দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের শেয়ারের প্রতি হঠাৎ আগ্রহ বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের। বিনিয়োগকারীদের এমন আগ্রহে খাতটিতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমান। স্বল্প মুলধনের এই খাতটি লেনদেনে অনেক খাতকে পেছনে পেলে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে।

অন্য দিকে দীর্ঘ সময় দর বৃদ্ধি এবং লেনদেনে শীর্ষে থাকা বিমা খাতের প্রতি আগ্রহ কমেছে বিনিয়োগকারীদের। আগ্রহ কম লক্ষ্য করা গেছে ব্যাংক খাতের প্রতিও। বৃহস্পতিবার মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৫টিরই বেড়েছে ইউনিটের দর। অপরিবর্তন দুইটি ফান্ডের ইউনিট দর।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৪টির ইউনিট দর অবস্থান করছে ভিত্তিমূল্যের নিচে। এমন অবহেলিত প্রতিষ্ঠান গুলোর ইউনিটের প্রতি হঠাৎ আগ্রহ বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের। কি এমন পরিবর্তন এসেছে এই খাতে? কেনইবা এমন আগ্রহ বিনিয়োগকারীদের?

এ বিষয়ে আজিজুর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী ঢাকাটাইমসকে বলেন, জুন ক্লোজিং প্রতিষ্ঠান গুলোর লভ্যাংশ দেয়ার সময় হয়েছে। আর মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রতিষ্ঠান গুলো জুন ক্লোজিং প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান গুলো এ বছর ভালো লভ্যাংশ দিবে বলে আনাগোনা শুনা যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। ভালো লভ্যাংশের আসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি ঝুঁকছে বিনিয়োগকারীরা। তাই এই খাতে আগ্রহ বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের।

তিনি বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দর অনেক কম হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। কারণ কম দর শেয়ার কিনলে সেখানে লোকসানের সম্ভাবনা কম। আর লোকসানের সম্ভবনা কম এবং শেয়ার বিনিয়োগ ঝুঁকি কম থাকায় এই খাতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অন্য খাতের তুলোনায় অনেক বেশি।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় পুঁজিবাজর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ আন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন, কোন বিনিয়োগকারী ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ না করতে চাইলে সে যেন মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান আরও বলেছেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ভবিষৎ খুবই উজ্জল। এই খাত এখন থেকে বিনিয়োগকারীদের ভালো ল্যভাংশ দিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বিনিয়োগকারীরা মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে নানা মুখি পজেটিভ মন্ত্য শুনে এবং নিজেরা বুঝে এই খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ানের। ফান্ডটির ইউনিট প্রতি দর বেড়েছে ৯.৯২ শতাংশ বা ১.৩০ টাকা। দিনটিতে ফান্ডটির শেয়ার প্রতি দর ১৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪ টাকা ৪০ পয়সায় অবস্থান করছে। এসইএমএল এফবিএসএল গ্রোথ ফান্ডের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৭.৫৬ শতাংশ। এনএলআই ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৫.৬২ শতাংশ। ফনিক্স ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৫.৫০ শতাংশ। এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ডের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৪.৯১ শতাংশ।

অন্যদিকে বিমা খাতের ৫১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭টি কোম্পানিরই শেয়ার দর কমেছে। বেড়েছে ২১টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ৩টি প্রতিষ্ঠানের। দিনটিতে বিমা ব্যাংক খাতের চেয়ে কমে লেনদেন করে সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে। দিনটিতে বিমা খাতে লেনদেন হয়েছে ১৩১ কোটি টাকারও বেশি।

দিনটিতে ব্যাংক খাতে লেনদেন হয়েছে ১০৯ কোটি টাকা। এদিন ব্যাংকের ৩১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৪টির, কমেছে ৯টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ৮টি প্রতিষ্ঠানের।

২৩ বিমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির নির্দেশ: দেশের ২৩টি লাইফ ও নন-লাইফ বিমা কোম্পানি ২০১৯ সালের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া নির্দেশনা ছিল। কিন্তু কোম্পানিগুলো সেই নির্দেশনা প্রতিপালন করেনি। কোম্পানিগুলোকে যথাশীঘ্র পুঁজিবাজারে আসার নির্দেশনা দিয়ে সতর্ক করলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত ভার্চুয়াল বৈঠকে বিমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বৈঠকে যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য এরইমধ্যে বিএসইসি’র শর্তাদি পূরণে এগিয়ে রয়েছে, তাদেরকে জুনের একাউন্ট দিয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে। বাকীদের আগামী সেপ্টেম্বরের একাউন্ট দিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তবে কোনভাবেই যাতে ২০২১ সাল পার না হতে হয় সে বিষয়ে সতর্ক করেছে আইডিআরএ। যদিও বেশ কয়েকটি বিমা কোম্পানি ২০২১ সালের একাউন্ট দিয়েও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারবে না বলে সময় চেয়েছে। তবে বেশিরভাগ কোম্পানি ডিসেম্বরের একাউন্ট দিয়ে আইপিও’তে যেতে পারবে বলে জানিয়েছে।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সভায় ১৮টি লাইফ ও ৯টি নন-লাইফ বিমা কোম্পানিকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ এর মধ্যে তালিকাভুক্ত হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে আজ পর্যন্ত ৪টি বিমা কোম্পানি এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছে।

এদিকে অর্থমন্ত্রীর বৈঠকের পর বিমা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধিসহ বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে বেশ কয়েকটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়।

কর্তৃপক্ষের অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিমা কোম্পানিগুলোকে নির্ধারিত মূল্য পদ্ধতির মাধ্যমে আইপিওতে মূলধন উত্তোলণের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৩০ কোটি টাকা উত্তোলনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দিয়ে সর্বনিম্ন ১৫ কোটি টাকা বা তার বেশি মূলধন উত্তোলনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন প্রদান করেছে বিএসইসি।

জুন ক্লোজিং কোম্পানির শেয়ারের আগ্রহ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের: দরপতনের শেষ কাটিয়ে এক বছরের বেশি সময়জুড়ে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ইতিবাচক রয়েছে। বাজার ভালো থাকায় এ সময় যেমন সব শ্রেণির শেয়ারদর বেড়েছে, তেমনি অনেক নতুন বিনিয়োগকারী এখানে যুক্ত হয়েছে। এমন বিনিয়োগকারীর পছন্দের তালিকায় রয়েছে জুন ক্লোজিং কোম্পানির শেয়ার। সামনে লভ্যাংশ মৌসুম থাকায় গত দুই সপ্তাহ ধরে জুন ক্লোজিং কোম্পানি ঘিরে লেনদেনে মগ্ন রয়েছেন তারা। এরই জেরে বাড়ছে এসব কোম্পানির কদর।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে তাদের তৃতীয় প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ শেষ করেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানিই আগের চেয়ে মুনাফায় রয়েছে। বছর শেষে এটা বহাল থাকবে বলে মনে করছেন তারা। এ কারণে লভ্যাংশ ঘরে তোলার জন্য এসব কোম্পানিতে ঝুঁকছেন তারা। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তুলনামূলক ভালো ইপিএস দেখানো কোম্পানিগুলোয় ঝুঁকেছেন তারা।

বিনিয়োগকারীদের এ প্রত্যাশা পূরণের বিষয়টি পুরোটাই নির্ভর করে কোম্পানির সর্বশেষ হিসাব-নিকাশের ওপর। শেষ প্রান্তিকে এসে যদি হিসাবে গরমিল হয় তবে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার প্রতিফলন নাও পড়তে পারে মুনাফায়।

যদি ধারাবাহিকতা না থাকে, তবে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। কারণ তিন প্রান্তিকে ভালো মুনাফা দেখানোর পর শেষ প্রান্তিকে যদি মুনাফা কমে যায়, কিংবা লোকসান হয়, তবে সেই কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ দেয়ার ক্ষমতা হারায়।

তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি। এক মাসের বেশি সময় ধরে এ খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কিছু শেয়ারদর অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে।

এ সময়ের মধ্য তমিজ উদ্দীন টেক্সটাইলের শেয়ার ১৩ টাকা থেকে বেড়ে ৬৪ টাকা ৯০ পয়সায় চলে এসেছে। একইভাবে তাল্লু স্পিনিংয়ে শেয়ারদর পাঁচ টাকা থেকে বেড়ে আট টাকা ৪০ পয়সায় চলে এসেছে। সোনারগাঁ টেক্সটাইলের শেয়ারদর ১৯ থেকে ২৮ টাকায় চলে যায়।

অন্যদিকে এ সময় রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার ৯ টাকা থেকে বেড়ে ১১ টাকা ৮০ পয়সায় চলে যায়। একইভাবে আর এন স্পিনিংয়ের শেয়ার চার টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে ছয় টাকা ৫০ পয়সায় চলে এসেছে। এছাড়া এই সময় সায়হাম টেক্সটাইল, তুংইহান নিটিং, সিঅ্যান্ড এ টেক্সটাইল, ফ্যামিলি টেক্সসহ বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, যেসব কোম্পানির জুন ক্লোজিং সেসব কোম্পানির দর বাড়া স্বাভাবিক। কারণ সামনেই এসব কোম্পানি থেকে লভ্যাংশ ঘোষণা আসবে। তাছাড়া বর্তমানে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর খুব কম, অর্থাৎ ক্রয়যোগ্য। এসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতও অনেক কম। ফলে হাতেগোনা কিছু কোম্পানি ছাড়া অন্য কোম্পানির শেয়ারদর বাড়া স্বাভাবিক। তবে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই ভালো কোম্পানির সঙ্গে থাকা উচিত, কারণ বাজারে বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানির সংখ্যা কম।

এদিকে জুন ক্লোজিংয়ের কারণে গত সপ্তাহে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার চাহিদা তুলনামূলক কম দেখা গেছে। ডিসেম্বর ক্লোজিং হওয়ার কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারদরও কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কোম্পানির শেয়ারদর কমার আরও কারণ রয়েছে। সর্বশেষ বছরে বহুজাতিক কোম্পানি ছাড়া ডিসেম্বর ক্লোজিং বেশিরভাগ কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের সন্তোষজনক লভ্যাংশ দিতে পারেনি। সেই তুলনায় ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে জুন ক্লোজিং কোম্পানি।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একজন পরিচালক বলেন, ব্যাংক ও বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এ তালিকায় রয়েছে ব্যাংক। খাতটিতে মন্দা পরিস্থিতি থাকায় প্রায় সব প্রতিষ্ঠান এর সুযোগ নিচ্ছে। ভালো লভ্যাংশ দেয়ার পর মন্দার কথা বলে নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়ে ক্যাটেগরি টিকিয়ে রাখছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা ঝুঁকে পড়েছেন জুন ক্লোজিং কোম্পানিতে।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সামনে লভ্যাংশ মৌসুম। বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী লভ্যাংশের মাধ্যমে মুনাফা করতে চান। বিনিয়োগকারীদের এই প্রবণতা সঠিক। তবে এ ক্ষেত্রে কোম্পানি বাছাই করতে হবে ভেবেচিন্তে। কারণ সব কোম্পানি থেকে ভালো লভ্যাংশ আসবে না। তাই বিনিয়োগের আগে দেখা দরকার ওই কোম্পানির আগের লভ্যাংশ দেয়ার হার কেমন। সেই সঙ্গে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার দিকে নজর দিতে হবে।

সপ্তাহের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে ফিরেছে আট হাজার কোটি টাকা: মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করায় নতুন অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম সপ্তাহের মতো দ্বিতীয় সপ্তাহেও সীমিত লেনদেন হয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। লেনদেন সীমিত হলেও গেল সপ্তাহটি বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ ভালোই গেছে।

সপ্তাহজুড়ে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন আট হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। এই নতুন অর্থবছরের প্রথম দুই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। সেইসঙ্গে বেড়েছে সবক’টি মূল্যসূচক। পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের গতিও।

গেল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গেল সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে আট কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে বাড়ে দুই হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১০ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা।

বাজার মূলধন বাড়া বা কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে। অর্থাৎ বাজার মূলধন বাড়লে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়।

এদিকে, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৯৪ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৫২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৬২ দশমিক ২৯ পয়েন্ট বা এক দশমিক শূন্য এক শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গেল সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ২৬ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা এক দশমিক ১৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৩৯ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৮০ শতাংশ।

অপরদিকে, ইসলামী শরিয়াহ্ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে। গত সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৮১ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৩৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২৬ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বা দুই দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

সবকটি মূল্য সূচকের উত্থানের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন অংশ নেয়া বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২৬৭টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৪টির। আর ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬৭৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় এক হাজার ৬০২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৭৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বা চার দশমিক ৬১ শতাংশ।

আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ছয় হাজার ৭০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ছয় হাজার ৪১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৩৯৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বা চার দশমিক ৬১ শতাংশ।

গত সপ্তাহে ডিএসইর মূল বাজারে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে: বেক্সিমকো, পাওয়ার গ্রিড, লাফার্জাহোলসিম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, সাউথইষ্ট ব্যাংক, আলিফ মেনুফ্যাকচারিং এবং আমান ফিড।

গ্রামীণফোন ধাক্কা সামলে আয় ও মুনাফার প্রবৃদ্ধিতে ফিরল: চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) ধাক্কা সামলে আয় ও মুনাফার প্রবৃদ্ধিতে ফিরে এসেছে দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন লিমিটেড। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে ১৭ শতাংশ। একই সময়ে ১৩ লাখ নতুন গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছে। বেড়েছে রাজস্ব আয়ও। গতকাল গ্রামীণফোনের প্রকাশিত অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে। অর্ধবার্ষিকীতে গ্রামীণফোন যে মুনাফা করেছে, তার প্রায় ৯৭ শতাংশই শেয়ারহোল্ডারদের জন্য অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ।

চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের নিট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ কমে যায়, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আয়ও ৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ফলে সে সময় পরিচালন মুনাফা কমে যাওয়ায় কোম্পানিটির নিট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে হ্রাস পায়। অবশ্য দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফা বাড়ায় প্রথম প্রান্তিকের ধাক্কা সামলে উঠে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসে দেশের শীর্ষ এই মোবাইল ফোন অপারেটরটি।

অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে গ্রামীণফোন ৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জন করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় প্রান্তিকে কর্মীদের বেতন-ভাতা, ট্রাফিক চার্জ, রেভিনিউ শেয়ারিং ও স্পেকটার্ম চার্জ বেড়েছে। বিপরীতে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ, অবচয় ও অন্যান্য ব্যয় কিছুটা কমেছে। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় প্রান্তিকে পরিচালন ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। এ সময় পরিচালন আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির সুদ ব্যয়ও কমেছে। কর পরিশোধের পর চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের নিট মুনাফা হয়েছে ৮৫০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭২৬ কোটি টাকা।

অবশ্য চলতি অর্ধবার্ষিকীতে (জানুয়ারি-জুন) গ্রামীণফোনের রেভিনিউ বাড়লেও নিট মুনাফা আগের বছরের চেয়ে ৩ শতাংশ কমেছে।

১৩ লাখ নতুন গ্রাহক নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ায় দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে মোট গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ২০ লাখ, যার মধ্যে ইন্টারনেট গ্রাহক ৪ কোটি ৪৭ লাখ। গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহকের ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।

গ্রামীণফোন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, ‘গ্রাহক অভিজ্ঞতার মানোন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশনের ওপর আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার কারণে আরও বেশি সংখ্যক গ্রাহক গ্রামীণফোনের সেবা বেছে নিয়েছেন এবং একই কারণে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইন্টারনেট ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে নিজেদের সব টাওয়ারে ফোরজি সেবা সম্প্রসারণ করে গ্রামীণফোন। পাশাপাশি, অধিকৃত নতুন তরঙ্গ ব্যবহার ও নেটওয়ার্ক বিস্তারের ব্যাপারেও আমরা আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। দ্বিতীয় প্রান্তিকে আমাদের ২৩ লাখ ফোরজি গ্রাহক বেড়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। কভিডের মহামারীর চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও গ্রামীণফোন ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আবার প্রবৃদ্ধিতে ফিরে এসেছে।’

গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিএফও ইয়েন্স বেকার বলেন, ‘২০২১ সালের শুরু থেকে ব্যবসায়িক গতির ধারা উন্নতির দিকে থাকায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় আমাদের সাবক্রিপশন ও ট্রাফিক রাজস্ব বেড়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। গ্রাহকপ্রতি ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ। ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ মার্জিন নিয়ে দ্বিতীয় প্রান্তিকে নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৮৫১ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ১৪ জলাই অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় পরিচালনা পর্ষদ আমাদের সম্মানিত শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ প্রস্তাব করেছেন।’

গ্রামীণফোন জানিয়েছে, ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি নেটওয়ার্ক কাভারেজ উন্নয়নে ৫১৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। গ্রামীণফোনের মোট সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪১৬টি। ২০২১ সালের প্রথম অর্ধবছরে প্রতিষ্ঠানটি কর, ভ্যাট, ডিউটি, ফি, ফোরজি লাইসেন্স ও তরঙ্গ বরাদ্দ ফি বাবদ ৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের মোট রাজস্বের ৭৭ দশমিক ২ শতাংশ।

উড়োজাহাজের নিলাম ঠেকাতে মরিয়া ইউনাইটেড এয়ার: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা আটটি উড়োজাহাজের নিলাম ঠেকাতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে চার বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। এ বিষয়ে সমঝোতার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দিয়েছে এয়ারলাইনসটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ।

ফ্লাইট পরিচালনায় না থাকা তিন এয়ারলাইনসের কাছে বিভিন্ন ফি বাবদ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) পাবে ৭৭৪ কোটি ৭৪ লাখ ৩ হাজার ৭১৪ টাকা টাকা। দীর্ঘ সময়েও এ টাকা আদায় না হওয়ায় আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আকাশ পথের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। একইসঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর পরিত্যাক্ত কয়েকটি উড়োজাহাজ নিলামে তোলার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তবে কী প্রক্রিয়ায় নিলাম অনুষ্ঠিত হবে তা এখনও চূড়ান্ত করেনি বেবিচক।

বেবিচকের হিসাবে, গত মার্চ পর্যন্ত রিজেন্ট এয়ারের কাছে তাদের মোট পাওনা ২৮৩ কোটি ৩৮ লাখ ২৮ হাজার ১৭৩ টাকা, ইউনাইটেড এয়ারের কাছে ২০৩ কোটি ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯৩ টাকা এবং জিএমজি এয়ারের কাছে পাওনা হয়েছে ৩৬৮ কোটি ২৯ লাখ ৬ হাজার ৪৮ টাকা।

তবে এই নিলাম ঠেকাতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে ইউনাইটেড এয়ার। কয়েক মাস ধরে যোগাযোগের পাশাপাশি বেবিচককে গত বুধবার চিঠি দিয়েছে তারা। এতে উড়োজাহাজগুলো পরিদর্শনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অডিটের পর উড়োজাহাজগুলোর বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেছে বন্ধ হয়ে যাওয়া এয়ারলাইনসটি।

চিঠিতে বলা হয়, ‘উড়োজাহাজগুলোর ৫০ ভাগ উড্ডয়ন ক্ষমতা রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। প্রয়োজনীয় রক্ষাণাবেক্ষণের মাধ্যমে এগুলোকে উড্ডয়নযোগ্য করার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।’ অবশ্য এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি বেবিচক কর্তৃপক্ষ।

দেশি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে প্রথম পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। ২০০৭ সালে ব্যবসা শুরু করা এয়ারলাইনসটি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় ২০১৬ সালে। সে সময় তাদের বহরে ১০টি উড়োজাহাজ ছিলো। এগুলোর মধ্যে নয়টি বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। আর একটি রয়েছে ভারতে।

সম্প্রতি এয়ারলাইনসটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিসিইসি)। এতে আগের পরিচালনা পর্ষদের সবাইকে বাদ দিয়ে নতুন কয়েকজনের হাতে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান হিসেবে কর্তৃত্ব হারিয়েছেন ইউনাইটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তাসবিরুল আলম চৌধুরী। পর্ষদ পুনর্গঠন হওয়া ইউনাইটেড এখন বলছে, তারা ফ্লাইটে ফিরে আসতে চায়। দেনা শোধেও আপত্তি নেই।

এয়ারলাইনসটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গত চার মাসে বেবিচকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। আমরা বলেছি, তাদের সঙ্গে বসতে চাই। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই যে এক লাখ ৬০ হাজার শেয়ার হোল্ডার তাদের স্বার্থ কীভাবে রক্ষা করা যায় এবং এয়ারলাইনসটাকে আবার কীভাবে আনা যায়। এয়ারলাইনস ফেরত এলে তাদের দেনা পাওনাগুলোও আমরা দিয়ে দিতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের যে উড়োজাহাজগুলো রয়েছে সেগুলো ইন্সপেকশনের জন্য আমাদের যেতে দিতে হবে। আমাদের অফিসগুলোও তাদের (বেবিচক) নিয়ন্ত্রণে, আমাদের যেতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা পাসের জন্য আবেদন করেছি। এয়ারক্রাফটগুলো যে ডিরেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে তা উইথড্র করা হোক। আমাদের এওসি যেন পেতে পারি সে জন্য তারা একটি গাইডলাইন দিক। আমরা ফিরে আসতে চাই এবং তাদের দেনা পাওনাও শোধ করতে চাই।’ নজরুল ইসলাম দাবি করেন, বেবিচক যে টাকা পাবে সেটি খুব বড় অংকের নয়।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এওসি কিন্তু বাতিল হয়নি, এক্সপায়ার হয়েছে। এটাকে আবার কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, আমরা সেটা তাদের বিবেচনা করতে বলেছি। এই গাইডলাইন তারাই আমাদের দেবে এবং এটা আমাদের মানতে হবে।’

নিলাম হলে ভ্যালু অ্যাডজাস্টমেন্ট চায় রিজেন্ট: যে কয়টি পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ নিলামে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে এক বছর আগে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া রিজেন্ট এয়ারের দুটি ড্যাশ এইট মডেলের উড়োজাহাজ। গত বছর মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে সব ধরনের ফ্লাইট স্থগিত রেখেছে রিজেন্ট এয়ার। এর মধ্যে কয়েক দফা কার্যক্রমে ফেরার ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি এয়ারলাইনসটি।

রিজেন্ট এয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর। এক দশক যেতে না যেতেই জোর ধাক্কা খায় এয়ারলাইনসটি। বন্ধ হওয়ার আগে দেশের ভেতরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং আন্তর্জাতিক গন্তব্য কলকাতা, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, মাসকট ও দোহায় ফ্লাইট চালাচ্ছিল তারা।

এয়ারলাইনসটির কর্তৃপক্ষ বলছে, বেবিচক উড়োজাহাজ নিলামে তুললে তাতে আপত্তি নেই। তবে উড়োজাহাজের ভ্যালুয়েশন (দাম নির্ণয়) ঠিক মতো না করা হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।

রিজেন্ট এয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিষ রায় চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের তারা (বেবিচক) চিঠি দিয়েছে। তারা বলছে, আমাদের দুটি ড্যাশ এইট উড়োজাহাজ নিলামে তুলবে। আমরা তাদের উড়োজাহাজের দাম জানিয়েছি। আমাদের একজন ক্রেতাও প্রস্তুত আছেন। ওই ক্রেতা আমাদের একটি উড়োজাহাজের জন্য এক মিলিয়ন ডলার দিতে চেয়েছে। আমরা এটা তাদের (বেবিচক) জানিয়েছি।

‘আমার উড়োজাহাজের যে দাম তাতে আপনি যদি বিক্রি করেন তাহলে পাওনার সঙ্গে কীভাবে অ্যাডজাস্ট করবেন? আমরা যদি ভ্যালুয়েশন অনুযায়ী দাম না পাই তাহলে আমরা উল্টো তাদের (বেবিচক) বিরুদ্ধে মামলা করে দেব।’

নিলামে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে বন্ধ হয়ে যাওয়া জিএমজি এয়ারলাইন্সের দুটি উড়োজাহাজও। ১৯৯৭ সালে কোম্পানি খুলে পরের বছরের এপ্রিলে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে দেশে কার্যক্রম শুরু করে বেসরকারি জিএমজি এয়ারলাইনস। ২০০৪ সালে প্রথম বেসরকারি এয়ারলাইনস হিসেবে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইটে আসে তারা।

২০০৯ সালে এয়ারলাইনসটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার কিনে নেয় বেক্সিমকো গ্রুপ। তবে তারা ব্যবসায় সফল হতে পারেনি। ২০১২ সালেই বন্ধ হয়ে যায় জিএমজির ফ্লাইট। এর আগেই অবশ্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা বলে ৩০০ কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির তথ্য আসে গণমাধ্যমে। পরে কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হয়নি। ২০১২ সালের ৩০ মার্চ বন্ধ করে দেয়ার সময় জিএমজি বলেছিল, আবার চালু হবে কোম্পানি। তবে তা আর হয়নি।

এই তিনটি এয়ারলাইনসের কাছে পাওনার বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘যে এয়ারলাইনসগুলো এরই মধ্যে বসে গেছে যেমন রিজেন্ট, ইউনাইটেড ও জিএমজি, তাদের কাছে আমাদের অনেক পাওনা হয়ে গেছে। এর জন্য আমরা আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। ‘এদের মধ্যে কারও কারও বিরুদ্ধে এরই মধ্যে মামলা আছে, আবার কারও বিরুদ্ধে সামনে মামলা করব।’

প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের মুনাফা ৫২ শতাংশ বেড়েছে: শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন’২১) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ৫২ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জানুয়ারি’২১-জুন’২১) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৩.১১ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ২.০৫ টাকা। এ হিসেবে কোম্পানিটির মুনাফা ১.০৬ টাকা বা ৫২ শতাংশ বেড়েছে।
২০২১ সালের ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৫৮.৪৭ টাকায়।

ইউসিবির মুনাফা ৪২ শতাংশ বেড়েছে: শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন’২১) সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ৪২ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ব্যাংকটির চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জানুয়ারি’২১-জুন’২১) সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.০২ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ০.৭২ টাকা। এ হিসেবে ব্যাংকটির মুনাফা ০.৩০ টাকা বা ৪২ শতাংশ বেড়েছে।

এদিকে ব্যাংকটির দ্বিতীয় প্রান্তিকের তিন মাসে (এপ্রিল থেকে জুন’২১) সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.৭৯ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ০.৪১ টাকা। এ হিসেবে ব্যাংকটির মুনাফা ০.৩৮ টাকা বা ৯৩ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সালের ৩০ জুন কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩০.৩৫ টাকায়।

করোনাভাইরাসে ২৪ ঘন্টায় ১৮৭ জনের মৃত্যু: দেশে সকাল ৮ পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন ১২ হাজার ১৪৮ জনের শরীরে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়। আজও টানা পঞ্চম দিনের মতো দেশে দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়ানোর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬২৭টি পরীক্ষাগারে ৪১ হাজার ৯৪৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এ পর্যন্ত দেশে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখ ৮৩ হাজার ৯২২ জন আর মারা গেছে ১৭ হাজার ৪৬৫ জন। সর্বশেষ ৮ হাজার ৫৩৬ জনের সুস্থতায় এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হওয়া কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৯ লাখ ১৪ হাজার ৩৪৩। সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক শূন্য ০৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৩৬ ও মৃত্যুহার ১ দশমিক ৬১ শতাংশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ঢাকা বিভাগেরই ৬৮ জন। এছাড়া খুলনায় ৩৯, চট্টগ্রামে ৩৬, রাজশাহীতে ১৪, বরিশালে ৮, সিলেটে ৯, রংপুরে ৬ এবং ময়মনসিংহে ৭ জন মারা গেছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ১১৩ জন পুরুষ এবং ৭৪ জন নারী। মৃতদের ১৪৭ জন সরকারী হাসপাতালে, ২৮ জন বেসরকারী হাসপাতালে এবং ১২ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন । এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে মোট মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ১৬৬ জন এবং নারী ৫ হাজার ২৯৯ জন।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে , গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ১০১ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৩৬, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৩০, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ১১, ২১ থেকে ৩০ বছরের ৭ জন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের ২ জন রয়েছেন।

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণের হার ওঠানামা করলেও দেড় মাসের বেশি সময় ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে গত ৮ মে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের (করোনার ভারতীয় ধরন) সংক্রমণ শনাক্ত হয়। শক্তিশালী করোনার এ ধরন গত মাসের শুরুতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা গোষ্ঠীগত সংক্রমণ ঘটায়। এতে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে শতাধিক দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।