দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মহামারিতে বিশেষ সুবিধা এবং নানা ছাড়ের পরও মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে সরকারি- বেসরকারি ১১টি ব্যাংক। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২ ব্যাংক রয়েছে। মুলত রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি, বিশেষায়িত দুটি ও বেসরকারি চারটি ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের মার্চ শেষে মূলধন সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো হলো রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বেসরকারি খাতের এবি, বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক ও পদ্মা ব্যাংক। এছাড়াও রয়েছে বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত নিয়ে ঋণ দেয়। ঋণ খারাপ হয়ে পড়লে সে অনুপাতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। আবার খারাপ ঋণের ওপর অতিরিক্ত মূলধন রাখার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।

আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতি ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান নিয়মে ব্যাংকগুলোকে ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ অর্থ ন্যূনতম মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। এ শর্ত পূরণে ডিসেম্বর শেষে ব্যর্থ হয়েছে উপরোক্ত ১১টি ব্যাংক।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে ব্যাংকিং খাত ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এটিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছে। এতে করে দেশি ও বৈদেশিক বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত যত দ্রুত সম্ভব এ সংকট উত্তরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, খেলাপিরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিলেও ঋণ পরিশোধ করছে না। আর ঋণ আদায় না হলে ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতি পূরণ করবে কীভাবে। এটি ব্যাংক খাতের জন্য খারাপ দিক।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ সরকারি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এর মূল কারণ তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা ইচ্ছেমতো ব্যাংক চালাচ্ছে। যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ দিচ্ছে। এটি চলতেই থাকবে, যদি না কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন না হয়। এজন্য সবার আগে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। কারণ সরকারি ব্যাংকগুলো রাজনৈতিক প্রভাবে পরিচালিত হয়। কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকও মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। ঋণ আদায়ে এসব ব্যাংকের টার্গেট নির্ধারণ করে দিতে হবে জানিয়ে মির্জ্জা আজিজুল বলেন, একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে তারা সংশোধন না হলে পর্ষদ পরিবর্তন করতে দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিভিন্ন সুবিধার পরও রাষ্ট্রীয় মালিকানার ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটি এখন মূলধন সংকটে আছে। মার্চ মাস শেষে এসব ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। মূলধন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি রয়েছে সোনালীর। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি তিন হাজার ৬৯৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এছাড়া অগ্রণীর দুই হাজার ৯২১ কোটি ৯২ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংকের এক হাজার ৭১ কোটি ৮২ লাখ টাকা, রূপালীর ৭৬১ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং জনতা ব্যাংকের ৪১৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি ১১ হাজার ২২৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ঘাটতি এক হাজার ৫১৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বেসরকারি খাতের চারটি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের। এর ঘাটতি এক হাজার ৬৩১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক এক হাজার ৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স) ৩৮২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং এবি ব্যাংক ১০২ কোটি মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।

জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি তৈরি হলে বাজেট থেকে তার জোগান দিতে হয়। জনগণের করের টাকায় বিভিন্ন সময় মূলধন ঘাটতিতে পড়া ব্যাংকগুলোতে অর্থ জোগান দেয় সরকার। তবে করের টাকায় মূলধন জোগানের বরাবরই বিরোধিতা করে থাকেন অর্থনীতিবিদরা। এ কারণে গত কয়েক বছর ধরে এ অর্থ দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের জোগান দেওয়া অর্থ ও মুনাফার একটি অংশ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। কোনো ব্যাংক মূলধনে ঘাটতি রেখে তার শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বিবেচনায় গত মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর মূলধন রাখার কথা এক লাখ ১৮ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। তবে আপদকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ ব্যাংক খাতে মূলধন রয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এতে করে সার্বিক উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৬ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা টাকা বা ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত যা ছিল ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত মার্চ পর্যন্ত ৬০ ব্যাংকের মধ্যে ৪৬টির মূলধন সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি ছিল। ঘাটতিতে থাকা ১১ ব্যাংকসহ ১৪ ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের পরিমাণ এর কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, কোনো ব্যাংক ন্যুনতম মূলধন বজায় রাখার পর যদি আপদকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়হারে মূলধন রাখতে না পারে, সেই ব্যাংক কোনো নগদ লভ্যাংশ কিংবা বোনাস দিতে পারবে না। তবে কেবল বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি নিয়ে বোনাস শেয়ার ইস্যু করা যায়।

করোনার ধাক্কায় বস্ত্র খাতের ১৬ কোম্পানিতে মুনাফায় ধস: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের ১৬ কোম্পানিতে করোনার ধাক্কা লেগেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কোম্পানিগুলোর আয় কমেছে। কোম্পানিগুলো হলো: অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস, এনভয় টেক্সটাইলস, ইস্কয়ার নিট কম্পোজিট, ফারইস্ট নিটিং এন্ড ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, হামিদ ফ্যাব্রিক্স, কাট্টালী টেক্সটাইল, নুরানী ডায়িং এন্ড সুয়েটার, প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, রিজেন্ট টেক্সটাইল, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, সোনারগাঁও টেক্সটাইলস, জাহিন স্পিনিং এবং জাহিন টেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

করোনার নেতিবাচক পরিস্থিতির কারণে তৃতীয় প্রান্তিকে এসব কোম্পানির আয় কমেছে। এর মধ্যে কিছু কোম্পানি আয় থেকে লোকসানে চলে গেছে। আবার কিছু কোম্পানির লোকসানের পাল্লা ভারি হয়েছে। চলতি মাসেই এসব কোম্পানির ইয়ার ক্লোজিং হবে। আয় কমা ও লোকসান হওয়া কোম্পানিগুলো থেকে ডিভিডেন্ড পাওয়া নিয়ে দু:চিন্তায় রয়েছে বিনিয়োগকারীরা।

গত বছরের মার্চের শেষে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ওই সময় বন্ধ থাকে সরকারী-বেসরকারি সব ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। উৎপাদন বন্ধ থাকায় কোম্পানিগুলো থেকে কর্মীও ছাঁটাই করা হয়। একই সাথে কর্মরত কর্মীদের বেতন-ভাতাও কমানো হয়। দীর্ঘদিন পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে শিল্প কারখান খুলতে থাকে। কিন্ত পুরোপুরি স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে না আসায় সেভাবে মুনাফা করতে পারেনি অনেক কোম্পানি। বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে সবচেয়ে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। করোনার কারণে বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেয় বস্ত্র খাত থেকে। বাতিল হয়ে যায় অনেক অর্ডার। যার প্রভাবে বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

নিচে কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো: অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড : তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৮৩ পয়সা। গত বছর একই সময়ে লোকসান হয়েছিল ১ টাকা ৩৬ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় লোকসান বেড়েছে ৩৬ পয়সা। প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ১১ পয়সা,যা গত বছর ছিল ৪ টাকা ২৫ পয়সা। লোকসান কমেছে ১৪ পয়সা।

দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেড :তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৩ পয়সা। গত বছর একই সময়ে লোকসান দিয়েছিল ১৫ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় লোকসান কমেছে ০২ পয়সা। প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৪৬ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৪৫ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান বেড়েছে ০১ পয়সা।

এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেড :তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছিল ৯১ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় তুলনায় আয় কমেছে ৭০ পয়সা। প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৫৮ পয়সা, গত বছর যা ছিল ২ টাকা ০৬ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় আয় কমেছে ১ টাকা ৪৮ পয়সা।

এস্কোয়ার নিট কম্পোজিট লিমিটেড :তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৬৯ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছিল ৮৬ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় আয় কমেছে ১৭ পয়সা। প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৮৩ পয়সা। গত বছর আয় হয়েছিল ২ টাকা ৪০ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় আয় কমেছে ৫৭ পয়সা।

ফারইস্ট নিটিং এন্ড ডাইয়িং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড :তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২০ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ছিল ২২ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে ০২ পয়সা।

অন্যদিকে, প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩৩ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৩৪ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে ০১ পয়সা।

অন্যদিকে, প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০৩ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২৩ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান কমেছে ০৩ পয়সা।

হামিদ ফ্যাব্রিক্স লিমিটেড :তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৩৪ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১২ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মুনাফা কাটিয়ে লোকসান হয়েছে ৩৪ পয়সা। অন্যদিকে, প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৩১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৭২ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৩১ পয়সা।

কাট্টালী টেক্সটাইল লিমিটেড : তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৯ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৪৬ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে ১৭ পয়সা। অন্যদিকে, প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৯০ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১ টাকা ৪০ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে ৫০ পয়সা।

নুরানী ডায়িং এন্ড সুয়েটার লিমিটেড :তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ২৮ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৬৯ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান কমেছে ৪১পয়সা। অন্যদিকে, প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৯৫ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৪২ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান বেড়েছে ৫৩ পয়সা।

প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস লিমিটেড :তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৩৯ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ০২ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান বেড়েছে ৩৭ পয়সা। অন্যদিকে, প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ১২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ০৬ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান বেড়েছে ২ টাকা ১২ পয়সা।

প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল লিমিটেড : তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৯৭ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১ টাকা ১৫ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে ১৮ পয়সা। অন্যদিকে, প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৪০ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৩ টাকা ৬৪ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে ২৪ পয়সা।

রিজেন্ট টেক্সটাইল লিমিটেড : তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৪৬ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১৪ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান হয়েছে ৪৬ পয়সা। অন্যদিকে, প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৯২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৩৪ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান হয়েছে ৯২পয়সা।

শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড : তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ২১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ০৮ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান হয়েছে ২১ পয়সা। অন্যদিকে, প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৭৯ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৪১ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান হয়েছে ৭৯ পয়সা।

সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড :তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০৬ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ছিল ২৪ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে ১৮ পয়সা। অন্যদিকে, প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৭৬ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১ টাকা ১৯ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় কমেছে ৪৩ পয়সা।

সোনারগাও টেক্সটাইলস লিমিটেড :তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৪১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ০৪ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান হয়েছে ৪১ পয়সা। অন্যদিকে, প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ২৯ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৩৭ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান হয়েছে ১ টাকা ২৯ পয়সা ।

জাহিন স্পিনিং লিমিটেড : তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৩৯ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ০২ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান হয়েছে ১টাকা ৩৯ পয়সা। অন্যদিকে, প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৩৭ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৭৬ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান বেড়েছে ৬১ পয়সা ।

জাহিন টেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড : তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ২২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১ টাকা ৩৩ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান হয়েছে ১১ পয়সা। অন্যদিকে, প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৫২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ২ টাকা ২২ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লোকসান বেড়েছে ৩০ পয়সা।

পুঁজিবাজারের লেনদেন ৩০ গুণ বেড়েছে:  আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুঁজিবাজারের লেনদেন ৩০ গুণ বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার কেমন করে বসে গেল? পুঁজিবাজারে হয়তো লেনদেন নেই। পুঁজিবাজার সম্পর্কে তথ্য রাখেন না, হয়তো সেজন্য বলছেন। যদি ডাটা দেখি, যখন ক্ষমতায় আসি তখন পুঁজিবাজারে লেনদেন এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ছিল। তা এখন পাঁচ গুণ বেড়েছে।

গড় লেনদেন ছিল দৈনিক ২৮ কোটি টাকা যা এখন ৩০ গুণ বেড়েছে। তাহলে ধসে গেল কেমন করে?’ গতকাল সোমবার (৭ জুন) সংসদে মঞ্জুরি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ছাঁটাই প্রস্তাব তোলার সময় বিভিন্ন সংসদ সদস্যের সমালোচনার পর মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশের টাকা-বিরোধীদলের সংসদ সদস্যদের এমন অভিযোগের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘নামগুলো আমাদের দেন। কাজটি করলে আমাদের জন্য সহজ হবে। এখনো অনেকেই জেলে আছে। বিচার হচ্ছে। আগে যেমন ঢালাওভাবে চলে যেত, এখন তেমন নেই। কারা টাকা নিয়ে যায়, লিস্ট আমার কাছে নেই।’

এর আগে মঞ্জুরি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ছাঁটাই প্রস্তাব তোলার সময় বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, ‘স্কুলে অংকে ভালো ছিলাম। শিক্ষকরা আদর করতেন। কিন্তু বাজেটের অংকের হিসাব মেলাতে পারছি না। ঘাটতি কোথায়? কোথা থেকে টাকা আনব? প্রবৃদ্ধির কথা বলছি। করোনাকালীন সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে করোনা নিয়ন্ত্রণে। না হলে প্রবাস আয়, গার্মেন্টর খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রবৃদ্ধির জন্য লাফাচ্ছি।

সূচের ফোটা দিলে বেলুনের মতো চুপসে যাবে। করোনা নিয়ন্ত্রণ না হলে গার্মেন্টস আর প্রবাসী আয় কমে যাবে। করোনা নিয়ন্ত্রণ না করলে ভয়ানক ধস নামবে। শেয়ারবাজার শুয়ে গেছে একেবারে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানৃসত্য কথা বললে সরকারি দলের সদস্যরা বেজার হয়ে চিল্লাচিল্লি করবেন।

দুর্নীতির কারণে আর্থিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা জিরো টলারেনন্স। অর্থমন্ত্রী বললেন, অপ্রদর্শিত আয় নিয়ে। এটা সাংঘর্ষিক। দুর্নীতি, মাদক, অর্থআত্মসাতের মাধ্যমে বিত্ত গড়ে তুললে তাকে সুযোগ দিয়ে ন্যায় করা হবে না। বেহাল দশা থেকে জাতি থেকে মুক্ত করতে হলেৃকরোনাকালীন সময়ে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মেগা প্রকল্প বাদ দেন।’

বিএনপির আরেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, শেয়ারবাজার শুয়ে পড়ে। ৯৬ সালে, ২০০৯ সালে শুয়ে পড়লো। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বললেন, তিনি শেয়ারবাজার বোঝেন না। শেয়ার বাজার ফটকা বাজার। সেই অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট কথা বলতেন, দলের বিপক্ষে গেলেও বলতেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিবারের হাতে ব্যাংক তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনগণের টাকার হরিলুট হচ্ছে।

সংসদে ঋণ খেলাপির তালিকা দেয়া হলো। ৩০০ জন। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হলো? বিদেশে ১ লাখ কোটি টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে। ওভার আর আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে যাচ্ছে। এর বাইরে হুন্ডির পরিমাণ ধরলে আল্লাহ মাবুদ জানেন কত টাকা বিদেশে গেছে!’

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আর্থিক খাতে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্ব সঠিক। কর্তৃত্ব দুর্বল। ব্যাংকে কর্তৃত্ব নেই। কর্তৃত্ব না থাকলে অবাধে এসব হবে। এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংকের টাকা নিচ্ছেন। টাকা নিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ পাঠাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘দুদকের একটি অফিস কানাডায়, মালয়েশিয়ায়, অস্ট্রেলিয়ায় করুন। তাহলে দেখা যাবে কে কত টাকা নিয়েছেন। পিকে হালদার এত টাকা নিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট করলে চুরির করার সুযোগ থাকে না। অর্থমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের বসে কী করবেন। দোষ হয় মন্ত্রীর। অডিট করলে টাকা পাচার হয় না। নয় মিনিটের জন্য পিকে হালদারকে ধরতে পারেনি। তাহলে নয় ঘণ্টা আগে ধরতে পারলেন না কেন?’

জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত, আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্যাতিত এতিমদের মতো। দেখার কেউ নেই। লুটপাট হচ্ছে। দুর্নীতি হচ্ছে। কিছুই হয় না। শাস্তি হয় না।’ এসবের জবাবে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১২ বছরে ঋণের সুদহার ১২.১ ভাগ থেকে কমে ৭.৩ ভাগ হয়েছে।

এখন ব্যাংকের শাখা দ্বিগুণ হয়েছে। চাহিদা বেড়ে গেছে। গ্রামে গ্রামে ব্রাঞ্চ হয়েছে। দেশের মানুষ সেবা পাচ্ছেন। ২০০৬ সালে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১৩.৬ শতাংশ। এখন আট শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৬ সালে টোটাল লোন আউটস্ট্যাডিং ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। যা এখন আটগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।’

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মঞ্জুরি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। ওই সব ছাঁটাই প্রস্তাব তোলার সময় বিরোধী সংসদ সদস্যরা বিদেশে টাকা পাচার, পুঁজিবাজারের অব্যবস্থাপনাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সমালোচনা করেন। এসব সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের কষ্টে অর্জিত টাকা বিদেশে চলে যাবে, আপনাদের যেমন লাগে, আমারও লাগে।

আমি অনিয়ম, বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। আমরা সবাই চাই, এগুলো বন্ধ করতে হবে। বন্ধ হচ্ছে। আগের মতো অবস্থা নেই। আগে সিমেন্টের নাম করে বালি আসতো। একটার নাম করে আরেকটা আসতো। আন্ডারইনভয়েসিং, ওভারইনভয়েসিং আগের মতো হয় না। একদম বন্ধ হয়ে গেছে বলবো না। পত্রপত্রিকায় দেখতে পাই না।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আগামী ছয় থেকে ১২ মাসের মধ্যে ১৫টি আইন দেখতে পারবেন। এগুলো বন্ধ করার জন্য। আমি নিজে জানি কীভাবে এগুলো হয়। কারা করে জানি না। অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, ইনএফেকটিভ ম্যানেজমেন্টের জন্য এগুলো হয়। আমরা সংস্কারমুখী কাজ করবো। নতুন নতুন আইন করবো। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে দায় নিয়ে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করে দেব। কোনো টলারেন্স নেই এখানে। টাকা এখন দেশে আসে।’

পুঁজিবাজারের যুদ্ধ ছয় হাজার ঘরের সূচক: পুঁজিবাজারের যুদ্ধ চলছে ছয় হাজার সূচকে ঘিরে। ছয় হাজারের সূজকের ঘরে গত কয়েক দিন বড় লেনদেন হলেও এ জায়গা থেকে উন্নতি হতে পারছে না। গত রোববার পুঁজিবাজারে রেকর্ড পরিমান লেনদেন হলেও গতকাল সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে সূচকের দরপতনে ছয় হাজারের নিচে চলে আসছে। এ জায়গায় সূচকের একটা মনতাস্তিক যুদ্ধ চলছে।

বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন কেন ছয় হাজারের সূচক বেড়ে বাজার ধরে রাখতে পারছে না। এদিকে এক দশকে সর্বোচ্চ লেনদেনের দিনই যে অস্বস্তি পুঁজিবাজারে দেখা দিয়েছিল, সেটি শঙ্কায় পরিণত হলো পরের দিন। প্রায় আড়াইশ শেয়ারের দরপতনে বড় ধরনের সংশোধন হলো পুঁজিবাজারে।

এপ্রিল থেকে টানা উত্থানে থাকা পুঁজিবাজার ছয় হাজার পয়েন্টের মাইলফলক ছুঁয়ে আসার পর পথ হারানোর দশা। উঠা নামার মধ্যে তিন কার্যদিবস ছয় হাজারের ওপরে থাকার পর আবার সূচক নেমে এল ছয় হাজারের কম। গত সপ্তাহের শুরুতে ছয় হাজার পয়েন্টে পৌঁছার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি হয়। সেখানে সূচক স্থিতিশীল না হওয়া, পাশাপাশি সংশোধনের দিন ব্যাপকভাবে লেনদেন বৃদ্ধির কারণে সেই চাপ আরও বাড়ল।

এ কারণে ২০১০ সালের মহাধসের পর রোববারের সর্বোচ্চ লেনদেনেও বিনিযোগকারীরা খুশি হতে পারেনি। তবে সোমবারের লেনদেনের শেষ দিকে সূচক কিছুটা ফিরে পাওয়া, আর পতনের দিন লেনদেন কমে যাওয়ায় তাও কিছুটা হলেও ইতিবাচকতা খুঁজছেন তোরা।

গত জানুয়ারি মাসেও সূচক পাঁচ হাজার ৯০৯ পয়েন্ট উঠার পর একমন অস্থিরতা দেখা দেয়। আর টাকা প্রায় তিন মাসের দর সংশোধনে এক পর্যায়ে তা নেমে আসে পাঁচ হাজার ৮৮ পয়েন্টে। পরে ৫ এপ্রিল লকডাউনের প্রথম দিন থেকে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। ৩০ মে সূচক দাঁড়ায় ছয় হাজার আট পয়েন্টে। কিন্তু পরের দুই দিন সূচক আবার ছয় হাজারের নিচে নেমে আসে।

এরপর তিন কার্যদিবস আবার ছয় হাজার পয়েন্টের ওপরে থাকার পর সোমবার এক দিনে ৬২ পয়েন্ট হারাল সূচক। ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন শুরু হওয়ার আগে আগে বাজারে লেনদেন স্থগিত হয়ে যাবে, এমন গুজবে গত ৩ এপ্রিল এর চেয়ে বেশি দরপতন দেখেছিল পুঁজিবাজার। রোববার পুঁজিবাজারে লেনদেন ছিল দুই হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। সেদিন সূচক পড়ে ১৫ পয়েন্ট। সোমবার লেনদেন শুরুর পর উঠানামা করতে থাকে সূচক। তবে বেলা একটার পর থেকে কেবল পড়েছেই। এক পর্যায়ে তা ৮৪ পয়েন্ট কমে যায়। তবে শেষ বেলায় এসে সূচক ২২ পয়েন্ট ফিরে পায় পুঁজিবাজার।

বিএসইসি’র নজরদারিতে ফরচুন সুজের লেনদেন: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফরচুন সুজের শেয়ার দও কোন কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। আর এ লেনদেনে কোন অনিয়ম হচ্ছে কি না তা নজরে রেখেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সার্ভেইলেন্স টিম। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, গত চার কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে টানা বেড়ে দাড়িয়েছে ৩১ টাকা ৪০ পয়সা। অর্থাৎ এ সময়ে ৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে আলোচিত কোম্পানিটির শেয়ার দর। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে ডিএসইকে জানানো হয়েছে, আমাদের কাছে কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

অভিযোগ ওঠেছে, টানা ৪ দিন প্রায় ৪০ শতাংশ আলোচিত কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধির পিছনে একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। এর আগেও এই চক্রটি কারসাজি করে এ কোম্পানির শেয়ার দর ৪০ টাকায় লেনদেন করে। সেখান থেকে শেয়ার দর নেমে আসে ১৫ টাকায়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আবারও একইভাবে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে শেয়ার দর বাড়াচ্ছে কারসাজি চক্রটি।

এদিকে সর্বশেষ কোম্পানিটি শেয়ার হোল্ডারদেরকে যে ডিভিডেন্ড দিয়েছে তা এর আগের বছরের তুলনায় অর্ধেক ছিল। অর্থাৎ সর্বশেষ বছরে কোম্পানিটি ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিলো। এর মধ্যে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড। অপরদিকে ২০১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিলো। এর মধ্যে ১৮ শতাংশ স্টক ও ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসইতে গত ১ জুন ফরচুন সুজের শেয়ার দর ছিল ২১ টাকা ৬০ পয়সা। গত রোববার কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৮ টাকা ৬০ পয়সায় উন্নীত হয়। এদিকে গতকাল সোমবার কোম্পানিটির শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করার মতো কোনো বিনিয়োগকারী নেই। আজ লেনদেন চলাকালীন সময় কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, রোববার ফরচুন সুজের শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ২৮ টাকা ৬০ পয়সা। আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়েছে ৩১ টাকা ৪০ পয়সায়। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩১ টাকা ৪০ পয়সা। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ২ টাকা ৮০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার ফরচুন সুজের শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ২৬ টাকায়।

গতকাল রোববার সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৮ টাকা ৬০ পয়সা। অর্থাৎ এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ২ টাকা ৬০ পয়সা বা ১০ শতাংশ বেড়েছিলো। উল্লেখ্য, ফরচুন সুজ লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিকট রয়েছে ৩০ দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৫৭ দশমিক ৩০ শতাংশ শেয়ার।

পুঁজিবাজারে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ চায় বিএমবিএ: পুঁজিবাজারকে আরও গতিশীল করতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো কাটা) বিনিয়োগের সুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। রোববার (৬ জুন) অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবে বিএমবিএ এসব সুপারিশ করে।

বিএমবিএ’র সভাপতি প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা রাখা, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করে ব্যবধান ন্যূনতম ১০ শতাংশ করাসহ চারটি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছি অর্থমন্ত্রীকে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধাসহ চারটি সুবিধা দেওয়া হলে দীর্ঘমেয়াদী সুফল পাওয়া যাবে। বাজার গতিশীল করতে ভূমিকা রাখবে।

পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদী সুফল পেতে বাজেটে পুর্নবিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীর নিকট যেসব বিষয়ে প্রস্তাব জানানো হয়েছে সেগুলো মধ্যে- তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে করের পার্থক্য বাড়ানো। প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের হার ২.৫ শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে। আলোচ্য করের ব্যবধান আরও বাড়ানো হলে ভালো পারফরম্যান্সের কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহ পাবে। তাই তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান বাড়ানোর প্রস্তাব বিএমবিএ’র।

উৎস কর: কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ প্রদানের সময় তার উপর ২০ শতাংশ কর দেয়। অপরদিকে লভ্যাংশ বিতরণের সময় উৎস কর দেয় ১০ শতাংশ। এ দ্বৈত কর কমানোর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবে।

পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ: গত বছর সরকার বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। ফলে এসব অর্থ পুঁজিবাজারে প্রবাহিত হয়েছে। যার ফলে বাজারে লেনদেন বেড়েছে। এবারও যদি সরকার পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয় তাহলে বাজারে অর্থ প্রবাহ অব্যাহত থাকবে। এতে বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি পাবে।

মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো করের হার হ্রাস: পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য করহার ৩০ শতাংশ। কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর জন্য করহার ৩৭.৫০ শতাংশ। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর জন্য করহার হ্রাস করে ৩০ শতাংশ করার মাধ্যমে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের অংশীদার করার প্রস্তাব দিয়েছে বিএমবিএ।

ব্লক মার্কেটে ৪ কোম্পানির লেনদেনের শীর্ষে: সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (৭ জুন) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে ৩২টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির ৪০ কোটি ৪১ লাখ ৩৬ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানিগুলোর ৮৮ লাখ ৭১ হাজার ৮৩৮টি শেয়ার ৬৩ বার হাত বদল হয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর ৪০ কোটি ৪১ লাখ ৩৬ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪ কোম্পানির বড় লেনদেন হয়েছে।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৮৯ লাখ ৯ হাজার টাকার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের ৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার, তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে ফরচুন সুজের, চতুর্থ সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৩৪ লাখ ১৮ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো ফার্মার।

এছাড়া জিবিবি পাওয়ারের ২ কোটি ২০ হাজার টাকার,এসএস স্টিলের ১ কোটি ৯১ লাখ ২৫ হাজার টাকার,অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ১ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকার,পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের ১ কোটি ৬৩ লাখ ২১ হাজার টাকার, বীকন ফার্মার ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার,ন্যাশশনাল হাউজিংয়ের ১ কোটি ১২ লাখ ৯ হাজার টাকার,

সালভো কেমিক্যালের ১ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার,ডাচ বাংলা ব্যাংকের ৭৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার, সাবমেরিন ক্যাবলের ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকার, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৩৬ লাখ ১৬ হাজার টাকার,এনআরবিসি ব্যাংকের ১৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকার,এসকে ট্রিমসের ১৭ লাখ ৯১ হাজার টাকার,বিডি থাইয়ের ১৪ লাখ ৮২ হাজার টাকার,ন্যাশনাল পলিমারের ১৪ লাখ ১৪ হাজার টাকার,

পাওয়ার গ্রীডের ১২ লাখ ৫৩ হাজার টাকার,মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ১০ লাখ ৭২ হাজার টাকার,স্কয়ার ফার্মার ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকার,নর্দান ইন্স্যুরেন্সের ১০ লাখ ১৮ হাজার টাকার,ম্যাকসন্স স্পিনিংয়ের ৮ লাখ ১৭ হাজার টাকার,ওয়ালটনের ৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকার,সাউথইস্ট ব্যাংকের ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকার, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ৭ লাখ ৫২ হাজার টাকার,গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার,

প্রাইম টেক্সটাইলের ৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকার,কাট্টালি টেক্সটাইলের ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার,বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকার, কর্ণফুলি ইন্স্যুরেন্সের ৫ লাখ ৬ হাজার টাকার,মার্কেনটাইল ইন্স্যুরেন্সের ৫ লাখ ১ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

পুঁজিবাজারে হঠাৎ সূচকের বড় সংশোধন: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দীর্ঘ সাড়ে ১০ বছরের মধ্যে রেকর্ড লেনদেন পরিমান লেনদেন হলেও সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে সূচকের বড় ধরনের কারেকশনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন পুঁজিবাজারের সব সূচক কমেছে। একই সাথে লেনদেনে অংশ নেয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। এর সাথে লেনদেন নেমেছে দুই হাজার কোটি টাকায়।

আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬২.৩৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৭৫.৮৯ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৯.৮৮ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৭.৪২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ২৮৯.৪২ পয়েন্টে এবং ২ হাজার ১৯৫.১২ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন ২ হাজার ৮৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ৫৮৬ কোটি ১০ টাকা কম। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৬৬৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার।

ডিএসইতে আজ ৩৬৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৯৮টির বা ২৬.৭০ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ২৪২টির বা ৬৫.৯৪ শতাংশের এবং ২৭টির বা ৭.৩৬ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯১.২৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩১৫.৭৬ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ৩০০টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৬টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৮৭টির আর ২৭টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৯০ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

সাউথবাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের আইপিও আবেদন শুরু ৫ জুলাই: চতুর্থ প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক লিমিটেড প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) আবেদনপত্র ও চাঁদার অর্থ জমা নেওয়া শুরু হবে আগামী ৫ জুলাই থেকে এবং ১১ জুলাই পর্যন্ত চলবে। এসবিএসি ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, আইপিওতে ব্যাংকটি অভিহিত মূল্য তথা ১০ টাকা দামে ১০ কোটি সাধারণ শেয়ার ইস্যু করবে। আর এর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। পুঁজিবাজার থেকে ব্যাংকটি অর্থ উত্তোলন করে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করবে।

২০১৩ সালে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করা সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক গত ৯ মে আইপিওর অনুমোদন পায়। ওইদিন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) তার ৭৭৩তম সভায় এ অনুমোদন দেয়।

সাউথবাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী পুন:মূল্যায়ন ছাড়া নেট অ্যাসেটভ্যালু হয়েছে ১৩.১৮ টাকা। আর ওই বছরের ৯ মাসে ইপিএস হয়েছে ০.৯৪ টাকা। যা বিগত ৫ বছরের ভারিত গড় হারে হয়েছে ১.২৪ টাকা। আইপিওতে ব্যাংকটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।

দরপতন পুঁজিবাজারে আট কোম্পানির শেয়ার বিক্রেতা উধাও: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আট কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করার মতো কোনো বিনিয়োগকারী নেই। আজ (০৭ জুন) লেনদেন চলাকালীন সময় কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্যজানা গেছে। কোম্পানিগুলোর হলো : ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, আমান কটন ফাইবার্স, লুব-রেফ, আমান ফিড, ফরচুন সুজ, সালভো কেমিক্যাল, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং এবং রিংশাইন টেক্সটাইল।

ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স: রোববার ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্সের শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ৪০ টাকায়। আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়েছে ৪১ টাকায়। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৪ টাকায়। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪ টাকা বা ১০ শতাংশ বেড়েছে।

লুব-রেফ : রোববার লুব-রেফের শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ৪৩.৬০ টাকায়। আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়েছে ৪৪ টাকায়। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৭.৯০ টাকায়। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪.৩০ টাকা বা ৯.৮৬ শতাংশ বেড়েছে।

আমান কটন ফাইবার্স : আমান কটন ফাইবার্সের শেয়ারের ক্লোজিং দর রোববার ছিল ৩৯.৭০ টাকায়। আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়েছে ৩৯.২০ টাকায়। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৩.৬০ টাকায়। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩.৯০ টাকা বা ৯.৮২ শতাংশ বেড়েছে।

আমান ফিড : আমান ফিডের শেয়ারের ক্লোজিং দর রোববার ছিল ৩৯.৮০ টাকায়। আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়েছে ৩৯.৬০ টাকায়। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৩.৭০ টাকায়। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩.৯০ টাকা বা ৯.৭৯ শতাংশ বেড়েছে।

ফরচুন সুজ : রোববার ফরচুন সুজের শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ২৮.৬০ টাকায়। আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়েছে ৩১.৪০ টাকায়। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩১.৪০ টাকায়। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ২.৮০ টাকা বা ৯.৭৯ শতাংশ বেড়েছে।

সালভো কেমিক্যাল: রোববার সালভো কেমিক্যালের শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ১৯.৪০ টাকায়। আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়েছে ১৯.৬০ টাকায়। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১.৩০ টাকায়। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ১.৯০ টাকা বা ৯.৭৯ শতাংশ বেড়েছে।

আনোয়ার গ্যালভানাইজিং : রোববার আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ১৩৯.৫০ টাকায়। আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়েছে ১৪০.১০ টাকায়। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫৩.৪০ টাকায়। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৩.৯০ টাকা বা ৯.৯৬ শতাংশ বেড়েছে।

রিংশাইন টেক্সটাইল : রোববার রিংশাইন টেক্সটাইলের শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ৭.৭০ টাকায়। আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়েছে ৭.৬০ টাকায়। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮.৪০ টাকায়। অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ০.৭০ টাকা বা ৯.০৯ শতাংশ বেড়েছে।

তিন সরকারি সংস্থার ৩৫৬ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে বেক্সিমকো: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো লিমিটেডের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সম্প্রতি ৩টি সরকারি সংস্থার কাছ থেকে মোট ৩৫৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। আজ রোববার (৬ জুন) দোহাটেক নিউ মিডিয়া ও ডটগভ সল্যুশন্স এলএলসি, ইউএসএ-এর সঙ্গে যৌথভাবে বেক্সিমকো লিমিটেড ৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ’ এর সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির আওতায় যৌথভাবে একটি আধুনিক পূর্ণাঙ্গ ইলেক্ট্রনিক প্রকল্প ব্যবস্থাপনা তথ্য সিস্টেম বা ই-পিএমআইএস তৈরি করবে এই তিন কোম্পানি।

এছাড়া ভারতের টেক মাহিন্দ্রা লিমিটেড ও বাংলাদেশের টেক ভ্যালে নেটওয়ার্কস লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে ২৬১ কোটি টাকা মূল্যের অনলাইন খাদ্য ভান্ডার ও বাজার নজরদারি সিস্টেম প্রস্তুতের কাজ পেয়েছে বেক্সিমকো। বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে শিগগিরই উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

গত মাসে ৪৮ কোটি টাকা মূল্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের দুইটি প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়েছে বেক্সিমকো কম্পিউটার্স লিমিটেড। প্রথম প্রকল্পের অংশ হিসেবে মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সাইয়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এমআইএসটি) একটি সাইবার রেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করা হবে। দ্বিতীয় প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশনে একটি তথ্যপ্রযুক্তি ল্যাব স্থাপন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে সরকার দেশের ডিজিটাল রূপান্তরের যে যাত্রা শুরু করেছে, তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও অবদান রাখতে বেক্সিমকোর অঙ্গীকারকে সাম্প্রতিক এসব সাফল্য শক্তিশালী করবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।