দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (৫ থেকে ৮ জুলাই) খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষ স্থানে রয়েছে টেক্সটাইল খাত। ডিএসইতে মোট খাতভিত্তিক লেনদেনের মধ্যে ১৮.৫০ শতাংশ অবদান রয়েছে এ খাতে। খাতভিত্তিক লেনদেনের মধ্যে ১২.৬০ শতাংশ লেনদেন করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। আর ৯.৯ শতাংশ লেনদেন করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিবিধ খাত। ইবিএল সিকিউরিটিজের সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, খাতভিত্তিক লেনদেনের তালিকায় থাকা অন্যান্য খাতগুলোর মধ্যে প্রকৌশল খাতে ৮.৯০ শতাংশ, ব্যাংক খাতে ৮.১০ শতাংশ, সাধারণ বিমা খাতে ৭.৬০ শতাংশ, আর্থিক খাতে ৬.৮০ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল খাতে ৪.৯০ শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৪.৫০ শতাংশ,

জীবন বিমা খাতে ৩.৬০ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ৩.৪০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে ৩ শতাংশ, আইটি খাতে ২.৩০ শতাংশ, টেলিকম খাতে ১.৩০ শতাংশ, সেবা ও আবাসন খাতে ১.১০ শতাংশ, সিরামিক খাতে ১.১০ শতাংশ, পেপার খাতে ১ শতাংশ, ট্যানারি খাতে ০.৯০ শতাংশ, ভ্রমণ খাতে ০.৫০ শতাংশ ও পাট খাতে ০.১০ শতাংশ অবদান রয়েছে।

সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ২০০৬ সালের শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ি, ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন করা এবং তা কর্মীদের মধ্যে বিতরন করা বাধ্যতামূলক হলেও সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ তা করেনি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। এর মাধ্যমে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মীদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, বীমা কোম্পানিটির সাবসিডিয়ারি সোনার বাংলা ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টে ৯ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার মানি ডিপোজিট রয়েছে। যা ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধিত মূলধনে রুপান্তর না করে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দেশনা অমান্য করা হয়েছে।
এদিকে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) বিনিয়োগ নীতি পরিপালন করছে না সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪০ কোটি ৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন শ্রেণীর (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতিত) বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৩.২২ শতাংশ। কোম্পানিটির শনিবার (১০ জুলাই) শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ৮৬.২০ টাকায়।

১৩ কোম্পানির পুঁজিবাজার থেকে ১২৮৪ কোটি টাকা সংগ্রহ: সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়ে পুঁজিবাজার থেকে ১২৮৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অর্থ সংগ্রহ করা ১৩ কোম্পানির মধ্যে ৪টি কোম্পানি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে এবং বাকি ৯টি কোম্পানি অভিহিত মূল্যে অর্থ উত্তোলন করেছে। এই সময় অনুমোদন পাওয়া কোম্পানির মধ্যে রবি সবচেয়ে বেশি ৫২৩ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে।

এছাড়া ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি টাকা , ডমিনেজ স্টিল ৩০ কোটি টাকা, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন ১৫ কোটি টাকা, দেশ জেনারেল ১৬ কোটি টাকা এবং এনআরবিসি ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে।

এছাড়া ই-জেনারেশন ১৫ কোটি টাকা, তাওফিকা ফুড ৩০ কোটি টাকা, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা, সোনালী লাইফ ১৯ কোটি টাকা, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ১০০ কোটি টাকা, ইনডেক্স এগ্রো ৫০ কোটি টাকা, লুব-রেফ বাংলাদেশ ১৫০ কোটি টাকা এবং এনার্জি প্যাক পাওয়ার ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক বছর পুঁজিবাজার স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। এ সময়ে নতুন নতুন কোম্পানি আসায় বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো হয়েছে। কারণ তাদের অনেকেই আইপিওর শেয়ার পেয়ে মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের মতে, বিদায়ী অর্থবছরে পুঁজিবাজারে আসা কোম্পানিগুলো মানের দিক থেকে বেশ ভালো। এখন পর্যন্ত ক্ম্পোানিগুলোর পারফরমেন্সও ভালো।

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি আসা দরকার। কারণ দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়েছে, পুঁজিবাজার সেভাবে এগোতে পারছে না। এর প্রধান কারণ বাজারে ভালো কোম্পানির অভাব। ভালো কোম্পানি না থাকায় বাজারের সঙ্গে বেশি মানুষ যুক্ত হচ্ছে না। সে কারণে পুঁজিবাজার অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে এগোতে পারছে না। দুর্বল কোম্পানি বেশি আসার চেয়ে ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম তালিকাভুক্ত হওয়াও ভালো।

একই ধরনের মন্তব্য করেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আগে বাজারে অনেক দুর্বল কোম্পানি এসেছে। বাজারে নামসর্বস্ব কোম্পানির সংখ্যা না বাড়িয়ে নিয়ে আসা দরকার ভালো মানের কোম্পানি। আমাদের দেশে অনেক ভালো মানের কোম্পানি রয়েছে। সেসব কোম্পানি বাজারে আনা দরকার। বাজারে আনা দরকার গ্রামীণফোনের মতো ভালো মানের কোম্পানি। তাহলেই কেবল পুঁজিবাজারে আরও ভালো শেয়ারের জোগান বাড়বে।’

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অনুমোদন দেয়া হয়েছে মাত্র চারটি কোম্পানির আইপিও, যা ছিল ১২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন আইপিও অনুমোদন। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরে তা তিনগুণ হয়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পুঁজিবাজার থেকে চার কোম্পানির মাধ্যমে পুঁজি সরবরাহ করা হয়েছে ৩৩৩ কোটি আট লাখ টাকা। ওই বছর আইপিও কমে যাওয়ার কারণ কিছুদিন আইপির অনুমোদন বন্ধ ছিল। আবার করোনার জন্য ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। তবে এ বছর বাজারের মন্দা পরিস্থিতি কাটানোর জন্যই মূলত এই নীতি গ্রহণ করা হয়।

বিগত বছরগুলোর আইপিও অনুমোদন চিত্রে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অনুমোদন দেয়া হয় ১২টি কোম্পানির আইপিও, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যার সংখ্যা ছিল ১০টি। এর আগের অর্থবছর অনুমোদন দেয়া হয় পাঁচটি কোম্পানির আইপিও। এছাড়া ২০১৫-১৬তে ৯টি, ২০১৪-১৫তে ১৫টি, ২০১৩-১৪তে ১৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছর ১২টি, ২০১১-১২তে ১০টি, ২০১০-১১তে সাতটি, ২০০৯-১০-এ ১২টি ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সাতটি কোম্পানির পুঁজিবাজারে আসার অনুমোদন মেলে।

প্রসঙ্গত, বিএসইসি গঠনের ২৭ বছরে (১৯৯৩) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ২৯৯ কোম্পানি। এর মধ্যে কমিশন গঠনের প্রথম ৯ বছরে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৯৯ কোম্পানি। আর দ্বিতীয় ৯ বছরে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৯৪টি। বাকি ৯ বছরে অর্থাৎ খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন সময়ে তালিকাভুক্ত হয়েছে ১০৪টি।

সপ্তাহজুড়ে আট কোম্পানির ইপিএস প্রকাশ: সপ্তাহজুড়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৮ কোম্পানি সমাপ্ত প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানিগুলো হলো-পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স, সামিট এলায়েন্স পোর্ট, ফাইন ফুডস, ন্যাশনাল ব্যাংক, পূরবী জেনারেল ইন্সুরেন্স,ওরিয়ন ইনফিউশন, ওরিয়ন ফার্মা ও ঢাকা ডায়িং লিমিটেড।

পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স: প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৪ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ টাকা ৩ পয়সা।

সামিট এলায়েন্স পোর্ট: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৪ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ছিল ১৭ পয়সা। নয় মাসে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৫৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩৬ পয়সা।

ফাইন ফুডস: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৮ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৬০ পয়সা। নয় মাসে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৭ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৪৪ পয়সা।

ন্যাশনাল ব্যাংক: প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৩ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩০ পয়সা।

পূরবী জেনারেল ইন্সুরেন্স: প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪৮ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ছিল ২৫ পয়সা।

ওরিয়ন ইনফিউশন: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩৩ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ছিল ২৪ পয়সা। নয় মাসে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ১২ পয়সা।আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৩৮ পয়সা।

ওরিয়ন ফার্মা: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৯৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৬১ পয়সা। নয় মাসে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৯৮ পয়সা।আগের বছর একই সময়ে ছিল ২ টাকা ৭৫ পয়সা।

ঢাকা ডায়িং: তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৯ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ৪ পয়সা। নয় মাসে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪৭ পয়সা।আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩ পয়সা।

বস্ত্র খাতের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ৫ কোম্পানি: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে ৫টি কোম্পানি বিনিয়োকারীদের দীর্ঘদিন অন্ধকারে রেখেছে। কোম্পানিগুলো হলো: সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল, তুং হাই নিটিং, তাল্লু স্পিনিং, রিং সাইন টেক্সটাইল এবং মিথুন নিটিংস লিমিটেড।

চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কোম্পানিগুলো এখনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।  এমনকি আর্থিক প্রতিবেদন বিলম্বে প্রকাশ করার অনুমতিও কোম্পানিগুলো নেয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল, মিথুন নিটিংসহ বেশিরভাগ কোম্পানিরই কারখানা অনেকদিন যাবত বন্ধ রয়েছে। কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন সম্পর্কে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আর্কাইভে কোন তথ্য নেই। কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলো কোম্পানিই দুর্বল মৌলের এবং ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অর্ন্তভুক্ত।

পঁচা কোম্পানির শেয়ারের বাজিমাত: বিনিয়োগ উপোযোগী সত্বেও চাহিদা নেই ভালো কোম্পানির শেয়ারের। এতে যেমন বাজারে স্থিতিশীলতা আসছে না, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত সপ্তাহে ডিএসই’র সাপ্তাহিক গেইনার তালিকায় ভালো কোম্পানি নেই। গেইনার তালিকায় থাকা ১০টির মধ্যে ৫টিই ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি। ৪টি ‘এ’ ক্যাটাগরির হলেও সেগুলোকে ভালো কোম্পানি বলা যায় না।

কারণ ১০ শতাংশ নামে মাত্র ডিভিডেন্ড দিয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আসলেই সেগুলোকে ভালো কোম্পানি মনে করার কোনো কারণ নেই। কোম্পানিগুলোর আর্থিক ভিত, মূলধন রিজার্ভ, সম্পদমূল্যসহ প্রতি বছরের পাফরমেন্স দেখে বুঝা যায় যে কোম্পানিগুলো আসলে কতটুকু বিনিয়োগের জন্য ইতিবাচক।

ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার চিত্র অনুযায়ী, গেইনার তালিকার শীর্ষে ওঠে এসেছে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী লাইফ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৪৫.৪৫ শতাংশ। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ১৬ টাকায় লেনদেন হয়। কোম্পানিটির ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণের সময় এখনো আসেনি। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল প্রকৌশল খাতের ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানি রেনউইক যজ্ঞেশ্বর। সব দিক বিবেচনায় কোম্পানিটি বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত ঝঁকিপূর্ণ।

কোম্পানিটির মূলধন মাত্র ২ কোটি টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ এক কোটি ৯৮ লাখ টাকা। গত ৩টি প্রান্তিকেই কোম্পানিটি ধারাবাহিক লোকসান দেখিয়েছে, যে কারণে পিই রেশিও নেই অর্থাৎ কোম্পানিটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গত ২ বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি কোম্পানিটি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ১২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।

সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়রি’২১-মার্চ’২১) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য লোকসান ১৫ টাকা ৪৩ পয়সা। একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান (মাইনাস ইপিএস) ৬ টাকা ৮১ পয়সা। এরপরও কোম্পানিটির গত সপ্তাহে দর বেড়েছে ৩১.৫১ শতাংশ। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৯৯৩ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়। তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল আর্থিক খাতের ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড।

সব দিক বিবেচনায় এ কোম্পানি, বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত ঝঁকিপূর্ণ। কোম্পানিটির মূলধন ২২১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ২ হাজার ৭৪২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। গত ৩টি প্রান্তিকেই কোম্পানিটি ধারাবাহিক লোকসান দেখিয়েছে, যে কারণে পিই রেশিও নেই অর্থাৎ কোম্পানিটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

গত ২ বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি কোম্পানিটি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। সর্বশেষ প্রকাশিত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত নিরিক্ষীত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য লোকসান ১১৩ টাকা ৬৩ পয়সা। একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান (মাইনাস ইপিএস) ১৩৬ টাকা ২৬ পয়সা।

এরপরও কোম্পানিটির গত সপ্তাহে দর বেড়েছে ২৬.৯৮ শতাংশ। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৮ টাকায় লেনদেন হয়। তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল আর্থিক খাতের ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। সব দিক বিবেচনায় এ কোম্পানি, বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত ঝঁকিপূর্ণ।

কোম্পানিটির মূলধন ২২১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ২ হাজার ৭৪২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। গত ৩টি প্রান্তিকেই কোম্পানিটি ধারাবাহিক লোকসান দেখিয়েছে, যে কারণে পিই রেশিও নেই অর্থাৎ কোম্পানিটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

গত ২ বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি কোম্পানিটি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। সর্বশেষ প্রকাশিত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত নিরিক্ষীত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য লোকসান ১১৩ টাকা ৬৩ পয়সা। একই সময় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান (মাইনাস ইপিএস) ১৩৬ টাকা ২৬ পয়সা। এরপরও কোম্পানিটির গত সপ্তাহে দর বেড়েছে ২৬.৯৮ শতাংশ। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৮ টাকায় লেনদেন হয়। তালিকার ৫ম স্থানে ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল লিমিটেড। কোম্পানিটির মূলধন ২৫ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। গত ৩টি প্রান্তিকেই কোম্পানিটি ধারাবাহিক লোকসান দেখিয়েছে, যে কারণে পিই রেশিও নেই অর্থাৎ কোম্পানিটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি কোম্পানিটি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।

সর্বশেষ প্রকাশিত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত নিরিক্ষীত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ১১ টাকা ৯৯ পয়সা। এ সময় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান (মাইনাস ইপিএস) ৬৯ পয়সা। এরপরও কোম্পানিটির গত সপ্তাহে দর বেড়েছে ২৪.১৫ শতাংশ। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়।

তালিকার ৭ম স্থানে ছিল প্রযুক্তি খাতের ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিমিটেড। কোম্পানিটির মূলধন ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির পিই রেশিও ১১৩২.৫ পয়েন্ট, যা বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য এক শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে কোম্পানিটি।

সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি’২১-মার্চ’২১) অনিরিক্ষীত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ১২ টাকা ৮৭ পয়সা। একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) এক পয়সা। এরপরও কোম্পানিটির গত সপ্তাহে দর বেড়েছে ১৯.৫৩ শতাংশ। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৪৫ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়।

সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে লেনদেনের শীর্ষে ১৫ কোম্পানি: বিদায়ী সপ্তাহে চার কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এই চার কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে ১৫ কোম্পানির বিশাল লেনদেনে হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানিগুলো হলো: ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, রেনাটা ফার্মা, সোনালী পেপার, প্রাইম ব্যাংক, বিকন ফার্মা, সাফকো স্পিনিং, লিল্ডে বিডি, ব্র্যাক ব্যাংক, বিডি ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো লিমিটেড, ফরচুন সুজ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্সুরেন্স, ফনিক্স ফাইন্যান্স ও কাট্টালি টেক্সটাইল লিমিটেড।

এর মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর দুই দিনে ৫৬ কোটি ৬৩ লক্ষ ১১ হাজার টাকার শেয়ার, রেনাটা ফার্মার ৫২ কোটি ৬৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার, সোনালী পেপারের দুই দিনে ৩৭ কোটি ৩৭ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকার, প্রাইম ব্যাংকের ১০ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকার, বেক্সিমকোর ৯ কোটি ৮৭ লক্ষ ২২ হাজার টাকার, বিকন ফার্মার ৮ কোটি ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার,

সাফকো স্পিনিংয়ের ৬ কোটি টাকার, লিল্ডে বিডির ৫ কোটি ৭০ লক্ষ ২৯ হাজার টাকার, ব্র্যাক ব্যাংকের ৫ কোটি ৩৯ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকার, বিডি ফাইন্যান্সের ৫ কোটি ২৮ লক্ষ টাকার, ফরচুন সুজের ৮ কোটি ৯০ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকার,

এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ৪ কোটি ৬০ লক্ষ ৭২ হাজার টাকার, ইস্টার্ন ইন্সুরেন্সের ৪ কোটি ২০ লক্ষ ২৩ হাজার টাকার, ফনিক্স ফাইন্যান্সের ৩ কোটি ৫৫ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকার এবং কাট্টালি টেক্সটাইলের ৩ কোটি ১০ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ার দর বৃদ্ধির কারন অজানা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পেপার অ্যান্ড প্রিন্টিং খাতের খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের শেয়ারের দর হঠাৎ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোম্পানিটি লোকসানে থাকলেও শেয়ার দর বেড়েছে টানা ২৫ শতাংশের বেশি। মে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিলো ১২ টাকা।

কিন্তু জুন মাস জুড়ে বেড়ে ১৬ টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছে। লোকসানে থাকার পরও এভাবে শেয়ার দর বৃদ্ধির পেছনে কারসাজি আছে কিনা সেই প্রশ্ন এখন বিনিয়োগকারীদের। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিন প্রান্তিকে কোম্পানির লোকসান ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। নয় মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিলো ১৪ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) ছিলো ৯ টাকা ৭৪ পয়সা।

কোম্পানিটির গত কয়েক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পযালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৭ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিলো ১ টাকা ২২ পয়সা; ২০১৮ সালে ১ টাকা ২২ পয়সা; ২০১৯ সালে ২ টাকা ৩৪ পয়সা এবং ২০২০ সালে লোকসান কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ পয়সায়। আর চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিকেই কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে।

অথচ গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২৫ শতাংশ বা চার টাকার বেশি। ২০১৪ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ সালে কোনও ডিভিডেন্ড দেয়নি। ২০১৯ সালে এক শতাংশ এবং ২০২০ সালে মাত্র ০.২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। আর নামমাত্র এই ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণার ফলে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। কোম্পানিটির অনেক বিনিয়োগকারী দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের কাছে টেলিফোনে অভিযোগ করছেন যে, কোম্পানিটির ঘোষিত ডিভিডেন্ড তার এখনো পাননি।

সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, পেপার খাতের এই কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি আগ্রহ কমেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। ২০২০ সালে ৫.৮১ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে থাকলেও বর্তমানে তা ৪.০২ শতাংশে নেমে এসেছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিক্রি করা শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাঁধে পড়েছে।

কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ি, কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৩৯.৭৬ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪.০২ শতাংশ শেয়ার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৬.২২ শতাংশ শেয়ার।

কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ৭৩ কোটি ৪০ হাজার টাকা। এর বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ১৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এক মাসে এভাবে শেয়ার দর বৃদ্ধির কারণ কি জানতে কোম্পানিটির সচিব মিলন খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমাগত লোকসানে থাকা খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের শেয়ারের দর বাড়ার পেছনে কোনও কারসাজি আছে কি-না নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত তা ক্ষতিয়ে দেখা উচিত।

কারণ কোম্পানিটির ব্যবসায়ে নতুন কোনও পরিবর্তন আসেনি বা আসার খবরও শোনা যায়নি। এছাড়া গত কয়েক বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো কিছু নিয়েও আসতে পারেনি। কোম্পানিটির দর বাড়া মানে উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রি করার শঙ্কা তৈরি হওয়া।

পুঁজিবাজার তহবিল পরিচালনায় বোর্ড গঠন: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত লভ্যাংশ দিয়ে যে তহবিল গঠন করা হচ্ছে, সেটি পরিচালনায় বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে কারা থাকবেন, তারা নির্দিষ্ট না হলেও একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে। নএই বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে, তহবিল কীভাবে ব্যবহার করা হবে, কোন কোন শেয়ারে বিনিয়োগ করা হবে।

মার্জিন ঋণের সুদহার কী হবে, কাদেরকে এই অর্থ দেয়া হবে। মার্কেট স্টাবিলাইজেশন ফান্ড বা ‘পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা’ নামে তহবিল গঠনের প্রজ্ঞাপন জারির দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই এই বোর্ড গঠন করা হয়েছে। গত ২৭ জুন তহবিল গঠনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির ১১ দিনের মধ্যে বুধবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বৈঠকে এই বোর্ড অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে বোর্ডে কারা থাকছেন, সে নাম দেয়া হয়নি।

বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা একটা শর্টলিস্ট তৈরি করছি। এটা এখনই প্রকাশ করতে চাইছি না। তাদের বিষয়ে যাচাইবাছাই করছি।’ এই কাজে কত দিন লাগতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি নির্দিষ্ট নয়। তবে যত দ্রুত সম্ভব আমরা না চূড়ান্ত করব।’
যারা থাকবেন বোর্ড: প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তহবিল পরিচালনা করবে ১১ সদস্যের একটি বোর্ড।

এর চেয়ারম্যান ও তিন জন সদস্যকে নিয়োগ দেবে বিএসইসি। একজন সদস্য হবেন একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, যাকেও মনোনয়ন দেবে কমিশন। একজন করে সদস্য দেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। একজন সদস্য মনোনয়ন দেবে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএল, একজন মনোনয়ন দেবে সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিসিবিএল, একজন সদস্য মনোনয়ন দেবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানি বিএপিএলসি।

তহবিলের চিফ অফ অপারেশন বা সিওও হবেন একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। এই সদস্যের সবার পুঁজিবাজার, হিসাববিজ্ঞান, ফিনান্স ও অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আর অন্তত ৫ বছর অবশ্যই পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করতে হবে।

এই সদস্যদের কারও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শীর্ষ পদে পূর্ব ইতিহাস থাকা চলবে না। একজন সদস্য তিন বছরের জন্য দায়িত্ব পাবেন। তবে মেয়াদ বাড়ানো যাবে। নিয়মিত চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে বোর্ড সদস্যরা একজনকে চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেবেন। একটি অর্থবছরে তারা কমপক্ষে ছয়টি বৈঠক করবেন। তহবিলের জন্য সম্মিলিতভাবে জবাবহিদি করতে হবে বোর্ডকে।

আর তারা বিএসইসির কাছেও দায়বদ্ধ থাকবে। আগের দিন এই তহবিলের নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। কমিউনিটি ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখায় হিসাবটি খোলা হয়েছে। সেখানে অদাবিকৃত নগদ লভ্যাংশ বা আইপিও সাবস্ক্রিপশনের অবণ্টিত অর্থ পুঞ্জীভূত সুদসহ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে স্থানান্তর করতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে অবন্টিত লভ্যাংশ সংক্রান্ত অন্যান্য আনুষঙ্গিক তথ্য ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ কমিশন ও স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) কাছে জমা দিতে বলা হয়েছ। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই তহবিলের ৪০ শতাংশ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ারে।

৫০ শতাংশ অর্থে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দেয়া হবে। আর ১০ শতাংশ অর্থ অতালিতাভুক্ত কোম্পানি বা সরকারি সিকিউরিটিজ, স্থায়ী আমানত ও বেমেয়াদী মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা যাবে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলের অর্থ কোথায় কোথায় ব্যয় করা যাবে, সেটি নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে প্রজ্ঞাপনে

এই তহবিলের মার্জিন ঋণের সুদহার কত হবে, সেটি অবশ্য প্রজ্ঞাপনে বলা নেই। তবে এর কস্ট অব ফান্ড প্রায় শূন্য থাকায় সুদহারও কম হওয়া উচিত বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কমর্কতা দেবব্রত কুমার সরকার।
তিনি বলেন, ‘এই ফান্ড ব্যবহার করা হলেও কিন্ত দাবিদারদের টাকা পরিশোধ করতে হবে। ফলে খালি চোখে কস্ট অব ফান্ড দেখা না গেলেও কিছুটা তো ম্যাইনটেন্যান্স কস্ট থাকবে। তাই একেবারে ফ্রিও বলা যাবে না।’

তহবিলের ভাবনা যেভাবে: নিয়মিত লেনদেন না করা বা দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থানের কারণে ব্যাংক হিসাব বন্ধ বা অকার্যকর হয়ে যায়। এতে নগদ লভ্যাংশ ব্যাংক হিসাবে জমা হয় না। একই কারণে বিও হিসাব নবায়ন না করলে শেয়ার (স্টক) লভ্যাংশ জমা না হয়ে তা কোম্পানির কাছে ফেরত চলে যায়। কোম্পানি এগুলো সাসেপেন্ডেড হিসাবে জমা দেখিয়ে আর্থিক বিবরণী তৈরি করে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ২১ হাজার কোটি টাকার মতো অবণ্টিত লভ্যাংশ পড়ে থাকার খবর আসে। তখন এই অর্থ ব্যবহার করে কীভাবে পুঁজিবাজারকে উন্নত করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হয়। তখনই এই তহবিল গঠনের আলোচনা উঠে। আর ২৭ জুন প্রজ্ঞাপন জারির মধ্য দিয়ে এই তহবিল গঠন নিশ্চিত হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে অবণ্টিত লভ্যাংশের কথা জানতে পেরে সেটি ব্যবহারের পরিকল্পনা করে বিএসইসি

বিএসইসির ’ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবলাইজেশন ফান্ড’ খসড়া নীতিমালার উপর মতামত জন্য উন্মুক্ত করে গত ৮ মার্চ। এরপর এ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নীতিমালার উপর মতামত দেয়। খসড়া নীতিমালার উপর বিএসইসিতে লিখিত প্রস্তাব পাঠায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির সমিতি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেট কোম্পানি-বিএপিএলসি। তাদের বেশ কিছু আপত্তি বিবেচনায় নেয়া হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে নানা আলোচনার পর অবশেষে নীতিমালা চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য পাঠানো হয় বিজিপ্রেসে।

তহবিল কত: বিএসইসি দেখেছে, টাকার অঙ্কে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত বোনাস লভ্যাংশের পরিমাণ ১১ হাজার কোটি টাকা ও নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ ৬৩৪ কোটি টাকা। সিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে অবণ্টিত বোনাস লভ্যাংশের পরিমাণ ৮ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা ও নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ ৩২১ কোটি টাকা। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৮০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার অদাবিকৃত লভ্যাংশ রয়েছে তামাক খাতের বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড-বিএটিবিসির।

এর মধ্যে ৮ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বোনাস লভ্যাংশ এবং ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা নগদ লভ্যাংশ। এটি ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাব। এরপর ব্যাংক খাতের ৩০ কোম্পানি, আর্থিক খাতের বেশ কিছু কোম্পানি ও বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ফলে তহবিলের অঙ্কটা বড় হতে পারে। তবে অবণ্টিত লভ্যাংশের বোনাস শেয়ার ও রাইট শেয়ার নিয়ে কী করা হবে, সেই বিষয়টি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এ বিষয়ে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম।

আইপিওতে বিনিয়োগকারীদের ৭০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ চূড়ান্ত হচ্ছে: প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতি এবং বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে সাধারন বিনিয়োগকারীদের জন্য ৭০ শতাংশ আইপিও কোটা বরাদ্দ রেখে পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধন করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শিগগিরই সংশোধিত আইনটি চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, সংশোধিত আইনে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ১০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ থাকবে। অন্যদিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ৩০ শতাংশ আইপিও কোটা বরাদ্দ থাকবে। এছাড়া প্রবাসীদের জন্য ৫ শতাংশসহ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৭০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা রাখা হবে।

এদিকে আইপিও আবেদনকারী কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ভিত্তিতে শেয়ার ছাড়ার পদ্ধতি আরোপ করতে যাচ্ছে কমিশন। আইপিও পরবর্তী যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত উন্নীত হবে, সেসব কোম্পানির ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। এ ছাড়া আইপিও পরবর্তীতে যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা থেকে ১৫০ কোটি টাকা হবে, সেসব কোম্পানিকে পরিশোধিত মূলধনের অন্তত ২০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। আর আইপিও পরবর্তীতে যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকার বেশি হবে, আইপিওতে সেসব কোম্পানিকে অন্তত ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে।

জানা যায়, ফিক্সড প্রাইস বা বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিওতে অর্থ সংগ্রহ করতে চাইলে তার ১৫% এর বেশি প্রাইভেট প্লেসমেন্ট করা যাবে না। অর্থাৎ যদি একটি কোম্পানি আইপিওতে ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায়, তার ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ৭.৫০ কোটি টাকার শেয়ার প্রাইভেট প্লেসমেন্টে ইস্যু করা যাবে। যেসব শেয়ার ইস্যুয়ার তার পছন্দের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ইস্যু করতে পারবে।

যা শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর আগে অন্যদের সঙ্গে বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে এই শেয়ার লক-ইন থাকবে। এক্ষেত্রে আইপিওতে আসা কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ধারণ করা শেয়ার ১ বছর ও প্রাইভেট প্লেসমেন্টের শেয়ার ২ বছরের লক-ইন থাকবে।

এদিকে কোম্পানির মুনাফার স্বচ্ছতা আনার জন্য ভ্য্টা চালান ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। আইপিও আবেদনে কোম্পানিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ভ্যাট চালান সংগ্রহ করে, তার সার্টিফায়েড কপি কমিশনে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যাংক স্টেটমেন্টও জমা দিতে হবে। প্রয়োজনে ভ্যাট চালান ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যাচাই করবে কমিশন।

সোনালী লাইফের ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড শেয়ারহোল্ডারদের জন্য দুই দফায় ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদন ও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

শনিবার পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হবে। এছাড়া চলতি বছরের (২০২১) জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য অন্তর্র্বতীকালীন ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হবে। পরিচালনা পর্ষদ ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) দিন নির্ধারণ করা হয়েছে আগস্টের শেষ সপ্তাহ। আর রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১ আগস্ট।

গত ৩০ জুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ারধারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৭৫ লাখ। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে ১৬ টাকায়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ক্রমে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ১৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে কোম্পানিটি। এই টাকা সরকারি ট্রেজারি বন্ড, ফিক্সড ডিপোজিট, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করবে। কোম্পানিটির শেয়ার পেতে প্রয়োজনের চেয়ে ৩৪ গুণের বেশি আবেদন জমা পড়ে।

ফলে আইপিওর নতুন নিয়মে ১০ হাজার টাকা করে আবেদনকারীরা সর্বনিম্ন ১৭টি করে শেয়ার পেয়েছেন। আর যারা ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার আবেদন করেছেন তারা ৩৪টি থেকে ৮৫টি শেয়ার পেয়েছেন। গত ৩০ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়। এদিকে নিয়ম ও বিধি-বহির্ভূতভাবে সোনালী লাইফের আইপিওতে ২৫ হাজার ৩৮৯ জন আবেদন করেছেন।

নিয়ম ভঙ্গের দায়ে তারা আইপিওর শেয়ার বরাদ্দ পাননি। উল্টো ৫ কোটি ৬৯ লাখ ২২ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হচ্ছে তাদের। তবে আর ভুল হবে না এমন আবেদনের মাধ্যমে মুচলেকা দিলে জরিমানা মাফ পাবেন এসব আবেদনকারী।

মুচলেকা দিলে জরিমানা মাফ সোনালী লাইফের আবেদনকারীদের: ‘আর ভুল হবে না’ এ রকম আবেদনের মাধ্যমে মুচলেকা দিলে জরিমানা মাফ পাবেন সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) ২৫ হাজার ৩৮৯ জন আবেদনকারী। নতুন পদ্ধতির আইপিওতে আবেদনকারীদের সচেতন করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে এরপর থেকে যারা এই কাজটি করবে তাদের অবশ্যই জরিমানা গুনতে হবে।

বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেক বিনিয়োগকারী না বুঝেই একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দিয়ে দুটির বেশি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের মাধ্যমে আইপিওতে আবেদন করেছে। এই বিনিয়োগকারীরা যাতে এরকম ভুল আর না করেন, তারা নিজেরা এসে আবেদন করলে আমরা জরিমানা মওকুফ করে দেব। উল্লেখ্য, নিয়ম ও বিধি-বহির্ভূতভাবে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের আইপিও আবেদন করেছেন ২৫ হাজার ৩৮৯ জন। নিয়ম ভঙ্গের দায়ে তারা আইপিওর শেয়ার বরাদ্দ পাননি। উল্টো ৫ কোটি ৬৯ লাখ ২২ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হচ্ছে তাদের।

নিয়ম অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি আইপিওতে একটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দুটি বিও হিসাবে খুলতে পারেন। এই নিয়ম ভঙ্গ করেছেন ২৫ হাজার ৩৮৯টি বিওধারী বিনিয়োগকারীরা। তারা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে দুটির জায়গায় আরও বেশি বিও খুলে আইপিওতে আবেদন করেছেন। যার শেয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার।

টাকার অংকে যা দাঁড়িয়েছে ৩৭ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার। আইন অনুযায়ী এই টাকার ১৫ শতাংশ জরিমানা গুনতে হবে তাদের। ফলে ২৫ হাজার বিনিয়োগকারীর জরিমানা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৬৯ লাখ ২২ হাজার টাকা। তবে যারা জরিমানা মওকুফের জন্য বিএসইতে আবেদন করবে তারা জরিমানা মাফ পাবে

সাউথ বাংলার আইপিওতে থাকছে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কোটা: সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিওতে) ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ কোটা থাকছে। গত ৫ জুলাই শুরু হওয়া ব্যাংকটির আবেদন গ্রহণ চলবে আগামী ১২ জুলাই পর্যন্ত।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আইপিওর বিশেষ কোটার মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। এ সময়ের মধ্যে যেসব কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সেগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য কোটা সুবিধা থাকবে। সেই হিসেবে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকের আইপিওতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কোটা থাকবে।’

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনের পর ১০ কোটি শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা মূলধন উত্তোলন করবে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংক। ১০ টাকা মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের মাধ্যমে এই টাকা উত্তোলন করা হবে। উত্তোলিত অর্থ সরকারি সিকিউরিটিজ কেনার পাশাপাশি আইপিওর খরচ বাবদ ব্যয় করবে ব্যাংকটি।

ব্যাংকটির প্রসপেক্টাস অনুসারে, ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া নেট অ্যাসেট ভ্যালু ১৩ টাকা ১৮ পয়সা। শেয়ার প্রতি আয় ৯৪ পয়সা। বিগত ৫ বছরের ভারিত গড় হারে শেয়ার প্রতি আয় ১ টাকা ২৪ পয়সা। ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪৯৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটিকে পুঁজিবাজারে আনতে ইস্যু ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।

সপ্তাহজুড়ে ৪৩৬ কোটি টাকার লেনদেন বেক্সিমকোর: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেড। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪ টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে । যার বাজার মূল্য ৪৩৬ কোটি ৪৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাফার্জ হোলসিমের ২ কোটি ৫০ লাখ ৪২ হাজার ৭৭৫ টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১৫৫ কোটি ৫৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা কেয়া কসমেটিকসের ১৪ কোটি ৮৩ লাখ ৪৩ হাজার ৪০১ টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

লেনদেনের তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে: এম এল ডায়িংয়ের ১১৫ কোটি ৭৯ লাখ ১৮ হাজার টাকার, লংকা বাংলা ফাইন্যান্সের ১০৩ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকার, ন্যাশনাল ফিডের ৯৯ কোটি ৪৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকার,

আমান ফিডের ৯৭ কোটি ১৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকার, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ৭৪ কোটি ৭৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকার, ম্যাকসন স্পিনিংয়ের ৮০ কোটি ৫২ লাখ ৫৩ হাজার টাকার ও ডেল্টা লাইফের ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।