দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স, ফরচুন সুজ, ন্যাশনাল ফিড মিল, সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স, ইফাদ অটোস, সোনারবাংলা ইন্সুরেন্স, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও গ্লোবাল ইন্সুরেন্স লিমিটেড। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আলোচ্য সপ্তাহে শীর্ষ লেনদেনের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সপ্তাহান্তে ৭টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। তাই সাধারণভাবে মনে হয়, সপ্তাহজুড়ে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনেছেন। যে কারণে কোম্পানিগুলোর লেনদেন বৃদ্ধি ছিল যেমন চোখে পড়ার মতো, তেমনি দরেও ছিল ঊর্ধ্বমুখী ভাব। কিন্তু সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের যেমন চাহিদা বা কেনার ক্রেজ দেখা গেছে, সপ্তাহের শেষদিন তেমনটা ছিল না। বরং এদিন কেনার চেয়ে বিক্রি করার প্রবণতাই বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

এর মধ্যে বেক্সিমকো, ফরচুন সুজ ও ন্যাশনাল ফিড মিলের ক্ষেত্রে চিত্র কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল। সপ্তাহের শেষদিনও কোম্পানি ৩টির দর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ছিল। তারপরও কোম্পানি ৩টির দর সর্বোচ্চ দরে থাকায় শেষদিনে লেনদেনের শুরুতে যতটা শক্তি নিয়ে ঊর্ধ্বমখী হয়েছিল, শেষদিকে তারচেয়ে বেশি শক্তি নিয়ে নিম্নমুখী হয়েছে। এতে ধারণা করা যায়, এই তিন কোম্পানির শেয়ারেও সেল প্রেসার হয়তো অনিবার্য হয়ে দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, সপ্তাহের শেষদিন পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স, সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স, ইফাদ অটোস, সোনারবাংলা ইন্সুরেন্স ও গ্লোবাল ইন্সুরেন্সের শেয়ারে সেল প্রেসারের কারণে ছিল বড় আতঙ্ক। লেনদেনের শেষভাগে কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ছিল প্রায় ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।

বেক্সিমকো লিমিটেড: গেল সপ্তাহে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০৮০ কোটি ৭৩ লাখ ১৬ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় এই কোম্পানির অবস্থান ছিলো প্রথম। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৮৭ টাকা ৭০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ৯৬ টাকা ৪০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে দর বেড়েছে ৮ টাকা ৫০ পয়সা বা ৯.৬৯ শতাংশ। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেও কোম্পানিটির শেয়ার দর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ছিল।

লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স: বিদায়ী সপ্তাহে লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩০০ কোটি ৬৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় এই কোম্পানির অবস্থান ছিলো ২য়। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৩৬ টাকা ৩০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ৩৭ টাকা ৬০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে দর বেড়েছে ১ টাকা ৩০ পয়সা বা ৩.৫৮ শতাংশ। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর নিম্নমুখী প্রবণতায় ছিল।

ন্যাশনাল ফিড মিল: গেল সপ্তাহে লঙ্কাবাংলা ন্যাশনাল ফিডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭২ কোটি ৭০ লাখ ৬২ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় এই কোম্পানির অবস্থান ছিলো ৫ম। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৩২ টাকা ৬০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ৩৫ টাকা ৪০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে দর বেড়েছে ২ টাকা ৮০ পয়সা বা ৮.৫৮ শতাংশ। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর নিম্নমুখী প্রবণতায় ছিল।

পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স: গেল সপ্তাহে পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় এই কোম্পানির অবস্থান ছিলো তৃতীয়। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ১৫৭ টাকা ৩০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ১৯৩ টাকা ৯০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে এর দর বেড়েছে ৩৬ টাকা ৬০ পয়সা বা ২৩.২৬ শতাংশ। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর নিম্নমুখী প্রবণতায় ছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড দরে লেনদেন হচ্ছে।

ফরচুন সুজ: গেল সপ্তাহে ফরচুন সুজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৫৮ কোটি ৩৭ লাখ ২৪ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় এই কোম্পানির অবস্থান ছিলো চতুর্থ। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ২৬ টাকা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ৩৯ টাকা ৩০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে দর বেড়েছে ১৩ টাকা ৩০ পয়সা বা ৫১.১৫ শতাংশ।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেও কোম্পানিটির শেয়ার দর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ছিল। গত ১ জুন কোম্পানিটির দর ছিল ২১ টাকা ৬০ পয়সা। বৃহস্পতিবার দর হয়েছে ৩৯ টাকা ৩০ পয়সা। ৮ কার্যদিবসে টানা দর বেড়েছে ১৭ টাকা ৭০ পয়সা বা ৮১.৯৪ শতাংশ।

সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স: গেল সপ্তাহে সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় এই কোম্পানির অবস্থান ছিলো ৬ষ্ট। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৪১ টাকা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ৪৬ টাকা। আগের সপ্তাহের চেয়ে দর বেড়েছে ৫ টাকা বা ১২.১৯ শতাংশ। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর নিম্নমুখী প্রবণতায় ছিল।

সোনারবাংলা ইন্সুরেন্স: গেল সপ্তাহে সোনারবাংলা ইন্সুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৬৬ কোটি ১৭ লাখ ৭১ হাজার টাকার। সাপ্তাহিক লেনদেনের তালিকায় এই কোম্পানির অবস্থান ছিলো অষ্টমে। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৯৮ টাকা ১০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ১১৪ টাকা ৪০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে দর বেড়েছে ১৬ টাকা ৩০ পয়সা বা ১৬.৬১ শতাংশ। তবে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর নিম্নমুখী প্রবণতায় ছিল।

বাজেটে পরবর্তী ৩ খাতের শেয়ারে লন্ডভন্ড: আগামী অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রায় সব ধরনের কোম্পানিকে কর ছাড় সুবিধা দেয়া হয়েছে। বছর শেষে ছাড় পাওয়া খাতের কোম্পানিগুলোর মুনাফা আরও বাড়তে পারে। তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানির শেয়ারের প্রতি ঝুঁকতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। অপরদিকে ব্যাংক, এনবিএফআই ও বিমা কোম্পানিগুলোকে দেয়া হয়নি কোনো কর ছাড় সুবিধা।

তাই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকেই এসব খাতের শেয়ার বিক্রি শুরু করেছেন। পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও বিমা খাতের শেয়ারসংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় কিছুটা বিক্রয় চাপ বাড়ে পুঁজিবাজারে। এর ফলে পুরো সপ্তাহে বিক্রয় চাপ দেখা গেছে। এতে লেনদেন বৃদ্ধি পায় আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অবশ্য এই সময়ে বৃদ্ধি পায় অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। ফলে বাজার মূলধনও আগের সপ্তাহের চেয়ে ৯৯০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পায়।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক লেনদেন চিত্র বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। গত ১০ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহটিতে বিক্রয় চাপে ছিল ব্যাংক, সিমেন্ট, পাট, টেলিকম, জ্বালানি ও খাদ্য খাতের শেয়ারদর, যা কমে যায় আগের সপ্তাহের চেয়ে।

অধিকাংশ শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধিতে গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর সব মূল্য সূচকই বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিএসইর তথ্য বলছে, গত সপ্তাহ শেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বৃদ্ধি পেয়েছে আগের চেয়ে ১৩ দশমিক ২১ পয়েন্ট, ডিএস৩০ সূচক এক দশমিক ৫১ পয়েন্ট ও শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস বেড়েছে ছয় দশমিক ৩১ পয়েন্ট। গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৭৫টি কোম্পানি ও ইউনিট ফান্ড অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ২১১টির, কমে ১৪২টির, অপরিবর্তিত ছিল ১৮টির ও লেনদেন হয়নি চারটির।

বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা মহামারিতে কোম্পানিগুলো ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। কিন্তু বছরের শেষের দিকে মহামারি পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হলে ব্যবসায় ফেরে কোম্পানিগুলো। বছর শেষে ব্যাংক, খাদ্য, ওষুধসহ কয়েকটি খাতের কোম্পানি আশাব্যঞ্জক লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত ছিল অন্যতম।

এ কারণে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ব্যাংক খাতের শেয়ারদর বৃদ্ধি পেতে থাকে। অভিহিত দরের নিচে থাকা অনেক ব্যাংকেরই শেয়ারদর বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে অভিহিত দরকে ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে তালিকভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র তিনটি অভিহিত শেয়ার মূল্যের নিচে রয়েছে।

গত ৩ জুন আগামী অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এতে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা খাতের কোম্পানির জন্য কোনো করছাড় সুবিধা দেওয়া হয়নি। এর ফলে হতাশ হয়ে যান বিনিয়োগকারীরা। ধীরে ধীরে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন অনেকেই। বিক্রয় চাপে কমে যায় শেয়ারদর। গত সপ্তাহ শেষে আগের চেয়ে ব্যাংক খাতের শেয়ারদর কমে যায় চার দশমিক ছয় শতাংশ। একইভাবে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায় পাট খাতে তিন দশমিক এক শতাংশ, সিমেন্টে এক দশমিক পাঁচ শতাংশ, খাদ্যে এক দশমিক চার শতাংশ এবং টেলিকমে এক দশমিক তিন শতাংশ।

অপরদিকে আলোচিত সময়ে সর্বোচ্চ গেইনারে ছিল বস্ত্র খাত ১০ দশমিক তিন শতাংশ। এছাড়া ট্যানারিতে আট দশমিক পাঁচ শতাংশ, আইটিতে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ, সিরামিকে ছয় দশমিক আট শতাংশ, জীবন বিমা খাতে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ ও প্রকৌশল খাতে চার দশমিক সাত শতাংশ গেইনারে ছিল। ডিএসইর মোট লেনদেনে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক তিন শতাংশ অবদান রাখে সাধারণ বিমা খাত। এরপরই বস্ত্র খাত ১২ দশমিক ছয় শতাংশ, প্রকৌশল ১০ দশমিক চার শতাংশ, ব্যাংক আট দশমিক ছয় শতাংশ, এনবিএফআই ছয় দশমিক সাত শতাংশ ও জীবন বিমা খাত চার দশমিক আট শতাংশ অবদান রাখে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী একক কোম্পানি হিসেবে গত সপ্তাহ শেষে সর্বোচ্চ শেয়রদর বৃদ্ধি পায় ফরচুন শুজ লিমিটেডের। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ৫১ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া শেয়ারদর বৃদ্ধিতে শীর্ষ দশে উঠে আসে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, রিং শাইন টেক্সটাইলস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, সাফকো স্পিনিংস মিলস, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, নুরানি ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার, দেশ গার্মেন্টস, আনওয়ার গ্যালভানাইজিং ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

অপরদিকে এই সময়ে শেয়ারদর বিবেচনায় একক কোম্পানি হিসেবে সর্বোচ্চ লোকসান গুনে ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংক ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া লোকসান গুনতে দেখা যায় সাউথইস্ট ব্যাংক, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বিডি, এক্সিম ব্যাংক, জনতা ইন্স্যুরেন্স, এবি ব্যাংক, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, জিবিবি পাওয়ার ও নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে।

বস্ত্র খাতের লোকসানি ১০ কোম্পানির শেয়ার ঝুঁকিতে: পুঁজিবাজারে বিমা খাতের মতো এবার বস্ত্র খাতেও যাচাই বাছাই ছাড়া ঢালাও দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। জুনে অর্থবছর শেষ হবে। এই পরিস্থিতিতে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে, এমন কোম্পানির দাম বাড়া অস্বাভাবিক না হলেও সেসব কোম্পানি থেকে লভ্যাংশ আসবে না, বরং অস্তিত্ব সংকটে আছে, এমন কোম্পানির দামও বাড়ছে। এটির পেছনে কোনো কারসাজি থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুঁজিবাজারে নিয়মিত লভ্যাংশ দেয়, আয় ভালো, শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য বেশ আকর্ষণীয়, এমন মৌলভিত্তির অনেক কোম্পানিই অভিহিত মূল্যের আশেপাশে রয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এগুলোর বদলে শেয়ার সংখ্যা কম- এমন কোম্পানির প্রতি আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। প্রায়ই দেখা যায়, এসব লোকসানি কোম্পানির দাম একদিনে যত বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়ে সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে যাচ্ছে।

পুঁজিবাজারে কোনো শেয়ার এক দিনে কী পরিমাণ বাড়তে বা কমতে পারে, তাকে বলে সার্কিট ব্রেকার। লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়া, এই সার্কিট ব্রেকার থাকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। তবে ১০ পয়সা করে বাড়া বা কমার সুযোগ থাকায়, তখনও কখনও শতকরা হিসেবে কিছুটা কম বাড়তে বা কমতে পারে। গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলে বন্ধ হয়ে যায় পুঁজিবাজারের লেনদেন। ৬৬ দিন পর জুলাইয়ে লেনদেন চালু হলে বিমা খাতে দেখা যায় ঢালাও দর বৃদ্ধির প্রবণতা।

চালু থাকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর ৫ এপ্রিল লকডাউন থেকে বিমায় দ্বিতীয় দফা দাম বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দেয়। গত এক বছরে একটি কোম্পানির শেয়ার দর ১০ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। তিন থেকে আট গুণ পর্যন্ত বেড়েছে বাকিগুলোর। বিমার শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত সপ্তাহের শেষে বস্ত্র খাতেও বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এই খাতে মোট ৫৬টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত পুঁজিবাজারে। এর মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিক ঘোষণা করেছে, এমন ২০টি কোম্পানি ব্যাপক লোকসানে আছে। দ্বিতীয় প্রান্তিক ঘোষণা করা আছে, এমন আরও দুটি কোম্পানিও লোকসানের কারণে লভ্যাংশ দিতে পারবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মুনাফায় থাকা কোম্পানির পাশাপাশি ঢালাও দাম বাড়ছে এসব লোকসানি কোম্পানিরও।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কিছু আইনি সংস্কার হয়েছে। কারসাজির অভিযোগে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বড় অংকের জরিমানাও করা হয়েছে। তবে বিমা খাতে অস্বাভাবিক উত্থান নিয়ে কোনো তদন্তের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি সংস্থাটিকে।

সংস্থাটির মুখপাত্র রেজাউল করিম একাধিকবার বলেছেন, শেয়ারের দাম বাড়বে কি কমবে, এটা দেখা তাদের দায়িত্ব নয়। তারা কেবল দেখবেন, কোনো গুজব ছড়িয়ে বা অনিয়ম করে দাম বাড়ানো হয়েছে কি না, এমন কোনো অভিযোগ এখনও তারা পাননি। বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম সম্প্রতি বলেছেন, ভুল শেয়ারে বিনিয়োগ করলে সে দায়িত্ব বিএসইসি নেবে না।

গত ৩১ মে এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘কমিশন কখনও নির্ধারণ করতে পারে না কোন শেয়ারের দর বাড়বে, কোনটির দর কমবে। তাই ভুলে শেয়ার কেনার দায় কমিশনের না।’ সবচেয়ে বিস্ময়কর উত্থান হয়েছে এই কোম্পানিটির । ২০১৫ সালের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিটি ২০১৮ সালের পর আর কোনো হিসাবও দেয়নি। কিন্তু গত ১১ এপ্রিল থেকে আকাশে উঠে যেতে চাইছে দাম। সেদিন দাম ছিল ৭ টাকা ৪০ পয়সা। এখন দাম ১৭ টাকা ৩০ পয়সা। দাম বেড়েছে ১৩৩ শতাংশের বেশি।

জেনারেশন নেক্সট: সামান্য কিছু মুনাফা করার পর গত দুই বছর ধরে লভ্যাংশ দিতে না পারা চলতি বছর তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৩ পয়সা। গত ২৯ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৩ টাকা। সেখান থেকে ৭০ শতাংশ বেড়ে বৃহস্পতিবার দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ১০ পয়সা। বুধবার দাম ছিল ৪ টাকা ৭০ পয়সা। এক দিনে বাড়া সম্ভব ছিল ৪০ পয়সা, তাই বেড়েছে বৃহস্পতিবার।

ইভেন্স টেক্সটাইল: তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ১৪ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটির দাম গত ৪ মে ছিল ৬ টাকা ৭০ পয়সা। সেখান থেকে এক মাসে ৫৫ শতাংশ বেড়ে দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৪০ পয়সা।

সাফকো স্পিনিং: গত ২৯ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য ছিল ৯ টাকা ৭০ পয়সা। সেখান থেকে হঠাৎ করেই বাড়তে বাড়তে দাম পৌঁছে ১৬ টাকা ৪০ পয়সা। এই দাম বাড়ার পেছনে দৃশ্যত কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। উল্টো যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, তাতে শেয়ার দামে এমন উত্থান হওয়ার কথা ছিল না।

কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি দুই টাকা ৯ পয়সা আর দ্বিতীয় প্রান্তিকে দুই টাকা ৪৩ পয়সা লোকসান দিয়েছিল। তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি সাড়ে পাঁচ পয়সা মুনাফা করার পরেও জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে লোকসান দাঁড়িয়েছে চার টাকা ৪৩ পয়সা। চতুর্থ প্রান্তিকে অভাবনীয় কিছু না ঘটলে এই কোম্পানি থেকে এবার মুনাফার আশা না করাই ভালো।

বৃহস্পতিবার এক লাফে ১০ শতাংশ দাম বাড়া জাহিন স্পিনিং মিলও বছরের তিন প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ার প্রতি লোকসানে আছে এক টাকা ৩৭ পয়সা। ডুবন্ত এই কোম্পানিতে আগ্রহ থাকার কথা ছিল না কারও। কিন্তু গত ২৮ এপ্রিল থেকে দাম বেড়ে প্রায় দেড়গুণ হয়ে গেছে। সেদিন দাম ছিল শেয়ার প্রতি ৫ টাকা। আর সেখান থেকে বেড়েছে ৫৪ শতাংশ।

রিজেন্ট টেক্সটাইল: তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ৯২ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটির শেয়ার দরও গত বৃহস্পতিবার মূল্য বৃদ্ধির প্রান্তসীমা ছুঁয়েছে।

গত ২৮ এপ্রিল শেয়ার দাম ছিল ৭ টাকা ২০ পয়সা। এখন দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৪০ পয়সা। এই কয় দিনে বেড়েছে ৪৪.৪৫ শতাংশ।
তাল্লু স্পিনিং মিলস: ২০১৫ সালের পর থেকে লভ্যাংশ না দেয়া ২০১৯ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে হিসাব দেয়ার পর দুই বছর আর কোনো হিসাবও দিচ্ছে না। দাম বেড়েছে এই কোম্পানিটিরও।

গত ৪ মে থেকে কোম্পানির শেয়ার মূল্য বেড়েছে ৩৩.৩৩ শতাংশ। ৪ মে শেয়ারের দাম ছিল ৩ টাকা ৯০ পয়সা। বর্তমান দাম ৫ টাকা ২০ পয়সা। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ৪০ পয়সা বেড়েছে। সেদিন এর চেয়ে বেশি বাড়ার সুযোগ ছিল না সার্কিট ব্রেকার অনুযায়ী।

সোনারগাঁও টেক্সটাইল: ২০১২ সালের পরে কেবল ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ৩০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানিটি চলতি বছর লভ্যাংশ দিতে পারবে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ, বন্ধ থাকা কোম্পানিটি নয় মাসে শেয়ার প্রতি লোকসান করেছে এক টাকা ২৯ পয়সা। কিন্তু গত ৬ মে থেকে এই কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ২৫.৪৫ শতাংশ। ৬ মে শেয়ার মূল্য ছিল ১৬ টাকা ৯০ পয়সা, আর বৃহস্পতিবার দাঁড়ায় ২১ টাকা ২০ পয়সা। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশের কাছাকাছি।

রিং সাইন টেক্সটাইল: ২০১৯ সালের পর আর্থিক হিসাব না দেয়া কোম্পানিটি বন্ধ করে দিয়ে মালিকপক্ষ দেশ ছেড়ে তাইওয়ানে চলে গেছে। তবে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে সেটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। আর নতুন করে উৎপাদন শুরুর পর্যায়ে চলে এসেছে সেটি। কিন্তু উৎপাদন শুরু হওয়ার আগেই শেয়ার দামে দিয়েছে লাফ। গত ১২ মে দাম ছিল ৬ টাকা ২০ পয়সা। সেখান থেকে লাফ দিয়ে এখন দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৯০ পয়সা। শতকরা হিসেবে এক মাসে দাম বেড়েছে ৭৫.৮০ শতাংশ।

শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ: চলতি বছর প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৭৯ পয়সা। কিন্তু শেয়ার দামে হঠাৎ আগ্রহ দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটির লভ্যাংশ অনিশ্চিত। গত ১ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ১২ টাকা ৩০ পয়সা। সেখান থেকে ২১.১৩ শতাংশ বেড়ে গেছে সাত কার্যদিবসে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দাম বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।

অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ: গত নয় মাসে এই কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৪ টাকা ১১ পয়সা। কিন্তু গত ৪ মের পর দাম বেড়েছে ১৮.৫১ শতাংশ। লোকসানি এই কোম্পানিটি সব শেষ লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০১৫ সালে।

মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং: সবশেষ ২০১৬ সালে লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানির মালিকরা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিতে চাইছেন বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন এসেছে। বন্ধ থাকা কোম্পানিটি চলতি বছর তিন প্রান্তিক শেষে লোকসানে আছে এক টাকা ২৩ পয়সা। কিন্তু গত ২০ মে থেকে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ১৮.৮২ শতাংশ। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার এক দিনে দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ১০ পয়সা।

আর এন স্পিনিং মিল: ২০১৮ সালের পর লভ্যাংশ দিতে না পারা কোম্পানিটি চলতি বছরও লভ্যাংশ দিতে পারবে না বলেই ধারণা করা যায় এর ব্যালান্সি শিট দেখলে। বছরের প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ১৬ পয়সা। ৪ মে শেয়ার মূল্য ছিল ৪ টাকা ২০ পয়সা। সেখান থেকে ১৭ শতাংশ বেড়ে এখন দাম দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ১০ পয়সা।

জাহিন টেক্সটাইল: সর্বশেষ ২০১৮ সালে লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানিটি এবারও কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না, এটা বলাই যায়। বছরের তিন প্রান্তিক শেষে শেয়ার প্রতি এখন লোকসান দুই টাকা ৫২ পয়সা।

কিন্তু শেয়ার মূল্যে যে লাফ তাতে এই অনিশ্চয়তার কোনো নমুনাই নেই। গত ১ জুন কোম্পানির শেয়ার দর ছিল ৫ টাকা ৯০ পয়সা। সেখান থেকে দাম বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। আর এর মধ্যে বৃহস্পতিবার এক দিনেই বাড়ে প্রায় ১০ শতাংশ।

হামিদ ফেব্রিক্স: লোকসানি এই কোম্পানিটি ফ্লোর প্রাইস ১৫ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হতো না বললেই চলে। গত ৭ এপ্রিল ফ্লোর প্রত্যাহারের পর দাম কমতে কমতে ১৩ টাকা ৪০ পয়সায় নেমে আসে। কিন্তু ২১ এপ্রিল থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দাম। গত বৃহস্পতিবার শেয়ার মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৭০ পয়সা। এর মধ্যে কোম্পানিটির বছরের তিন প্রান্তিকের আয়ের তথ্য চলে এসেছে। নয় মাসে শেয়ার প্রতি এক টাকা ৩১ পয়সা লোকসান দেয়া এই কোম্পানিটিরও লভ্যাংশ দেয়া প্রায় অসম্ভবই বলা যায়। তার পরেও বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশের কিছুটা কম দাম বাড়ে কোম্পানিটির।

স্টাইল ক্রাফট: বছর পাঁচেক আগে তুমুল আলোচিত কোম্পানিটি কয়েক গুণ শেয়ার বাড়িয়ে লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। এ কারণে ফ্লোর প্রাইস ১৪৬ টাকা ৩০ পয়সাতে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হতো না বললেই চলে। কিন্তু গত ৩ জুন ফ্লোর প্রত্যাহারের পর এই কোম্পানির দাম প্রথম দুই কার্যদিবসে কমলেও পরের দুই দিনে বেড়েছে ১১ টাকা ৩০ পয়সা। তিন প্রান্তিকে এই কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ৫৬ পয়সা।

প্রাইম টেক্সটাইল: শেয়ার প্রতি ২ টাকা ১২ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটির দাম গত দুই কার্যদিবসে বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল: ২০১৭ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে একে বাঁচাতে চাইছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। কিন্তু

বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম জানিয়েছেন, এই কোম্পানিটি চালু করা যাবে না বলেই তারা ভাবছেন। কোম্পানির উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে তারা মামলা করবেন। কিন্তু বস্ত্র খাতে সাম্প্রতিক উত্থানের মধ্যে দাম বেড়ে গেছে এই কোম্পানিরও। গত ৬ জুন থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ দাম বেড়ে গেছে কোম্পানিটির। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার বেড়ে ছুঁয়েছে সার্কিট ব্রেকারও।

বিএসইসি চেয়ারম্যানের ম্যাজিকে পুঁজিবাজার মে মাসে বিশ্বসেরা: করোনাকালেও বিশ্বের অন্যান্য পুঁজিবাজারগুলোকে পেছনে ফেলে ফের সেরা তালিকায় স্থান করে নিয়ে নতুন রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ। রিটার্নের দিক দিয়ে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে। সম্প্রতি ফ্রন্টিয়ার জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচ্য সময়ে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের পুঁজিবাজার থেকে রিটার্ন পেয়েছে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া পাকিস্তান ৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভিয়েতনাম ৭ দশমিক ২ শতাংশ, চায়না ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, ফিলিপাইনস ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, কাজাকিস্তান ৪ দশমিক ৭ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ২ দশমিক ৫ শতাংশ, থাইল্যান্ড শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ।

প্রতিবেদন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম জানান, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রড ইনডেক্স মে মাসে বড় ধরনের উত্থান হয়েছে। ফলে বিশ্ব সেরা পারফর্মেন্স সূচকগুলোতে শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে ব্যাংক সুদের হার কম, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ইতিবাচক ধারার কারণে রিটার্নের দিক দিয়ে সেরা তালিকায় পৌঁছেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এর নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হচ্ছেন। ফলে বাজারে সূচক ৬ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে রেকর্ড গড়েছিল। আর এমন বাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা ভালো রিটার্ন পেয়েছেন। এছাড়া বর্তমান কমিশন বাজারের উন্নয়নে নানা ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বহুজাতিক, সরকারি ও দেশি-বিদেশি ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানি তালিকাভুক্তির চেষ্টা করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করছে কমিশন। এসব কাজের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যতেও সেরা তালিকায় স্থান ধরে রাখতে পারবে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, গত বছর সেপ্টেম্বরে ও অক্টোবরে মাসে বিশ্বের সেরা স্থান দখল করেছিল বাংলাদেশের পুঁজিবাজার।

বিএসইসি’র নতুন কমিশনের নেতৃত্বে পুঁজিবাজারে আস্থা বেড়েছে: চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন শেয়ারবাজারের উন্নয়নে অনেক কাজ করছেন। যা বিনিয়োগকারীসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

বৃহস্পতিবার দেশের শেয়ারবাজারে এসএমই বোর্ডে প্রথম কোম্পানি হিসেবে নিয়ালকো এলয়েজের লেনদেনের উদ্ভোধনীতে তিনি এ কথা বলেন। এসময় সিএসইর পরিচালনা পর্ষদ, নিয়ালকো এলয়েজের পর্ষদ ও ইস্যু ম্যানেজার এমটিবি ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

আসিফ ইব্রাহিম বলেন, নতুন কমিশন তাদের মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। যার প্রভাব শেয়ারবাজারে দেখতে পাচ্ছি। তাদের নেতৃত্বে বাজারে গতিশীলতা তৈরী হয়েছে। ভবিষ্যতে শেয়ারবাজারের প্রবৃদ্ধি আরও নিশ্চিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। একইসঙ্গে তাদের দক্ষতায় উন্নত শেয়ারবাজার গড়তে সক্ষম হবেন বলে যোগ করেন তিনি।

এসময় দেশের এসএমই খাতকে এগিয়ে নিতে সরকার কাজ করছে বলে জানান সিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, সরকার এই খাতকে উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। আর সেই এসএমই খাতের কোম্পানি হিসেবে নিয়ালকো এলয়েজ সিএসইতে তথা পুরো দেশে প্রথমবারের মতো এসএমই বোর্ডে লেনদেন শুরু হল। যার সাক্ষী হয়ে রইল সিএসই।

উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল বিএসইসির ৭৭০তম সভায় প্রথম কোম্পানি হিসেবে নিয়ালকো এলয়েজ লিমিটেডকে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপিটাল কোম্পানিজের (কিউআইও) মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। এ কোম্পানিটি কিউআইও’র মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করে। ২০১৮ সালের রুলস অনুযায়ী কোম্পানিটি প্রতিটি ১০ টাকা করে ৭৫ লাখ শেয়ার যোগ্য বিনিয়োগাকারীদের নিকট ইস্যুর মাধ্যমে এই টাকা উত্তোলন করে।

এলক্ষ্যে কোম্পানিটির কিউআইওতে আবেদন গ্রহণ ১৬ মে শুরু হয়ে চলে ২০ মে পর্যন্ত। উত্তোলিত অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি ভূমি উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করবে। কোম্পানিাটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেড।

প্রধানমন্ত্রীর করোনা তহবিলে সাইফ পাওয়ারটেকের ২ কোটি টাকা অনুদান: প্রধানমন্ত্রীর করোনা সহায়তা তহবিল ও হাউজ কনস্ট্রাকশন ফান্ড বাই প্রাইভেট ফাইনান্সে ২ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে দেশের বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ও চট্টগ্রাম বন্দরের শীর্ষ টার্মিনাল অপারেটর মেসার্স সাইফ পাওয়ারটেক।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসের হাতে ২ কোটি টাকার চেক তুলে দেন সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন। দেশের প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দেওয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তরফদার মো. রুহুল আমিন।