দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত দুই মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ফান্ড দুটি হলো: ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও গ্রীন ডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড। সংশ্লিষ্ট অ্যাসেট মেনেজম্যান্ট কোম্পানির অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে মনে করছেন ফান্ড দুটির ইউনিটহোল্ডরা। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, অ্যাসেট মেনেজম্যান্ট কোম্পানিগুলো নিজেরা ঠিকই ভালো আছে, শুধু বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত করার জন্য লোকসানের অজুহাত দেখাচ্ছে। অ্যাসেট মেনেজম্যান্ট কোম্পানিগুলো বছরশেষে যে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে, তা কতটা স্বচ্ছ্ব তা খতিয়ে দেখা উচিত।

বিনিয়োগকারীরা ফান্ড দুটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা এলআর গ্লোবাল অ্যাসেট মেনেজম্যান্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনুনাগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কশিনেশনের (বিএসইসি) কাছে জোর দাবি জানিয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যাসেট মেনেজম্যান্ট কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে ভালো ব্যবসা করছে। আইপিও শেয়ারেও কোম্পানিগুলো রমরমা ব্যবসা করছে। তারপরও ইউনিট হোল্ডারদের কেন ডিভিডেন্ড দিতে পারে না, তা কোনভাবেই বোধগম্য নয়।

হেলাল হোসেন নামে এক প্রবীণ বিনিয়োগকারী বলেন, ‘পুঁজিবাজারে যতগুলো অ্যাসেট মেনেজম্যান্ট কোম্পানি রয়েছে, তার মধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতির শীর্ষে রয়েছে এলআর গ্লোবাল অ্যাসেট মেনেজম্যান্ট কোম্পানি। বিএসইসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার সুবাদে কোম্পানিটির নেতৃত্বে থাকা এক ব্যক্তি বিভিন্ন অনিয়ম করেও বার বার পার পেযে যাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘এলআর গ্লোবাল অ্যাসেট মেনেজম্যান্ট কোম্পানিটিকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজিবাজার থেকে বহিস্কার করা উচিত।’
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও গ্রীন ডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৩০ জুন, ২০২০ অর্থবছরের জন্য ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে।

আলোচ্য অর্থবছরটি ছিল পুঁজিবাজারের জন্য সত্যি খারাপ বছর। যে কারণে ফান্ড দুটি লোকসান করেছে। তবে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে (জুলাই’২০-জুন’২১) মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ভালো ব্যবসা করেছে। কিছুদিন পরই মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ইউনিট হোল্ডারদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করবে। অন্যান্য মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মতো এই ফান্ড দুটিও এবছর হয়তো বিনিয়োগকারীদের ভালো ডিভিডেন্ড দিতে পারবে।

উল্লেখ্য, এলআর গ্লোবাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির আওতায় রয়েছে ৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড। ফান্ডগুলো হলো ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, গ্রিন ডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান ও এনসিসিবিএল ফান্ড ওয়ান।

এই ৬টি ফান্ডের তহবিলের পরিমাণ ৮৭০ কোটি টাকা এবং ফান্ডগুলোর বাজার মুল্যে নেট অ্যাসেট ভ্যালু এখন প্রায় ৯৮০ কোটি টাকা। ২০০০ সাল থেকে এলআর গ্লোবাল দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে আসছে। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এবং এর বিনিয়োগকারীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার।

সেই এলআর গ্লোবাল অ-তালিকাভুক্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজের শেয়ার ৫০ কোটি টাকায় কেনার ঘোষণা দিলে অনিয়মের বিষয়টি প্রকাশ্য আলোচনায় আসে। দুদক, বিএসইসি ও আইনজ্ঞরা বলছেন, এই শেয়ার কেনাবেচায় বেশ কয়েকটি অনিয়ম খুঁজে পায়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিডিনিউজ একটি দুর্বল প্রতিষ্ঠান। যার কর্মীদের বেতন–ভাতাও নিয়মিত বকেয়া থাকছে। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের ১০০ টাকা মূল্যের শেয়ার ১২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রির বিষয়টি অনিয়মের পরিষ্কার ইঙ্গিত দেয়। তাছাড়া এলআর গ্লোবালের বিদেশি অংশীদারেরাও এত টাকায় অনলাইন ওয়েব পোর্টালের শেয়ার কেনার বিষয়টি অবগত নন। কোম্পানিটির ট্রাস্টি বোর্ডও বিষয়টি অনুমোদন করেনি। বিডিনিউজে বিনিয়োগের বিষয়ে এসইসির কাছ থেকেও অনুমতি নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।

প্রসঙ্গত, এলআর গ্লোবালের ৫০ কোটি টাকা নেয়ায় গত বছরের ৩০ জুলাই বিডিনিউজ সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এর আগে ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর জ্ঞাত আয়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক খালিদীর বিষয়ে অনুসন্ধান চালায়। ১১ নভেম্বর দুদকে হাজির হয়ে খালিদী দুর্নীতির বিষয়ে বক্তব্য দেন। এরপর তিনি উচ্চ আদালত থেকে স্থায়ী জামিন নেন।

দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, তৌফিক ইমরোজ খালিদী চারটি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে ৪২ কোটি টাকা জমা রেখেছেন, যার বৈধ কোনো উৎস দুদক পায়নি।

২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এলআর গ্লোবাল বিডিনিউজে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তাৎক্ষণিকভাবে ওই ‘বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে বিরত’ থাকার নির্দেশ দেয়। দুদকের মামলায় এলআর গ্লোবালের বিনিয়োগকৃত টাকা খালিদী ‘অবৈধ প্রক্রিয়ায়’ অর্জন করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়। এরপর ‘অবরুদ্ধ’ করা হয় তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বিডিনিউজে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানটির ইউনিট হোল্ডারদের সমস্যায় ফেলেছে। ১০০ টাকার ফেস ভ্যালুর শেয়ার ক্রয় করেছিল ১২,৫০০ টাকায়। ঘটনা ঘটেছিল মূলত তিন-চার বছর আগে। তখন বর্তমান কমিশন ছিল না। তবে বর্তমান কমিশন বিষয়টি জানার পর সমস্যা সমাধানের পথে এগুতে থাকে। বিনিয়োগ করা অর্থ দ্রুত ফিরিয়ে আনারও নির্দেশ দেয় অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের কমিশন।

প্রসঙ্গত আরও উল্লেখ্য যে, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ৭২ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং গ্রীন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ডের ৭০ দশমিক ১০ শতাংশ ইউনিটহোল্ডারদের লিখিত মতামত ও ফান্ড দুটির ট্রাস্টি বিজিআইসির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সম্পদ ব্যবস্থাপক এল আর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের পরিবর্তে নতুন সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে আইডিএলসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের নিয়োগের বিষয়টি বিএসইসির ৭১২তম কমিশন সভায় অনুমোদন করা হয়।

নতুন সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে আইডিএলসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড দেশের একটি সুনাম অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান। এর অধিনে ডিবিএইচ ফার্স্ট এবং গ্রীন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ড দুটি স্থানান্তরিত হলে ইউনিটহোল্ডাররা ভালো ডিভিডেন্ড পাবে–এমনটাই আশা করছে ফান্ড দুটির ইউনিটহোল্ডাররা।

দুই কোম্পানির ৩০ লাখ শেয়ার ক্রয় বিক্রয়ের ঘোষণা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা বিদায়ী সপ্তাহে ৩০ লাখ শেয়ার কেনাবেচার ঘোষণা দিয়েছেন। কোম্পানি দুটি হলো-ব্যাংক খাতের ব্যাংক এশিয়া ও যমুনা ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড : ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের দুই উদ্যোক্তা ১১ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যাংকটির উদ্যোক্তা মিস সাবরিনা চৌধুরী সাড়ে ৫ লাখ এবং উদ্যোক্তা মিস মাহরিনা চৌধুরী সাড়ে ৫ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ঘোষণাকৃত শেয়ার কেনা সম্পন্ন করবেন এই দুই উদ্যোক্তা।

যমুনা ব্যাংক লিমিটেড : যমুনা ব্যাংকের উদ্যোক্তা উদ্যোক্তা আরিফুর রহমান ১৯ লাখ শেয়ার বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন। তার কাছে ব্যাংকটির ২৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩৮২টি শেয়ার রয়েছে। এখান থেকে তিনি ১৯ লাখ শেয়ার বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ঘোষণাকৃত শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন করবেন এই উদ্যোক্তা।

ফরচুন সুজের ইপিএস ও মুনাফায় ধারাবাহিক উন্নতি: জাতীয় উন্নয়নে ফরচুন গ্রুপের অসাধারণ অবদানের জন্য এবার বঙ্গবন্ধু শিল্প-বাণিজ্য পুরস্কার পেলো ফরচুন সুজ এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। শিল্প মন্ত্রণালয়ের এবারের পুরস্কারের আগে ফোর্বসের এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ১ বিলিয়ন ডলারের নিচের ২০০ কোম্পানির তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের এই কোম্পানিটি। ব্যবসাকে দেশ গড়ার এবং মানুষের কল্যাণে সেবার মহান ব্রত হিসেবে গ্রহণ করায় দেশের নাম্বার ওয়ান পাদুকা গ্রুপ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করছে ফরচুন গ্রুপ।

পাশাপাশি সারা দুনিয়ার নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রতিযোগিতামূলক পাদুকা শিল্পের তৈরি এবং বিপণন করে বিশ্ববাজারে নজরকাড়া সাফল্য বয়ে এনেছে। ফরচুন গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা, ব্যবসায়িক সততা এবং দূরদর্শিতা এ গ্রুপের বিশাল অর্জন। বিশ্বে পাদুকা শিল্প হিসেবে আমাদের দেশ সম্মানজনক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।

বাংলাদেশে আধুনিক পাদুকা শিল্পের সূচনা ১৯৮০-র দশকে ঘটলেও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলেই এ অঞ্চলে পাদুকা শিল্পের প্রসার ঘটেছিল। আর ১৯৯০-এর দশকে এসে বাংলাদেশ পাদুকা সামগ্রী রপ্তানি শুরু করে। ব্রিটিশ আমলে পূর্ববঙ্গে যেসব পাদুকা নির্মাণ কারখানা ছিল সেগুলি ছিল নেহায়েৎই ক্ষুদ্র এবং সেগুলিকে সংগঠিত শিল্প না বলে কুটির পর্যায়ের কারখানা বলাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত।

এ জাতীয় কিছু কারখানা মূলত কয়েকটি জেলা শহরে গড়ে ওঠে। কলকাতা একসময় পাদুকা শিল্পে বেশ সমৃদ্ধ ছিল এবং ১৯৪৭-এর পূর্বপর্যন্ত কলকাতাই ছিল পূর্ববঙ্গের মানুষের ব্যবহারের পাদুকা সামগ্রী আমদানির প্রধান উৎস। ১৯৪৭-এর পর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এ এলাকায় পাদুকা আমদানি শুরু হয়। বাটা সু কোম্পানি টঙ্গীতে জুতা কারখানা প্রতিষ্ঠা করে ১৯৬২ সালে এবং এটিই ছিল বাংলাদেশ এলাকার বৃহদায়তন পাদুকা উৎপাদনের প্রথম শিল্প প্রতিষ্ঠান। এরপর ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্টার্ন প্রোগ্রেসিভ সু ইন্ডাস্ট্রিজ।

দুটি প্রতিষ্ঠান একত্রে যা উৎপাদন করত তা স্থানীয় বাজারে যেমন প্রচুর পরিমাণে যোগান বৃদ্ধি করে তেমনি সোভিয়েত ইউনিয়ন, চেকোশ্লোভাকিয়া ও ইংল্যান্ডসহ বহু দেশে রপ্তানিও করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কারখানা দুটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে স্বাধীনতার পর এগুলিকে আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়, সেই সঙ্গে নতুন নতুন অনেক পাদুকা কারখানাও গড়ে ওঠে।

নতুন তৈরি হওয়া কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পাদুকা শিল্প প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এপেক্স ফুটওয়ার, এক্সেলসিওর সু’জ এবং প্যারাগন লেদার অ্যান্ড ফুটওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ। এদিকে জুতা উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। পর্তুগালভিত্তিক জুতা প্রস্ততকারকদের সংগঠন পর্তুগিজ ফুটওয়্যার, কম্পোনেন্টস, লেদার গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এপিআইসিসিএপিএস) সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।

এছাড়া ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যার ইয়ারবুকের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ৩৫ কোটি জোড়ার বেশি জুতা উৎপাদন করা হয়। তবে শীর্ষস্থানে রয়েছে চীন। তারা বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি জোড়া জুতা উৎপাদন করে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। ২০১৫ সালে দেশটি জুতা উৎপাদন করে ২২০ কোটি জোড়া। তৃতীয় থেকে সপ্তম অবস্থানে থাকা দেশগুলো হলো যথাক্রমে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, পাকিস্তান ও তুরস্ক।

জুতা উৎপাদনে বাংলাদেশের নিচে নবম ও দশম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মেক্সিকো ও থাইল্যান্ড।ইউএস-বাংলা ফুটওয়্যারের ব্র্যান্ড ভাইব্রেন্ট দাবি করেছে, উৎপাদিত এসব জুতার মধ্যে সব জুতা হালাল নয়, এখানে সকল চামড়া হালাল প্রাণীর নয়। রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলে ভাইব্রেন্ট।

এদিকে ফরচুন গ্রুপ বাংলাদেশের অহংকার এ গ্রুপে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মেশিনারিজ। রয়েছে একদল চৌকস, মেধাবী ও দক্ষ জনশক্তি। যাদের মেধা এবং মননে ফরচুন সুজকে তথা এ পাদুকা শিল্প প্রতিষ্ঠানকে উন্নততর করা। ফরচুন সুজ নিয়ে ব্যতিক্রমী এ জনশক্তির মিশন ও ভিশন হলো বাংলাদেশে বসেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য রুচিসম্মত ফ্যাশনেবল জুতা তৈরি করা।

অদ্যাবধি তারা এ ক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। গোটা বিশ্বকে ফরচুন গ্রুপ তথা তাদের নব নব সৃষ্টিশীল ডিজাইনের জুতা উপহার দেয়ার মাধ্যমে জানান দিয়েছে বাংলাদেশ জুতা তৈরির মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন আইকন।

এদিকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত চামড়া খাতের কোম্পানি ফরচুন গ্রুপের ফরচুন সুজ লিমিটেড বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে এ কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আলাদা একটি ঝোঁক লক্ষ্য করা গেছে। কোম্পানিটির আর্থিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ কোম্পানিটির তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা বাড়ছে। যার প্রভাবে এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ২৫.৪০ টাকা বা ১১৭ শতাংশ।

এছাড়া বিশ্বের অনেক দেশের আস্থা অর্জনের ফলে কোম্পানিটি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। এরই ফল হিসেবে প্রভাবশালী বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের পুরস্কারে পর এবার দেশীয় পুরস্কারে ভূষিত হলো ফরচুন গ্রুপ। শিল্প মমন্ত্রনালয়ের এবারের পুরস্কারের আগে ফোর্বসের এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ১ বিলিয়ন ডলারের নিচের ২০০ কোম্পানির তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের এই কোম্পানিটি।

এরই ধারাবাহিকতায় এবার বঙ্গবন্ধু শিল্প-বাণিজ্য পুরস্কার পেলো ফরচুন গ্রুপ এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। গত বৃহস্পতিবার শিল্প মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু শিল্প-বাণিজ্য পুরস্কার ২০২০ জয়ী হিসেবে ফরচুন গ্রুপের নাম ঘোষণা করে।

জানা গেছে, গত মে মাসের ২৩ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ২২.৩০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ২৬.১০ টাকা বেড়ে বুধবার অবস্থান করছে ৪৪.৮০ টাকায়। কোম্পানিটির শেয়ারদরের এমন উল্লম্ফনের কারণ হিসেবে দেখা গেছে, চলমান করোনা মহামারিতেও কোম্পানিটির ব্যবসায়ে ভালো উন্নতি। ব্যবসা ভালো করায় কোম্পানিটির ইপিএসও বেশ ভালো দেখা গেছে গত তিন প্রান্তিকে। এরই ফলে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে বলে মনে করছে বাজার বিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিব রিয়াজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা হচ্ছে রপ্তানিমুখী। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে আমরা ব্যবসা করি। গত বছর করোনার কারণে আমাদের ব্যবসার সাময়িক সমস্য হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই সমস্য না থাকায় আমাদের ব্যবসা আগের চেয়ে ভালো যাচ্ছে।’ ‘বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ বাড়লেও আমাদের ব্যবসা যেহেতু ইউরোপের সঙ্গে তাই এতে আমাদের ব্যবসায় প্রভাব পড়বে না।’

কোম্পানির তিন প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, (জুলাই ’২০ থেকে মার্চ ’২১) নয় মাসে কোম্পানিটির টার্নওভার হয়েছে ১০৫ কোটি আট লাখ নয় হাজার টাকা। এ থেকে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ১৬ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ১.০৫ টাকা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) হয়েছে ১৩.৭০ টাকা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সাল থেকে এই কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেও শেয়ার কমছে। ২০২০ সালে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানিটির মালিকানা ছিল ১৫ শতাংশ, বর্তমানে তা কমে অবস্থান করছে ১২.৮৩ শতাংশে। তবে শেয়ারমূল্য বৃদ্ধিতে এর প্রতি আগ্রহ বেড়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। ২০২০ সালে কোম্পানিটির মালিকানায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ছিল ৫৪.০৭ শতাংশ, বর্তমানে তা ৫৬.২৪ শতাংশে অবস্থান করছে। আর কোম্পানিটির ডিরেক্টরদের কাছে রয়েছে মালিকানার ৩০.৯৩ শতাংশ শেয়ার।

বর্তমানে কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে নয় কোটি ২৯ লাখ টাকা। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৮৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ২৫০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের এই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৫৪ কোটি ৭৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারসংখ্যা ১৫ কোটি ৪৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭০৪টি।

ওআইসি ব্যতীত তাদের রিজার্ভ এবং উদ্বৃত্ত রয়েছে ৪৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। সর্বশেষ কোম্পানিটি ২০২০ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণ করে। এর মধ্যে পাঁচ শতাংশ নগদ এবং পাঁচ শতাংশ বোনাস। পাদুকা শিল্পের এই কোম্পানিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ৫৭৯তম কমিশন সভায় আইপিও অনুমোদন দেয়।

কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১০ টাকা মূল্যের দুই কোটি ২০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে ২২ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এই টাকা কোম্পানিটির মেশিনারিজ ক্রয়, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ এবং আইপির কাজে ব্যয় করা হয়। কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং ইম্পেরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড।

এ বিষয়ে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘ফরচুন গ্রুপ অতি অল্প সময়ে বিশ্বের অনেক দেশের আস্থা অর্জন করেছে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তারা ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সাফল্যজনকভাবে রপ্তানি করছে। যা বাংলাদেশের চামড়াজাত শিল্পের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহযোগিতা করছে। এই অভাবনীয় সাফল্যের জন্যই এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।

ফরচুন গ্রুপ মাঝারি ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এই খাতে ফরচুন সুজ একমাত্র কোম্পানি যেটি এই পুরষ্কার পেয়েছে। গ্রুপটি বাংলাদেশে জুতা তৈরি করে ইউরোপের প্রায় সবগুলো দেশেই গত আট বছর ধরে রপ্তানি করে আসছে। এখানে বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার লোক কর্মরত রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান ২০১০ সালে চট্টগ্রাম থেকে শুরু করলেও ২০১২ থেকে বরিশালের বিসিক এরিয়ায় তাদের ফ্যাক্টরি স্থাপন শুরু করে বর্তমানে বরিশালেই তাদের তিনটি জুতা ফ্যাক্টরি রয়েছে। জুতা তৈরি করতে সব ধরনের ব্যাক কিওয়ার্ড ফ্যাক্টরি ও রয়েছে ফরচুন গ্রুপের।

এদিকে ফোর্বস সাধারণত বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তি, বেশি আয় করা সেলিব্রেটি, শীর্ষ কোম্পানি, শক্তিশালী ব্যক্তি প্রভৃতির তালিকার জন্য বিখ্যাত। সাময়িকীটি তাদের ‘এশিয়া’র ২০০ বেস্ট আন্ডার এ বিলিয়ন ২০২০ র‌্যাংকিং’ এর প্রতিবেদনে বলছে, তুলনামূলক নতুন হলেও বাংলাদেশে পাদুকা খাতের প্রতিষ্ঠান ফরচুন সুজ ভালো ব্যবসা করছে। তাদের বিক্রির পরিমাণ প্রায় ১৮ মিলিয়ন ডলার।

এর মধ্যে নিট আয় ৩ মিলিয়ন ডলার। আর প্রতিষ্ঠানটির কর্মী রয়েছেন ১ হাজার ৭২৩ জন। এই খাতে ফরচুন সুজ একমাত্র কোম্পানি যে এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। এছাড়াও জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা ও বরিশাল মিলিয়ে ফরচুনের পাঁচটি আধুনিক জুতা তৈরি শিল্প কারখানা রয়েছে। এটি একটি শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান। এরা মূলত বিভিন্ন ধরনের স্পোর্টস স্যু তৈরি করে থাকে। বিশ্বের অনেক বড় বড় ব্রাঞ্চ এখান থেকে তাদের জুতা সংগ্রহ করে।

এ বিষয়ে ফরচুন গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, এই পুরস্কারের দাবিদার আমি না, আমার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বিশেষ করে কারখানার শ্রমিকেরা। আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই মাননীয় শিল্প মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীকে। এদিকে দেশের পুঁজিবাজারে ২০১৬ সালে তালিকাভুক্ত হয় ফরচুন সুজ। কোম্পানিটি বর্তমানে এ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে।

মুনাফা ৩৬২ কোটি টাকা হলেও শেয়ারহোল্ডাররা পাবে কাগজ: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের ২০২০ সালের ব্যবসায় প্রায় ৩৬২ কোটি টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। তবে এর মধ্য থেকে শেয়ারহোল্ডারদের ১ টাকাও না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। এরফলে ব্যাংকটিকে ১৫ কোটি টাকারও বেশি জরিমানা দিতে হবে। তবে বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছে ন্যাশনাল ব্যাংক সমাপ্ত অর্থবছরে ভালো মুনাফা করলেও শেয়ারহোল্ডাদের টাকা লুটেপাটে খাচ্ছে। এতে পরিচালকরা লাভবান হলেও শেয়ারহোল্ডারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের অনুমোদিত বাজেট অনুযায়ি, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি কোনো অর্থবছরে নগদ লভ্যাংশের বেশি বোনাস শেয়ার দিতে পারবে না। অর্থাৎ বোনাস লভ্যাংশ সর্বোচ্চ নগদ লভ্যাংশের সমান হতে পারবে। যদি কোনো কোম্পানি বোনাস শেয়ার বেশি দেয়, তাহলে ওই বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। তারপরেও তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পরিশোধিত মূলধনের ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ২০২০ সালের ব্যবসায় শুধুমাত্র ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের ২০২০ সালের ব্যবসায় সমন্বিতভাবে শেয়ারপ্রতি ১.১৮ টাকা হিসেবে ৩৬১ কোটি ৮৪ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। এরমধ্যে থেকে ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ারবাবদ শেয়ারপ্রতি ০.৫০ টাকা করে মোট ১৫৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হবে। বাকি ২০৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা রিজার্ভে যোগ হবে। এর মাধ্যমে কোম্পানির মুনাফার ১ টাকাও শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরন করা হবে না। এরফলে কোম্পানিটিকে ১৫৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার বোনাস শেয়ারের উপর ১০ শতাংশ হারে ১৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার অতিরিক্ত কর দিতে হবে।

এদিকে ব্যাংকটির ২০২০ সালের শেষ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০) ব্যবসায় বড় উত্থান হয়েছে। কোম্পানিটির ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ০.৪৭ টাকা। তবে বছর শেষে এই মুনাফার পরিমাণ বেড়ে দাড়িঁয়েছে ১.১৮ টাকায়। অর্থাৎ কোম্পানিটির ২০২০ সালের মুনাফার ৬০.১৭ শতাংশ এসেছে শেষ প্রান্তিকে।

তারপরেও ব্যাংকটির আগের বছরের তুলনায় মুনাফায় পতন হয়েছে। আগের বছরের ১.৩৪ টাকার ইপিএস ২০২০ সালে ১.১৮ টাকায় নেমে এসেছে। এক্ষেত্রে ইপিএস কমেছে ০.১৬ টাকা বা ১১.৯৪ শতাংশ। উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩ হাজার ৬৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৯.০১ শতাংশ। কোম্পানিটির শনিবার (০৩ জুলাই) শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ৮ টাকায়।

সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে ১২ কোম্পানির চমক: ব্যাংক হলিডে’র কারণে বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজারে চার কার্যদি লেনদেন হয়েছে। এই চার কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে ১২টি কোম্পানির বিশাল লেনদেন হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কোম্পানিগুলো হলো: ফরচুন সুজ, রেনাটা ফার্মা, ইস্টার্ন ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, প্রাইম ব্যাংক, জেনেক্স ইনফোসিস, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফনিক্স ফাইন্যান্স ও বেক্সিমকো ফার্মা।

এর মধ্যে ফরচুন সুজের লেনদেন হয়েছে সর্বোচ্চ। এরপর রয়েছে রেনেটা ফার্মা, ইস্টার্ন ব্যাংক ও স্কয়ার ফার্মার শেয়ার। কোম্পানি চারটির মধ্যে ফরচুন সুজের লেনদেন হয়েছে ৫১ টাকারও বেশি শেয়ার। অন্যান্যগুলোর লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি টাকার উপরে। সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটের লেনদেন চিত্র হলো: ফরচুন সুজের ৫১ কোটি ৭৭ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা, রেনাটার ৪৪ কোটি ৬৩ লক্ষ ০৯ হাজার টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৪৩ কোটি ৭৩ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা, স্কয়ার ফার্মার ৩৫ কোটি ৪২ লক্ষ ২১ হাজার টাকা, প্রাইম ব্যাংকের ২২ কোটি ৭১ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা,

জেনেক্স ইনফোসিসের ২২ কোটি ৬ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের ২০ কোটি ২৯ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর ১৮ কোটি ৯৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৬ কোটি ৮৯ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা,

ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের ১০ কোটি ৯৩ লক্ষ ২ হাজার টাকা, ডাচ বাংলা ব্যাংকের ৭ কোটি ৫৮ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ৬ কোটি ৬০ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা, ফনিক্স ফাইন্যান্সের ৪ কোটি ৩ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা ও বেক্সিমকো ফার্মার ৩ কোটি ৬১ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

সিএন্ডএ টেক্সটাইলের দুই কোটি টাকা জরিমানা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল লিমিটেড নানা অভিযোগে বেশ কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। কোম্পানিটির মালিকপক্ষ পালিয়ে গেছে দেশের বাইরে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানিটির বিরুদ্ধে বন্ড জালিয়াতির মামলায় দুই কোটি টাকা জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট।

এই অর্থদণ্ডসহ বন্ডেডের মোট তিন কোটি ৮৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা সরকারি রাজস্ব আদায়ের অপেক্ষায় রয়েছে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট। এর আগে ২০২০ সালের ২৯ জুলাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানিটির সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের পরিচালকদের (স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতীত) স্টক এক্সচেঞ্জের বিধিমালা লঙ্ঘন করায় এক কোটি টাকা জরিমানা করেছিল।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা বিএসইসির ডাকা শুনানিতে উপস্থিত না হওয়া এবং কারখানা বন্ধ থাকার দায়ে এই জরিমানা করেছিল। যদিও পরবর্তীকালে ডিএসইর একটি প্রতিনিধিদল কোম্পানিটির কারখানা পরিদর্শনে গিয়েছিল, কিন্তু কারখানা বন্ধ থাকায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি বিএসইসি।

চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৩১ লাখ ১৬ হাজার টাকার বন্ডেড পণ্য অবৈধ অপসারণের দায়ে দুই কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট। কোম্পানিটি ৪৫টি চালানের বিপরীতে এসব পণ্য অবৈধ অপসারণ করে এক কোটি ৮৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকার মেসার্স সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলস লিমিটেড ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট থেকে বন্ডেড প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন নেয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইউপি গ্রহণপূর্বক রপ্তানি করতে ব্যর্থ হয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটি মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁচামালের বন্ডিং মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট বরাবর কোনো আবেদনও করেনি।

এতে প্রমাণিত হয় আমদানিকৃত উপকরণগুলো প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে অপসারণ করেছে, যা সুস্পষ্টভাবে কাস্টমস আইন লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রতিষ্ঠানটি ৪৫টি চালানের মাধ্যমে তিন কোটি ৩১ লাখ ১৬ হাজার টাকা পণ্য অবৈধভাবে অপসারণ করেছে, যা চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুদসহ রাজস্ব জড়িত রয়েছে এক কোটি ৮১ লাখ ২৬ হাজার ৪৩৬ টাকা।

গত ২৪ মার্চ, ২০২১ তারিখে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে। তবে প্রতিষ্ঠানটির বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিসের কপি পাঠানো হয়। কিন্তু মালিকপক্ষ পলাতক থাকায় লিখিত জবাব, অর্থাৎ কোনো উত্তর পায়নি চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট।

এরপর চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট নিয়ম অনুযায়ী ন্যায় বিচারের স্বার্থে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণের জন্য চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল নির্ধারণ করে, যা একই মাসের ২০ তারিখে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছিল। যেহেতু মালিকপক্ষ পলাতক তাই শুনানিতে উপস্থিত ও লিখিত জবাব কোনোটি দাখিল করেনি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলস লিমিটেড, ফলে চলতি বছরের ২৪ মে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একতরফা আদেশ জারি করে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট।

প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের সংখ্যা ২৩ কোটি ৯৩ লক্ষ ১৬ হাজার। ২০১৭ সালে সর্বশেষ দেয়া বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের কাছে শেয়ার রয়েছে ২২ দশমিক ১৮ শতাংশ, আর প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ রয়েছে ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং পাবলিক শেয়ার রয়েছে ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ।

তবে কথিত আছে কোম্পানিটির পরিচালক পক্ষ তাদের নিজের কাছে থাকা শেয়ারগুলো বিক্রি করে লাপাত্তা হয়ে যায়। ফলে ২০১৬ সালের পর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডাদের আর কোনো প্রকার ডিভিডেন্ট দিতে পারেনি। কোম্পানিটির শেয়ার বর্তমানে জেড ক্যাটেগরিতে লেনদেন হচ্ছে।

৯ কোম্পানির উদ্যোক্তার পরিচালকদের শেয়ার ধারণ কমেছে: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে মে মাসে ৯টি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা শেয়ার বিক্রি করছেন। এর ফলে ৩১ মে, ২০২১ তারিখে এই ৯টি কোম্পানিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারণ কমেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানিগুলো হলো: অগ্রণী ইন্সুরেন্স, সিটি ইন্সুরেন্স, ইন্দোবাংলা ফার্মা, জনতা ইন্সুরেন্স, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্স, প্রাইম ইন্সুরেন্স, রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স ও এসএস স্টিল মিল।

অগ্রণী ইন্সুরেন্স : ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ছিল ৩০.৭২ শতাংশ। ৩১ মে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ৩০.১৫ শতাংশে। মে মাসে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার কমেছে ০.৫৭ শতাংশ।

সিটি ইন্সুরেন্স : ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ছিল ৩৬.০৬ শতাংশ। ৩১ মে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪.০৬ শতাংশে। মে মাসে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার কমেছে ২ শতাংশ।

ইন্দো-বাংলা ফার্মা : ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ছিল ৪৬.০৩ শতাংশ। ৩১ মে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩.৮২ শতাংশে। মে মাসে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার কমেছে ২.২০ শতাংশ।

জনতা ইন্সুরেন্স : ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ছিল ৩৮.৬৬ শতাংশ। ৩১ মে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬.১৭ শতাংশে। মে মাসে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার কমেছে ২.৪৯ শতাংশ।

মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক : ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ছিল ৪৩.৯৭ শতাংশ। ৩১ মে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ৪২.৮১ শতাংশে। মে মাসে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার কমেছে ১.১৮ শতাংশ।

ন্যাশনাল হাউজিং এন্ড ফাইন্যান্স : ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ছিল ৬০.৭৯ শতাংশ। ৩১ মে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ৫৭.২৪ শতাংশে। মে মাসে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার কমেছে ৩.৫৫ শতাংশ।

প্রাইম ইন্সুরেন্স : ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ছিল ৩৩.৭২ শতাংশ। ৩১ মে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ৩০.৫২ শতাংশে। মে মাসে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার কমেছে ৩.২০ শতাংশ।

রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স : ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ছিল ৬৫.২০ শতাংশ। ৩১ মে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ৬৪.২৪ শতাংশে। মে মাসে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার কমেছে ০.৮০ শতাংশ।

এসএস স্টিল মিল : ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ছিল ৩৫.৪৮ শতাংশ। ৩১ মে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ৩১.৭৯ শতাংশে। মে মাসে কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার কমেছে ৩.১৩ শতাংশ।

চার কোম্পানির শেয়ারে সতর্ক করেছে ডিএসই: বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চার কোম্পানির শেয়ারে সতর্ক করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কোম্পানি চারটির কর্তৃপক্ষও শেয়ারগুলোর দর বৃদ্ধিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে।

আলোচ্য সপ্তাহে কোম্পানি ৪টির শেয়ার দর অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে ডিএসই কোম্পানিগুলোকে নোটিশ পাঠায়। জবাবে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বৃদ্ধির কারণ জানে না তারা। কোম্পানিগুলোর কর্তৃপক্ষ বলছে, কোনো রকম অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ারগুলোর দর অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।

আর্গন ডেনিম :২০ জুন, ২০২১ তারিখে আর্গন ডেনিমের শেয়ারের দর ছিল ২১ টাকা ৩০ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়ে দাঁড়েয়েছে ২৭ টাকা ১০ পয়সায়। অর্থাৎ এই ৯ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৫ টাকা ৮০ পয়সা বা ২৭.২৩ শতাংশ।

ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স :২৩ জুন, ২০২১ তারিখে ডেল্টা লাইফের দর ছিল ১০৩ টাকা ৩০ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়ে দাঁড়েয়েছে ১৫৪ টাকা ৩০ পয়সায়। অর্থাৎ এই ৬ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৫১ টাকা বা ৪৯.৩৭ শতাংশ।

নিউ লাইন টেক্সটাইল :৭ জুন, ২০২১ তারিখে নিউ লাইন টেক্সটাইলের শেয়ারের দর ছিল ২১ টাকা ৯০ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়ে দাঁড়েয়েছে ৩১ টাকা ১০ পয়সায়। অর্থাৎ এই ১৮ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯ টাকা ১০ পয়সা বা ৪১.৫৫ শতাংশ।

অলিম্পিক এক্সেসরিজ :৭ জুন, ২০২১ তারিখে অলিম্পিক এক্সেসরিজের শেয়ারের দর ছিল ৭ টাকা ৬০ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়ে দাঁড়েয়েছে ১৪ টাকা ৯০ পয়সায়। অর্থাৎ এই ১৮ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৭ টাকা ৩০ পয়সা বা ৯৬.০৫ শতাংশ।

লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের পিসিআই ডিএসএস সনদ অর্জন: দেশের অন্যতম প্রধান নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট (এনবিএফআই) লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড পেমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রি ডেটা সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড (পিসিআই ডিএসএস) সনদ অর্জন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ক্রেডিট কার্ড সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় পিসিআই এসএসসির আবশ্যিক নিয়ম অনুযায়ী কার্যকারিতা, দক্ষতা, গোপনীয়তা রক্ষা ও বিশ্বস্ততা নিশ্চিতের ফলে এ স্বীকৃতি অর্জন করে। এই স্বীকৃতিই প্রমাণ করে লংকাবাংলা ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষায় দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে সকল শর্ত পূরণ করে কাজ করে যাচ্ছে এবং দেশের প্রথম এনবিএফআই হিসেবে এ সনদ অর্জন করেছে।

এ নিয়ে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী জনাব খাজা শাহরিয়ার বলেন, ‘পেমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রি ডেটা সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড (পিসিআই ডিএসএস) স্বীকৃতি অর্জন আমাদের জন্য আনন্দের। এ সনদপ্রাপ্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্য একটি অর্জন।। পেমেন্ট কার্ডের সুরক্ষা আমাদের ব্যবসার অপরিহার্য অংশ এবং আমরা এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করি।  সেবার উচ্চমান নিশ্চিত করা এবং আমাদের গ্রাহকদের সেনসেটিভ অ্যাসেট সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে কার্যক্রম পরিচালনা করার স্বীকৃতি হচ্ছে আমাদের এই সনদ অর্জন।’

তিনি বলেন, ‘এই স্বীকৃতি নিশ্চিত করে যে, আমাদের প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সকল কমপ্লায়েন্স মেনে চলে এবং ডেটা সুরক্ষার প্রধান বিষয়গুলো গোপনীয়তা, বিশ্বস্ততা এবং প্রাপ্যতা, নিশ্চিত করে। প্রতিষ্ঠানের কৌশল ও লক্ষ্যের সাথে কাজের প্রক্রিয়া এখন আগের থেকে আরও বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড বর্তমানে পেমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রি ডেটা সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড (পিসিআই ডিএসএস) সনদপ্রাপ্ত দেশের একমাত্র এনবিএফআই। যেসব প্রতিষ্ঠান কার্ড ব্যবসা পরিচালনা করে তাদের জন্য এই স্বীকৃতি অর্জন বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি আবশ্যক শর্ত এবং লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড সকল কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের সকল নির্দেশনা অনুসরণে প্রতিশ্রুকিবদ্ধ।

নির্ভরযোগ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড নিরবচ্ছিন্নভাবে উন্নত আর্থিক পণ্য ও সেবা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ, পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি এর অংশীজনদের সর্বোচ্চ ভ্যালু প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে। লংকাবাংলা ফাইন্যান্স লিমিটেড এর সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং দৃঢ় ব্যবসায়িক মনোভাবের জন্য সুপরিচিত। অভিজ্ঞতার সাথে দক্ষতার সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গ্রাহকদের উৎকৃষ্ট মানের আর্থিক সমাধানের নিশ্চয়তা দেয়।

যেসব প্রতিষ্ঠান কার্ড ব্যবসা পরিচালনা করে এবং সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদান করে, পিসিআই ডিএসএস তাদের জন্য কার্ড সুরক্ষার মানদ- হিসেবে কাজ করে। বিশ্বের প্রধান কার্ড ব্র্যান্ড গুলো যেমন, মাস্টারকার্ড, ভিসা, পিসিআই স্ট্যান্ডার্ড প্রতিপালন বাধ্যতামূলক করেছে, তবে এটি পরিচালনা করে পেমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রি সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড কাউন্সিল (পিসিআই এসএসসি)। কিউএসএ সেবা প্রদান করে এন্টারপ্রাইজ ইনফোসেক কনসালট্যান্টস (ইআইসি)।

সাউথ বাংলা ব্যাংকের আইপিও আবেদন শুরু সোমবার : শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পাওয়া সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ৫ জুলাই (সোমবার) থেকে আবেদন শুরু হবে। কোম্পানি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, কোম্পানিটির আইপিওতে ৫ জুলাই আবেদন শুরু হয়ে চলবে ১১ জুলাই পর্যন্ত। সাউথ বাংলা ব্যাংক শেয়ারবাজারে ১০ কোটি সাধারণ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা। শেয়ারবাজার থেকে ব্যাংকটি অর্থ উত্তোলন করে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করবে।

কোম্পানিটির ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী পুন:মূল্যায়ন ছাড়া নেট অ্যাসেটভ্যালু হয়েছে ১৩.১৮ টাকা। আর ওই বছরের ৯ মাসে ইপিএস হয়েছে ০.৯৪ টাকা। যা বিগত ৫ বছরের ভারিত গড় হারে হয়েছে ১.২৪ টাকা। আইপিওতে কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট।

উল্লেখ্য, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির পূর্বে ব্যাংকটি কোন প্রকার লভ্যাংশ ঘোষণা, অনুমোদন ও বিতরন করতে পারবে না। গত ০৯ মে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭৭৩তম সভায় কোম্পানিকে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়।

৬ কোটি টাকা মুনাফায় তিন কোটি টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ ২০২০ অর্থবছরের ব্যবসায় অর্জিত মুনাফা থেকে শেয়ারহোল্ডারদের পৌনে ৩ কোটি টাকার নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ৩০ জুন কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা আগামি ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে প্রদান করা হতে পারে।

পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ২০২০ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ১.১৬ টাকা মুনাফা হয়েছে। সে হিসেবে মোট মুনাফা হয়েছে ৬ কোটি ৪১ লাখ ৫৩ হাজার ৯৬০ টাকা। এরমধ্য থেকে ৫ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ০.৫০ টাকা হিসাবে শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৯ টাকা বিতরন করা হবে। এছাড়া কোম্পানিটি ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এহিসেবে বোনাস শেয়ারবাবাদ ২ কোটি ৭৬ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৯ টাকা পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হবে।

বাকি ৮৮ লাখ ৪৮ হাজার ৮২২ টাকা কোম্পানির রিজার্ভ ফান্ডে রেখে দেয়া হবে। ৫৩ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ১৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার রিজার্ভ রয়েছে।