দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে ৩৬টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির ৮৮ কোটি ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানিগুলোর ১ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ২১৬টি শেয়ার ৮৮ বার হাত বদল হয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর ৮৮ কোটি ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬ কোম্পানির বিশাল লেনদেন হয়েছে।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৫ কোটি ১৭ লক্ষ ১০ হাজার টাকার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফর্চুন সুজের ৬ কোটি ৪০ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকার, তৃতীয় সর্বোচ্চ জিবিবি পাওয়ারের ৪ কোটি ৮২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার, চতুর্থ সর্বোচ্চ বিকন ফার্মার ৩ কোটি ৮৯ লক্ষ ১৬ হাজার টাকার, পঞ্চম সর্বোচ্চ আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের ৩ কোটি ৭৩ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকার, ষষ্ঠ সর্বোচ্চ রহিম টেক্সটাইলের ৩ কোটি ৫৫ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে।

তাছাড়া, সিটি ব্যাংকের ২ কোটি ৫৩ লক্ষ ৭২ হাজার টাকার, মারিকোর ২ কোটি ৩৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকার, এটিসিএসএল গ্রোথ ফান্ডের ২ কোটি ১৩ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকার, তিতাস গ্যাসের ১ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকার, মীর আক্তারের ১ কোটি ৮৭ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকার, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের ১ কোটি ৪৬ লক্ষ ৬১ হাজার টাকার, গ্রামীণ ফোনের ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকার, ইস্টার্ন ব্যাংকের ১ কোটি ৪৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ১ কোটি ৩৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার,

মালেক স্পিনিংয়ের ৬১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার, স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্সের ৫০ লক্ষ ৮২ হাজার টাকার, এসপি সিরামিকের ৩৮ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার, কাট্টালি টেক্সটাইলের ৩৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার, ইন্ডেক্স এগ্রোর ৩৩ লক্ষ ৪১ হাজার টাকার, সিলভা ফার্মার ৩২ লক্ষ ৮২ হাজার টাকার, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ৩০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার, কপার টেকের ২৭ লক্ষ ৮১ হাজার টাকার,

কনফিডেন্স সিমেন্টের ১৩ লক্ষ টাকার, সোনালী পেপারের ৮ লক্ষ ৯১ হাজার টাকার, ফুয়াং ফুডের ৮ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ৭ লক্ষ টাকার, কেয়া কসমেটিকের ৬ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার, ভিএফএস থ্রেডের ৬ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকার, এনআরবিসি ব্যাংকের ৬ লক্ষ ২৪ হাজার টাকার, বেঙ্গল উইন্ডসোরের ৫ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকার,

সাইফ পাওয়ারের ৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার, অ্যাডভেন্টের ৫ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকার, আরামিট সিমেন্টের ৫ লক্ষ ৬১ হাজার টাকার, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালের ৫ লক্ষ ৪১ হাজার টাকার, অগ্নি সিস্টেমসের ৫ লক্ষ ১৭ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে।

শমরিতা হসপিটালের ৮ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের অনুমোদন: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি শমরিতা হসপিটাল লিমিটেড ৮ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ভবনটি বেসমেন্টসহ ১৫ হাজার ৫৬০ বর্গফুট। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, ইটিপি, ফিজিওথেরাপি সেন্টার, কেমোথেরাপি ইউনিট, কনসালটেন্টস চেম্বার, ক্যান্টিন এবং ড্রমিটরির কাজে ভবনটি ব্যবহার করা হবে। এ প্রকল্পে কোম্পানিটির ব্যয় হবে মোট ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে শেষ হবে প্রকল্পটি। প্রকল্পটিতে নিজস্ব উৎস থেকে অর্থায়ন করবে কোম্পানিটি।

এ ছাড়াও হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় দুটি ভবন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। এই দুটি ভবন আবাসিক কাজে ব্যবহার হবে। এতে কোম্পানিটির ৪০ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এই ভবন থেকে হাসপাতালটির মাসে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও সিমেন্ট খাতের শেয়ারে সুবাতাস: ব্যাংক ও সিমেন্ট খাতের শেয়ারের দাপটে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ঈদুল আজহা পরবর্তী প্রথম কার্যদিবসে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে। এদিন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের ৩১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৬টির, কমেছে চারটির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে একটির শেয়ারের দাম।

এছাড়া সিমেন্ট খাতের চার কোম্পানির শেয়ারে বিক্রেতা সংকট হয়ে যায়। হঠাৎ করে সিমেন্ট খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদেও একটু বাড়তি ঝোঁক লক্ষ্য করা গেছে। ফলে সিমেন্ট খাতের শেয়ারে সুবাতাস বইছে। তবে বিমা, বস্ত্র এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার বিক্রির চাপে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম কমেছে। তাতে দিন শেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক বেড়েছে ১৯ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বেড়েছে ১০৪ পয়েন্ট।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, রোববার ব্যাংকের শেয়ারের পাশাপাশি বিমা ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার বিক্রির চাপ কম ছিল। ঈদ পরবর্তী পুঁজিবাজারে লেনদেনের প্রথম আধা ঘণ্টায় সূচক বাড়ে ২৬ পয়েন্ট। এরপর শেয়ার বিক্রির চাপে দুই ঘণ্টা লেনদেন হয় সূচকের নিন্মমুখী প্রবণতায়। তবে দিনের শেষ আধা ঘণ্টা অর্থাৎ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত লেনদেন হয় সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায়।

তাতে দেখা যায়, রোববার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৯ দশমিক ১৭ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ৪২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়ার পর এ সূচক আজই সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছেছে। প্রধান সূচকের পাশাপাশি শরিয়াহ সূচক ছয় পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৪ দশমিক ৯ পয়েন্ট বেড়েছে।

এদিন ডিএসইতে মোট ৩৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মোট এক হাজার ৩৫৪ কোটি ৭০ লাখ ২ টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ব্লক মার্কেটে লেনদেন হয়েছে ৮৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ২৬৪ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে শেয়ারের দাম বেড়েছে ১১৬টির, কমেছে ২৩৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির।

বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমায় এদিন ডিএসইর বাজার মূলধন ১৫৪ কোটি ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা কমে পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৩০ কোটি ৬৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল সাইফ পাওয়ার লিমিটেড। এরপর ক্রমান্বয়ে ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, বেক্সিমকো লিমিটেড, বিডি ফাইন্যান্স, ফুয়াং ফুড, অ্যাকটিভ ফাইন, জিপিএইচ ইস্পাত, জিবিবি পাওয়ার, আইএফআইসি ব্যাংক এবং লাফার্জ-হোলসিম লিমিটেড।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬৭৩ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে ৩০৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১০৫টির, কমেছে ১৭৮টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টি। সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪০ কোটি ৭৮ লাখ ৭১ হাজার ৭০০ টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

ডিএসই ওয়েবসাইটে ফের ৩৫ মিনিটের জটিলতা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ফের ডিএসই ওয়েবসাইটে ৩৫ মিনিটের জটিলতা দেখা যায়। এর আগে ১৮ জুলাই একইভাবে বড় ধরনের কারিগরি জটিলতায় পড়ে পুঁজিবাজারের লেনদেন। এ সময় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট বন্ধ ছিল লেনদেন। পরে লেনদেন সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত করা হয়।

সেদিনও দেখা যায় ওয়েবসাইটে ত্রুটি। আবারও কারিগরি জটিলতায় পড়েছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইর ওয়েবসাইট। ঘড়ির কাঁটায় যখন ১০টা ৫০ মিনিট তখন ডিএসইতে সূচকের উত্থান পতনের চিত্র দেখাচ্ছিল ১০টা ৩৯ মিনিটের। আবার যখন ১০টা ৫১ মিনিট তখন সূচকের আপডেট দেখাচ্ছিল ১০টা ৪১ মিনিটের।

একইভাবে ঘড়ির কাঁটায় যখন ১০টা ৫২ মিনিট তখন সূচক ৬ হাজার ৪১১ পয়েন্টে, যা ১০টা ৪২ মিনিটের। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে লেনদেনে এমন ত্রুটি দেখা গেছে। অবশ্য এই ত্রুটি অব্যাহত ছিল ৩৫ মিনিট। এরপরই রিয়েল টাইমে আপডেট দিতে শুরু করে ডিএসইর ওয়েবসাইট। এমন আপডেট ত্রুটি এটাই প্রথম নয়।

চলতি মাসের ১৮ জুলাই একইভাবে বড় ধরনের কারিগরি জটিলতায় পড়ে পুঁজিবাজারের লেনদেন। এ সময় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট বন্ধ ছিল লেনদেন। পরে লেনদেন সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত করা হয়। এরই মধ্যে পুঁজিবাজারের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে বলে ডিএসই সূত্রে জানা গেছে।

রোববার লেনদেনের ধীরগতি নিশ্চিত করে ডিএসইর এক সূত্র জানায়, কারিগরি জটিলতার কারণে লেনদেনের কিছুটা ব্যাঘাত হচ্ছে। তা সাময়িক। ঠিক হয়ে যাবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘড়ির কাঁটায় যখন ১০টা ৫৭ মিনিট তখন সূচক দেখাচ্ছে ৬ হাজার ৪০৬ পয়েন্ট, যা ১০টা ৪৬ মিনিটের। ডিএসই ওয়েবসাইটে যখন ঘড়ির কাঁটা ১১টা ২১ তখন ডিএসইর আপডেট দেখাচ্ছিল ১১টা ২০ মিনিটের। ডিএসই থেকে বলা হয়েছে, শিগগির রিয়েল টাইম, লেনদেন সময় ও ঘড়ির কাঁটার সময় সমন্বয় করা হচ্ছে।

পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির পাশাপাশি সক্রিয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা: পুঁজিবাজার ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। বাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও সক্রিয় হচ্ছে। ফলে বাজারের প্রতি দিন দিন আস্থা বাড়ছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। এ কারণে এক দশকে লেনদেনের রেকর্ড ভেঙেছে একাধিকবার। ঈদের ছুটির পর ভেঙেছে এক দশকে মূল্যসূচকের রেকর্ডও। বিমা, বস্ত্র, প্রকৌশল, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত এখন চাঙা। ব্যাংক, জ্বালানি এবং ওষুধ খাতে চাঙাভাবের লক্ষণ স্পষ্ট। এই তিনটি খাত এগিয়ে গেলে পুঁজিবাজারে দীর্ঘ হতাশা দূর হওয়ার আশা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নানা উদ্যোগ আর সিদ্ধান্তের ফল মিলতে শুরু করেছে। বাজারে লেনদেন হচ্ছে নিয়মিত হাজার কোটি টাকার বেশি। সেটি প্রায়ই দেড় বা দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কয়েক দিন টানা বাড়লে পরে দর সংশোধনে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও সূচকের সেভাবে পতন হচ্ছে না।

এর কারণ, বাজার বাড়ছে বিভিন্ন খাত ধরে। একটি খাত টানা বেড়ে সূচকের উত্থান হলে সেই খাতের শেয়ারগুলো যখন সংশোধনে যাচ্ছে, তখন দেখা যাচ্ছে, অন্য খাতের শেয়ারগুলোর দর বাড়ছে। আবার সংশোধন কাটিয়ে যখন আবার বাজার উত্থান পর্বে ফিরছে, তখন কয়েকটি খাত একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ায় সূচক আরও বাড়তে শুরু করছে। ২০১০ সালের মহাধসের পর ২০১৩, পরে ২০১৭ সালে পুঁজিবাজারে অল্প কয়েক মাসের জন্য উত্থান হলেও সেটি এবারের মতো স্থায়ী হয়নি।

লেনদেনের গতি ধরে রাখতে না পারাই এর কারণ। কিন্তু এবার লেনদেনের গতি চমৎকার। ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও সক্রিয় হচ্ছে। এ কারণে এক দশকে লেনদেনের রেকর্ড ভেঙেছে একাধিকবার। ঈদের ছুটির পর ভেঙেছে এক দশকে মূল্যসূচকের রেকর্ডও। তবে এই উত্থান পর্ব ঘটেছে প্রথমে বিমা, পরে বস্ত্র, এরপর প্রকৌশল ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত দিয়ে। তবে বাজার মূলধনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখা ব্যাংক, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের শেয়ার দরে চাঙাভাব দেখা দেয়ার প্রবণতা দেখা গেলেও পরে স্থায়ী হয়নি।

আর এই তিনটি খাত এখনও বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যদি এই তিনটি খাতে চাঙাভাব দেখা দেয়া খাতের মতো উত্থান হয়, তাহলে পুঁজিবাজারকে নিয়ে দীর্ঘ হতাশা দূর হয়ে যেতেই পারে। ২০২১ সালের লেনদেন শুরু হয়েছিল ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্ট দিয়ে। লেনদেন ছিল ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বেশি।

তবে জানুয়ারিতে মার্জিন ঋণের সুদহার ১২ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেয়া নিয়ে টানাপোড়েন, এরপর এপ্রিলের শুরুতে লকডাউনে বাজার খোলা থাকে কি না, এ নিয়ে সংশয়ে তিন মাসের মধ্যে তা ৫ হাজার ৮৮ পয়েন্টে নেমে আসে।

২০২০ সালের জুলাইয়ে উত্থানের প্রথম পর্ব শেষে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় এপ্রিলের শুরু থেকে। একপর্যায়ে ৩৯ মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো ৬ হাজার পয়েন্টে পৌঁছে গত ৩০ মে। এরপর এক মাস সেখানে টিকে থাকার লড়াই করেছে। জুনের এই মাসটিই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ৬ হাজার পয়েন্টে সূচক টিকে থাকা নিয়ে যে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই শুরু হয়েছিল, সেখানে সূচক দু-এক দিনের জন্য নিচে নামলেও পরে আবার তা ওপরে উঠে যায়। এর মধ্যে জুন ক্লোজিং শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে ঈদের আগে তা ৬ হাজার ৪০০ পয়েন্টের ঘর অতিক্রম করে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানের কাছাকাছি।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, করোনায় ব্যাংক খাতকে ঘিরে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল, বিপুল পরিমাণ মুনাফা আর বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার বেশি লভ্যাংশ দিয়ে সেটি দূর করে দিয়েছে এই খাত। ফলে এই খাত ঘুরে দাঁড়ালে সেটির প্রভাব পড়বে গোটা বাজারেই। আর করোনায় জ্বালানি খাত খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও কেপিসিএলের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলে এই খাতও ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করা ওষুধ খাতের বড় কোম্পানিগুলোতে এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীরা যে বিনিয়োগ বাড়াছেন, সেটি স্পষ্ট। এই তিনটি খাত যদি এগিয়ে যায়, তাহলে পুঁজিবাজারের নতুন উচ্চতায় পৌঁছা সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ঈদের আগে ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্টের যে আরও একটি মনস্তাত্ত্বিক বাধা ছিল, সেটি অতিক্রম করে যাওয়া ইতিবাচক।

পুঁজিবাজারে ৩৮৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড ২২ খাতে বিভক্ত। এর মধ্যে তিন শরও বেশি কোম্পানি মুনাফায়। লোকসানি ও বন্ধ কোম্পানিগুলোতে সুশাসন ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যে পদক্ষেপ নিয়েছে, এমন ভূমিকা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। যেসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সুশাসন বজায় রাখতে বা কোম্পানিকে মুনাফায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, সেগুলোকে ডেকে কথা বলছে বিএসইসি। বেশ কিছু কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয়া হয়েছে, আরও কিছু কোম্পানির ক্ষেতে একই ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ফলে লোকসানি কোম্পানির সংখ্যাও আগামীতে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া বাজারে তারল্যসংকট কমাতে অবণ্টিত মুনাফা নিয়ে একটি বড় আকারের তহবিল গঠনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে ২১ হাজার কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি অর্থ ও শেয়ার চলে এলে এই তহবিল কাজ শুরু করবে। এর ৪০ শতাংশ শেয়ারে আর ৫০ শতাংশ মার্জিন ঋণে বিনিয়োগ করা হবে।

এই তহবিল বাজারে সংকটকালে সাপোর্ট দেবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি ও তহবিলের ট্রাস্টি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবি। এ ছাড়া এক বিলিয়ন ডলারের একটি বন্ড ছাড়ার চেষ্টা চলছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর উপায় খোঁজা হচ্ছে, আর ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের তহবিল থেকেও শেয়ার কেনা হচ্ছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘ভালো কোম্পানির উত্থান হলে সূচক ছয় থেকে সাত হাজারে গেলেও সেটি স্থিতিশীল থাকবে। কিন্তু দুর্বল কোম্পানির হাত ধরে সূচক যতই ওপরে উঠুক, সেটি স্থিতিশীল হবে না।’ কোন কোন খাত এ সময় ভালো ভূমিকা রাখতে পারে, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক আছে, মিউচ্যুয়াল ফান্ড আছে, জ্বালানি ও ওষুধ খাত আছে। এ ছাড়া মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বাড়লে ভালো পুঁজিবাজার পাওয়া কঠিন কিছু হবে না।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘এখন সব খাত মুভিং। সব খাতের অংশগ্রহণেই পুঁজিবাজারের উত্থান হচ্ছে। এ ছাড়া আগামীতে পুঁজিবাজার কোন অবস্থানে যাবে, সেটি বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর নির্ভর করছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিশন যেভাবে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার কোনো কিছু দেখছি না। তারপরও সব সময় মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে।’

চলতি মাসে পুঁজিবাজার ছেড়েছেন প্রায় ৩ লাখ বিনিয়োগকারী: পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে বেশ ইতিবাচক ধারায় ফিরলেও চলতি মাসে পুঁজিবাজার ছেড়েছেন প্রায় ৩ লাখ বিনিয়োগকারী। তবে এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ার কথা থাকলেও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল)-এর বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের তথ্যে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। বিনিয়োগকারী বাড়ার বদলে চলতি মাসে দুই লাখের ওপরে বিও হিসাব কমে গেছে। এর আগে জুন মাসে এক লাখের ওপরে বিও হিসাব কমে যায়। এতে দেড় মাসের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ বিও হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিও হিসাব কমার মূল কারণ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) নতুন নীতিমালা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন আইপিওতে আবেদন করতে প্রতিটি বিওতে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। এ কারণে আগে যেসব বিনিয়োগকারী শুধু আইপিও করার জন্য বিও হিসাব খুলতেন, তারা তা বন্ধ করে দিয়েছেন।

তারা আরও বলছেন, বিও হিসাবের ভিত্তিতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী কমলেও প্রকৃত বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে। আগে অনেকেই শুধু আইপিও আবেদন করার জন্য নামে-বেনামে বিও হিসাব খুলতেন। এসব বিও হিসাব থেকে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ হতো না, শুধু আইপিও আবেদন হতো। কিন্তু এখন যেহেতু আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সে কারণে শুধু আইপিও’র জন্য খোলা হিসাবগুলো বিনিয়োগকারীরা বন্ধ করে দিচ্ছেন।

অবশ্য গত দেড় মাসে বড় অঙ্কের বিও হিসাব কমে যাওয়ায় কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, বর্তমানে শেয়ারবাজার বেশি ভালো অবস্থায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে বিও হিসাব কমে যাচ্ছে। তাই কী কারণে বিও হিসাব কমে যাচ্ছে, তা বিএসইসির খতিয়ে দেখা উচিত।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল)- এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯ জুলাই বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৯ হাজার ৩৪৬টি, যা জুন মাস শেষে ছিল ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩১টি। অর্থাৎ চলতি মাসে বিও হিসাব কমেছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৮৫টি। এর আগে জুন মাসে বিও হিসাব কমে ১ লাখ ২২ হাজার ৩৮৬টি।

এ হিসেবে গত দেড় মাসে পুঁজিবাজার ছেড়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৭১ জন বিনিয়োগকারী। বিও হলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউস অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন করা সম্ভব নয়।

সিডিবিএল’র তথ্য মতে, চলতি মাসে পুরুষ ও নারী উভয় ধরনের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। পাশাপাশি কোম্পানি বিনিয়োগকারীও কমেছে। বর্তমানে (১৯ জুলাই এর হিসাব) পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব আছে ১৭ লাখ ৯ হাজার ৬০০টি। জুন মাস শেষে এই সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৯টি। অর্থাৎ চলতি মাসে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব কমেছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৯টি।

অপরদিকে বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৬৭টি। জুন মাস শেষে এই সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৫২ হাজার ২৭৫টি। এ হিসাবে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে ৬৭ হাজার ২০৮টি। এদিকে বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৪ হাজার ৬৭৯টি। জুন মাস শেষে এই সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ৭০৭টিতে।

সে হিসেবে কোম্পানি বিও হিসাব কমেছে ২৮টি। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ২১ লাখ ৭৮ হাজার ১৮টি। যা জুন মাস শেষে ছিল ২৩ লাখ ৮০ হাজার ৮৭৪টি।

অর্থাৎ চলতি মাসে পুঁজিবাজার ছেড়েছেন ২ লাখ ২ হাজার ৮৫৬ দেশি বিনিয়োগকারী। অপরদিকে বর্তমানে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব রয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬৪৯টি। জুন মাস শেষে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৫০টিতে। অর্থাৎ প্রবাসী ও বিদেশি বিও হিসাব কমেছে ২৪ হাজার ২০১টি।

এ বিষয় যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এখন বাজার ভালো চলছে। সুতরাং বিও হিসাব কমার কথা না। আইপিও’র নতুন নিয়মের কারণে হয় তো কিছু বিও হিসাব বন্ধ হতে পারে। কিন্তু গত দেড় মাসে যে পরিমাণ বিও হিসাব কমেছে তা উদ্বেগজনক। কি কারণে এতো বেশি বিও হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে তা সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা উচিত।’

অন্যদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কমপক্ষে ২০ হাজার টাকার বিনিয়োগের নিয়ম করে দিয়েছে। এই নিয়মনের কারণে কিছু বিও হিসাব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে এটা বাজারের জন্য খারাপ কিছু না, বরং বাজারের জন্য ভালো। কারণ এখন যারা থাকবে তারাই প্রকৃত বিনিয়োগকারী।’

তিনি বলেন, ‘আগে আইপিও’র যে নিয়ম ছিল তাতে শুধু আইপিও ধরার জন্য অনেক বিও হিসাব খোলা হতো। ওই সব বিও থেকে শুধু আইপিও আবেদন করা হতো, সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ হতো না। কিন্তু এখন সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। আইপিও আবেদন করতে গেলে অবশ্যই সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করতে হবে। এটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। এর ফলে প্রকৃত বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়বে এবং বাজারের গভীরতা বাড়বে।’

ডিএসই বিক্রেতা সংকটে ৮ কোম্পানি: ঈদ পরবর্তী পুঁজিবাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শুরুর প্রথম দুই ঘন্টায় বিক্রেতা সংকটে পড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন খাতের ৮ কোম্পানি।

ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে: ফু-ওয়াং সিরামিক, জিপিএইচ ইস্পাত, মেঘনা সিমেন্ট, অ্যারামিট সিমেন্ট, বসুন্ধরা পেপার অ্যান্ড পিন্টিং লিমিটেড, এএফসি এগ্রো ও হাইডেলবার্গ সিমেন্ট।

ফু-ওয়াং সিরামিক: ঈদের আগের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির সমাপনী দর ছিল ২২.১ টাকা। রোববার ৯.৯৫৫ শতাংশ দর বেড়ে ২৪.৩ টাকায় কোম্পানিটির শেয়ার হল্টেড হয়েছে। এসময় কোম্পানিটির ১ কোটি ২৮ লাখ ৫১ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

জিপিএইচ ইস্পাত: ঈদের আগের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির সমাপনী দর ছিল ৩৮.২ টাকা। রোববার ৯.৯৪৮ শতাংশ দর বেড়ে ৪২ টাকায় কোম্পানিটির শেয়ার হল্টেড হয়েছে। এসময় কোম্পানিটির ৭১ লাখ ২৭ হাজার ৫৮০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

মেঘনা সিমেন্ট: ঈদের আগের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির সমাপনী দর ছিল ৭৫.৬ টাকা। রোববার ৯.৯২১ শতাংশ দর বেড়ে ৮৩.১ টাকায় কোম্পানিটির শেয়ার হল্টেড হয়েছে।

এসময় কোম্পানিটির ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৭টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এছাড়া অ্যারামিট সিমেন্টের ৯.৮৮১ শতাংশ, বসুন্ধরা পেপার অ্যান্ড পিন্টিংয়ের ৯.৮৭ শতাংশ এএফসি এগ্রোর ৯.৭৪৬ শতাংশ ও হাইডেলবার্গ সিমেন্টের ৮.৭৪৭ শতাংশ দর বেড়ে হল্টেড হয়েছে।

ডিএসইতে লেনদেনের চমক দুই কোম্পানির: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে দুই কোম্পানির। এর মধ্যে হলো সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো। এদিন কোম্পানিটির ৬৮ কোটি ১৫ লাখ ৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫০ কোটি ৭৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকার। ৩৮ কোটি ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে বেক্সিমকো। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। লেনদেনের তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে: বিডি ফাইনান্স, ফুয়াং সিরামিক, একটিভ ফাইন, জিপিএইচ ইস্পাত, জিবিবি পাওয়ার, আইএফআইসি ব্যাংক ও লাফার্জ হোলসিম লিমিটেড ।

১৯ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৯ কোম্পানি বোর্ড সভার তারিখ জানিয়েছে। সভায় কোম্পানিগুলোর অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কোম্পানিগুলোর হলো: লিন্ডে বিডি, এবি ব্যাংক, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামিক ফাইন্যান্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, প্রিমিয়ার ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক,

আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, রবি আজিয়াটা, ম্যারিকো, এক্সিম ব্যাংক, রেকিট বেনকিজার, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ব্যাংক এশিয়া এবং এনআরবিসি ব্যাংক। কোম্পানিগুলোর মধ্যে লিন্ডে বিডির বোর্ড সভা ২৮ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টার পরিবর্তে বিকাল ৫টা করা হয়েছে।

অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংকের বোর্ড সভা ৩১ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টায়, প্যারমাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের ২৯ জুলাই দুপুর ১.২০টায়, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের ২৮ জুলাই বিকাল ৩টায়, ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ২৯ জুলাই বিকাল ৩টায়, সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৯ জুলাই দুপুর আড়াইটায়, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের ২৯ জুলাই বিকাল ৩টায়, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ২৯ জুলাই বিকাল ৩টায়, ইসলামিক ফাইন্যান্সের ২৮ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায়, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের ২৯ জুলাই বিকাল ৩টায়,

প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২৮ জুলাই বিকাল ৩টায়, আইএফআইসি ব্যাংকের ২৭ জুলাই বিকাল ৫টায়, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ২৯ জুলাই বিকাল ৩টায়, রবি আজিয়াটার ২৭ জুলাই বিকাল সাড়ে ৪টায়, ম্যারিকোর ২৬ জুলাই বিকাল ৩টায়, এক্সিম ব্যাংকের ২৮ জুলাই বিকাল ৩টায়, রেকিট বেনকিজারের ২৮ জুলাই বিকাল সাড়ে ৩টায়,

প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২৮ জুলাই বিকাল সাড়ে ৪টায়, ব্যাংক এশিয়ার ২৯ জুলাই বিকাল ৩টায় এবং এনআরবিসি ব্যাংকের বোর্ড সভা ২৭ জুলাই দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হবে। কোম্পানিগুলোর বোর্ড সভায় ৩০ জুন ২০২১ সমাপ্ত প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।