দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে লেনদেনের অপেক্ষায় থাকা বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের শেয়ার বিতরণে বড় গরমিল ধরা পড়েছে। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ভুলের কারণে কোম্পানিটির আইপিও শেয়ার বিতরণে এই গড়মিল হয়েছে। এতে দেখা যায়, ডিএসইর ভুলের কারণে প্রায় ১৫ লাখ শেয়ারের গরমিল হয়েছে।

এই গরমিলের ফলে এক ক্যাটাগরির শেয়ার অন্য ক্যাটাগরির বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন। এতে কপাল পুঁড়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। এর আগে ইস্যু ম্যানেজারদের তত্ত্বাবধানে লটারির মাধ্যমে শেয়ার বিতরণের কাজটি করা হতো। সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে ডিএসইর তত্ত্বাবধানে লটারির কাজ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে লটারির পরিবর্তে ইলেকট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম (ইএসএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বরাদ্দ দিচ্ছে। কিন্তু দ্বিতীয় কোম্পানিতেই (বারাকা পতেঙ্গা) গরিমল করে ফেলল ডিএসই।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, কমিশন কখনোই চাইবে না এক ক্যাটাগরির জন্য বরাদ্দকৃত শেয়ার অন্য ক্যাটাগরির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করা হোক।

জানা যায়, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার মোট ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ৪৮৮টি শেয়ার ইস্যু করবে। এরমধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারী বা বিডারদের (ইআই) ক্যাটাগরিতে দেওয়া হবে ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৮৮টি। বাকি ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ২০০টি শেয়ার বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে (ইআই ব্যতিত) নিয়ম অনুযায়ি ভাগ করে দিতে হবে।

যা বিএসইসি কনসেন্ট লেটারে নির্ধারিত করে দিয়েছে। বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ি, আইপিওর ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ২০০টি শেয়ারের মধ্যে প্রবাসি বিনিয়োগকারীদের ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার শেয়ার দিতে বলা হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্থসহ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ২ কোটি ৯৫ লাখ ৮ হাজার ২০০টি শেয়ার। আইপিওর বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য থাকে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৬ হাজার ৫৬০টি শেয়ার।

কিন্তু ডিএসই কর্তৃপক্ষ ভুলে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটায় শেয়ার বরাদ্দ কমিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ও প্রবাসিদের মধ্যে বাড়িয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৬টি শেয়ার কম দেওয়া হয়েছে। বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্থ কোটায় ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪০৮টি এবং প্রবাসি কোটায় ৪৮টি শেয়ার বেশি দেওয়া হয়েছে।

ডিএসইর এই ভুলের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৫৮টির পরিবর্তে ৫৪টি করে শেয়ার পেয়েছেন। আর ক্ষতিগ্রস্থ কোটায় বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন ৭৭টির জায়গায় ৯৭টি করে। এতে সাধারন বিনিয়োগকারীরা ৪টি করে কম পেয়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ কোটার বিনিয়োগকারীরা ২০টি করে বেশি পেয়েছেন।

এ বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটোয়ারি বলেন, বারাকা পতেঙ্গার শেয়ার বিতরণে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তার (সিওও) নেতৃত্বে একটি দল কাজ করছে। যদি কোন ধরনের ভুল হয়ে থাকে, তাহলে তা সংশোধন করা হবে।

ডিএসই সাত ব্রোকারেজ হাউজের কার্যক্রম তদন্ত করবে বিএসইসি: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রকিবুর রহমানে প্রতিষ্ঠানসহ সাত ব্রোকারেজের কার্যক্রম তদন্ত করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) যৌথভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তাদেরকে আগামী ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র মতে, সাতটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্য এবং দুটি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসইসি) সদস্য। ডিএসইর সদস্যগুলো হলো সিনহা সিকিউরিটিজ, ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো. রকিবুর রহমানের প্রতিষ্ঠান মিডওয়ে সিকিউরিটিজ, রয়েল ক্যাপিটাল,এএনএফ ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এবং গ্লোব সিকিউরিটিজ লিমিটেড। সিএসইর সদস্য দুটি হলো- ভ্যানগার্ড শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটিজ এবং কবির সিকিউরিটিজ লিমিটেড।

বিএসইসির উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, এই সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো আভিযোগ জমা পড়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগের কারণেই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পুঁজিবাজারে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কনসোলিডেটেড কাস্টমারস অ্যাকাউন্টের (সিসিএ) টাকা নয়-ছয় করেছে।

ফলে পুঁজিবাজাররে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য কঠোর অবস্থানে বিএসইসি। বিনিয়োগকারীদের সমন্বিত হিসাবের ৬৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৫ জুন থেকে ডিএসইতে বানকো সিকিউরিটিজ লিমিটেডের লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ। একই সঙ্গে ব্রোকার হাউজটির পরিচালক ও পরিবারের সদস্যরা যাতে বিদেশে যেতে না পারেন, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে ৬৫ কোটি ৩২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠান নিয়েই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে দুদক। এর আগে শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৪৮টি অভিযোগ জমা পড়ে। ফলে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও বন্ধ করে দেয় বিএসইসি। প্রতিষ্ঠানটিকে বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওয়া পরিশোধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায় করছে ডিএসই। প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের অন্যতম শিল্পগ্রুপ সাদ মুসা কিনে নিয়েছে।

দুই কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কোম্পানিগুলোর পৃথক পৃথক তারিখ ইপিএস ঘোষণা করবে। কোম্পানি দুটো হলো: বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।

বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড: বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৯ জুলাই বিকাল ৫টায় কোম্পানিটির বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, সভায় কোম্পানিটির ৩১ মার্চ,২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রকাশ করা হবে।

ইউসিবি: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই বিকাল ৩টায় কোম্পানিটির বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, সভায় কোম্পানিটির ৩০ জুন,২০২১ সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রকাশ করা হয়েবে। আগের প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় করেছিল ৪০ পয়সা।

শিগগির ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের আইপিও আবেদন: প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন পাওয়া ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের আইপিও আবেদন শিগগিরই শুরু হবে। প্রতিষ্ঠানটির ইস্যুয়ার কোম্পানি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিমা কোম্পানিটি অভিহিত মূল্যে অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ৯০৪টি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১৯ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৪০ টাকা উত্তোলন করবে।

সংগৃহীত অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি ফিক্সড ডিপোজিট, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, ফ্লোর স্পেস ক্রয় এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করবে। গত ২৩ জুন, ২০২১ তারিখে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানিটিকে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেয়।

কোম্পানিটি ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অনুযায়ী নিরিক্ষিত আর্থিক বিবরনী ছাড়া শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ১৬.০২ টাকা (সম্পদ পনঃমূল্যায়ন সহ) এবং শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে (ইপিএস) ৯৩ পয়সা। আইপিওতে কোম্পানিটি ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে সোনার বাংলা ক্যপিটাল ম্যানেজমেন্ট।

ব্লক মার্কেটে ৫ কোম্পানির লেনদেনের শীর্ষে: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে ৪৭টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির ৩৪ কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানিগুলোর ৫০ লাখ ৮০ হাজার ৪৯৩টি শেয়ার ১০৯ বার হাত বদল হয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর ৩৪ কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৫ কোম্পানির বড় লেনদেন হয়েছে।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে সোনালী পেপারের। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৪৪ লক্ষ ৮২ হাজার টাকার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের ৩ কোটি ৮৮ লক্ষ ২৩ হাজার টাকার, তৃতীয় সর্বোচ্চ কাট্টালী টেক্সটাইলের ২ কোটি ৯ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকার, চতুর্থ সর্বোচ্চ আর ডি ফুডের ১ কোটি ৯৮ লক্ষ ১২ হাজার টাকার, পঞ্চম সর্বোচ্চ আমান ফিডের ১ কোটি ৩০ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে।

তাছাড়া, বিএনআইসিএলের ৯০ লক্ষ টাকার, এন আর বি সি ব্যাংকের ৭০ লক্ষ ২৬ হাজার টাকার, পপুলার লাইফের ৬৭ লক্ষ ১২ হাজার টাকার, গ্লোবাল ইন্সুরেন্সের ৬৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার, স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্সের ৬৪ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকার, এমেরল্ড অয়েলের ৫২ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকার, ফর্চুন সুজের ৫০ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার, নেশনাল ব্যাংকের ৪৮ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকার, ফুয়াং সিরেমিকের ৪৮ লক্ষ ১৬ হাজার টাকার,

বিকনফার্মার ৪৫ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকার, গ্রীন ডেল্টার ৩৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকার, এইচ আর টেক্সটাইলের ৩১ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকার, বি ডি ফাইন্যান্সের ২৮ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকার, ডেল্টা লাইফের ২৭ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকার, ইন্ডেক্স এগ্রোর ২৫ লক্ষ ১৭ হাজার টাকার, মার্কেনটাইল ইন্স্যুরেন্সের ২৪ লক্ষ ৫১ হাজার টাকার, বেক্সিমকোর ২৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার, সী-পার্লের ২২ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকার,

স্কয়ার ফার্মার ২১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকার, বার্জার পেইন্টসের ১৯ লক্ষ ৫১ হাজার টাকার, জেনেক্স ইনফোসিসের ১৪ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকার, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ১৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার, ন্যাশনাল ফিড মিলের ১৩ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকার, আলিফের ১২ লক্ষ ৪১ হাজার টাকার, কে এন্ড কিউয়ের ১১ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকার, আর্গন ডেনিমের ১০ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকার,

সোনারগাঁওয়ের ১০ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকার, এপেক্স ফুডসের ১০ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকার, সফকো স্পিনিংয়ের ১০ লক্ষ টাকার, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের ৯ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার, বে-লিজিংয়ের ৭ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকার, লাফার্জ হোল সিমের ৭ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ৭ লক্ষ ১৮ হাজার টাকার, আইএফআইসি ব্যাংকের ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার,

কেয়া কসমেটিকের ৬ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকার, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ৬ লক্ষ ১৯ হাজার টাকার, এফবিএফআইএফ মিউচুয়াল ফান্ডের ৫ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকার, মারিকোর ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার, সোনালী লাইফের ৫ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকার, বেক্সিমকো ফার্মার ৫ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকার, অ্যাপোলো ইস্পাতের ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকার, সালভো কেমিক্যালের ৫ লক্ষ ৭ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে।

এসকে ট্রিমসের ২ কোটি শেয়ার লক-ইন ফ্রি হচ্ছে: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসকে ট্রিমস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ২ কোটির ১১ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার লক-ইন ফ্রি হচ্ছে ১৫ জুলাই (বৃহস্পতিবার) থেকে। অর্থাৎ, এদিন থেকে উদ্যোক্তা-পরিচালকরা তাদের হাতে থাকা এই শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন। সোমবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডিএসইর তথ্য মতে, কোম্পানিটির বর্তমানে ৮ কোটি ৪৭ লাখ শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে মাত্র ৩১ শতাংশ শেয়ার। উদ্যোক্তারা ইচ্ছা করলে ১৫ জুলাই থেকে ২ কোটি ১১ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারবেন। তবে উদ্যোক্তারা এই শেয়ার বিক্রি করে দিলে কোম্পানির পরিচালকদের ন্যূনতম ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের কোটার আইন অমান্য করবে।

নিয়ম অনুসারে আইপিওতে আসার পর থেকে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার তিন বছর পর্যন্ত লক-ইন থাকে। সেই হিসেবে ২০১৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু হওয়া কোম্পানিটির লক-ইন ফ্রি হচ্ছে ১৫ জুলাই থেকে। কোম্পানিটি সর্বশেষ বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৪১ টাকায়।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০১৮ সালে সভায় কোম্পানিটির আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩০ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য অনুমোদন দেয়। প্রতিটি শেয়ারের ১০ টাকা মূল্যে ছেড়ে বাজার থেকে এই অর্থ উত্তোলন করে কোম্পানিটি।

সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০২০-২১ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১২ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ৬০ পয়সা।

চলতি হিসাব বছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৯৮ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ১ টাকা ৯৭ পয়সা। ৩১ মার্চ ২০২১ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৭৩ পয়সা।

চাঙা পুঁজিবাজারেও ছাড়ছেন লাখ লাখ বিওধারী: চাঙা পুঁজিবাজারেও গত এক মাসে দেড় লাখের বেশি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব বন্ধ হয়েছে। আগামী দু-এক মাসের মধ্যে আরও তিন থেকে চার লাখ বিও হিসাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। তবে বিশেষজ্ঞরা এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

বিও হিসাব খোলাসহ পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জুন পর্যন্ত বিও হিসাব ছিল ২৬ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৮টি। গত এক মাস সাত দিনে কমেছে এক লাখ ৬১ হাজার ৭৩১টি হিসাব। ৩৫টি বিও হিসাব দিয়ে কমপক্ষে আট থেকে ১০টি আইপিও পেতাম। চার থেকে পাঁচ হাজার শেয়ার হাতে আসত।

কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে ওই টাকায় এখন মাত্র ছয়টি বিও হিসাব দিয়ে আবেদন করা যাচ্ছে। শেয়ার পাচ্ছি মাত্র ১০২টি। অর্থাৎ আমার ৩৫টি হিসাব আর দরকার নেই। তাই এগুলো বন্ধ করে দেব। গত বুধবার (৭ জুলাই) পর্যন্ত বাজারে বিও হিসাব ছিল ২৪ লাখ ৯৬ হাজার ১৯৭টি। এর মধ্যে আট থেকে ১০ লাখ ছিল সক্রিয়, বাকি ১৪ থেকে ১৫ লাখ ছিল নিষ্ক্রিয়। নিষ্ক্রিয় হিসাবের মধ্যে সাত থেকে আট লাখ হিসাবধারী রয়েছেন যারা আইপিওতে (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) আবেদন করেন। এর মধ্যে পাঁচ থেকে ছয় লাখ বিওধারী বাজার ছাড়ছেন।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকটি কারণে বিনিয়োগকারীরা বাজার ছাড়ছেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) নতুন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে লটারি প্রথা উঠে গেছে। এখান যারাই আবেদন করছেন তারা সবাই সমহারে শেয়ার পাচ্ছেন।

ফলে দীর্ঘদিন ধরে পুরাতন নিয়মের আইপিও ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। এ কারণে হতাশ হয়ে বাজার ছাড়ছেন অনেকে। নতুন পদ্ধতিতে আইপিওতে আবেদন করতে হলে বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থাকতে হবে। অর্থাৎ ২০ হাজার টাকার শেয়ার থাকতে হবে।

পাশাপাশি আইপিওতে আবেদন করতে হলে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকার আবেদন করতে হবে। আগে যেখানে লেনদেন শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে ১০ টাকার শেয়ার সর্বনিম্ন ৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ত, সেখানে এখন দুই সপ্তাহে ১০ টাকার শেয়ার ২০ টাকাও উঠছে না। পক্ষান্তরে আইপিও ব্যবসার চেয়ে সেকেন্ডারি মার্কেটে ব্যবসা করলে দ্বিগুণ মুনাফা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

এসব কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা ১০০, ২০০ কিংবা ৫০০ বিও হিসাব ব্যবহার করে আইপিও ব্যবসা করছিলেন তারা এখন নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন এদিকে, তালিকাভুক্ত হওয়ার পর নতুন কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর প্রথম দিন থেকেই সার্কিট ব্রেকার আরোপ করায় শেয়ারের দাম বাড়ছে খুব ধীরে।

ফলে আগে যেখানে লেনদেন শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে ১০ টাকার শেয়ার সর্বনিম্ন ৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ত, সেখানে এখন দুই সপ্তাহে ১০ টাকার শেয়ার ২০ টাকাও উঠছে না। পক্ষান্তরে আইপিও ব্যবসার চেয়ে সেকেন্ডারি মার্কেটে ব্যবসা করলে দ্বিগুণ মুনাফা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এসব কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা ১০০, ২০০ কিংবা ৫০০ বিও হিসাব ব্যবহার করে আইপিও ব্যবসা করছিলেন তারা এখন নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন।

আইপিওর নতুন নিয়মের পাশাপাশি বিও হিসাবের বার্ষিক ফি না দেওয়ায় বেশকিছু বিও বন্ধ হচ্ছে। এটা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। এর ফলে প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের চিত্র আমরা দেখতে পাব। প্রকৃত পক্ষে যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চান তারা বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হবেন
এমনই একজন বিনিয়োগকারী লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের বিও হিসাবধারী মোক্তাদির আল মামুন।

তিনি বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজন মিলে আমার ৪০টি বিও হিসাব ছিল। এর মধ্যে পাঁচটি হিসাব দিয়ে সেকেন্ডারি মার্কেটে ব্যবসা করতাম। ৩৫টি বিও দিয়ে আইপিওতে আবেদন করতাম। পাঁচ হাজার টাকা করে পৌনে দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করা লাগত এখানে।

তিনি আরও বলেন, ৩৫টি বিও হিসাব দিয়ে কমপক্ষে আট থেকে ১০টি আইপিও পেতাম। চার থেকে পাঁচ হাজার শেয়ার হাতে আসত। কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে ওই টাকায় এখন মাত্র ছয়টি বিও হিসাব দিয়ে আবেদন করা যাচ্ছে। শেয়ার পাচ্ছি মাত্র ১০২টি। অর্থাৎ আমার ৩৫টি হিসাব আর দরকার নেই। তাই এগুলো বন্ধ করে দেব। একই কথা বলেন আইডিএলসির বিনিয়োগকারী মুহিত এনামুল হক।

তিনি বলেন, আমার ১৭০টি বিও হিসাব ছিল। এগুলো দিয়ে আইপিও ধরতাম। এখন আর এগুলোর দরকার হবে না। কারণ আইপিও ব্যবসা আর নেই। তিনি আরও বলেন, আইপিওতে ন্যূনতম ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। এ টাকা বিনিয়োগ করে মাত্র ১৭০টি শেয়ার পাচ্ছি। শুধু তাই নয়, আইপিওর শেয়ারের দাম আগে যেখানে এক সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ থেকে আট গুণ বাড়ত, এখন নতুন নিয়মে সেই শেয়ারের দাম ১৫ দিনেও অর্ধেক বাড়ে না। সময় লাগছে এক মাস।

অথচ সেকেন্ডারি বাজারে একই সময়ে বিনিয়োগ করলে দ্বিগুণ লাভ করতে পারছি। সুতরাং আইপিওতে আর আবেদন করব না। হঠাৎ করে বিও হিসাবধারীদের চলে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, আইপিওর নতুন নিয়মের পাশাপাশি বিও হিসাবের বার্ষিক ফি না দেওয়ায় বেশকিছু বিও বন্ধ হচ্ছে। এটা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। এর ফলে প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের চিত্র আমরা দেখতে পাব। প্রকৃত পক্ষে যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চান তারা বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হবেন।
জামানত ও ঝুঁকি ছাড়াই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী আইপিও ব্যবসা করেছেন। নতুন নিয়মে তারা হতাশ হয়েছেন। আগের মতো তারা আইপিও শেয়ার পাচ্ছেন না, আবার দ্রুত মুনাফা তুলেও নিতে পারছেন না।

তাই নিরাশ হয়ে বাড়তি বিও হিসাব বন্ধ করে দিচ্ছেন আইপিও ব্যবসা এতদিন কিছু বিনিয়োগকারীর হাতে ছিল বলে মনে করেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, জামানত ও ঝুঁকি ছাড়াই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী আইপিও ব্যবসা করেছেন। নতুন নিয়মে তারা হতাশ হয়েছেন। আগের মতো তারা আইপিও শেয়ার পাচ্ছেন না, আবার দ্রুত মুনাফা তুলেও নিতে পারছেন না। তাই নিরাশ হয়ে বাড়তি বিও হিসাব বন্ধ করে দিচ্ছেন।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের সঙ্গে একমত পোষণ করে ডিএসই পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, যেসব বিনিয়োগকারীর শত শত বিও হিসাব ছিল, তারা এসব বিও দিয়ে আইপিওতে আবেদন করতেন। এগুলো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাবে। এ সংখ্যা বেশ বড় অঙ্কের। তারা আইপিও শেয়ার বেশি দামে বিক্রি করে টাকা তুলে নিতেন। এর প্রভাব পড়ত সেকেন্ডারি মার্কেটে। এখন আর সেই সুযোগ নেই। ফলে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা আইপিও শেয়ার পাবেন।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, নতুন পদ্ধতিতে ইতোমধ্যে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার কোম্পানির আইপিও শেয়ার বরাদ্দ দেওয়া হয়। কোম্পানি দুটির মধ্যে সোনালী লাইফে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ১৭টি শেয়ার পান বিনিয়োগকারীরা। যা টাকার অঙ্কে ১৭০।

অপর কোম্পানি বারাকা পতেঙ্গার আইপিওতে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে পাওয়া যায় ৫৪টি শেয়ার। অর্থাৎ ৫৪০ টাকার শেয়ার পান বিনিয়োগকারী। যেসব বিনিয়োগকারীর শত শত বিও হিসাব ছিল, তারা এসব বিও দিয়ে আইপিওতে আবেদন করতেন।

এগুলো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাবে। এ সংখ্যা বেশ বড় অঙ্কের। তারা আইপিও শেয়ার বেশি দামে বিক্রি করে টাকা তুলে নিতেন। এর প্রভাব পড়ত সেকেন্ডারি মার্কেটে। এখন আর সেই সুযোগ নেই। ফলে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা আইপিও শেয়ার পাবেন।

এদিকে, পুরান পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বহুজাতিক কোম্পানি রবি আজিয়াটার আইপিওতে ১২ লাখ বিনিয়োগকারী আবেদন করেন। সেখানেও প্রতি চারজন বিনিয়োগকারীর মধ্যে একজন ৫০০ করে শেয়ার পান। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সেই শেয়ার ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। অর্থাৎ ১০ টাকার শেয়ারে ৬০ টাকা লাভ করেন বিনিয়োগকারীরা। একইভাবে পুরাতন প্রক্রিয়ায় সর্বশেষ আইপিওতে এসেছে এনআরবিসি ব্যাংক। এ কোম্পানির আইপিওতে প্রয়োজনের তুলনায় আট গুণ বেশি আবেদন জমা পড়ে।

১০ টাকা মূল্যের শেয়ার পরে ৩৯ টাকায় লেনদেন হয়। আইপিওর নতুন পদ্ধতিতে সোনালী লাইফের বিনিয়োগকারীরা ১৭টি করে শেয়ার পেয়েছেন। লেনদেন শুরু হয় গত ৩০ জুন। এখন পর্যন্ত শেয়ারটি সর্বোচ্চ ১৬ টাকায় লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ আট দিনে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের দাম বেড়েছে ছয় টাকা। পুরাতন নিয়মে একই সময়ে শেয়ারের দাম কয়েক গুণ বেশি বাড়ত। সুত্র: ঢাকা পোষ্ট

এমারেল্ড অয়েলের সেপ্টেম্বর থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু: আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সম্পূর্ণভাবে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল লিমিটেড। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, দিনে ৩৩০ মেট্রিক টন রাইস ব্রান ইনপুট ক্যাপাসিটি রয়েছে কোম্পানিটির। একই সঙ্গে প্রতিদিন ৪৮ মেট্রিক টন রাইস ব্রান অয়েল আউটপুট ক্যাপাসিটি রয়েছে এ কোম্পানির।

এছাড়া, ২৮২ মেট্রিক টন ডিওআরবি ক্ষমতা রয়েছে বলে কোম্পানিটি জানিয়েছে। এদিকে এমারেল্ড অয়েলের উৎপাদন কার্যক্রম যে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ, তা সবাই ধারনা করে নিয়েছে। কিন্তু এটি কোম্পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) এবং তা প্রকাশে বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোম্পানির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। যাতে এখনো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে কোম্পানিটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম সক্রিয় বলে তথ্য প্রকাশ করা রয়েছে। তবে সোমবার (১২ জুলাই) কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আগামি ১ সেপ্টেম্বর থেকে উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে।

এদিন উৎপাদন শুরুর ঘোষণায় এমারেল্ড অয়েল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামি ১ সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উৎপাদন শুরুর পর প্রতি দিন কোম্পানিটির রাইস ব্রানের ইনপুটের ক্ষমতা হবে ৩৩০ মেট্রিক টন। আর প্রতিদিন রাইস ব্রান অয়েলের আউটপুট ক্ষমতা হবে ৪৮ মেট্রিক টন এবং ডিওআরবির ক্ষমতা হবে ২৮২ মেট্রিক টন। এদিন আরও জানায়, মিনোরি বাংলাদেশের পরিচালক মো. আফজাল হোসেনকে এমারেল্ড অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তবে দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক হিসাব প্রকাশ বন্ধ রাখা এমারেল্ড অয়েল কর্তৃপক্ষ এর আগে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার খবর জানায়নি। যাতে করে ডিএসইর ওয়েবসাইটে কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্ট্যাটাস সক্রিয় দেখানো রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম যদি সক্রিয় থাকে, তাহলে আজ শুরুর ঘোষণা দেওয়ার প্রয়োজন কেনো পড়ল?

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, একটি কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ হওয়ার খবর প্রকাশ করলে ওই কোম্পানির পর্ষদসহ ম্যানেজমেন্টের দূর্বলতা প্রকাশ পায়। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে জবাবহিদিতার আওতায় আসতে হয়। এ কারনে হয়তো মিথ্যার আশ্রয় নেয়। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর খুবই বড় ধরনের পিএসআই। যা আড়াল করার সুযোগ নেই। তাই যারা আড়াল করে, তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। এ বিষয়ে জানতে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটোয়ারিকে ফোন দিলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সোনালী লাইফের একদিনেই দর বেড়েছে ৭০ টাকা: আইপিও প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর বেশ কয়েকদিন আগে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু করে বীমা খাতের সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। তালিকাভুক্তির পর গত ৮ জুলাই শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি। লভ্যাংশ ঘোষণার পরবর্তী কার্যদিবস অর্থাৎ আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়া বা কমায় কোনো সীমা ছিল না। যার ফলে আজ কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪৪০ শতাংশ বেড়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লেনদেন শেষে ক্লোজিং দর ছিল ১৬ টাকায়। আজ লেনদেন শেষে এর ক্লোজিং দর দাঁড়ায় ৮৬.৫০ টাকায়। অর্থাৎ কোম্পানিটির শেয়ার দর এক লাফে ৭০.৫০ টাকা বা ৪৪০ শতাংশ বেড়েছে। এর মাধ্যমে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ডিএসইর টপটেন গেইনার তালিকার শীর্ষে উঠে আসে।

ডিএসইতে টপটেন গেইনার তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের ৯.৯৫ শতাংশ, অলিম্পিক এক্সেসরিজের ৯.৮৫ শতাংশ, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৯.৭৩ শতাংশ, ফু-ওয়াং সিরামিকের ৯.৬৯ শতাংশ,

সমতা লেদারের ৯.৬৬ শতাংশ, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ৯.৫৫ শতাংশ, বিডি ফাইন্যান্সের ৯.৪০ শতাংশ, এসিআই ফর্মূলেশনের ৮.৯৪ শতাংশ এবং আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ার দর ৮.৭৩ শতাংশ বেড়েছে।

ডিএসইতে কমলেও সিএসইতে বেড়েছে সূচক: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সোমবার উত্থানে শুরু হলেও পতনে শেষ হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বেড়েছে। ডিএসইতে সূচকের সাথে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। সিএসইতেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দর কমেছে। সূচক কমলেও ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন আগের কার্যদিবস থেকে বেড়েছে। লেনদেন কমেছে সিএসইতে।

জানা গেছে, আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪.৩৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২০৮.৩৯ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৫.২৭ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১০.৮৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এব হাজার ৩৪৬.৮২ পয়েন্ট এবং দুই হাজার ২৫৯.০৪ পয়েন্টে। আজ ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন ১ হাজার ৫৯৯ কোটি ২১ লাখ টাকার। যা আগের দিন থেকে ১০৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪৯১ কোটি ৯১ লাখ টাকার।

ডিএসইতে আজ ৩৬৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৫৬টির বা ৪২.২৮ শতাংশের, শেয়ার দর কমেছে ১৮৬টির বা ৫০.৪১ শতাংশের এবং ২৭টির বা ৭.৩২ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৪.০৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৫.৯৮ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ৩০৬টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩৩টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৪৮টির আর ২৫টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৬২ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।