দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ৩ খাতের শেয়ারে উত্থানে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। মুলত শেষ ঘণ্টায় পাল্টে গেল পুঁজিবাজারের চিত্র। এই সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ওষুধ ও রসায়ন এবং বিমা কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান হয়েছে। যা ছিল টানা দুই কার্যদিবস দরপতনের পর উত্থান। এদিন সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দামও। তবে কমেছে লেনদেন। বৃহস্পতিবার বাজারে চার ঘণ্টা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিন ঘণ্টা ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ বেশির ভাগ খাতের শেয়ারের বিক্রির চাপে সূচক ওঠানামার মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়েছে।

তবে শেষ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২২টি প্রতিষ্ঠানের সবগুলোর দাম বাড়ার মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়। একইভাবে বিমা খাতের ৫১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের এবং ওষুধ রসায়ন খাতের ৩১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৯টি। এই তিন খাতের শেয়ারের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে লেনদেনের শেষ ঘণ্টায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে ৩৫ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বেড়েছে ১২০ পয়েন্ট।

ডিএসইর তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার ডিএসইতে মোট ৩৭৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৯১টির, কমেছে ১৫৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির। এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৯১ কোটি ৯১ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৭৮৯ কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমেছে।

বেশির ভাগ শেয়ারের দাম বাড়ায় এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২১২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৪১ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২৪৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। এরপর লেনদেন হয়েছে লাফার্জহোলসিমের শেয়ার। ক্রমান্বয়ে রয়েছে কেয়া কসমেটিকস, বেক্সিমকো ফার্মা, আমান ফিড, ন্যাশনাল ফিড মিলস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, এমএল ডাইং, পাওয়ার গ্রিড এবং একটিভ ফাইন লিমিটেড।

অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২০ পয়েন্ট বেড়ে ১৮ হাজার ১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেড়েছে ১৫৯টির, কমেছে ১৩৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির শেয়ারের দাম। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৪ কোটি ৫ লাখ ৮০৯ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭৮ কোটি ৩০ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আসছে: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি সাউথইস্ট অবশেষে চেয়ারম্যান পদটিতে এই পরিবর্তন আসছে বলে কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে। গত বুধবার ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তনের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গত ১৭ বছর যাবত টানা সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন আলমগীর কবির। ২০০৪ সাল থেকে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। পেশাদার হিসাববিদ আলমগীর কবির পরিচালক হিসেবে ২০০২ সালে সাউথইস্ট ব্যাংকের পর্ষদে যুক্ত হয়েছিলেন। এর পর থেকে তার একক কর্তৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে ব্যাংকটি।

তবে দীর্ঘদিন ধরে সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে থাকা আলমগীর কবিরের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব সম্প্রতি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আপত্তি উঠেছে একই ব্যক্তি বছরের পর বছর চেয়ারম্যান পদে থাকা নিয়েও। বিষয়টি নিয়ে আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ব্যাংকটির পাঁচজন উদ্যোক্তা পরিচালক।

চেয়ারম্যানের প্রতি অনাস্থার অংশ হিসেবে সম্প্রতি এ উদ্যোক্তারা ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) বয়কট করেন। উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে বিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ব্যাংকটির পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা তৈরি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (০৭ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এমএ কাশেমসহ অন্য উদ্যোক্তা পরিচালকদের সঙ্গে আলমগীর কবিরের সমঝোতা বৈঠক হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সমঝোতা বৈঠকে ব্যাংকের স্বার্থে দুই পক্ষই নমনীয়তা দেখিয়েছে। দীর্ঘ আলোচনা শেষে চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এমএ কাশেম ও সাবেক চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদের নাম এসেছে। তবে এমএ কাশেমই পরবর্তী চেয়ারম্যান হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এমএ কাশেম বলেন, সাউথইস্ট ব্যাংক আমার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাংকের নামটিও আমার দেয়া। ৫৫ বছর ধরে দেশ-বিদেশে সুনাম ও মর্যাদার সঙ্গে আমি ব্যবসা করেছি। বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের নেতৃত্বেও ছিলাম। কিন্তু কখনই কোনো বিষয়ে দুর্নাম শুনতে হয়নি। রাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে কাদা ছোড়াছুড়ি আমাদের মানায় না। এজন্য নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্যই বৈঠকে বসেছিলাম। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি জানান, তিনজন পরিচালকের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আইন অনুযায়ী এজিএমে পদত্যাগ করে নতুন করে নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তিনজনের পরিচালক পদে অনুমোদনের পর পর্ষদ সভা হবে। পর্ষদের সভায় ব্যাংকের মঙ্গলের স্বার্থে যেকোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আমরা সবাই সাউথইস্ট ব্যাংকের মঙ্গল চাই।

দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে সাউথইস্ট ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শিল্পোদ্যোক্তা এমএ কাশেম। এরপর ২০০৪ সাল পর্যন্ত সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে অন্য উদ্যোক্তা পরিচালকরা নিয়মিতভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

পরবর্তী সময়ে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন শিল্পোদ্যোক্তা ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, রাগীব আলী এবং আজিম উদ্দিন আহমেদ। ২০০২ সালে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত হন পেশাদার হিসাববিদ আলমগীর কবির। ২০০৪ সালে তিনি চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১৭ বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর কবির বলছেন, গত ১৭ বছরে তিনি ব্যাংকটিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংকে রূপান্তর করেছেন। দীর্ঘ এ সময়ে কেউ কোনোদিন তার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। এখন হঠাৎ করে কেন অন্য পরিচালকরা এ বিষয়ে কথা বলছেন, সে বিষয়ে তিনি জ্ঞাত নন। তিনি বলেন, সাউথইস্ট ব্যাংকের পর্ষদ দেশের বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে সবচেয়ে ভালো পর্ষদ।

ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থানও দেশের শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে পড়ে। মূলধন সক্ষমতা, মুনাফা পরিস্থিতি, আমানত ও বিনিয়োগের পরিমাণসহ বিভিন্ন সূচকে সাউথইস্ট ব্যাংকের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। উদ্যোক্তা পরিচালকদের কোনো কথা থাকলে সেটি নিয়ে পর্ষদে আলোচনা হতে পারে। প্রথম মেয়াদের দায়িত্ব পালন শেষেই আমি চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরিচালকদের অনুরোধেই এতদিন দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে থাকা নিয়ে এখনো আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই।

রাজধানীতে প্রথম ‘ডিজিটাল বুথ’ খুলছে গ্রিন ডেলটা সিকিউরিটিজ: পুঁজিবাজারের পরিধিসহ বিনিয়োগ বাড়াতে ব্রোকারেজ হাউজের শাখা হিসেবে দেশে ও বিদেশে ‘ডিজিটাল বুথ’ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের মে মাসে বিদেশের মাটিতে ২টি ও দেশের অভ্যন্তরে ৩টি ব্রোকারেজ হাউজকে এ ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি আরও ২টি ব্রোকারেজ হাউজকে এ ধরনের ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমতি দেওয়া হয় বলে বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে। সম্প্রতি ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমতি পাওয়া ব্রোকারেজ হাউজ দু’টি হলো গ্রিন ডেলটা সিকিউরিটিজ (ট্রেক- ১৩০) ও রয়েল ক্যাপিটাল (ট্রেক- ২১)।

এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় প্রথম ডিজিটাল বুথ খুলতে যাচ্ছে গ্রিন ডেলটা সিকিউরিটিজ। আর ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল বুথ খুলবে রয়েল ক্যাপিটাল। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সদস্যভুক্ত ৭টি ব্রোকারেজ হাউজ ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমতি পেয়েছে।

সিএসই সদস্যভুক্ত গ্রিন ডেলটা সিকিউরিটিজ দেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকার ধানমণ্ডিতে ডিজিটাল বুথ খুলতে যাচ্ছে। ফলে ঢাকায় প্রথমবারের মতো ডিজিটাল বুথ চালু করে ইতিহাসে নাম লিখতে যাচ্ছে ব্রোকারেজ হাউজটি। বর্তমানে শেয়ারবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকায় কঠোর লকডাউনের মধ্যেও ডিজিটাল বুথ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রোকারেজ হাউজটি। আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে এ বুথ চালু করা হতে পারে। এ জন্য সকল প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে গ্রিন ডেলটা সিকিউরিটিজ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, রয়েল ক্যাপিটাল কক্সবাজার জেলার ঝিলংজা ইউনিয়নে ডিজিটাল বুথ চালু করবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল বুথ খুলে ইতিহাসে নাম লিখতে যাচ্ছে রয়েল ক্যাপিটাল। ঈদুল আজহার পর ব্রোকারেজ হাউজটি এ ডিজিটাল বুথ খোলার প্রস্তুতি নিয়েছে।

বিএসইসি জানিয়েছে, স্থানীয়, প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে দেশে ও বিদেশে ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমতি দিচ্ছে কমিশন। এর মধ্যে বেশ কিছু ব্রোকার তাদের পছন্দমতো জায়গায় বুথ খোলার আবেদন জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন যাচাই-বাছাই করে পর্যায়ক্রমে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে প্রথম ডিজিাল বুথ খুলে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড। পরে কানাডার টরেন্টোতে ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমতি পায় পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজ। তবে এখনও বুথ চালু করতে পারেনি ব্রোকারেজ হাউজটি।

এর পরেই দেশের অভ্যন্তরে ডিজিটাল বুথ খুলে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ। এরপর কবির সিকিউরিটিজ ও বি রিচকেও ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়। আর চলতি বছরে জুন মাসে গ্রিন ডেল্টা সিকিউরিটিজ ও রয়েল ক্যাপিটালকে একই ধরনের বুথ খোলার অনুমতি দেওয়া হল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রিন ডেলটা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়াফি শফিক মিনহাজ খান বলেন, ‘গত মাসে আমরা ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমতি পেয়েছি। শিগগিরই আমরা ডিজিটাল বুথটি চালু করব। আমরা প্রস্তুত। ঢাকার প্রথম ডিজিটাল বুথটি হবে গ্রিন ডেলটা সিকিউরিটিজে। তবে লকডাউনের কারণে তেমন কোনো উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা থাকবে না।’

এদিকে, রয়েল ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম মুনির আহমেদ বলেন, ‘গত মাসে আমরা ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমতি পাই। ঈদুল আজহার পর বুথটি চালু করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। লকডাউনের কারণে আমরা বুথটি চালু করার জন্য সময় নিচ্ছি। এ জন্য আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, ধানমণ্ডি এলাকার সাত মসজিদ রোডের ৫/এ, বিকল্প টাওয়ারে (বাসা নম্বর ৭৪) গ্রিন ডেলটা সিকিউরিটিজ এবং কক্সবাজার জেলার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদে রয়েল ক্যাপিটাল ডিজিটাল বুথ চালু হবে।

খেলাপি ঋণে জর্জরিত রাষ্ট্রীয় ছয় ব্যাংক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে ভালো করলেও সরকারি মালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই। দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শেষ হিসাব বলছে, গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে এই ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে এক হাজার ১৭৮ কোটি টাকা।

এই সময়ে বেসরকারি বেশ কিছু ব্যাংক তাদের খেলাপি ঋণ মোট ঋণের তিন শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে পারলেও সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএলের খেলাপি ঋণ মোট ঋণের ২০ শতাংশের বেশি। এর বাইরে আছে অবলোপন করা আরও সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা।

নানা সময় আলোচনা সমালোচনার পর টাকা উদ্ধারে ব্যাংকগুলো প্রায়ই আদায় সপ্তাহ বা আদায় মাস ঘোষণা করে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। করোনাকালে যখন নিয়মিত ঋণ পরিশোধেই নানা সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে, তখন খেলাপি হয়ে যাওয়া অর্থ আদায় আরও কঠিন হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মার্চ শেষে সোনালী, জনতা, রূপালী, অগ্রণী, বেসিক ও বিডিবিএল এ ছয় ব্যাংক মোট ২ লাখ ৭ হাজার ৭৭১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এ ঋণের ৪৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকায় অনাদায়ী অর্থাৎ খেলাপি।

যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ। সুশাসন, বিধি বিধান মেনে চলা হলে পরিস্থিতির যে উন্নতি সম্ভব, সেটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের হিসাবেই স্পষ্ট। এই ৩১টি ব্যাংকে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ৪.৯৫ শতাংশ। যেখানে পুঁজিবাজারের বাইরের ব্যাংকগুলোতে এই হার ১৬.১৮ শতাংশ।

ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ছয় ব্যাংক ২ লাখ ২ হাজার ৩৩০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৪২ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। মোট ঋণের ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশ ছিল খেলাপি। মূলধন ঘাটতির শীর্ষেও রয়েছে এসব ব্যাংক। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ২৪ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ১১টি ব্যাংক। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি।

অবলোপন করা ঋণ থেকেও তেমন আদায় করতে পারেনি এসব ব্যাংক। ২০২০ সালে অবলোপনের মাধ্যমে ৬ হাজার ৫৯০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ ব্যাংকের ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অবলোপন করে এক হাজার ৩৭০ কোটি টাকা বা মোটের ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংক অবলোপন করা ঋণ থেকে আদায় কমেছে মাত্র ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকার মতো, যা শতকরা হিসেবে দশমিক ৯৩ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আর্থিক কেলেঙ্কারি, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে। এই বিশাল অর্থ উদ্ধারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি ব্যাংকগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। ঋণের গুণগত মান, খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি, পরিচালকদের বেপরোয়া ঋণ গ্রহণ এসব সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। এসব ব্যাংকের তদারকি কার্যক্রম বাড়ানো প্রয়োজন। তবে শুধু তদারকি বাড়ালে হবে না, অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যাংকার, গ্রাহক ও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারের উচিত রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর দক্ষতা বাড়ানো ও খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে যারা ব্যর্থ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া।’ ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণে শীর্ষ অবস্থানে এটি।

মার্চ শেষে ব্যাংকটির ৫৭ হাজার ৮২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি ১৩ হাজার ৫৭০ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ২৩.৭৭ শতাংশ। ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১২ হাজার ৮৮৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তিন মাসে ব্যাংকটির আরও ৬৮৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে। মার্চে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি দাঁড়ায় ৪১৭ কোটি টাকা, যা তিন মাস আগে ছিল পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।

আবদুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকার আগে পর্যন্ত সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে ছিল এই কোম্পানিটি। তবে ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ব্যাংকটি এতটাই বিপাকে পড়েছে যে কর্মীদের বেতন কমিয়ে খরচ কমাতে চাইছে। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শকতরা হিসেবে সবচেয়ে ন্জুক অবস্থায় আছে এই ব্যাংকটি। মার্চ শেষে এদের ঋণ বিতরণ ১৪ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৮ হাজার ৮০ কোটি ৭২ লাখ, যা বিতরণকৃত ঋণের ৫৫.৩৪ শতাংশ।

ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৫০২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। তিন মাসে ব্যাংকটির ৫১৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি এক হাজার ৭২ কোটি টাকা। তবে এই দিক থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আগের প্রান্তিকের চেয়ে এটি ২৮ দশমিক ১৫ শতাংশ কম।
বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমান জানান, ‘আমরা খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি।

মূলধন ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে এটি।’ ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের বড় অংশ এখনও আদায় করা সম্ভব হয়নি। এর প্রায় ৯০ শতাংশই আদায়যোগ্য নয়। এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকটি থেকে অন্তত চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ ব্যাংকটির আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও বোর্ড সদস্য এতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। মার্চ শেষে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।

এর মধ্যে খেলাপি ৬৫৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যা বিতরণকৃত ঋণের ৩৫.৩৬ শতাংশ। ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৯৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। তিন মাসে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। বিডিবিএলের কাছে জমা আছে গ্রাহকদের ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আমানত। ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি সবচেয়ে বেশি আমানতের এই ব্যাংকটির। সবশেষ হিসাব অনুযায়ী ব্যাংকটির ঘাটতি তিন হাজার ৬৯৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ডিসেম্বর শেষে ঘাটতি ছিল তিন হাজার ৬৩ কোটি টাকা।

তবে খেলাপি ঋণের দিক দিয়ে কিছুটা উন্নতি করতে পেরেছে ব্যাংকটি। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকটি খেলাপি ঋণ থেকে আদায় করেছে ৩২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির খেলাপি ১০ হাজার ৬৮৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১৯.৮০ শতাংশ। ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১০ হাজার ৭২১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। মার্চ শেষে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ ৫৩ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৫৫৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

তিন মাসে খেলাপি বেড়েছে ১ হাজার ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ অগ্রণী ব্যাংক। মার্চ শেষে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দুই হাজার ৯২১ কোটি ৯২ লাখ টাকা । সবশেষ তথ্য অনুযায়ী এ ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৯০৩ কোটি টাকা। মার্চ শেষে অগ্রণীর ঋণ বিতরণ ৪৭ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৬ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১৩.৭১ শতাংশ।

ব্যাংকটির মোট ঋণ ৩২ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৮৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। তবে ডিসেম্বরের চেয়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তখন ব্যাংকটিকে খেলাপি ঋণ ছিল ৩ হাজার ৯৭২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ ছিল খেলাপি। তিন মাসে আদায় ৮৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।