দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘদিন থেকে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে পুঁজিবাজার। এর জের ধরে বাড়ছে তালিকাভুক্ত প্রায় সব ধরনের কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটদর। ফলে বাড়তে শুরু করেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই-রেশিও। তবে এতে এখন পর্যন্ত ভয়ের কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিদায়ী সপ্তাহে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দেড় শতাংশ বেড়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই ছিল ১৯ দশমিক ৭১ পয়েন্টে, যা সপ্তাহ শেষে ২০ দশমিক শূন্য এক পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও শূন্য দশমিক ৩০ পয়েন্ট বা এক  দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে এখনও নিরাপদ বিনিয়োগে এগিয়ে রয়েছে ব্যাংক খাত। সপ্তাহ শেষে ব্যাংক খাতের পিই রেশিও অবস্থান করছে সাত দশমিক ৭৮ পয়েন্টে। ২০১০ সালের পর থেকে সব সময়ই শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাতের বিবেচনায় এগিয়ে রয়েছে এ খাতটি। সম্প্রতি এ খাতের শেয়ারদর আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। এর জের ধরে পিই-রেশিও কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী তা খুবই সামান্য। বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, এখন পর্যন্ত প্রায় শতভাগ ব্যাংক নিরাপদ বিনিয়োগে অবস্থান করছে।

এদিকে তিনদিন সূচকের উত্থান আর দুদিন পতনের মধ্য দিয়ে আগস্টের আরও একটি সপ্তাহ পার করল দেশের পুঁজিবাজার। আলোচিত সপ্তাহে (২২-২৬ আগস্ট) সূচক ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর তাতে নতুন করে বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন অর্থাৎ, পুঁজি বেড়েছে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহের মোট পাঁচদিন লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিনদিন রবি, সোম এবং মঙ্গলবার সূচকের উত্থান আর বুধ ও বৃহস্পতিবার দুদিন দরপতন হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে চার কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল। এর মধ্যে তিনদিন সূচকের উত্থান হয়েছিল। আর একদিন দরপতন হয়েছিল।

আলোচিত সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) আগের সপ্তাহের চেয়ে ৯০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৮৫১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ সময় ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৮৭ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক ২৯ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৪৫৩ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে।

বেশিরভাগ শেয়ার ও সূচক বাড়ায় নতুন করে গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন অর্থাৎ, বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ফিরেছে ৭ হাজার ৭৮৭ কোটি ৫৩ লাখ ৩৮ হাজার ৩২০ টাকা। শুধু তাই নয়, বাজার মূলধনের অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এখন ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৫০৯ কোটি ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৭৭৫ টাকায় অবস্থান করছে। যা এর আগের সপ্তাহে ছিল ৪৯ হাজার ৭২১ কোটি ৬২ লাখ ৪ হাজার ৪৫৫ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে চার দিনে মোট ১৩ হাজার ৪২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬৬ টাকা লেনদেন হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে মোট চার কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১০ হাজার ৩১১ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার ৫৯৫ টাকা। অর্থাৎ, এর আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে ২ হাজার ৭৩০ কোটি ৫৮ লাখ ২৯ হাজার ২৭১ টাকা। যা শতাংশের হিসেবে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ বেড়েছে।

গত সপ্তাহে গড় লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। তার আগের সপ্তাহের গড় লেনদেন ছিল ২ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গড় লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।

এ সময়ে ডিএসইতে ৩৮২টি প্রতিষ্ঠানের ২১৮টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এছাড়া কমেছে ১৩৯টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির শেয়ারের দাম। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ৩৮২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২২৪টি শেয়ারের দাম বেড়েছিল। এছাড়া কমেছিল ১৪৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) পাঁচ কার্যদিবসে মোট ৫০৫ কোটি ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬ টাকা লেনদেন হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪০৭ কোটি ৩৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪৬ টাকা। অর্থাৎ, লেনদেন বেড়েছে। তাতে সিএসইর প্রধান সূচক সিএসইএক্স আগের সপ্তাহের চেয়ে ২১৭ পয়েন্ট বেড়ে ১৯ হাজার ৯৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

চলতি সপ্তাহে তিন কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সভায় নীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করবে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গ্রামীণ ২ : গ্রামীণ ২ কোম্পানির বোর্ড সভা আগামী ২৯ আগস্ট বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ফান্ডটি ৩০ জুন, ২০২১ সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হবে। তৃতীয় প্রান্তিক শেষে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) বা নয় মাসে ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৯১ পয়সা। গত বছরপ্রতিষ্ঠানটি ৭ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।

রিলায়েন্স ১: কোম্পানির বোর্ড সভা আগামী ২৯ আগস্ট বেলা ২:৩৫টায় অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ফান্ডটি ৩০ জুন, ২০২১ সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হবে। তৃতীয় প্রান্তিক শেষে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) বা নয় মাসে ইপিএস হয়েছে ৭৯ পয়সা। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি।

প্রাইম ফাইন্যান্স: কোম্পানির বোর্ড সভা আগামী ৩১ আগস্ট বিকাল ৪:৩০টায় অনুষ্ঠিত হবে। সভায় কোম্পানিটির ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হবে। তৃতীয় প্রান্তিক শেষে (জানু’২০-সেপ্টে’২০) বা নয় মাসে ইপিএস হয়েছে ০.০৩ পয়সা। গত বছরপ্রতিষ্ঠানটি কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি।

এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্সের লভ্যাংশে সন্তুষ্ট নন বিনিয়োগকারীরা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্স ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ অর্থবছরের জন্য চূড়ান্ত ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর আগে কোম্পানিটি ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।

অর্থাৎ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের সর্বমোট ৭ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিলো। কোম্পানি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে ঘোষিত লভাংশে সন্তুষ্ট নন বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে আসার প্রথম বছর লভ্যাংশ নিয়ে নানা নাটকীয়তায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যেখানে দেশ জেনারেল ইন্সুরেন্স পুঁজিবাজারে আসার প্রথম বছর ১০ শত্যাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। সেখানে এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্স চুড়ান্ত লভ্যাংশ মিলে ৭ শতাংশ ঘোষণা করে। এতে কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব নিরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৬৪ পয়সা। আগের বছর ইপিএস ছিল ৯৭ পয়সা। আলোচ্য অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল দাঁড়িয়েছে ১৯ টাকায়। ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি সম্পদমুল্য ছির ১৩ টাকা ২৫ পয়সা। কোম্পানির রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৭ অক্টোবর। আর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হবে আগামী ৯ ডিসেম্বর।

চলতি সপ্তাহে পাঁচ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ: চলতি সপ্তাহে পাঁচ কোম্পানির বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কোম্পানিগুলোর সভায় অনীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোম্পানিগুলো হলো: রিপাবলিক ইন্সুরেন্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, ফনিক্স ফাইন্যান্স, ইসলামি ফাইন্যান্স এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।

রিপাবলিক ইন্সুরেন্স: কোম্পানিটির বোর্ড সভা আগামী ২৯ আগস্ট বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে। সভায় কোম্পানিটির ৩০ জুন, ২০২১ সমাপ্ত ২য় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

প্রাইম ফাইন্যান্স: কোম্পানিটির বোর্ড সভা আগামী ৩১ আগস্ট বিকাল ৪:৩০টায় অনুষ্ঠিত হবে। কোম্পানিটির ৩১ মার্চ ২০২১ সমাপ্ত প্রথম ১ম প্রান্তিক এবং ৩০ জুন, ২০২১ সমাপ্ত ২য় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

ফনিক্স ফাইন্যান্স: কোম্পানিটির বোর্ড সভা আগামী ৩১ আগস্ট বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে। সভায় কোম্পানিটির ৩০ জুন, ২০২১ সমাপ্ত ২য় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

ইসলামি ফাইন্যান্স: কোম্পানিটির বোর্ড সভা আগামী ৩১ আগস্ট বেলা ২:৪৫টায় অনুষ্ঠিত হবে। সভায় কোম্পানিটির ৩০ জুন, ২০২১ সমাপ্ত ২য় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

ইউনিয়ন ক্যাপিটাল: কোম্পানিটির বোর্ড সভা আগামী ৩১ আগস্ট বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে। সভায় কোম্পানিটির ৩০ জুন, ২০২১ সমাপ্ত ২য় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

ফ্যামিলি টেক্স শেয়ার নিয়ে গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটছে কারা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি ফ্যামিলি টেক্সের শেয়ার নিয়ে গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটছে কারা এ প্রশ্ন এখন লাখ লাখ বিনিয়োগকারীদের। গত তিন বছর ধরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি ফ্যামিলি টেক্সটাইল লিমিটেড। শুধু তাই নয়, টানা চার বছর ধরে লোকসানে থাকা কোম্পানিটি লাভের কোনো সম্ভাবনা দেখছে না, তারপরও শেয়ারের দাম বাড়ছে। সর্বশেষ এক মাসে শেয়ারটির দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। আর গত দুই মাসে শেয়ারটির দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছর কোম্পানিটির পর্ষদ পরিবর্তন করেছে বিএসইসি। আর এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারের সুযোগে কোম্পানির নামে নানা গুজব ছড়াচ্ছে কারসাজি চক্র। তারা বলছে, কোম্পানি শিগগিরই লোকসান থেকে মুনাফায় ফিরবে, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেবে। কোম্পানির শেয়ারের দাম আবার বাড়বে, ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত যাবে।

এসব গুজবের মাধ্যমে তিন টাকা থেকে শেয়ারের দাম সাত টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রিও করছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিএসইসি) উচিত কারসাজির পেছনে কারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, চলতি বছরের ২৭ জুন শতভাগ রফতানিমুখী পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান ফ্যামিলি টেক্সটাইলের শেয়ারের দাম ছিল ৩ টাকা ৩০ পয়সা। আর সেই শেয়ার গত ২২ আগস্ট বিক্রি হয়েছে ৬ টাকা ৬০ পয়সায়। অর্থাৎ দ্বিগুণ দাম বেড়েছে। এর মধ্যে গত ২৫ জুলাই থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত শেয়ারটির দাম বেড়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। ২৫ জুলাই শেয়ারের দাম ছিল ৪ টাকা ৮০ পয়সা।

শেয়ারটির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে অর্থাৎ কারসাজি হচ্ছে এমন সন্দেহে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ প্রাথমিকভাবে কোম্পানির কাছে জানতে চেয়েছে, কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য-সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে কি না। কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জকে জুলাই মাসে জানিয়েছে, দাম বৃদ্ধির কোনো গোপন তথ্য তাদের জানা নেই। তারপরও শেয়ারটির দাম বেড়েছেই চলছে।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে আসার সময় কোম্পানি অতি মুনাফা দেখিয়ে আইপিওতে এসেছে। এরপর কয়েক বছর বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়ে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়েছে। এরপর বেশি দামে বিক্রি করেছে।

তিনি বলেন, কোম্পানিটির মালিকপক্ষ বাটপার। আইপিওতে আসার সময় কোম্পানিতে তাদের মালিকানা ছিল ৬৫ শতাংশের বেশি। তারা হাতে থাক সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। লাভ দেখানো কোম্পানিটি চার বছর ধরে লোকসানে রয়েছে। এখন আবার সেই কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। স্টক এক্সচেঞ্জ ও কমিশনের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, লাভ দেখিয়ে পুঁজিবাজারে আসার তিন-চার বছর পর থেকেই লোকসানে চলে আসার কারণ খতিয়ে দেখছে কমিশন। সেই লক্ষ্যে আগের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, কোম্পানটি পরিচালনার জন্য বিএসইসির পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। পর্ষদ কোম্পানির সার্বিক দিক দেখছে। লোকসানে থাকা কোম্পানিটিকে কীভাবে লাভে আনা যায় সেই বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পর্ষদ গঠন ইস্যুকে কেন্দ্র করে হয়ত শেয়ারের দাম বাড়তে পারে। এই দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো কারসাজি আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কোম্পানিটির নতুন চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, কমিশন আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে কোম্পানিটির কীভাবে ভালো করা যায়, সেই পথ খুঁজে বের করতে। আর সেই পথ অনুসারে কোম্পানি পরিচালনা করতে। এর বাইরে কিছু বলতে পারব না।

টানা চার বছর ধরে লোকসানে থাকা কোম্পানিটি ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ১০ টাকা দামের ৩৫ কোটি ৪০ লাখ শেয়ার ছেড়ে ৩৪ কোটি টাকা উত্তোলন করে কোম্পানিটি। ৯ টাকার বেশি শেয়ারপ্রতি আয় দেখিয়ে বাজারে আসা কোম্পানিটি ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।

এরপর ২০১৩ সালের জন্য ১০০ শতাংশ, ২০১৪ সালের জন্য ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। কিন্তু ২০১৫ কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। তবে ২০১৬-২০১৮ টানা তিন বছর ৫ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে। আর এ সময়ে কোম্পানির এমডি-চেয়ারম্যানরা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।

কোম্পানিটির ৩৫ কোটি ৪০ লাখ শেয়ারের মধ্যে বর্তমানে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে ৪ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। আর বাকি ৬৪ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে টাকা তুলে নিয়েছেন কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মোরশেদ ও তার স্ত্রী রোকসানা মোরশেদ এবং সাবেক এমডি ও পরিচালক মিরাজ-মোস্তফা ও পরিচালক তাবাসুম করিমরা।

ফলে তাদের বাদ দিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফ্যামিলি টেক্সটাইলের পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। নতুন করে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কাজী আমিনুল ইসলামকে। আর পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ড. সামির কুমার শীল, ড. গাজী মোহাম্মদ হাসান জামিল, ড. মো. জামিল শরিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফ এহসান এবং ড. মো. ফরজ আলীকে।

আইপিওতে আসার আগের তিন বছর অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ সালে কোম্পানির নিট মুনাফা দেখানো হয় ৩ কোটি ৯ লাখ ৩২ হাজার ২ টাকা, ২০১০ সালে দেখানো হয় ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩১ টাকা এবং ২০১১ সালে দেখানো হয় ৯ কোটি ৬২ লাখ ১৭ হাজার ২১০ টাকা। বর্তমানে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান রয়েছে ৬২ পয়সা।

ডিএসই মার্কেট লিডারের তালিকায় নতুন ৬ কোম্পানি: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মার্কেট লিডারের তালিকায় নতুন ৬ কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো: পাওয়ার গ্রিড, বেক্সিমকো ফার্মা, এনসিসি ব্যাংক, শাহজিবাজার পাওয়ার, ম্যাকসন স্পিনিং ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, নতুন কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বড় বিনিয়োগকারীদের বাই প্রেসার বেশি ছিল। সে কারণে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ছিল। আগামী সপ্তাহেও যদি কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বড় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অব্যাহ থাকে, তাহলে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বৃদ্ধি পেতে পারে। আর যদি বগ বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তোলার প্রবণতায় থাকে, তাহলে কোম্পানিগুলোর দরে সংশোধনে হতে পারে।

পাওয়ার গ্রিড: পাওয়ার গ্রিড লেনদেনের তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। কোম্পানিটির ২৯১ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৫২ টাকা ৮০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে এর দর বেড়েছে ৪ টাকা ৭০ পয়সা বা ৮.৯০ শতাংশ।

বেক্সিমকো ফার্মা: বেক্সিমকো ফার্মা লেনদেনের তালিকার পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে। কোম্পানিটির ২৫৬ কোটি ৭৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ১৯১ টাকা ২০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ২০৩ টাকা ৭০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে এর দর বেড়েছে ১২ টাকা ৫০ পয়সা বা ৬.৫৩ শতাংশ।

এনসিসি ব্যাংক: এনসিসি ব্যাংক লেনদেনের তালিকার ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে। কোম্পানিটির ২০৫ কোটি ৪০ লাখ ২৬ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ১৫ টাকা ৭০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ১৫ টাকা ৮০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে এর দর বেড়েছে ১০ পয়সা বা ০.৬৩ শতাংশ।

শাহজিবাজার পাওয়ার: শাহজিবাজার পাওয়ার লেনদেনের তালিকার সপ্তম স্থানে উঠে এসেছে। কোম্পানিটির ২০০ কোটি ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৯০ টাকা ১০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে এর দর বেড়েছে ১৬ টাকা ৮০ পয়সা বা ১৮.৬৪ শতাংশ।

ম্যাকসন স্পিনিং: ম্যাকসন স্পিনিং লেনদেনের তালিকার অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে। কোম্পানিটির ১৬৮ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ২৪ টাকা ১০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ২৫ টাকা ৮০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে এর দর বেড়েছে ১ টাকা ৭০ পয়সা বা ৭.০৫ শতাংশ।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক: ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক লেনদেনের তালিকার দশম স্থানে উঠে এসেছে। কোম্পানিটির ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ ২৫ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ১২ টাকা ১০ পয়সা। আর শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ১২ টাকা ৮০ পয়সা। আগের সপ্তাহের চেয়ে এর দর বেড়েছে ৭০ পয়সা বা ৫.৭৮ শতাংশ।

এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফায় ধস: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন,২১) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের ২৭৭ তম সভায় আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

জানা গেছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪৮ পয়সা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৫৫ পয়সা। ফলে কোম্পানিটির মুনাফায় ধস নামছে।

আর অর্ধ-বার্ষিকীতে (জানুয়ারি-জুন,২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৮৫ পয়সা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৮৩ পয়সা। একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত সম্পদ (এনএভি) হয়েছে ১৬ টাকা ৩৭ পয়সা।

১০ কোম্পানির অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধিতে ডিএসইর রেড এলার্ট: সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ১০ কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ার দর বৃদ্ধির পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য না থাকায় কোম্পানিগুলো সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

কোম্পানি ১০টি হলো: মেট্রো স্পিনিং, আনলিমা ইয়ার্ন, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, রিং শাইন টেক্সটাইল, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, সালভো কেমিক্যাল, ঢাকা ডাইং, জনতা ইন্স্যুরেন্স। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।

ডিএসই জানায়, সম্প্রতি কোম্পানি ১০টির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে কোম্পানিগুলোর কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠায় ডিএসই। এর জবাবে কোম্পানি দশটির কর্তৃপক্ষ জানায়, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর বেড়েছে।

মেট্রো স্পিনিং: গত ২৫ জুলাই মেট্রো স্পিনিংয়ের শেয়ার দর ছিল ১৭ টাকা ২০ পয়সা। ২২ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩০ টাকায় উঠেছে। অর্থাৎ এই ২২ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১২.৮০ টাকা বা ৭৪.৪১ শতাংশ বেড়েছে।

আনলিমা ইয়ার্ন: গত ২৫ জুলাই সময়ে আনলিমা ইয়ার্নের শেয়ার দর ছিল ৩৮ টাকা ১০ পয়সা। ২২ আগস্ট কোম্পানিটির দর বৃদ্ধি পেয়ে ৪৯ টাকা ৪০ পয়সায় উঠে। অর্থাৎ এই ২২ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১১.৩০ টাকা বা ২৯.৬৫শতাংশ বেড়েছে।

মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ: বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর গত ০২ আগস্ট ছিল ১৫.৩০ টাকায়। আর ২২ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়ে দাঁড়ায় ২৬.১০ টাকায়। অর্থাৎ এই ১১ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১০.৮০ টাকা বা ৭১ শতাংশ বেড়েছে।

মেঘনা কনডেন্স মিল্ক: শেয়ার দর গত ০৩ আগস্ট ছিল ১৪.৪০ টাকায়। আর ২২ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়ে দাঁড়ায় ২০.৫০ টাকায়। অর্থাৎ এই ১০ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৬.১০ টাকা বা ৪২ শতাংশ বেড়েছে।

রিং শাইন টেক্সটাইল: শেয়ার দর গত ১১ আগস্ট ছিল ১০.৪০ টাকায়। আর ২২ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়ে দাঁড়ায় ১৪.৫০ টাকায়। অর্থাৎ এই ৫ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪.১০ টাকা বা ৩৯ শতাংশ বেড়েছে।

ফারইস্ট ফাইন্যান্স: শেয়ার দর গত ৩ আগস্ট ছিল ৭.২০ টাকায়। আর ২২ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়ে দাঁড়ায় ১০ টাকায়। অর্থাৎ এই ১০ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২.৮০ টাকা বা ৩৯ শতাংশ বেড়েছে।

সাউথবাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক: শেয়ার দর গত ১১ আগস্ট ছিল ১১ টাকায়। আর ২৫ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ টাকা ৬০ পয়সায়। অর্থাৎ এই ৯ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৪.৬০ টাকা বা ১৩৩ শতাংশ বেড়েছে।

সালভো কেমিক্যাল: শেয়ার দর গত ১৬ আগস্ট ছিল ৪৩ টাকা ৩০ পয়সায়। আর ২৫ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪ টাকা ৫০ পয়সায়। অর্থাৎ এই ৭ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১১ টাকা ২০ পয়সা বা ২৬ শতাংশ বেড়েছে।

ঢাকা ডাইং: শেয়ার দর গত ১৮ আগস্ট ছিল ২৩ টাকায়। আর ২৫ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ টাকা ৬০ পয়সায়। অর্থাৎ এই ৫ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩ টাকা ৬০ পয়সা বা ১৬ শতাংশ বেড়েছে।

জনতা ইন্স্যুরেন্স: শেয়ার দর গত ১৬ আগস্ট ছিল ৩৯ টাকায়। আর ২৫ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮ টাকা ২০ পয়সায়। অর্থাৎ এই ৭ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৯ টাকা ২০ পয়সা বা ৪৯ শতাংশ বেড়েছে।

‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার ভোগান্তির নিরসন চায় বিনিয়োগকারীরা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচায় যে ভোগান্তি হয়, সেই ভোগান্তির নিরসন চায় বিনিয়োগকারীরা। একই সঙ্গে ‘জেড’ ক্যাটাগরির নাম পরিবর্তন করারও দাবি জানিয়েছে বিনিয়োগকারীরা।

বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি একেএম মিজান-উর রশিদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এই সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়।

বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘদিনের মন্দা ভাব কাটিয়ে পুঁজিবাজার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। আপনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, পুরো কমিশনের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সব অংশীজনের সহযোগিতার ফলে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি হয়েছে। পুঁজিবাজারের সূচক ও দৈনন্দিন লেনদেন বেড়েছে।

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্যাপিটাল গেইনের পাশাপাশি ভালো ডিভিডেন্টের প্রত্যাশা করছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় শেয়ারের বিভাজনের কারণে ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে, নগদ টাকা দিয়ে শেয়ার কিনতে হয়। অন্য কোনো শেয়ার বিক্রি করে ওই দিন শেয়ার কেনা যায় না।

‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার ক্রয়ের পর চতুর্থ কার্যদিবসে ম্যাচুরিটি (বিক্রয় যোগ্য) হয়। শেয়ার বিক্রির টাকা ম্যাচুরিটি হওয়ার পূর্বে ওই টাকা দিয়ে অন্য কোন শেয়ার ক্রয় আদেশ দেওয়া যায় না। এতে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারকারীদের আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পুঁজিবাজারে লেনদেনের গতি কিছুটা কমে যায় এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের চিঠিতে আরও বলা হয়, বিশ্বের কোন দেশে ‘জেড’ ক্যাটাগরি বলতে কোনো ধরনের শেয়ার নেই। একই মার্কেটে দুই ধরনের নিয়ম থাকা ঠিক নয় বলে মনে করেন অনেক বাজার বিশ্লেষকরা। তাই পুঁজিবাজারের লেনদেনের গতি বৃদ্ধি ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ‘জেড’ ক্যাটাগরির নাম পরিবর্তন করারসহ শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘এন’ ক্যাটাগরির মতো সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

বিএসসির নতুন জাহাজ জার্মানিতে আটক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) নতুন একটি জাহাজ আটক করেছে জার্মানি। ২৩ আগস্ট জার্মানির ব্রেমেন বন্দরে জাহাজটি আটক করা হয়েছে। আটক জাহাজটির নাম এমটি বাংলার অগ্রদূত।

জার্মানির কর্তৃপক্ষ বলছে, জাহাজটিতে ২৭টি ত্রুটি শনাক্ত করেছে জার্মানির পোর্ট স্টেট কন্ট্রোল বা পিএসসি। ইউরোপিয়ান মেরিটাইম সেফটি এজেন্সির ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজটি তেল পরিবহন করছিল। গত বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) বাংলাদেশের নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষ নৌ বাণিজ্য কার্যালয় থেকে এই বিষয়ে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে।

আদেশে বলা হয়েছে, অসংখ্য ত্রুটি নিয়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ আটকের ঘটনা উদ্বেগের বিষয়। জাহাজের নাম উল্লেখ না করে সেখানে আরও বলা হয়, বেশিরভাগ ত্রুটিই জাহাজ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা সম্পর্কিত। এটি দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার প্রতিফলন। বারবার এ ধরনের ঘটনার কারণে যাতে ওই সব অঞ্চলে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ কালো তালিকাভুক্ত না হয়, সে জন্য কঠোরভাবে নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে।

আদেশ জারির বিষয়ে নৌ বাণিজ্য কার্যালয়ের মুখ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশে নিবন্ধিত সমুদ্রগামী জাহাজগুলো যাতে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন প্রতিপালন করে, বহির্বিশ্বে যেন বাংলাদেশের সম্মান ক্ষুণ্ন না হয়, সে জন্যই এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জাহাজটির নির্মাণ সংক্রান্ত কোনো ত্রুটি নেই দাবি করে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমোডর সুমন মাহমুদ বলেন, করোনার কারণে কাগজপত্র হালনাগাদ করা হয়নি। তাই সমস্যা হয়েছে। এখন হালনাগাদ করা হয়েছে। জাহাজটি বন্দর ত্যাগের অনুমতি পাবে শিগগিরই।

বাটা সু দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফায় উস্ফল্লণ: কভিড-১৯-এর প্রভাবে গত বছরের দুই ঈদ, পূজা ও পহেলা বৈশাখে জুতা বিক্রিতে ধস নামে। এতে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত বহুজাতিক জুতা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডকে বড় লোকসানে পড়তে হয়েছে। তবে চলতি ২০২১ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে কোম্পানিটি। এ সময়ে আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৯৯ শতাংশ ব্যবসা বেড়েছে কোম্পানিটির। অন্যদিকে চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে ৪২৬ শতাংশ।

চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথমার্ধে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ৪০১ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ২০৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ৭০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৪৪ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ঋণাত্মক ৫১ টাকা ৬৭ পয়সা। এ বছরের ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৬৫ টাকা ৫০ পয়সায়।

এদিকে চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ২১৭ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৪১ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ৭৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ১৫ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ঋণাত্মক ৫৩ টাকা ৭৪ পয়সা। কোম্পানিটির কর্মকর্তারা বলছেন, বিক্রি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মজুদ পণ্য ছাড়ে বিক্রি করে দেয়ার কারণে দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাটা সুর আয় বেড়েছে।

সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরে লোকসান হওয়ার কারণে বাটা সু বিনিয়োগকারীদের জন্য ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের প্রস্তাব করেছে, যেখানে আগের ২০১৯ হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। আলোচ্য হিসাব বছরে ১৩২ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে কোম্পানিটির, যেখানে আগের বছরে ৫৫ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছিল।

২০২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৯৬ টাকা ৯৪ পয়সা, যেখানে আগের বছরে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ৩৬ টাকা ১ পয়সা। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২৬৭ টাকা ৯৪ পয়সায়।