দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন শেয়ারবাজারের উন্নয়নে অনেক কাজ করছেন। যা বিনিয়োগকারীসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

বৃহস্পতিবার দেশের শেয়ারবাজারে এসএমই বোর্ডে প্রথম কোম্পানি হিসেবে নিয়ালকো এলয়েজের লেনদেনের উদ্ভোধনীতে তিনি এ কথা বলেন। এসময় সিএসইর পরিচালনা পর্ষদ, নিয়ালকো এলয়েজের পর্ষদ ও ইস্যু ম্যানেজার এমটিবি ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

আসিফ ইব্রাহিম বলেন, নতুন কমিশন তাদের মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। যার প্রভাব শেয়ারবাজারে দেখতে পাচ্ছি। তাদের নেতৃত্বে বাজারে গতিশীলতা তৈরী হয়েছে। ভবিষ্যতে শেয়ারবাজারের প্রবৃদ্ধি আরও নিশ্চিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। একইসঙ্গে তাদের দক্ষতায় উন্নত শেয়ারবাজার গড়তে সক্ষম হবেন বলে যোগ করেন তিনি।

এসময় দেশের এসএমই খাতকে এগিয়ে নিতে সরকার কাজ করছে বলে জানান সিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, সরকার এই খাতকে উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। আর সেই এসএমই খাতের কোম্পানি হিসেবে নিয়ালকো এলয়েজ সিএসইতে তথা পুরো দেশে প্রথমবারের মতো এসএমই বোর্ডে লেনদেন শুরু হল। যার সাক্ষী হয়ে রইল সিএসই।

উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল বিএসইসির ৭৭০তম সভায় প্রথম কোম্পানি হিসেবে নিয়ালকো এলয়েজ লিমিটেডকে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপিটাল কোম্পানিজের (কিউআইও) মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। এ কোম্পানিটি কিউআইও’র মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করে। ২০১৮ সালের রুলস অনুযায়ী কোম্পানিটি প্রতিটি ১০ টাকা করে ৭৫ লাখ শেয়ার যোগ্য বিনিয়োগাকারীদের নিকট ইস্যুর মাধ্যমে এই টাকা উত্তোলন করে।

এলক্ষ্যে কোম্পানিটির কিউআইওতে আবেদন গ্রহণ ১৬ মে শুরু হয়ে চলে ২০ মে পর্যন্ত। উত্তোলিত অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি ভূমি উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করবে। কোম্পানিাটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেড।

সপ্তাহজুড়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষ ৭ কোম্পানি: সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স, ফরচুন সুজ, ন্যাশনাল ফিড মিল, সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স, ইফাদ অটোস, সোনারবাংলা ইন্সুরেন্স, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও গ্লোবাল ইন্সুরেন্স লিমিটেড। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আলোচ্য সপ্তাহে শীর্ষ লেনদেনের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সপ্তাহান্তে ৭টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। তাই সাধারণভাবে মনে হয়, সপ্তাহজুড়ে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনেছেন। যে কারণে কোম্পানিগুলোর লেনদেন বৃদ্ধি ছিল যেমন চোখে পড়ার মতো, তেমনি দরেও ছিল ঊর্ধ্বমুখী ভাব। কিন্তু সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের যেমন চাহিদা বা কেনার ক্রেজ দেখা গেছে, সপ্তাহের শেষদিন তেমনটা ছিল না। বরং এদিন কেনার চেয়ে বিক্রি করার প্রবণতাই বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

এর মধ্যে বেক্সিমকো, ফরচুন সুজ ও ন্যাশনাল ফিড মিলের ক্ষেত্রে চিত্র কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল। সপ্তাহের শেষদিনও কোম্পানি ৩টির দর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ছিল। তারপরও কোম্পানি ৩টির দর সর্বোচ্চ দরে থাকায় শেষদিনে লেনদেনের শুরুতে যতটা শক্তি নিয়ে ঊর্ধ্বমখী হয়েছিল, শেষদিকে তারচেয়ে বেশি শক্তি নিয়ে নিম্নমুখী হয়েছে। এতে ধারণা করা যায়, এই তিন কোম্পানির শেয়ারেও সেল প্রেসার হয়তো অনিবার্য হয়ে দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, সপ্তাহের শেষদিন পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স, সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স, ইফাদ অটোস, সোনারবাংলা ইন্সুরেন্স ও গ্লোবাল ইন্সুরেন্সের শেয়ারে সেল প্রেসারের কারণে ছিল বড় আতঙ্ক। লেনদেনের শেষভাগে কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ছিল প্রায় ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।

বেক্সিমকো লিমিটেড: গেল সপ্তাহে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০৮০ কোটি ৭৩ লাখ ১৬ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় এই কোম্পানির অবস্থান ছিলো প্রথম। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৮৭ টাকা ৭০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ৯৬ টাকা ৪০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে দর বেড়েছে ৮ টাকা ৫০ পয়সা বা ৯.৬৯ শতাংশ। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেও কোম্পানিটির শেয়ার দর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ছিল।

লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স: বিদায়ী সপ্তাহে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩০০ কোটি ৬৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় এই কোম্পানির অবস্থান ছিলো ২য়। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৩৬ টাকা ৩০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ৩৭ টাকা ৬০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে দর বেড়েছে ১ টাকা ৩০ পয়সা বা ৩.৫৮ শতাংশ। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর নিম্নমুখী প্রবণতায় ছিল।

ন্যাশনাল ফিড মিল: গেল সপ্তাহে লঙ্কাবাংলা ন্যাশনাল ফিডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭২ কোটি ৭০ লাখ ৬২ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় এই কোম্পানির অবস্থান ছিলো ৫ম। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৩২ টাকা ৬০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ৩৫ টাকা ৪০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে দর বেড়েছে ২ টাকা ৮০ পয়সা বা ৮.৫৮ শতাংশ। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর নিম্নমুখী প্রবণতায় ছিল।

পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স: গেল সপ্তাহে পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় এই কোম্পানির অবস্থান ছিলো তৃতীয়। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ১৫৭ টাকা ৩০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ১৯৩ টাকা ৯০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে এর দর বেড়েছে ৩৬ টাকা ৬০ পয়সা বা ২৩.২৬ শতাংশ। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর নিম্নমুখী প্রবণতায় ছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড দরে লেনদেন হচ্ছে।

ফরচুন সুজ: গেল সপ্তাহে ফরচুন সুজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৫৮ কোটি ৩৭ লাখ ২৪ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় এই কোম্পানির অবস্থান ছিলো চতুর্থ। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ২৬ টাকা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ৩৯ টাকা ৩০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে দর বেড়েছে ১৩ টাকা ৩০ পয়সা বা ৫১.১৫ শতাংশ।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেও কোম্পানিটির শেয়ার দর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ছিল। গত ১ জুন কোম্পানিটির দর ছিল ২১ টাকা ৬০ পয়সা। বৃহস্পতিবার দর হয়েছে ৩৯ টাকা ৩০ পয়সা। ৮ কার্যদিবসে টানা দর বেড়েছে ১৭ টাকা ৭০ পয়সা বা ৮১.৯৪ শতাংশ।

সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স: গেল সপ্তাহে সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় এই কোম্পানির অবস্থান ছিলো ৬ষ্ট। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৪১ টাকা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ৪৬ টাকা। আগের সপ্তাহের চেয়ে দর বেড়েছে ৫ টাকা বা ১২.১৯ শতাংশ। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর নিম্নমুখী প্রবণতায় ছিল।

সোনারবাংলা ইন্সুরেন্স: গেল সপ্তাহে সোনারবাংলা ইন্সুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৬৬ কোটি ১৭ লাখ ৭১ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় এই কোম্পানির অবস্থান ছিলো অষ্টমে। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৯৮ টাকা ১০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ১১৪ টাকা ৪০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে দর বেড়েছে ১৬ টাকা ৩০ পয়সা বা ১৬.৬১ শতাংশ। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর নিম্নমুখী প্রবণতায় ছিল।

প্রধানমন্ত্রীর করোনা তহবিলে সাইফ পাওয়ারটেকের ২ কোটি টাকা অনুদান: প্রধানমন্ত্রীর করোনা সহায়তা তহবিল ও হাউজ কনস্ট্রাকশন ফান্ড বাই প্রাইভেট ফাইনান্সে ২ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে দেশের বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ও চট্টগ্রাম বন্দরের শীর্ষ টার্মিনাল অপারেটর মেসার্স সাইফ পাওয়ারটেক।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসের হাতে ২ কোটি টাকার চেক তুলে দেন সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন। দেশের প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দেওয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তরফদার মো. রুহুল আমিন।