ন্যাশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্স। চাঙ্গা বাজারেও আজ কোম্পানিটির শেয়ার দরে ছিল নেতিবাচক প্রবণতা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েকদিন যাবত ফাইন্যান্সের লেনদেনে নতুন গতি দেখা গেছে। ফাইন্যান্স খাতের শেয়ারে বড় বিনিয়োগকারীদের নজর পড়ায় এমনটি হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।
ওয়ালটনের পণ্য বিক্রির সাফল্যে নিট মুনাফা বেড়েছে ১৪৭ শতাংশ: পণ্য বিক্রিতে বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছে দেশীয় ইলেকট্রনিকস জায়ান্ট কোম্পানি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। মহামারী করোনার মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিটির পণ্য বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬১ শতাংশের বেশি। পণ্য বিক্রিতে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানিতেও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময় ওয়ালটন হাই-টেকের নিট মুনাফা বেড়েছে ১৪৭ শতাংশ।
চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে নিট মুনাফায় শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক। চলতি ২০২০-২১ হিসাব বছরে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি ওয়ালটন হাই-টেকের নিট মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। চলতি হিসাব বছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২১ শতাংশ।
ওয়ালটন হাই-টেকের চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে স্থানীয় বাজারে পণ্য বিক্রি ও রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৮ কোটি টাকা। ওয়ালটনের আয়ের বড় অংশ আসে রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনার বিক্রি থেকে। চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) এ দুই পণ্য বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
আর টিভি, ইলেকট্রনিকস অ্যাপ্লায়েন্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সে প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশ। রেফ্রিজারেটর ও এয়াল কন্ডিশনার বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ২২২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭৩৭ কোটি টাকা। উৎপাদন ব্যয় শেষে চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে মোট আয় হয়েছে ৬০৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৭৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
প্রশাসনিক, বিক্রয় ও বিতরণ ব্যয় শেষে চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে ওয়ালটন হাই-টেকের পরিচালন আয় দাঁড়িয়েছে ৪৬৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯২ শতাংশ বেশি। এ সময় সুদজনিত ব্যয় হয়েছে ২২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর অপরিচালন আয় হয়েছে ৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা। চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফায় কর্মীর হিস্যা বাবদ ২১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বাদ দেওয়ার পর করপূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে ৪৩০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৭০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
কর পরিশোধের পর ওয়ালটন হাই-টেকের নিট মুনাফা হয়েছে ৩৮৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ১৫৫ কোটি টাকা। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে নিট মুনাফা বেড়েছে ১৪৭ শতাংশর বেশি। চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে ওয়ালটন হাই-টেকের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৭৯ পয়সা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫ টাকা ১৭ পয়সা। চলতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিভি, কম্প্রেসার, ইলেকট্রনিকস ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করে ওয়ালটন। এ সময় বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে বলে কোম্পানিটির কর্মকর্তারা জানান।
বিক্রিতে ভালো প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আবুল বাশার বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যেও স্থানীয় বাজারে ওয়ালটনের একচেটিয়া রাজত্ব বজায় রয়েছে। পাশাপাশি এ সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান লকডাউনের মধ্যেও ১০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এসব কারণেই ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তিনি জানান, আমরা পণ্য রপ্তানি বেগবান করতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশে শাখা অফিস খুলেছি। ইলেকট্রনিকস পণ্যে বিশে^র সেরা পাঁচ কোম্পানিতে স্থান পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।
তৃতীয় প্রান্তিকের বড় সাফল্যের ওপর ভর করে চলতি হিসাব বছরের নয় মাসে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের পণ্য বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ শতাংশ। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে পণ্য বিক্রি থেকে কোম্পানিটি আয় করেছে ৪ হাজার ২৯১ কোটি টাকা, যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা।
এ সময় উৎপাদন ব্যয় শেষে মোট আয় হয়েছে ১ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা, যা আগের হিসাব বছরের নয় মাসে ছিল ১ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। এ সময় প্রশাসনিক, বিক্রয়, বিতরণ ও সুদবাবদ ব্যয় ও মুনাফায় কর্মীর হিস্যা রাখার পর করপূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৮৬৩ কোটি টাকা। কর পরিশোধের পর চলতি হিসাব বছরের নয় মাসে নিট মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ২৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
রিং সাইনের উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে সরিয়ে নতুন পর্ষদ গঠনের সুফল পেতে যাচ্ছে রিং সাইন টেক্সটাইলস লিমিটেড। প্রায় পৌনে এক বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিটিকে আবার উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। গত বছরের শেষদিকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে দেনায় ডুবে যাওয়া কোম্পানিটিকে টেনে তুলতে গত ২৭ জানুয়ারি পর্ষদ ভেঙে দিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয় কোম্পানির বাইরের কয়েকজনকে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া মোট ছয়টি কোম্পানিকে নতুন জীবন দিতে এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। আর প্রথম কোম্পানি হিসেবেই সফল হতে যাচ্ছে রিং শাইন। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার দ্বিতীয় বছরে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বিদেশি ক্রেতা কমে যাওয়া, আমদানি করা কাঁচামালের স্বল্পতার কথা জানিয়ে গত সেপ্টেম্বরে এক মাসের জন্য কোম্পানিটি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়।
পরে আরও তিন দফা বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এর মধ্যে চলতি বছরের শুরুর দিকে বিএসইসি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়। নতুন বোর্ডকে দায়িত্ব দেয়া হয় কোম্পানি চালুর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। চার মাসের মাথায় নতুন বোর্ড সদস্যরা কোম্পানির জটিলতা কাটিয়ে উৎপাদন চালু করার মতো পর্যায়ে আসার চেষ্টা করছেন।
বিএসইসির কমিশনার কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, নতুন বোর্ড এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করে কোম্পানির নতুন নীতি ঠিক করার কাজ এগিয়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘শিগগিরই কোম্পানিটি আবার উৎপাদনে যাবে। যে উদ্দেশ্যে কোম্পানিটিকে আইপিও মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়েছিল, সেটি বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে তারা। আমরা আশাবাদী নতুন বোর্ড কোম্পানিটিকে আবার আগের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। মঙ্গলবার বিকেলেও নতুন পর্ষদ বৈঠক করেছে।
পর্ষদের সদস্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক সগির হোসাইন খন্দকার বলেন, ‘কোম্পানিটির বিষয়ে আমরা আশাবাদী। আমরা চেষ্টা করছি।’ কবে নাগাদ কোম্পানিটি আবার চালু হতে পারে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কারণ, এটি একটি রপ্তানিমুখী কারখানা। এর সঙ্গে ক্রেতা, রপ্তানির বাজার জড়িত। যেহেতু কারখানাটি বন্ধ ছিল, সেহেতু সবকিছু ঠিক করতে হবে। তবে আমরা আশাবাদী, কোম্পানিটিকে দ্রুত উৎপাদনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।’
আইপিওর টাকায় পাবে নতুন জীবন: কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে যে দেড় শ কোটি টাকা তোলে সেই টাকা নিয়ে কোম্পানির বিদেশি পরিচালকরা দেশে চলে যাচ্ছেন, এমন গুঞ্জনের মধ্যে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে হস্তক্ষেপ করে বিএসইসি। তাদের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক কোম্পানির ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দেয়। ফলে সে টাকা আর তুলতে পারেনি।
২০ মে বিএসইসি আইপিওর ৪০ কোটি টাকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে নতুন পর্ষদকে। এর মধ্যে ১৫ কোটি টাকা ছাঁটাই করা কর্মীদের দেয়া হবে। ৩ কোটি টাকা দিতে হবে বেজপার পাওনা বাবদ। তিতাস গ্যাসের পাওনা পরিশোধে যাবে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। ১০ কোটি টাকায় পরিশোধ করা হবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণ আর ৬ কোটি টাকা দেয়া হবে ঢাকা ব্যাংককে। এর বাইরে আরও আড়াই কোটি টাকা খরচ হবে বিবিধ খাতে। প্রসপেক্টাসে তহবিল ব্যবহারের যে কথা বলা ছিল, তার বদলে অন্য খাতে ব্যয় করার জন্য আইনি বাধাও দূর করে দিয়েছে কমিশন।
বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির ৫১ শতাংশ শেয়ারধারীদের উপস্থিতিতে সাধারণ সভা করারও অনুমোদন দেয়া হয়। এই টাকার পুরোটাই ব্যয় হবে ব্যাংক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধে। বাকি ১১০ কোটি টাকাও ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হবে ধাপে ধাপে।
২০৮ কোটি টাকার হদিস নেই : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে রিং সাইনের বিষয়ে যেসব তথ্য আছে, তাতে এর রিজার্ভে ২০৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আছে বলে জানানো আছে।
তবে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সগির হোসাইন খন্দকার জানান, তারা এই টাকার কোনো সন্ধান পাননি। তিনি বলেন, ‘ভুয়া পেপারে এ ধরনের কোনো হিসাব থাকলে থাকতে পারে। তবে আমাদের কাছে কোনো হিসাব নেই।’
অন্য এক প্রশ্নে তিনি জানান, আইপিওর দেড় শ কোটি টাকা দেড় বছরও ধরে ব্যাংকে থাকায় কিছু সুদ আয় হয়েছে। তবে যেহেতু যখন প্রয়োজন হবে তখনই তা তোলার উদ্দেশ্যে রাখা ছিল, তাই এই আয় খুব বেশি এমন নয়। কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে দেড় শ কোটি টাকা তোলা ছাড়াও আইপিও প্রক্রিয়ার বাইরে প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে আরও ১৩৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। তবে শেয়ার ইস্যু হলেও সবাই টাকা দেয়নি। এই সব শেয়ার বাজেয়াপ্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন থেকে এসব শেয়ার বাদ দেয়া হবে।
বিনিয়োগকারীরে স্বপ্ন যাদের হাতে: বর্তমানে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক কোম্পানিটি চালাচ্ছেন, যার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মেজবাহ উদ্দিন। সগির হোসাইন খন্দকার ছাড়া পর্ষদের অন্য সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, জনতা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজ আলী, পাওয়ার গ্রিডের স্বতন্ত্র পরিচালক ইসতাক আহমেদ শিমুল এবং অ্যাভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেসের সাবেক মহা ব্যবস্থাপক আব্দুর রাজ্জাক।
তালিকাভুক্তির পরই ভেঙে পরে কোম্পানিটি: প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে তোলা টাকায় যন্ত্রপাতি ক্রয়, ঋণ পরিশোধ এবং আইপিওর খরচ মেটানোর কথা ছিল। তবে সেই টাকা তারা ব্যবহার করার আগেই হস্তক্ষেপ করে বিএসইসি। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করার আগেই ২০১৯ সালের জন্য ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। লভ্যাংশ ঘোষণার পরবর্তী লেনদেনে সার্কিট ব্রেকার থাকবে কি থাকবে না এমন অবস্থায় কোম্পানিটি নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। ১২ ডিসেম্বর কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করে।
পরের বছরের জন্য কোম্পানিটি ১ শতাংশ করে নগদ ও বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে ঘোষণা করে কিন্তু বার্ষিক সাধারণ সভা আর হয়নি। যদিও কোম্পানিটি বিশেষ সাধারণ সভার তারিখ ঘোষণা করে যার উদ্দেশ্য ছিল প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও থেকে তোলা টাকার ব্যবহারের খাত পরিবর্তন। তখন অভিযোগ উঠে, কোম্পানিটির বিদেশি পরিচালকেরা আইপিওর মাধ্যমে তোলা টাকা নিয়ে নিজ দেশে চলে গেছেন। তবে সেটা সত্য প্রমাণ হয়নি। আর বিএসইসির অনুরোধে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানির ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক।
যেভাবে বিপাকে: ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) তাইওয়ানের মালিকানাধীন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রিং সাইন একটি শক্তিশালী কোম্পানি হিসেবেই পরিচিত ছিল। এর শ্রমিকসংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি ছিল।
১৯৯৬ সালে ডিইপিজেডে তাইওয়ানের নাগরিক মি সাও সোয়েটার কারখানাটি চালু করেন। ব্যবসায়িক সাফল্যে একে একে তিনি গড়ে তোলেন অ্যাভাস গার্ড লিমিটেড, সাইন ফ্যাশন লিমিটেড ও ইন্টার লগ লিমিটেড। এসব কারখানায় শ্রমিক ছিল আরও অন্তত সাত হাজার। সমস্যার শুরু পাঁচ বছর আগে। বার্ধক্যজনিত কারণে মি সাও মারা গেলে তার ছেলে মি উইং থিং ও মেয়ে অ্যাঞ্জেলা কারখানাটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু শ্রমিক ফেডারেশন নেতা ও কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে তারা পেরে ওঠেননি।
মালিকদের অভিযোগ, শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে আমদানি করা সুতাসহ নানা উপকরণ পাচার করে দিচ্ছিলেন শ্রমিক ফেডারেশন নেতা ও কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মি সাওয়ের মতো তার সন্তানরা ব্যবসা অতটা ভালো বুঝতেন না। আর এই সুযোগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলেও তথ্য আছে। একপর্যায়ে মি সাওয়ের দুই সন্তান কাউকে না বলে বাংলাদেশ থেকে চলে যান।
মালিকানার বর্তমান হিস্যা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী ৫০০ কোটি টাকার কিছু বেশি পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির শেয়ারসংখ্যা ৫০ কোটি ৩ লাখ ১৩ হাজার ৪৩টি। এই শেয়ারের মধ্যে ৩১ দশমিক ৫৪ শতাংশের মালিকানা উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ শেয়ার। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কিনেছেন দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৫২ দশমিক ১৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক। অর্থাৎ ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা মোট ২৬ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪৫টি শেয়ারের মালিক।
সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের ফি বহুগুণ বাড়ছে: সিকিউটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের নিবন্ধনের জন্য আবেদন ফি থেকে শুরু করে সকল ধরণের ফি এর পরিমাণ বহুগুণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সকল ধরণের ফি বাড়িয়ে প্রস্তাবিত সংশোধনী খসড়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তাবিত সংশোধনীর ওপর মতামত, পরামর্শ বা আপত্তি জানানোর জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নিম্নে মার্চেন্ট ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর বিভিন্ন ধরণের ফি বাড়ানোর প্রস্তাব তুলে ধরা হলো:
সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা ১৯৯৬ এর সংশোধন:
০১। মার্চেন্ট ব্যাংকার নিবন্ধন সার্টিফিকেটের জন্য আগে যেখানে অফেরতযোগ্য ১ হাজার টাকা আবেদন ফি ছিল সেখানে তা বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা হয়েছে। নিবন্ধন সার্টিফিকেটের জন্য ১ লাখ টাকার স্থলে ১০ লাখ টাকা এবং বাৎসরিক ফি ৫০ হাজারের স্থলে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। এর সঙ্গে বিলম্ব ফি ৫০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে।
০২। পোর্টফোলিও ম্যানেজার নিবন্ধন সার্টিফিকেটের জন্য আগে যেখানে অফেরতযোগ্য ১ হাজার টাকা আবেদন ফি ছিল সেখানে তা বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা হয়েছে। নিবন্ধন সার্টিফিকেটের জন্য ১ লাখ টাকার স্থলে ১০ লাখ টাকা এবং বাৎসরিক ফি ৫০ হাজারের স্থলে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে।
এর সঙ্গে বিলম্ব ফি ৫০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। আর যেসকল জায়গায় পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফটের কথা রয়েছে সেখানে নতুন করে পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফট বা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের কথা সংযুক্ত হবে। সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০ এর সংশোধন:
০১। স্টক ডিলার বা স্টক ব্রোকারের ক্ষেত্রে নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তির জন্য ফরম-ক’তে ২০ হাজার টাকার স্থলে ২ লাখ টাকা এবং ফরম-খ’তে ১ হাজার টাকার স্থলে ৫ হাজার টাকা ফিস নির্ধারণ করা হয়েছে।
০২। নিবন্ধন সনদ নবায়নের জন্য ১০ হাজার টাকার স্থলে ৫০ হাজার টাকা। স্টক ডিলার বা স্টক ব্রোকারের ক্ষেত্রে বিলম্ব ফি প্রতিদিনের জন্য ৫০০ টাকার স্থলে ১ হাজার টাকা এবং অনুমোদিত প্রতিনিধির ক্ষেত্রে ১০০ টাকার স্থলে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। ডুপ্লিকেট নিবন্ধন সনদের ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকার স্থলে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আপীলের জন্য ১০০ টাকা ফিসের স্থলে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে। আর যেসকল জায়গায় পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফটের কথা রয়েছে সেখানে নতুন করে পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফট বা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের কথা সংযুক্ত হবে।
পদ্মা লাইফের ২০ পয়সা লভ্যাংশে বাড়ছে ৬২ শতাংশ: চার বছর ধরে লভ্যাংশ না দেয়া জীবন বিমা কোম্পানি পদ্মা লাইফ হঠাৎ করে দুই শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ২০ পয়সা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে দাম বেড়েছে শেয়ারপ্রতি ১১ টাকা ৪০ পয়সা বা ৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটির লভ্যাংশের ইতিহাস কখনও ভালো নয়। তালিকাভুক্তির বছরে ৮ শতাংশ এবং ২০১৬ সালের জন্য ২০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়া ছাড়া আর আর কখনও লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
২০২০ সালের জন্যও কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা না করার পর এপ্রিলের শুরুতে একপর্যায়ে শেয়ারমূল্য কমে ১৬ টাকা ১০ পয়সায় নেমে আসে। ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর বিমা খাতের শেয়ারমূল্যে যে অস্বাভাবিক উত্থান দেখা দেয়, তখন পদ্মা লাইফের শেয়ারদরও কিছুটা বাড়তে থাকে।
এর মধ্যে ২ মে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটি ২০ পয়সা করে অন্তর্র্বতী লভ্যাংশ দেয়ার কথা জানায়। সেদিন শেয়ারমূল্য ছিল ১৮ টাকা ৪০ পয়সা। কোনো কোম্পানির শেয়ার দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে পারে।
তবে লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা ছিল বলে সেদিন দর বৃদ্ধির কোনো সীমা ছিল না। সেদিনই দাম বাড়ে ৪ টাকা ৪০ পয়সা বা ২৪ শতাংশ। পরদিন ৬০ পয়সা কমলেও এর পরের দুই দিনে আবার ১০ শতাংশ দাম বাড়ার প্রান্তসীমা প্রায় ছুঁয়ে যায়। এরপর পাঁচ কার্যদিবস ওঠানামা করে দাম কমে ২ টাকা ৭০ পয়সা। পরে টানা চার কার্যদিবসে দাম আরও বাড়ে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।
কোম্পানিটি যেদিন এই অন্তর্র্বতী লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, সেদিন প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। এ সময় জানানো হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কোম্পানির জীবন বিমা তহবিল ১ কোটি টাকার কিছু বেশি বেড়েছে। আর মোট তহবিল দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে তহবিল কমেছিল ৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর মোট তহবিল ছিল ১২ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
২০১৮ সালের শেষদিকে কোম্পানির মালিকানায় পরিবর্তন আসে। আগের পর্ষদের সদস্যরা তাদের সব শেয়ার বিক্রি করে দেন। ওই বছরের অক্টোবরে মালিকানায় আসে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠন এস আলম গ্রুপ। মালিকানা পরিবর্তনের আগে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে গ্রাহকের বিমা দাবি না দেয়াসহ শতকোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ছিল। আর তাদের বিমা তহবিলও ক্রমাগতভাবে কমতে থাকে। এস আলম গ্রুপের মালিকানায় যাওয়ার পরেও পদ্মা লাইফের স্বাস্থ্যে এমন কোনো অগ্রগতি হয়নি গত আড়াই বছরে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘জীবন বিমা কোম্পানির আয় কত, এ হিসাব করার ক্ষমতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেই বললেই চলে। ফলে জেড ক্যাটাগরির একটি কোম্পানি ২ শতাংশ যে লভ্যাংশ দিল তাতে এর শেয়ারদর কীভাবে এত বাড়তে পারে?’ তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিমার শেয়ারের দর বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করা উচিত নিয়ন্ত্রক সংস্থার।’
কার কাছে কত শেয়ার: কোম্পানির মোট শেয়ারের ৩৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ আছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৫০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটির অর্থবছর নির্ধারণ করা আছে ৩১ ডিসেম্বর।
ভারতের বিমানবন্দরে নিলামে উঠছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ: অবশেষে ভারতে নিলামে উঠছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিমান। ২০১৫ সাল থেকে ১৭০ আসনের ম্যাকডনেল ডগলাসের এমডি-৮৩ মডেলের উড়োজাহাজটি রায়পুরে স্বামী বিবেকানন্দ বিমানবন্দরে পড়ে রয়েছে।
এ সময়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরের বকেয়া পরিশোধ করাতো দূরের কথা, বিমানটি আকাশে উড়ার উপযোগী হওয়া সত্বেও দেশে ফিরিয়ে আনেন নি। অবশেষে দীর্ঘদিন চিঠি দিয়েও উড়োজাহাজটি বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারেনি রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। অবশেষে নিলামে উঠিয়ে নিজেদের টাকা আদায়ের কৌশল অবলম্বন করেছে স্বামী বিবেকানন্দ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে ওমানের মাস্কাট থেকে ঢাকায় ফিরছিল ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজ। পথে ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিলে ভারতের ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের স্বামী বিবেকানন্দ বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। দুদিন পর যাত্রীদের ফেরানো হয় ঢাকায়। তবে নড়চড় হয়নি উড়োজাহাজটির অবস্থান। ছয় বছর ধরে সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে রায়পুর বিমানবন্দরে।
২০১৫ সালে ১৭০ আসনের ম্যাকডনেল ডগলাসের এমডি-৮৩ মডেলের উড়োজাহাজটি রায়পুরে অবতরণ করে। ক্রু-পাইলটসহ যাত্রী ছিল মোট ১৭৩ জন। ঘটনার ২০ দিন পর ইঞ্জিনের সমস্যা দূর করতে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ থেকে ইঞ্জিনিয়ার পাঠানো হয়। তারা উড়োজাহাজটি চলার উপযুক্ত করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উড়োজাহাজটি না নিয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসেন তারা। এরপর তিন বছর পার্কিং বে’তে পড়েছিল সেটি। ২০১৮ সালে বিমানবন্দরের সীমানার ভেতরে পরিত্যক্ত একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজটি।
২০১৫ সাল থেকেই শুরু হয় চিঠি চালাচালি। রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেখানে উল্লেখ করে, রায়পুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি এমনিতেই অনেক ছোট। এখানে একসঙ্গে ছয়টি উড়োজাহাজ রাখার ব্যবস্থা আছে। ইউনাইটেডের পাইলট যখন উড়োজাহাজটি অবতরণের কথা বলেন তখন রানওয়েসহ আশপাশের স্থান খালি করে জরুরি অবতরণের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রতিদান হিসেবে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিমানবন্দরের ‘অবাঞ্ছিত অতিথি’ (আন ওয়েলকাম গেস্ট) হিসেবে কোনো চার্জ না দিয়ে জায়গা দখল করে রেখেছে।
রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রথম বছর ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে ১২টি চিঠি দেওয়া হয়। একটি চিঠির প্রতিউত্তরে ইউনাইটেড ‘দু-তিন মাসের মধ্যে সুরাহা’র কথা বললেও সেটি এখনো হয়নি।
রায়পুর বিমানবন্দরে কোনো উড়োজাহাজ অবস্থান করলে প্রতি ঘণ্টার জন্য পার্কিং চার্জ দিতে হয় ৩২০ ভারতীয় রূপি। বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে তাদের পাওনা এক কোটি ৫৪ লাখ রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ টাকা)। এখন তারা নিলামের মাধ্যমে উড়োজাহাজটি বিক্রি করে সমুদয় টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি তারা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছে।
রায়পুর বিমানবন্দরে কোনো উড়োজাহাজ অবস্থান করলে প্রতি ঘণ্টার জন্য পার্কিং চার্জ দিতে হয় ৩২০ ভারতীয় রূপি।
বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে তাদের পাওনা এক কোটি ৫৪ লাখ রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ টাকা)। এখন তারা নিলামের মাধ্যমে উড়োজাহাজটি বিক্রি করে সমুদয় টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি তারা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছে
রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, সর্বশেষ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চিঠির মাধ্যমে তারা ‘নিলাম প্রক্রিয়ার দিকে এগোনোর’ বিষয়টি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে জানায়। পাশাপাশি এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এএআই) ও রিজিওনাল হেডকোয়ার্টারের (আরএইচকিউ) মাধ্যমে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করে। তবে ওই চিঠিরও জবাব দেয়নি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।
উড়োজাহাজ নিলামের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের নবগঠিত পরিচালনাপর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা গত পাঁচ বছর ধরে অনেকবার যোগাযোগ করেছে সাবেক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তারা কোনো উত্তর দেয়নি। কোনো সাড়াশব্দও দেয়নি।
ফলে রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নিলামের উদ্যোগ নেয়।’ ‘আমরা আসার পর তাদের চিঠি দিয়েছি, অকশন (নিলাম) যাতে না হয়। আমরা তাদের (রায়পুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ) কাছ থেকে ছয় মাস সময় চেয়েছি।
চিঠিতে বলেছি, উড়োজাহাজটি নিলামে না তুলে আমাদের যেন ছয় মাসের সময় দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি বলে তাদের জানিয়েছি। তবে তারা এখনো আমাদের চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি।’